বৈশ্বিক অর্থনীতি স্থিতিশীল রাখতে তেল উৎপাদন বাড়াবে ওপেক জোট
Published: 6th, July 2025 GMT
বৈশ্বিক অর্থনীতি স্থিতিশীল রাখতে তেল উৎপাদনকারীদের জোট ওপেক ও সহযোগী আটটি দেশ অপরিশোধিত তেল উৎপাদন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আগামী আগস্ট মাস থেকে প্রতিদিন ৫ লাখ ৪৮ হাজার ব্যারেল তেল উৎপাদন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্বের তেল উৎপাদনকারীদের সবচেয়ে বড় এই জোট। এই জোটভুক্ত দেশগুলো স্বেচ্ছায় তাদের সরবরাহ কমানোর পরিকল্পনা থেকে ধীরে ধীরে সরে আসছে।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই তেল উৎপাদনকারী জোটের মধ্যে আছে রাশিয়া ও সৌদি আরবের পাশাপাশি আলজেরিয়া, ইরাক, কাজাখস্তান, কুয়েত, ওমান ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। গত শনিবার সকালে ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে তাদের এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। যদিও বৈঠকের আগে ধারণা করা হয়েছিল, দেশগুলো দৈনিক ৪ লাখ ১১ হাজার ব্যারেল অপরিশোধিত তেল উৎপাদন বাড়াবে।
ওপেক সচিবালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, আগামী আগস্ট মাসে দৈনিক ৫ লাখ ৪৮ হাজার ব্যারেল অপরিশোধিত তেল উৎপাদন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিশ্ব অর্থনীতিকে স্থিতিশীল ও বর্তমান সুস্থ বাজারের মৌলিক অবস্থা ঠিক রাখতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সিএনবিসির সংবাদে বলা হয়েছে, ওপেক জোট আনুষ্ঠানিক নীতির বাইর দুই ধরনের স্বেচ্ছামূলক উৎপাদন কমানোর নীতি প্রণয়ন করেছিল। এর মধ্যে প্রতিদিন ১ দশমিক ৬৬ মিলিয়ন বা ১৬ লাখ ৬০ হাজার ব্যারেল তেল উৎপাদন হ্রাসের কথা ছিল আগামী বছরের শেষ সময় পর্যন্ত। দ্বিতীয়ত, প্রথম ত্রৈমাসিকের শেষ পর্যন্ত অতিরিক্ত ২২ লাখ মিলিয়ন ব্যারেল দৈনিক উৎপাদন হ্রাস।
তারা ২০২৬ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রতি মাসে ১ লাখ ৩৭ হাজার ব্যারেল দৈনিক উৎপাদন বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছিল। তবে শুধু এপ্রিলে দেশগুলো এই গতি বজায় রাখতে পেরেছিল। এরপর তারা মে, জুন ও জুলাই মাসে অপরিশোধিত তেল উৎপাদন তিন গুণ বাড়িয়ে প্রতিদিন ৪ লাখ ১১ হাজার ব্যারেল করেছিল। তবে আগামী আগস্ট মাসে উৎপাদন আরও বাড়ানোর সিদ্ধান্ত এসেছে এবারের বৈঠকে।
গত কয়েক সপ্তাহে গ্রীষ্মকালীন চাহিদা বৃদ্ধি এবং ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে ১২ দিনের সংঘর্ষে তেলের দাম সাময়িকভাবে বেড়েছিল। এ সংঘর্ষে তেহরান ও হরমুজ প্রণালি দিয়ে তেল সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছিল।
গত শুক্রবারে পর্যন্ত সেপ্টেম্বরে মাসের জন্য ব্রেন্ট ক্রুড তেলের দাম নির্ধারিত হয়েছে ব্যারেলপ্রতি ৬৮ দশমিক ৩০ ডলার। আগস্টে মেয়াদ শেষ হতে যাওয়া নিউইয়র্ক মেক্সিকোর ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (ডব্লিউটিআই) তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি নির্ধারিত হয়েছে ৬৬ দশমিক ৫০ ডলার।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আগস ট
এছাড়াও পড়ুন:
৩৮ মিলিয়ন ডলার কিনল বাংলাদেশ ব্যাংক
দেশের ব্যাংকগুলোতে ডলার সরবরাহ বেড়েছে। এই পরিস্থিতিতে বাজার স্থিতিশীল রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ৬টি ব্যাংক থেকে নিলামে ৩৮ মিলিয়ন ডলার কিনেছে।
মঙ্গলবার (১৪ অক্টোম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান এ তথ্য জানিয়েছেন।
আরো পড়ুন:
সিএমএসএমই ঋণ সহজ করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন নির্দেশনা
ব্যাংকের কার্ড থেকে নগদ, বিকাশে টাকা পাঠানোর নতুন সুবিধা
তিনি জানান, বাজারে বর্তমানে ডলারের চাহিদার তুলনায় সরবরাহ বেশি। এ কারণে রিজার্ভ থেকে বিক্রি না করে বাজার থেকেই ডলার কিনছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ভবিষ্যতেও এই প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ব্যাংকগুলো থেকে মাল্টিপল অকশন পদ্ধতিতে ৩৮ মিলিয়ন ডলার কেনা হয়েছে। নিলামের বিনিময় হার ছিল ১২১ টাকা ৮০ পয়সা পর্যন্ত। আর এই প্রাইসেই ডলার কিনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক নিলামে ডলার কেনার ফলে বাজারে তারল্য বাড়ছে, আর রিজার্ভে যোগ হচ্ছে নিলামে কেনা ডলার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২০২৫-২৬ অর্থবছরে মোট দুই হাজার ১২৬ মিলিয়ন ডলার ক্রয় করেছে। এসব ডলার দেশের ব্যাংকগুলো থেকে মাল্টিপল অকশন পদ্ধতিতে কিনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এর আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ৯ দফায় ডলার কিনেছিল। এর মধ্যে গত ৬ অক্টোবর ৮টি ব্যাংক থেকে নিলামে ১৪০ মিলিয়ন ডলার কিনেছে। গত ১৫ সেপ্টেম্বর ২৬টি ব্যাংক থেকে নিলামে ৩৫৩ মিলিয়ন ডলার কিনেছে। গত ৪ সেপ্টেম্বর ১২১ টাকা ৭৫ পয়সা দরে ১৩৪ মিলিয়ন ডলার কিনেছে, ২ সেপ্টেম্বর একই দরে বাংলাদেশ ব্যাংক ৮ ব্যাংক থেকে ৪৭.৫০ মিলিয়ন ডলার কিনেছে, ১৩ জুলাই ১৮টি ব্যাংকের কাছ থেকে ১২১ টাকা ৫০ পয়সা দরে, একই দরে গত ১৫ জুলাই ডলার কিনেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এছাড়া গত ২৩ জুলাই ডলার কিনেছে ১২১ টাকা ৯৫ পয়সা দরে। গত ৭ আগস্ট ১২১ টাকা ৩৫ পয়সা থেকে ১২১ টাকা ৫০ পয়সায় এবং গত ১০ আগস্ট ১১টি ব্যাংকের কাছ থেকে ১২১ টাকা ৪৭ পয়সা থেকে ১২১ টাকা ৫০ পয়সায় ডলার কিনেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, দেশে প্রবাসী আয় (রেমিট্যান্স) ও রপ্তানি আয়ের প্রবাহ বাড়ায় ডলারের বাজারে স্থিতিশীলতা এসেছে। দেশের ব্যাংকগুলোতে ডলারের সরবরাহ বেড়েছে, চাহিদা কমেছে। এ কারণে ডলারের দাম কিছুটা কমে গেছে। আর ডলারের দাম আরও কমে গেলে রপ্তানিকারকরা একদিকে সমস্যায় পড়বে অপরদিকে রেমিট্যান্স আয় বৈধ পথে আসা কমে যাবে। এমন পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার কেনার সিদ্ধান্ত নেয়। যা খুবই যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত। তাতে ডলারের বাজার স্থিতিশীল থাকবে ও চাহিদার ভারসাম্য রক্ষা করা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন তারা।
গত ১৫ মে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এর সঙ্গে আলোচনার পর ডলারের বিনিময় মূল্য নির্ধারণে নতুন পদ্ধতি চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। তখন থেকে ব্যাংক ও গ্রাহক নিজেরাই ডলারের দর নির্ধারণ করছে।
ঢাকা/নাজমুল/সাইফ