‘তুমি ফুয়েল বন্ধ করলে কেন?’–এয়ার ইন্ডিয়ার পাইলটদের শেষ কথাবার্তা
Published: 12th, July 2025 GMT
আহমেদাবাদে ভয়াবহ এয়ার ইন্ডিয়ার উড়োজাহাজ দুর্ঘটনার এক মাস পর প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন তদন্ত কর্মকর্তারা। তদন্ত প্রতিবেদনে পাইলটদের শেষ মুহূর্তের চাঞ্চল্যকর কথাবার্তা ওঠে এসেছে। গত ১২ জুনের এই দুর্ঘটনায় কমপক্ষে ২৭০ জন প্রাণ হারান।
শনিবার ভোরে ভারতের এয়ারক্রাফট অ্যাক্সিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো ১৫ পৃষ্ঠার একটি প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, উড্ডয়নের ঠিক পরপরই বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার বিমানের দুটি ইঞ্জিনের ফুয়েল সুইচ ‘রান’ থেকে ‘কাটঅফ’ অবস্থায় চলে যায় – অর্থাৎ ইঞ্জিনে জ্বালানির সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।
তদন্ত রিপোর্টে বলা হয়, ককপিট ভয়েস রেকর্ডারে শোনা যায়, একজন পাইলট অন্যজনকে জিজ্ঞেস করছেন, তুমি ফুয়েল বন্ধ করলে কেন? জবাবে অপর পাইলট জানান, তিনি কিছুই করেননি।
এর কিছু সেকেন্ড পরই, বিমানের দুটি ইঞ্জিনের ফুয়েল সুইচ আবার ‘কাটঅফ’ থেকে ‘রান’–এ ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেন পাইলটরা, যার মাধ্যমে বোঝা যায় তারা পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। অ্যানহ্যান্সড এয়ারবোর্ন ফ্লাইট রেকর্ডার (ইএএফআর)-এর তথ্যেও এটি জানা গেছে।
তদন্ত রিপোর্টে বলা হয়েছে, ফ্লাইটের সময় ফুয়েল সুইচ ‘কাটঅফ’ থেকে ‘রান’ অবস্থায় নিলে, প্রতিটি ইঞ্জিন স্বয়ংক্রিয়ভাবে ইগনিশন ও জ্বালানি সরবরাহ চালু করে আবার চালু হওয়ার চেষ্টা করে।
তবে এই প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার আগেই ইএএফআর-এর রেকর্ডিং থেমে যায়। এরপরই একজন পাইলট ‘মে-ডে’ সংকেত পাঠান। কন্ট্রোল টাওয়ার থেকে কল সাইন জানতে চাওয়া হলেও কোনো জবাব পাওয়া যায়নি। তারপরই দেখা যায় বিমানটি বিমানবন্দরের সীমানা পেরিয়ে এক মেডিকেল ছাত্রাবাসে আছড়ে পড়ে এবং সাথে সাথে বিস্ফোরিত হয়।
বিমানটি ততক্ষণে পুরোপুরি জ্বালানিতে ভরা ছিল। এতে বিমানে থাকা ২৪২ জনের মধ্যে একজন ছাড়া সবাই এবং ভূমিতে থাকা অন্তত ৩০ জন নিহত হন। উড্ডয়নের মাত্র ৩২ সেকেন্ডের মধ্যেই বিমানটি ভেঙে পড়ে।
বিমানটি উড়াচ্ছিলেন ক্যাপ্টেন সুমিত সাবরওয়াল, যিনি একজন লাইন ট্রেনিং ক্যাপ্টেন ছিলেন। তার ৮ হাজার ২০০ ঘণ্টা উড়ানের অভিজ্ঞতা ছিল। সহকারী পাইলট ছিলেন ফার্স্ট অফিসার ক্লাইভ কুন্দার। তার ১ হাজার ১০০ ঘণ্টার অভিজ্ঞতা ছিল। রিপোর্টে বলা হয়েছে, দুইজনই স্বাস্থ্যবান, বিশ্রামপ্রাপ্ত এবং অভিজ্ঞ ছিলেন।
তদন্তে এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের নাশকতার প্রমাণ মেলেনি। তবে মার্কিন ফেডারেল অ্যাভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (এফএএ) একটি পূর্ববর্তী সতর্কতা এতে উল্লেখ করা হয়েছে। ওই সতর্কতায় বলা হয়েছিল, বোয়িং ৭৩৭ মডেলের কিছু বিমানে ফুয়েল সুইচের লকিং ফিচার ডিঅ্যাক্টিভ করা ছিল, যদিও তখন সেটিকে বিপজ্জনক বলা হয়নি।
রিপোর্টে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, উড্ডয়নের সঙ্গে সঙ্গেই বিমানটির র্যাম এয়ার টারবাইন (র্যাট) সক্রিয় হয়। এটি সাধারণত ইঞ্জিন ও হাইড্রোলিক সিস্টেম সম্পূর্ণ ব্যর্থ হলে সক্রিয় হয়। সিসিটিভি ফুটেজেও এ দৃশ্য দেখা গেছে।
তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, বিমানটি রানওয়ে পার হওয়ার আগেই উচ্চতা হারাতে শুরু করে। তখন আশেপাশে কোনো পাখির উপস্থিতিও দেখা যায়নি। সূত্র: এনডিটিভি
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
স্বপ্নের উড়াল যাত্রা, অস্ট্রেলিয়ার পথে রিশাদ
বিপিএলকে না করে বিগ ব্যাশে রিশাদ হোসেন।
পাঠক ঠিকই পড়ছেন। আসন্ন বিপিএলে দেখা যাবে না রিশাদ হোসেনকে। তাকে দেখা যাবে অস্ট্রেলিয়ায় বিগ ব্যাশ টুর্নামেন্টে। নিজের স্বপ্ন পূরণে যাত্রা শুরু করেছেন রিশাদ। রবিবার রাতে এক ফ্লাইটে যাচ্ছেন অস্ট্রেলিয়ায়।
টানা দ্বিতীয় মৌসুমে বিগ ব্যাশে দল পেয়েছেন রিশাদ। অস্ট্রেলিয়ার ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন হোবার্ট হারিকেনস আবার বাংলাদেশের লেগ স্পিনারকে নিয়েছে। গত আসরেও রিশাদকে ড্রাফট থেকে দলে নিয়েছিল হোবার্ট। তবে, জাতীয় দলের ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর ও পরে বিপিএলের জন্য সেবার খেলতে যাওয়া হয়নি তরুণ লেগ স্পিনারের।
আগামী ১৪ ডিসেম্বর শুরু হবে বিগ ব্যাশের নতুন আসর। ফাইনাল হবে আগামী বছরের ২৫ জানুয়ারি। বিপিএল শুরু হচ্ছে ২৬ ডিসেম্বর থেকে। এবার বিপিএলে খেলার চেয়ে বিগ ব্যাশকে বেছে নিয়েছেন তিনি। বিসিবি থেকেও মিলেছে সাড়া। আসরের সব ম্যাচ খেলার অনুমতি পেয়ে গেছেন রিশাদ।
কেন এই সিদ্ধান্ত? গত ৬ অক্টোবর হোবার্ট হারিকেনসের সংবাদ সম্মেলনে যোগ দিয়ে রিশাদ দিয়েছিলেন উত্তর, ‘‘একজন লেগ-স্পিনার হিসেবে, যদি আমি এই বিদেশি লিগে খেলতে পারি, তাহলে এটা আমার জন্য এবং আমার বোলিংয়ের জন্য ভালো হবে। আমি আমার দক্ষতা উন্নত করার সুযোগ পাব।’’
এই সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে আরো কিছু ভাবনা কাজ করেছে তার, ‘‘আমি নিজেকে জিজ্ঞাসা করছিলাম, আমার খেলার উন্নতির জন্য আমি কী করতে পারি। তারপর আমি ভাবলাম, যদি আমি এই লিগগুলিতে খেলতে পারি, তাহলে এটি আমার জন্য উপকারী হবে। যদি আপনি দেখেন, ম্যাচগুলো বিভিন্ন ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত হবে- আমার খেলার স্বপ্নের মাঠ।’’
রিশাদকে দলে নেয়ার পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছেন রিকি পন্টিং। শেষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৩ ওভারের স্পেলে ২৩ রানে ২ উইকেট পেয়েছিলেন রিশাদ। বিশ্বকাপের ম্যাচেই রিশাদে মন মজেছিলেন হোবার্টের হেড অব স্ট্র্যাটেজি রিকি পন্টিং।
কিংবদন্তি পন্টিংয়ের সঙ্গে কাজ করার অপেক্ষায় রিশাদ, ‘‘ছোটবেলায় পন্টিং আমার প্রিয় খেলোয়াড়দের একজন ছিলেন। আমি তার খেলা দেখতাম। আমি সত্যিই তার সঙ্গে কাজ করার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি। খেলোয়াড়দের চেয়েও বেশি, আমি রিকি পন্টিংয়ের সঙ্গে কাজ করার এবং তার কোচিংয়ে খেলার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি।’’
সাকিব আল হাসানের পর প্রথম বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে বিগ ব্যাশে খেলার অপেক্ষায় রিশাদ। ২০১৪ সালে অ্যাডিলেইড স্ট্রাইকার্সের হয়ে দুটি ও ২০১৫ সালে মেলবোর্ন রেনেগেডসের হয়ে চারটি ম্যাচ খেলেন সাকিব। প্রথমবার তিনি সুযোগ পান ইয়োহান বোথার বদলি হিসেবে আর পরের বার খেলেন আন্দ্রে রাসেলের বদলি হয়ে। ড্রাফট থেকে সরাসরি সুযোগ পাওয়া রিশাদই প্রথম।
নিজের লক্ষ্যে জানাতে গিয়ে রিশাদ যোগ করেন, ‘‘একজন লেগ স্পিনার হিসেবে আমার কাজ হলো পাওয়ার প্লের পর উইকেট নেওয়া। আশা করি হোবার্টেও এটা অব্যাহত থাকবে। আমি আমার শক্তিতে বিশ্বাস করি এবং দিনের পর দিন আমি উন্নতি করার চেষ্টা করছি, এমনকি যদি তা মাত্র এক বা দুই শতাংশও হয়; ভবিষ্যতের কথা খুব বেশি না ভেবে।’’
ঢাকা/ইয়াসিন