চিকুনগুনিয়ার ছোবল: সতর্ক না হলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে
Published: 3rd, August 2025 GMT
ছোট্ট একটি পতঙ্গ মশা, কিন্তু মাঝেমধ্যে ভয়ংকর হয়ে ওঠে। পৃথিবীতে সবচেয়ে ভয়ংকর প্রাণীগুলোর মধ্যে মশা প্রথম অবস্থানে আছে। মশা একমাত্র প্রাণী, যে পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু ঘটিয়েছে। বিবিসি নিউজের তথ্যমতে, প্রতিবছর পৃথিবীতে ৭ লাখ ৫০ হাজার মানুষের প্রাণ কেড়ে নেয় মশা। মশাবাহিত রোগের মধ্যে চিকুনগুনিয়া, ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, ফাইলেরিয়া, জিকা, ইয়েলো ফিভার, ওয়েস্টনাইল ফিভার অন্যতম। তবে এ মুহূর্তে মশাবাহিত রোগের মধ্যে ডেঙ্গু সবচেয়ে ভয়ংকর রূপ ধারণ করেছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এরই মধ্যে এ বিষয়ে সতর্কবার্তা জারি করেছে। তারা হুঁশিয়ার করেছে যে পৃথিবীর অর্ধেক মানুষ ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। গত বছর পৃথিবীর প্রায় ১৩০টি দেশে ডেঙ্গু সংক্রমণ হয়েছিল।
চট্টগ্রামে সাম্প্রতিক সময়ের চিকুনগুনিয়া পরিস্থিতি জনস্বাস্থ্যের জন্য গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পত্রিকার প্রতিবেদন অনুযায়ী, নগরীর বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে জ্বর নিয়ে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের মধ্যে গড়ে ৭০ থেকে ৭১ শতাংশ রোগীর দেহে চিকুনগুনিয়া ভাইরাস শনাক্ত হচ্ছে, যা এই রোগের ভয়াবহতা ও বিস্তারের একটি স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয়।
নগরীর উল্লেখযোগ্য কয়েকটি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, এপিক হেলথ কেয়ারে ১৮৫ জন রোগীর মধ্যে ১৫৩ জন (প্রায় ৮২%) চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত বলে শনাক্ত হয়েছেন। এভারকেয়ার হাসপাতালে ১৩২ জনের মধ্যে ৬৫ (প্রায় ৪৯%) ও পার্কভিউ হাসপাতালে ৫৩ জন রোগীর মধ্যে ৪২ জনের (প্রায় ৭৯%) পরীক্ষায় ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া গেছে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয়েছে।
এই পরিসংখ্যান থেকে বোঝা যায়, চট্টগ্রামে জ্বর নিয়ে আসা প্রত্যেক রোগীই এখন কার্যত চিকুনগুনিয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন। তবু সরকারি পর্যায়ে এখনো রোগ শনাক্তকরণের জন্য প্রয়োজনীয় ল্যাব–সুবিধা না থাকায় প্রকৃত সংক্রমণের মাত্রা ও বিস্তৃতি বুঝতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। সময়মতো পরীক্ষা ও রোগনির্ণয় না হলে পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।
চট্টগ্রামে চিকুনগুনিয়ার সংক্রমণ বর্তমানে ভয়াবহ পর্যায়ে চলছে, যেখানে দ্রুত সরকারি পর্যায়ে রোগনির্ণয় ব্যবস্থার বাস্তবায়ন, সাশ্রয়ী পরীক্ষার ব্যবস্থা এবং তাৎক্ষণিক মশা দমন ও সচেতনতা কার্যক্রম প্রয়োজন। উপসর্গ যথাযথভাবে নির্ণয় ও চিকিৎসার মাধ্যমে দীর্ঘস্থায়ী স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। জনগণের সহায়তা ও প্রশাসনের কার্যকর ভূমিকা জোরদার করতে না পারলে পরিস্থিতি আরও নিয়ন্ত্রণহীন হতে পারে।বাংলাদেশে চিকুনগুনিয়ার প্রথম প্রাদুর্ভাব ধরা পড়ে ২০০৮ সালে রাজশাহীর পবা উপজেলায়, যেখানে ৩২ জন আক্রান্ত হন। এরপর ২০০৯ সালে পাবনার আটঘরিয়া (সাঁথিয়া) এবং ২০১১ সালে ঢাকার দোহারে রোগটি আবার দেখা যায়।
তবে ২০১৬, ২০১৭ এবং ২০১৮ সালে এই রোগের সবচেয়ে বড় প্রাদুর্ভাব ঘটে, বিশেষ করে ঢাকা শহর এবং আশপাশের এলাকায়। এই সময় লক্ষাধিক মানুষ চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হলেও নির্দিষ্ট পরিসংখ্যান অনুপস্থিত। তবে চিকিৎসাকেন্দ্রগুলোর হিসাব অনুযায়ী, প্রতিদিন শত শত রোগী জ্বর, অস্থিসন্ধিতে ব্যথা ও দুর্বলতা নিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন।
চট্টগ্রামে চিকুনগুনিয়া সংক্রমণ দ্রুত বাড়লেও সরকারি হাসপাতালগুলোয় এখনো রোগনির্ণয়ের জন্য কোনো প্রাতিষ্ঠানিক পরীক্ষার ব্যবস্থা চালু হয়নি। এ কারণে রোগ শনাক্তকরণ পুরোপুরি নির্ভর করছে বেসরকারি ল্যাব ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর ওপর। এসব কেন্দ্রে রোগনির্ণয়ে খরচ গড়ে ৪ থেকে ৭ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে, যা নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য চরম ভোগান্তির কারণ। অনেকেই আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণে পরীক্ষা না করিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন শুধু উপসর্গের ওপর ভিত্তি করে, যা রোগ শনাক্তকরণে ভুলের আশঙ্কা বাড়িয়ে তুলছে। রোগ শনাক্ত না হলে সংক্রমণ ঝুঁকিও বেড়ে যায়।
চিকুনগুনিয়া একটি ভাইরাসজনিত রোগ, যার প্রধান বাহক এডিস ইজিপ্টি ও এডিস অ্যালবোপিকটাস নামের মশা। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির সাধারণত হঠাৎ উচ্চমাত্রার জ্বর দেখা দেয় এবং এর সঙ্গে থাকে তীব্র অস্থি ও সন্ধি ব্যথা, যা কখনো কখনো দীর্ঘস্থায়ী রূপ নিতে পারে। অন্যান্য লক্ষণের মধ্যে রয়েছে মাথাব্যথা, পেশিতে ব্যথা, শরীরে ফুসকুড়ি বা র্যাশ, চোখে জ্বালা, বমি বমি ভাব ও দুর্বলতা। অনেক সময় রোগীর হাত-পা ফুলে যেতে পারে, বিশেষ করে বৃদ্ধাঙ্গুলির জয়েন্টে ব্যথা সবচেয়ে বেশি অনুভূত হয়।
এসব উপসর্গ অনেকটাই ডেঙ্গুর সঙ্গে মিলে যায়, তবে চিকুনগুনিয়ায় জ্বরের পাশাপাশি সন্ধিব্যথা বেশি প্রকট হয় এবং তা সপ্তাহ বা মাসব্যাপী স্থায়ী হতে পারে। শিশু, বৃদ্ধ ও দীর্ঘমেয়াদি অসুস্থতায় ভোগা ব্যক্তিদের জন্য এই রোগ বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। তাই উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
হাসপাতালগুলোয় ভর্তি রোগীর চিকুনগুনিয়া শনাক্ত না হওয়ার কারণে সেখানে সাধারণ জ্বর হিসেবে বিবেচনা করে উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা প্রদান করা হচ্ছে। এ কারণে রোগীরা উপযুক্ত চিকিৎসা না পেয়ে দীর্ঘমেয়াদি জয়েন্ট পেইন ও দুর্বলতার মতো জটিলতায় ভুগছেন। ঝুঁকিতে থাকছে হাসপাতাল বা এর আশপাশে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা। সরকারি পর্যায়ে যদি দ্রুত সাশ্রয়ী ও সহজলভ্য পরীক্ষার ব্যবস্থা চালু করা না হয়, তাহলে চিকুনগুনিয়ার প্রকৃত বিস্তার ধরা পড়বে না এবং নিয়ন্ত্রণ করাও কঠিন হয়ে পড়বে।
বর্ষা মৌসুমে ডেঙ্গু রোগিদের সংখ্যাও বাড়ছে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পর স থ ত স ক রমণ ব যবস থ উপসর গ পর ক ষ র জন য পর য য় এই র গ সরক র সবচ য়
এছাড়াও পড়ুন:
সিদ্ধিরগঞ্জ যুবদলের মাছের পোনা অবমুক্তকরণ ও বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদলের ৪৭তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের আওতাধীন সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবদলের উদ্যোগে মৎসপোনা অবমুক্তকরন ও বৃক্ষ রোপন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) দুপুরে কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে সিদ্ধিরগঞ্জ থানাধীন ১০নং ওয়ার্ডস্থ চিত্তরঞ্জন পুকুরে মৎসপোনা অবমুক্তকরন ও পুকুর পাড়ে বৃক্ষ রোপন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মো. আরমান হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম সজল, প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মহানগর যুবদলের সদস্য সচিব সাহেদ আহমেদ।
এছাড়াও অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, মহানগর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরে এলাহী সোহাগ, যুগ্ম আহ্বায়ক সাজ্জাদ হোসেন কমল, যুগ্ম, যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুর রহমান, যুগ্ম আহ্বায়ক মোফাজ্জল হোসেন আনোয়ার, যুগ্ম আহ্বায়ক সাইফুল আলম সজিব, আহ্বায়ক কমিটির সদস্য রাফি উদ্দিন রিয়াদ,ওয়াদুদ ভূইয়া সাগর, মোঃ আরমান হোসেন, সাইফুল ইসলাম আপন, আশিকুর রহমান অনি, বাদশা খান, শাহীন শরীফ, ফয়েজ উল্লাহ সজল, ফয়সাল আহমেদ, আরিফ খান, হাবিবুর রহমান মাসুদ, মাহফুজুর রহমান ফয়সাল,সিদ্ধিরগঞ্জ যুবদল নেতা মঞ্জুরুল আলম মঞ্জু,আরাফাত রহমান মো. মিন্টু, রাশেদুল ইসলাম, সজল হোসেন, খায়রুল ইসলাম মৃদুলসহ যুবদলের নেতৃবৃন্দ।