দেশের বহু জাতি ও সংস্কৃতির অন্তর্ভুক্তিমূলক বাস্তবতা দেখতে পাচ্ছেন না বলে মন্তব্য করেছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা)। তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশে বহু জাতি আছে, বহু সংস্কৃতি আছে, তাদের অনেক আবেদন-নিবেদন আছে কিন্তু সেগুলোকে প্রাধান্য না দিয়ে কাজ করা হচ্ছে। সরকার সব পক্ষকে নিয়ে যে অন্তর্ভুক্তিমূলক বাস্তবতার কথা বলছে, সেটা আমরা এক্ষেত্রে দেখতে পাচ্ছি না।’’  

আন্তর্জাতিক ও জাতীয় যুব দিবস উপলক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের উদ্যোগে আয়োজিত যুব দিবসের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ সব কথা বলেন। মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) সকালে আঞ্চলিক পরিষদের হলরুমে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। 

সন্তু লারমা বলেন, ‘‘এই দেশে বাংলা জাতিসহ ৫২টি জাতি বসবাস করে। এতে বুঝা যায়, বাংলাদেশ একটা বহু ভাষাভাষী ও বহু সংস্কৃতির দেশ। তাহলে সব ভাষাভাষী, জাতিকে নিয়ে আমাদের একসঙ্গে এগিয়ে চলতে হবে। অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশের বাস্তবতা যেন আমরা দেখতে পারি, সেটা যেন শুধু কাগজ কিংবা মুখের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থাকে। কিন্তু এখানে অন্তর্ভুক্তিমূলক বাস্তবতা আমরা দেখতে পাই না।’’

আরো পড়ুন:

ছয় ঘণ্টা পর বাঘাইছড়িতে যান চলাচল স্বাভাবিক

বাঘাইছড়িতে পাহাড়ধসে সড়কে যান চলাচল বন্ধ

যুব সমাজের কর্মকাণ্ড বিষয়ে তিনি বলেন, ‘‘পার্বত্য এলাকার যুব সমাজের একটি অংশ এখনো যারা যন্ত্রনির্ভর কিংবা প্রযুক্তিনির্ভর যে জীবন, সেটার ওপর সম্পূর্ণ গা ভাসিয়ে দিয়ে জীবনকে ভাবছে না, তারা বাস্তবতাকে মূল্যায়ন করে পার্বত্য চট্টগ্রামের কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে। সরকার বলছে অন্তর্ভুক্তিমূলক সব পক্ষকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। আজকে সেটাই বাস্তবতা। একটি পক্ষকে নিয়ে চলা যায় না।’’ যুবকদের প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক, মানবতাবাদী ও নীতি-আদর্শকে সামনে রেখে যুব সমাজের প্রকৃত যে অধিকার, সেই অধিকারের জন্য কাজ করার আহ্বান জানান সন্তু লারমা।

‘প্রযুক্তি নির্ভর যুবশক্তি, বহুপাক্ষিক অংশীদারিত্বে অগ্রগতি’— প্রতিপাদ্যে আয়োজিত আলোচনা সভায় আঞ্চলিক পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা সুবর্ণা চাকমার সভাপতিত্বে এতে বক্তব্য রাখেন পরিষদের সদস্য চঞ্চু চাকমা, লেখক শিশির কান্তি চাকমা, সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটের পরিচালক জীতেন চাকমা, মনোঘরের নির্বাহী পরিচালক অশোক চাকমা, সুজন জেলা সম্পাদক এম জিসাম বখতিয়ার, সাবেক ছাত্রনেতা তনয় দেওয়ান, নিপুন ত্রিপুরা, ইরফানুল হক রোমেল, রোমেন চাকমা, এশা দে, আশিকা চাকমা প্রমুখ। সভা সঞ্চালনা করেন পরিষদের জনসংযোগ কর্মকর্তা বিমল কান্তি চাকমা ও সহকারী নির্বাহী কর্মকর্তা সুস্মিতা চাকমা।

অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, ‘‘যুবকদের মধ্যে তথ্যপ্রযুক্তি সচেতন হতে হবে। প্রযুক্তির যেমন পজিটিভ দিক আছে, তেমনি এর অপব্যবহারের মাধ্যমে সমাজে নেতিবাচক প্রভাবও পড়ে। পার্বত্য চট্টগ্রামে দুর্বল নেটওয়ার্ক প্রযুক্তিনির্ভর যুবশক্তি গঠনে অন্যতম প্রধান বাধা। এই বাধা দূরীকরণে সরকারের ভূমিকা রয়েছে।’’ পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে যুব সমাজকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান বক্তারা।

ঢাকা/শংকর/বকুল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প হ ড় ধস ন র ভর

এছাড়াও পড়ুন:

৩০ ঘণ্টা পরও খোলা হয়নি শাহ আমানত হল প্রাধ্যক্ষের কক্ষের তালা

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ আমানত হলের প্রাধ্যক্ষের কক্ষে আবাসিক শিক্ষার্থীরা তালা দেওয়ার ৩০ ঘণ্টা পর আজ সোমবার দুপুরেও তা খোলা হয়নি। উল্টো আজ শিক্ষার্থীরা প্রধ্যক্ষের কক্ষের নামফলকও সরিয়ে ফেলেন। গতকাল রোববার সকালে আর্থিক অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা ও দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ তুলে শিক্ষার্থীরা প্রাধ্যক্ষের কক্ষে তালা দেন। এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অধ্যাপক চৌধুরী মোহাম্মদ মনিরুল হাসান আলোচনার প্রস্তাবও দিলেও শিক্ষার্থীরা তা ফিরিয়ে দিয়েছেন। নতুন প্রাধ্যক্ষ নিয়োগ ও অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত ছাড়া আলোচনায় বসবেন না বলে হল সংসদের নেতারা জানিয়েছেন।

আজ দুপুর ১২টার দিকে প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক চৌ ধুরী মোহাম্মদ মনিরুল হাসান হলের গৃহশিক্ষক ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সঙ্গে নিয়ে হলে যান। তিনি হল সংসদের প্রাকর্থীদের সঙ্গে আলোচনায় বসার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। তবে আবাসিক শিক্ষার্থী ও হল সংসদের নেতারা সেখানে উপস্থিত হননি।

প্রাধ্যক্ষ দেখা করতে চাইলেও হল সংসদের সদস্যরা তাতে রাজি হননি বলে জানান শাহ আমানত হল সংসদের ভিপি জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বলেন, অভিযোগগুলো তদন্ত না হওয়া পর্যন্ত আগের মতো সম্পর্ক বজায় রাখা সম্ভব নয়। তিনি আরও জানান, দাপ্তরিক কাজ যাতে ব্যাহত না হয়—এ জন্য হলের আরেকটি অফিস কক্ষ খোলা রাখা হয়েছে।

এ বিষয়ে প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মনিরুল হাসান বলেন, ‘আমি গৃহশিক্ষকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে হলে গিয়েছিলাম আলোচনায় বসতে। কিন্তু শিক্ষার্থীরা আসেননি। পরে সহউপাচার্যের (একাডেমিক) সঙ্গে দেখা করতে গেলে তিনি আমাকে দাপ্তরিক কাজ চালিয়ে যেতে বলেন এবং উপাচার্য চীন সফর শেষে দেশে ফিরলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক শামীম উদ্দিন খান বলেন, গতকাল হল সংসদের প্রতিনিধিরা তাঁর কাছে একটি স্মারকলিপি দেন। তিনি সময় চেয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আজ প্রাধ্যক্ষ এসে জানিয়েছেন, তিনি শিক্ষার্থীদের জন্য কাজ করেছেন এবং ভবিষ্যতেও করতে চান। কিন্তু উপাচার্য ও সহউপাচার্য (প্রশাসনিক) অনুপস্থিত থাকায় আপাতত কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে না। উপাচার্য দেশে ফিরলে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

গতকাল আবাসিক শিক্ষার্থীদের সম্মতিতে হল সংসদের প্রতিনিধিরা প্রাধ্যক্ষের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা, দায়িত্বে অবহেলা, অসৌজন্যমূলক আচরণ, অনিয়ম ও আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ তুলে তাঁর কক্ষে তালা দেন। অভিযোগে বলা হয়—হল স্টোরের মালামাল নিয়মবহির্ভূতভাবে বিক্রি করা হয়েছে, দরজা-জানালার মেরামত হয়নি, দ্বিতীয় ডাইনিং চালু হয়নি এবং সাইকেল স্ট্যান্ডসহ মৌলিক সুবিধা নিশ্চিত করা হয়নি। এসব অভিযোগ তাঁরা সহ–উপাচার্যের কাছে লিখিতভাবে জমা দিয়েছেন। তবে প্রাধ্যক্ষ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, অনেক কাজই বাজেট ও প্রশাসনিক অনুমোদনের ওপর নির্ভরশীল এবং তিনি নিয়মিতভাবে উন্নয়ন কার্যক্রম এগিয়ে নিতে চেষ্টা করছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ