সাদাপাথরের তৈরি ৮৯ ফুট উঁচু এক দুর্গ। মধ্যযুগে নির্মিত হলেও দুর্গটি আজও টিকে আছে ক্ষমতা ও আভিজাত্যের প্রতীক হয়ে। ইংল্যান্ডের নরফোক কাউন্টিতে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা নরউইচ ক্যাসেল নামের দৃষ্টিনন্দন এই স্থাপত্য দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে।

১০৬৬ সালে ইংল্যান্ড দখল করে নিজেকে রাজা ঘোষণা করেন প্রথম উইলিয়াম। রাজা হয়েই এই দুর্গ নির্মাণ করার নির্দেশ দেন তিনি। তবে জীবদ্দশায় দুর্গটি দেখে যেতে পারেননি তিনি।

১১২১ সালে প্রথম উইলিয়ামের ছেলে রাজা প্রথম হেনরি দুর্গটির নির্মাণকাজ শেষ করেন। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় দুর্গের রূপ পাল্টেছে বহুবার। কখনো কারাগার, কখনো জাদুঘর হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। তবু এর আসল সৌন্দর্য ও ইতিহাস যেন এত দিন চাপা পড়ে ছিল দেয়ালের আড়ালে।

২০২০ সালে দুর্গটি সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে বেশ কিছুদিন কাজ বন্ধ ছিল। অবশেষে পাঁচ বছরের দীর্ঘ সংস্কারকাজ শেষে ৭ আগস্ট নতুন সাজে দর্শনার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে নরউইচ দুর্গের দুয়ার।

নরউইচ ক্যাসেল সংস্কারে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৩ কোটি ৭০ লাখ ডলার। অর্থ দিয়েছে ন্যাশনাল লটারি প্লেয়ার্স ও নরফোক কাউন্টি কাউন্সিল। পাঁচতলা দুর্গটির সবই নতুন রূপে সাজানো হয়েছে। তলঘর থেকে ছাদ পর্যন্ত দুর্গটির নজরকাড়া সৌন্দর্য অবলোকনের সুযোগ পাচ্ছেন দর্শনার্থীরা।

দুর্গে রয়েছে রাজা-রানির শয়নকক্ষ, প্রার্থনার স্থান, রান্নাঘরসহ বেশ কিছু কক্ষ। আরও আছে গ্রেট হল নামের দৃষ্টিনন্দন একটি সম্মেলনকক্ষ। গ্রেট হলে বসে দেখা যাবে মধ্যযুগের রঙিন সব জীবনচিত্র। পাশাপাশি সেখানে উপহারসামগ্রীর দোকান ও একটি রেস্তোরাঁও তৈরি করা হয়েছে।

দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করা উপলক্ষে দুর্গটির ভেতর এক প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। ‘গ্যালারি অব মিডিয়েভল লাইফ’ নামের এই প্রদর্শনীতে ৯০০টির বেশি নিদর্শন রয়েছে, যার মধ্যে ৫০টি ধার হিসেবে দিয়েছে ব্রিটিশ মিউজিয়াম।

ব্রিটিশ মিউজিয়ামের পরিচালক নিকোলাস কুলিনান বলেন, ‘নরউইচ ক্যাসেল একসময় ইউরোপের সবচেয়ে বিস্ময়কর মধ্যযুগীয় দুর্গগুলোর অন্যতম ছিল। এর সঙ্গে যুক্ত হতে পেরে আমরা গর্বিত। নরফোক মিউজিয়াম সার্ভিসের সঙ্গে কাজ করতে পারাটা ছিল জন্য দারুণ এক অভিজ্ঞতা।’

দুর্গটির সংস্কারকাজ করেছে স্থাপত্যবিষয়ক প্রতিষ্ঠান ফিল্ডেন-ম্যাসন। প্রতিষ্ঠানটি এক বিবৃতিতে বলেছে, সংস্কারের মাধ্যমে শুধু একটি অতি পুরোনো স্থাপনাকে নতুন রূপই দেওয়া হয়নি, বরং এর মাধ্যমে ইতিহাসকে আবার জীবন্ত করে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে। এখন নরউইচ ক্যাসেল শুধু অতীতের কোনো স্মারক হিসেবে নয়, বরং এমন এক দরজা হয়ে উঠেছে, যেখানে পা রাখলেই ফিরে যাওয়া যাবে নরম্যানদের গৌরবময় যুগে।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

৩০ ঘণ্টা পরও খোলা হয়নি শাহ আমানত হল প্রাধ্যক্ষের কক্ষের তালা

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ আমানত হলের প্রাধ্যক্ষের কক্ষে আবাসিক শিক্ষার্থীরা তালা দেওয়ার ৩০ ঘণ্টা পর আজ সোমবার দুপুরেও তা খোলা হয়নি। উল্টো আজ শিক্ষার্থীরা প্রধ্যক্ষের কক্ষের নামফলকও সরিয়ে ফেলেন। গতকাল রোববার সকালে আর্থিক অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা ও দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ তুলে শিক্ষার্থীরা প্রাধ্যক্ষের কক্ষে তালা দেন। এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অধ্যাপক চৌধুরী মোহাম্মদ মনিরুল হাসান আলোচনার প্রস্তাবও দিলেও শিক্ষার্থীরা তা ফিরিয়ে দিয়েছেন। নতুন প্রাধ্যক্ষ নিয়োগ ও অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত ছাড়া আলোচনায় বসবেন না বলে হল সংসদের নেতারা জানিয়েছেন।

আজ দুপুর ১২টার দিকে প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক চৌ ধুরী মোহাম্মদ মনিরুল হাসান হলের গৃহশিক্ষক ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সঙ্গে নিয়ে হলে যান। তিনি হল সংসদের প্রাকর্থীদের সঙ্গে আলোচনায় বসার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। তবে আবাসিক শিক্ষার্থী ও হল সংসদের নেতারা সেখানে উপস্থিত হননি।

প্রাধ্যক্ষ দেখা করতে চাইলেও হল সংসদের সদস্যরা তাতে রাজি হননি বলে জানান শাহ আমানত হল সংসদের ভিপি জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বলেন, অভিযোগগুলো তদন্ত না হওয়া পর্যন্ত আগের মতো সম্পর্ক বজায় রাখা সম্ভব নয়। তিনি আরও জানান, দাপ্তরিক কাজ যাতে ব্যাহত না হয়—এ জন্য হলের আরেকটি অফিস কক্ষ খোলা রাখা হয়েছে।

এ বিষয়ে প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মনিরুল হাসান বলেন, ‘আমি গৃহশিক্ষকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে হলে গিয়েছিলাম আলোচনায় বসতে। কিন্তু শিক্ষার্থীরা আসেননি। পরে সহউপাচার্যের (একাডেমিক) সঙ্গে দেখা করতে গেলে তিনি আমাকে দাপ্তরিক কাজ চালিয়ে যেতে বলেন এবং উপাচার্য চীন সফর শেষে দেশে ফিরলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক শামীম উদ্দিন খান বলেন, গতকাল হল সংসদের প্রতিনিধিরা তাঁর কাছে একটি স্মারকলিপি দেন। তিনি সময় চেয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আজ প্রাধ্যক্ষ এসে জানিয়েছেন, তিনি শিক্ষার্থীদের জন্য কাজ করেছেন এবং ভবিষ্যতেও করতে চান। কিন্তু উপাচার্য ও সহউপাচার্য (প্রশাসনিক) অনুপস্থিত থাকায় আপাতত কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে না। উপাচার্য দেশে ফিরলে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

গতকাল আবাসিক শিক্ষার্থীদের সম্মতিতে হল সংসদের প্রতিনিধিরা প্রাধ্যক্ষের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা, দায়িত্বে অবহেলা, অসৌজন্যমূলক আচরণ, অনিয়ম ও আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ তুলে তাঁর কক্ষে তালা দেন। অভিযোগে বলা হয়—হল স্টোরের মালামাল নিয়মবহির্ভূতভাবে বিক্রি করা হয়েছে, দরজা-জানালার মেরামত হয়নি, দ্বিতীয় ডাইনিং চালু হয়নি এবং সাইকেল স্ট্যান্ডসহ মৌলিক সুবিধা নিশ্চিত করা হয়নি। এসব অভিযোগ তাঁরা সহ–উপাচার্যের কাছে লিখিতভাবে জমা দিয়েছেন। তবে প্রাধ্যক্ষ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, অনেক কাজই বাজেট ও প্রশাসনিক অনুমোদনের ওপর নির্ভরশীল এবং তিনি নিয়মিতভাবে উন্নয়ন কার্যক্রম এগিয়ে নিতে চেষ্টা করছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ