আকিজ রিসোর্স লিমিটেড নতুন একটি শরিয়াভিত্তিক ডিজিটাল ব্যাংক খুলতে চায়। এটির নাম ‘মুনাফা ডিজিটাল ব্যাংক’। ইসলামি ধারার ব্যাংকগুলোর হারানো গ্রাহক টানার পাশাপাশি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে ঋণ পৌঁছানোর লক্ষ্যে তাদের এই উদ্যোগ। এতে অংশীদার হিসেবে যুক্ত থাকবে ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ে অভিজ্ঞ বিদেশি উদ্যোক্তা ও প্রতিষ্ঠান। আকিজ রিসোর্স গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর আকিজ হাউসে এক মতবিনিময় সভায় এ তথ্য জানায়।

এদিকে বেসরকারি খাতের প্রগতি লাইফ ইনস্যুরেন্সও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মিলে ডিজিটাল ব্যাংক গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে। দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ওয়েবসাইটের মাধ্যমে গতকাল ডিজিটাল ব্যাংক করার আগ্রহের তথ্য বিনিয়োগকারীদের জানানো হয়। এ ছাড়া বিকাশ লিমিটেড, বাংলালিংকসহ আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানেরও ডিজিটাল ব্যাংক গঠনের উদ্যোগ রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি ডিজিটাল ব্যাংক গঠনে আগ্রহীদের কাছ থেকে আবেদন চেয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। আগামী ২ নভেম্বর পর্যন্ত আবেদন করা যাবে।

‘মুনাফা ডিজিটাল ব্যাংক’

গতকাল সাংবাদিকদের সঙ্গে আকিজ রিসোর্সের মতবিনিময় সভায় ‘মুনাফা ডিজিটাল ব্যাংক’ গঠনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য তুলে ধরা হয়েছে। বলা হয়, টাকা স্থানান্তরে এই ব্যাংক কোনো খরচ নেবে না। তারা অতি ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের পাশাপাশি আবাসন ঋণেও জোর দেবে। শিগগিরই এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে আবেদন করবে আকিজ রিসোর্স।

সভায় জানানো হয়, আকিজ গ্রুপ থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত চারটি প্রতিষ্ঠান নিয়ে গড়ে ওঠে আকিজ রিসোর্স, এর কর্মী ছিল তিন হাজার। তখন এর মূল্য ছিল ২ হাজার ২০০ কোটি টাকা। এখন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৪০, কর্মী প্রায় ১০ হাজার এবং কোম্পানিগুলোর মূল্য প্রায় ১২ হাজার ২০০ কোটি টাকা।

আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন আকিজ রিসোর্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শেখ জসিম উদ্দিন, চিফ বিজনেস ডেভেলপমেন্ট অফিসার তৌফিক হাসান, চিফ ডিজিটাল ও ইনোভেশন অফিসার ফিরোজ কবির, চিফ পিপল অফিসার মোহাম্মদ আফসার উদ্দিন এবং আকিজ আই-বিওএসের সিইও এস কে মো.

জায়েদ বিন রশিদ।

সভায় জানানো হয়, আকিজ রিসোর্স লজিস্টিক, প্রযুক্তি, ভোগ্যপণ্য, ট্রেডিং, কৃষি, সেবা, প্রকৌশল, অটোমোবাইল, গণমাধ্যম, স্বাস্থ্য, নির্মাণ প্রভৃতি ব্যবসায়ে জড়িত। সব ব্যবসাই প্রযুক্তিনির্ভর, কাগজের ব্যবহার নেই বললেই চলে। এই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে তারা ডিজিটাল ব্যাংক পরিচালনা করতে চায়।

আকিজ রিসোর্সের এমডি শেখ জসিম উদ্দিন বলেন, ‘ডিজিটাল ব্যাংকের অনুমোদন পেলে বাংলাদেশের আর্থিক খাতে পরিবর্তন আনা হবে। গ্রামের অনেক ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ও কৃষক ঋণ পাচ্ছেন না। তাঁদের কাছে ঋণ পৌঁছে যাবে। আকিজ রিসোর্স বিশ্বাস করে যে ব্যাংকিং শুধু লেনদেন নয়, এটি মানুষের আর্থিক ক্ষমতায়ন ও সামাজিক অগ্রগতির হাতিয়ার। আমাদের ঐতিহ্যের শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আমরা এমন একটি ডিজিটাল ব্যাংক তৈরি করতে চাই, যা প্রযুক্তি, নৈতিকতা ও মানবিকতার সমন্বয়ে পরিচালিত হবে।’

শেখ জসিম উদ্দিন আরও বলেন, ‘আকিজ গ্রুপের প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে ৮৫ বছরের অভিজ্ঞতা ও সুনাম জড়িয়ে আছে। আমরা এমন কিছু করতে চাই না, যাতে এই সুনাম ক্ষুণ্ন হয়। শুধু ইসলামি ধারার হলেই আমরা ডিজিটাল ব্যাংক চালু করব। উত্তরাধিকারসূত্রে এটাই আমাদের সিদ্ধান্ত।’

প্রগতি লাইফও ডিজিটাল ব্যাংক চায়

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ওয়েবসাইটের মাধ্যমে কোম্পানিটি জানিয়েছে, এককভাবে নয়, আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মিলে তারা যৌথভাবে ডিজিটাল ব্যাংক করতে আগ্রহী। অনুমোদন পাওয়া গেলে প্রস্তাবিত এই ডিজিটাল ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধনে তাদের হিস্যা হবে ৫ শতাংশ।

নীতিমালায় যা আছে

বাংলাদেশ ব্যাংকের এ–সংক্রান্ত নীতিমালায় বলা হয়েছে, ডিজিটাল ব্যাংকের ন্যূনতম পরিশোধিত মূলধন হবে ৩০০ কোটি টাকা। এটির কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রধান কার্যালয় থাকবে। তবে সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে এটি হবে স্থাপনাবিহীন। অর্থাৎ এই ব্যাংক কোনো ওভার দ্য কাউন্টার (ওটিসি) সেবা দেবে না। ডিজিটাল ব্যাংকের নিজস্ব কোনো শাখা বা উপশাখা, এটিএম, সিডিএম অথবা সিআরএমও থাকবে না। সব সেবাই দেওয়া হবে অ্যাপস, মুঠোফোন বা ডিজিটাল যন্ত্রের মাধ্যমে।

ডিজিটাল ব্যাংকে দিন-রাত ২৪ ঘণ্টাই সেবা মিলবে। গ্রাহকদের লেনদেনের সুবিধার্থে এই ব্যাংক ভার্চ্যুয়াল কার্ড, কিউআর কোড ও অন্য কোনো উন্নত প্রযুক্তিভিত্তিক পণ্য চালু করতে পারবে। তবে লেনদেনের জন্য কোনো প্লাস্টিক কার্ড দিতে পারবে না। এই ব্যাংকের সেবা নিতে গ্রাহকেরা অন্য ব্যাংকের এটিএম, এজেন্টসহ নানা সেবা ব্যবহার করতে পারবেন। তবে ডিজিটাল ব্যাংক কোনো ঋণপত্র (এলসি) খুলতে এবং বড় ও মাঝারি শিল্পে কোনো ঋণ দিতে পারবে না। শুধু ছোট ঋণ দিতে পারবে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: এই ব য উদ দ ন পর চ ল ক গঠন

এছাড়াও পড়ুন:

রূপগঞ্জে মাজার ভেঙ্গে মালামাল লুট,  লাশ তুলে নেয়ার চেষ্টার অভিযোগ

রূপগঞ্জে পূর্বাচলে মাইজভান্ডারি অনুসারী সৈয়দ শফিউদ্দিন ও তার স্ত্রীর কবরকে ঘিরে গত ৪৫ বছরের পুরনো মাজার ভেঙ্গে, নির্মাণ সামগ্রী লুটপাট করে নিয়ে গেছে দূবৃত্তরা।  

এ সময় কবর থেকে লাশ তুলে নেয়ার চেষ্টা করে কবর খুড়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ২৩ অক্টোবর বৃহস্পতিবার দিবাপূর্ব রাতের কোন এক সময় পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের ২০ নং সেক্টরে এমন ঘটনা ঘটে।  

মরহুম সৈয়দ শফিউদ্দিন মাইজ ভান্ডারীর ছেলে ফজর আলী বলেন, তার বাবা  ১৯৮০ সালে মারা গেলে তৎকালীন গোবিন্দপুর গ্রামে বর্তমানে পূর্বাচল ২০ নং সেক্টরে  কবর দেয়া হয়।  সৈয়দ শফিউদ্দিন মাইজভান্ডারি জীবদ্দশায় স্থানীয় একটি মসজিদের ১৯ বছর ইমামতি করেছেন। তিনি ছিলেন কুরআনে হাফেজ।  

পাশাপাশি ইসলাম ধর্মের সুফীবাদ মতাদর্শী। তাই তার কবরকে মাজার হিসেবে রাখতে ৩০ শতক জমি ওয়াকফ করা হয়। কিন্তু একটি মহল মাজারের জমি ও কবর দুটি তুলে নিতে নানাভাবে চেষ্টা করছে। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল রাতে দূর্বৃত্তরা হামলা করে মাজার ভেঙ্গে, মালামাল লুটে নিয়ে যায়।  কবর খুড়া দেখে মনে হচ্ছে লাশ তুলে নেয়ার চেষ্টা করেছে। 

মরহুম পীর শফিউদ্দিনের পরিবারের সদস্য এডভোকেট শাহ্ আলম অভি বলেন, “ রাতের আধারে পূর্বাচলে মাজার ভাঙচুর, গাছ-পালা-সহ দূর্বৃত্তরা গুড়িয়ে দিল ৪৬ বছরের পুরোনো সৈয়দ সফিউদ্দীন আহমেদ মাইজভান্ডারির মাজার। 

 অজ্ঞাতনামা ১৫ থেকে ২০ জন   মাজারের বাউন্ডারি ওয়াল, সীমানা প্রাচীর, ২২টি বিভিন্ন  গাছ, কালেমা খচিত ৪ টি নিশান-সহ রক্ষিত নির্মাণসামগ্রী ভাংচুর, লটপাট, ধ্বংস এব্ং চুরি করিয়া অনুমান ৮ লক্ষ টাকার ক্ষতি সাধন করে।  

এ ঘটনায় এডভোকেট শাহ্ আলম অভি রূপগঞ্জ থানায় জিডি করলে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন। 

এ বিষয়ে রূপগঞ্জ থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি তরিকুল ইসলাম বলেন, সাধারণ ডায়েরি সূত্রে ঘটনায় তদন্ত চলমান। যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেয়া হবে।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ