সম্মানজনক বাণিজ্যচুক্তি না হওয়া পর্যন্ত ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে এড়িয়ে চলতে চাইছেন? মোদি কি চাইছেন না, তাঁর উপস্থিতিতে ট্রাম্প নতুন করে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ থামানোর কৃতিত্ব দাবি করুন? অথবা রাশিয়া থেকে তেল আমদানি বন্ধের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করুন?

সেই কারণেই কি নরেন্দ্র মোদি মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন? প্রশ্নগুলো প্রকাশ্যেই আলোচিত হচ্ছে। ভারত সরকারের দিক থেকে যদিও এর কোনো জুতসই জবাবও দেওয়া হয়নি।

আগামী রোববার ও সোমবার কুয়ালালামপুরে বসছে আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলন। গতকাল বৃহস্পতিবার মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের সঙ্গে ফোনালাপের পর মোদি ‘এক্স’–এ জানান, সম্মেলনে তিনি ভার্চ্যুয়ালি যোগ দেবেন। সশরীর উপস্থিত থাকবেন না। ভারতের প্রতিনিধিত্ব করবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর।

কয়েক দিন ধরেই এই সম্মেলনে মোদির সম্ভাব্য উপস্থিতি ও সেখানে ট্রাম্পের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের সম্ভাবনা নিয়ে গণমাধ্যম সরগরম ছিল। সরকারি সূত্রে এমন কথাও শোনা যাচ্ছিল, সেই বৈঠকেই দুই দেশের বাণিজ্যচুক্তি চূড়ান্ত হবে। এই চুক্তির পথে প্রধান অন্তরায় রাশিয়া থেকে ভারতের সস্তায় তেল কেনা।

ট্রাম্প প্রকাশ্যেই জানিয়েছেন, রাশিয়ার তেল কেনা বন্ধ না করলে আরও শুল্ক চাপানো হবে। ট্রাম্প এমন কথাও বলেছেন, তেল কেনা ধীরে ধীরে বন্ধ করার বিষয়ে মোদি তাঁকে আশ্বস্ত করেছেন। বৃহস্পতিবার সশরীর কুয়ালালামপুরে হাজির না থাকার মোদির ঘোষণা সেই সব জল্পনা ও সম্ভাব্য বৈঠকের ওপর জল ঢেলে দিল।

এরপরও রাজনৈতিক সমালোচনার হাত থেকে প্রধানমন্ত্রী মোদি রেহাই পাচ্ছেন না। দেখা যাচ্ছে, ৫০ শতাংশ শুল্ক চাপানোর পর থেকে ট্রাম্পের সঙ্গে মুখোমুখি হওয়া কোনো না কোনো অজুহাতে মোদি এড়িয়ে যাচ্ছেন। গাজা যুদ্ধ বন্ধ ও ইসরায়েল-হামাস চুক্তির পর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রশংসা করে মোদি বার্তা দিয়েছিলেন।

দেখা যাচ্ছে, ৫০ শতাংশ শুল্ক চাপানোর পর থেকে ট্রাম্পের সঙ্গে মুখোমুখি হওয়া কোনো না কোনো অজুহাতে মোদি এড়িয়ে যাচ্ছেন। গাজা যুদ্ধ বন্ধ ও ইসরায়েল-হামাস চুক্তির পর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রশংসা করে মোদি বার্তা দিয়েছিলেন।

মিসরের শারম আল-শেখে শান্তিচুক্তিতে যাব যাব করেও মোদি গেলেন না। বদলে ভারতের প্রতিনিধি হিসেবে পাঠালেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কীর্তিবর্ধন সিংকে। তখনো রাজনৈতিক মহলের জল্পনা ছিল, সম্ভবত ট্রাম্পকে এড়াতে ও বিড়ম্বনার হাত থেকে বাঁচতে মোদি শারম আল-শেখে গেলেন না।

সেই জল্পনা এবার প্রশ্ন ও সমালোচনা হয়ে দেখা দিয়েছে। কুয়ালালামপুরে উপস্থিত না থাকার সিদ্ধান্ত জানানোর পর কংগ্রেস মুখপাত্র জয়রাম রমেশ সরাসরিই দাবি করেন, ট্রাম্পকে মোদি এড়াতে চাইছেন। তাই নিজে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত।

জয়রাম রমেশ এক্স হ্যান্ডলে লেখেন, ‘চার দিন ধরে যাব কি যাব না জল্পনা চলছিল। অবশেষে তার অবসান ঘটল। কুয়ালালামপুরে মোদি যাচ্ছেন না। ফলে বিশ্বনেতাদের সঙ্গে গলাগলি করা, ছবি তোলা ও নিজেকে বিশ্বগুরু জাহির করার সুযোগ তিনি হারালেন।’

এই মন্তব্যের পরেই জয়রাম না যাওয়ার কারণটাও জানান। তাঁর মতে, ‘কারণটা খুবই সহজ। স্পষ্ট। ওখানে ট্রাম্প থাকবেন। ট্রাম্প তাঁকে কোণঠাসা করবেন। সেটা মোদি চাইছেন না। এই কারণেই তিনি মিসরে গাজা শান্তিচুক্তিতে যোগ দেননি।’

জয়রাম এক্সে লিখেছেন, ‘ট্রাম্পের সুখ্যাতি করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বার্তা দেওয়া এক রকম। কিন্তু যে মানুষটি ৫৩ বার ‘অপারেশন সিঁদুর’ থামানোর কৃতিত্ব দাবি করেছেন এবং পাঁচবার বলেছেন যে রাশিয়া থেকে তেল কেনা বন্ধ করা হবে বলে ভারত তাঁকে আশ্বস্ত করেছে, তাঁর সামনে দাঁড়ানোটা খুবই ঝুঁকির কাজ হয়ে যাবে।’

এরপরই প্রবল কটাক্ষ করে জয়রাম লিখেছেন, প্রধানমন্ত্রী নিশ্চয় বলিউডের সেই পুরোনো হিট গানটি আওড়াচ্ছেন, ‘বাচকে রহনা রে বাবা, বাচকে রহনা রে’।

বিজেপি অথবা সরকারের তরফ থেকে বিরোধীদের এই সমালোচনার আনুষ্ঠানিক কোনো জবাব দেওয়া হয়নি। মূলত ট্রাম্পের এযাবৎ করা কোনো উক্তি বা দাবির জবাবে পাল্টা বিবৃতি বিজেপি বা সরকার দিচ্ছে না।

জয়রাম ‘এক্স’-এ লিখেছেন, ‘ট্রাম্পের সুখ্যাতি করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বার্তা দেওয়া এক রকম। কিন্তু যে মানুষটি ৫৩ বার ‘অপারেশন সিঁদুর’ থামানোর কৃতিত্ব দাবি করেছেন এবং পাঁচবার বলেছেন যে রাশিয়া থেকে তেল কেনা বন্ধ করা হবে বলে ভারত তাঁকে আশ্বস্ত করেছে, তাঁর সামনে দাঁড়ানোটা খুবই ঝুঁকির কাজ হয়ে যাবে।’

প্রধানমন্ত্রী মোদিকে যে কটাক্ষ সহ্য করতে হচ্ছে, তারও কোনো জুতসই উত্তর কারও কাছে নেই। স্পষ্টতই সরকার কিংবা শাসক দল চাইছে না, বিহার নির্বাচনের আগে নতুন করে কোনো বিতর্ক সৃষ্টি হোক। তাঁকে বিড়ম্বনার মুখে পড়তে হোক।

আজ শুক্রবার বিভিন্ন সর্বভারতীয় দৈনিকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাশিয়ার দুই তেল কোম্পানির ওপর ট্রাম্প নিষেধাজ্ঞা জারি করার পর ভারতের দুটি বেসরকারি সংস্থা সে দেশের তেল কেনা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রাষ্ট্রীয় পর্যায়েও পর্যায়ক্রমে তেল কেনা কমানোর বিষয়টি গণমাধ্যমে কিছুদিন ধরেই আলোচিত হচ্ছে।

সরকার যদিও চাপের মুখে ওই সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করছে না। বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সূত্রে জানানো হচ্ছে, দেশের জ্বালানির চাহিদা অনুযায়ী তেল আমদানি করা হয়। কোন দেশ থেকে তা কেনা হবে, নির্ভর করে দামের ওপর।

বিভিন্ন সূত্রে এ-ও বলা হচ্ছে, রাশিয়া থেকে তেল আমদানি বন্ধ করা হলে আন্তর্জাতিক বাজারে ব্যারেলপ্রতি দাম আড়াই ডলারের মতো বেড়ে যাবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: উপস থ ত মন ত র সরক র জয়র ম

এছাড়াও পড়ুন:

সম্পূরক বৃত্তির দাবিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

সম্পূরক বৃত্তির দাবিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ করেছেন ‘আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন’ পরিচালিত আবাসন প্রকল্পে থাকা শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বেসরকারি এই প্রকল্পকে ‘হল’ হিসেবে দেখিয়ে আবাসন বৃত্তি থেকে তাঁদের বঞ্চিত করছে, এমন অভিযোগে আজ বুধবার দুপুরে শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনের ফটক অবরোধ করে অবস্থান নেন।

এর আগে দুপুর নাগাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের একাত্তরের গণহত্যা ভাস্কর্য চত্বর থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদ, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ, বিজ্ঞান অনুষদ প্রাঙ্গণ ঘুরে প্রশাসনিক ভবনের সামনে এসে শেষ হয়।

এ সময় শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে স্লোগান দেন। তাঁদের স্লোগানের মধ্যে ছিল: ‘আস–সুন্নাহে বৃত্তি দে, ভুজুংভাজুং ছেড়ে দে’, ‘এক দুই তিন চার, বৃত্তি আমার অধিকার’ এবং ‘আস–সুন্নাহে বৃত্তি দে, নইলে গদি ছেড়ে দে’।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের বৃত্তি নীতিমালায় আস–সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের মেধাবী প্রকল্পকে ‘হল’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। ফলে তাঁরা আবাসন বৃত্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তাঁরা বলছেন, প্রকল্পটি বেসরকারি হওয়ায় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব হল না হওয়ায় তাঁদের বৃত্তি থেকে বাদ দেওয়া যাবে না।

বিক্ষোভ কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী হাবিবুল বাশার সুমন বলেন, ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের জন্য কোনো হল নেই। আস–সুন্নাহ ফাউন্ডেশন নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান তাদের মেধাবী প্রজেক্ট নামের একটি প্রকল্প আমাদের জন্য করেছে। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যত কোনো হল নয়।’

শিক্ষার্থী সুমন আরও বলেন, ‘বৃত্তি নীতিমালায় সুকৌশলে আস–সুন্নাহ প্রজেক্টকে হল হিসেবে উপস্থাপন করে বৃত্তি থেকে আমাদের বাদ দেওয়ার চেষ্টা করছে। আমরা এ পাঁয়তারাকে রুখে দিতে প্রতিবাদ করছি।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মিজানুর রহমান হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘আস–সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের মেধাবী প্রকল্প থেকে যখন আগামী জানুয়ারিতে শিক্ষার্থীরা বের হয়ে যাবে, তখন তাদের আশ্রয়স্থল কোথায়? আমাদের দাবি মানা না হলে আমরা আরও কঠিন আন্দোলন করব।’

শিক্ষার্থীরা প্রায় বিকেল চারটা পর্যন্ত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের ফটক অবরোধ করে থাকেন। পরে তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে করে আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন পরিচালিত আবাসন প্রকল্পে ফিরে যান।

জানা যায়, আস–সুন্নাহ ফাউন্ডেশন পরিচালিত মেধাবী প্রকল্পের আওতায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২২-২৩, ২০২৩-২৪ এবং ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের প্রায় ৭০০ শিক্ষার্থীকে আবাসন সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। সেখানে শিক্ষার্থীরা নির্দিষ্ট পরিমাণ ফি দিয়ে থাকেন। এই প্রকল্পে থাকা–খাওয়ার ব্যবস্থার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের দক্ষতা উন্নয়নে বিভিন্ন প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা রয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ