শ্রম আইনে যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে
Published: 24th, October 2025 GMT
শ্রম আইন সংশোধনে অনেক ক্ষেত্রেই যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে। বিশেষ করে অনেক দিন ধরেই দাবি ছিল, এমনকি জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে বিবেচনার জন্য বলা হয়েছিল যে ট্রেড ইউনিয়ন গঠনটা যেন সহজ করা হয়। আমরা শ্রম সংস্কার কমিশন থেকে শ্রমিকের সম্মতি আনুপাতিক হার থেকে সংখ্যায় নিয়ে আসার জন্য স্পষ্ট সুপারিশ করেছিলাম।
কোনো প্রতিষ্ঠানে ২০ থেকে ৩০০ জন শ্রমিক থাকলে ২০ জনের সম্মতিতে ইউনিয়ন নিবন্ধন করা যাবে। তবে যেসব প্রতিষ্ঠানে ১০০ বা তার কম শ্রমিক রয়েছে, তাদের জন্য অসুবিধা হবে। এ ক্ষেত্রে শর্ত শিথিল করে ১০ জন বা ১০ শতাংশ করা হলে গ্রহণযোগ্য হয়। না হলে ছোট প্রতিষ্ঠানে ট্রেড ইউনিয়ন করা কঠিন হয়ে যাবে। সে ক্ষেত্রে যে অগ্রগতির কথা বলছি, সেটি ম্লান হয়ে যাবে।
নতুন ব্যবস্থায় আরেকটি চ্যালেঞ্জ থাকবে। সেটি হচ্ছে প্রতিষ্ঠান বা কারখানার শ্রমিকসংখ্যার যে শ্রেণি বা স্ল্যাব করা হয়েছে, সেটি প্রমাণ করতে গিয়ে যেন আবার নতুন করে জটিলতা শুরু না হয়। সেটি হলে কিন্তু পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন হবে না।
শ্রম আইন সংশোধনে আরেকটা বড় অগ্রগতি হয়েছে যে শ্রমিকের সংজ্ঞায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। এর মাধ্যমে অনেককে শ্রমিক হিসেবে সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে। তাতে অস্পষ্টতা দূর হয়েছে। এখন তাদের জন্য বিশেষ করে গৃহশ্রমিক ও ব্যক্তিগত গাড়িচালকদের সংগঠন করার অধিকারটা নিশ্চিত করতে হবে। তাদের ক্ষেত্রে পেশাভিত্তিক সংগঠন করার একটা বিধান আনতে হবে।
নারী শ্রমিকদের জন্য মাতৃত্বকালীন ছুটি ছয় মাস দাবি করেছিলেন শ্রমিকনেতারা। সেখানে মাতৃত্বকালীন ছুটি করা হয়েছে ১২০ দিন (চার মাস)। এ ক্ষেত্রে বড় অগ্রগতি হয়নি। ছয় মাস মাতৃত্বকালীন ছুটি অনেক ক্ষেত্রেই পাচ্ছেন সরকারি কর্মচারীরা। এখানে বৈষম্য নিরসন হওয়া দরকার ছিল।
জাতীয় ন্যূনতম মজুরি ও সর্বজনীন সামাজিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে অগ্রগতি দেখছি না। অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের স্বীকৃতি দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এই বিষয়গুলো লাগবে। না হলে একজন গৃহশ্রমিক বা একজন ব্যক্তিগত গাড়িচালকের মজুরি কিসের ভিত্তিতে ঠিক হবে। তাকে তো কোনো না কোনো সুরক্ষা স্কিমে রাখতে হবে, তা না হলে অবসরের পর সে কোথায় যাবে। সংশোধনীতে দুর্ঘটনাজনিত ক্ষতিপূরণ তহবিল করার কথা বলা হয়েছে। এটি ভালো অগ্রগতি। তবে প্রাতিষ্ঠানিক দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে মালিকপক্ষ আইন অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য। সে কারণে দুর্ঘটনাজনিত ক্ষতিপূরণ তহবিল চেয়ে জাতীয় দুর্ঘটনা তহবিল করা যেতে পারত।
সবশেষে বলতে চাই, সংশোধন যেটি হয়েছে সেটি প্রশংসনীয়। এই অগ্রগতি যাতে সবাই পায়, তার জন্য আইনের সংশ্লিষ্ট ধারায় সংশোধনী আনতে হবে। এ ছাড়া সর্বজনীন সামাজিক নিরাপত্তা, জাতীয় ন্যূনতম মজুরি এবং শ্রমিকের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন হলে সুবিচারের ব্যবস্থা থাকতে হবে। এই তিনটা জিনিস খুবই জরুরি। এগুলো না থাকলে শ্রম আইন সংশোধনের অগ্রগতি সীমাবদ্ধ হয়ে পড়বে। সেটা আমরা কেউই চাই না।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
অস্ট্রেলিয়ায় সামাজিক মাধ্যমে বন্ধ হয়ে গেল ১৬ বছরের কম বয়সীদের লাখো অ্যাকাউন্ট
অস্ট্রেলিয়ায় আজ বুধবার দিনের প্রথম প্রহরে কার্যকর হয়েছে নতুন একটি আইন। দেশটিতে এর আওতায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ১৬ বছরের কম বয়সীদের লাখো অ্যাকাউন্ট বন্ধ হয়ে গেছে।
শিশু-কিশোরদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কেন্দ্রিক সহিংসতা ও আসক্তির হাত থেকে রক্ষা করতে নতুন এ আইন কার্যকর করেছে অস্ট্রেলিয়া সরকার।
নতুন এ আইনের আওতায় অস্ট্রেলিয়ার ১৬ বছরের কম বয়সী শিশু–কিশোরেরা এখন থেকে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, এক্স, স্ন্যাপচ্যাট, টিকটক, ইউটিউবের মতো জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোয় নিজেরা অ্যাকাউন্ট খুলতে এবং সেসব ব্যবহার করতে পারবে না।
২০২৪ সালের নভেম্বর মাসে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি অ্যালবানিজ এ আইন প্রণয়নের ঘোষণা দেন। পরে সেটি দেশটির পার্লামেন্টে পাস হয়। সে সময় অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দেন, আইন লঙ্ঘন করলে শিশু–কিশোরদের কোনো ধরনের শাস্তি দেওয়া হবে না।
ব্যবহারকারীর বয়স অন্তত ১৬ বছর—এটা নিশ্চিত করার জন্য যুক্তিসংগত ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্ব প্ল্যাটফর্মের। কাজেই সবচেয়ে গুরুতর বিচ্যুতির জন্য তাদের সর্বোচ্চ ৪ কোটি ৪৯ লাখ অস্ট্রেলিয়ান ডলার (৩ কোটি ৩০ লাখ মার্কিন ডলার) জরিমানা দিতে হবে।
আইনটির সমর্থকেরা বলছেন, এটি শিশুদের আসক্তিকর অ্যালগরিদমের হাত থেকে বাঁচতে সাহায্য করবে, যে অ্যালগরিদম সহিংসতা, পর্নোগ্রাফি ও ভুল তথ্যের মতো ক্ষতিকর কনটেন্ট তাদের সামনে এনে দেয়।
এমনও বলা হচ্ছে, এটি সাইবার হেনস্তা (বুলিং) এবং অনলাইনে শিশুদের যৌন ও অন্যান্য শোষণ কমাবে। এ ছাড়া এটি শিশুদের বাইরে খেলতে বাধ্য করবে, তাদের ঘুম ভালো হবে, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ভালো হবে।
আরও পড়ুনঅস্ট্রেলিয়ায় ১৬ বছরের কম বয়সীদের জন্য নিষিদ্ধ হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার০৭ নভেম্বর ২০২৪অন্যদিকে নতুন আইনের সমালোচনাকারীদের মতে, নিষেধাজ্ঞা কাজে প্রয়োগ করবে যে প্রযুক্তি, তার নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে উদ্বেগ আছে। পাশাপাশি ভয় আছে, এটা নাজুক শিশুদের কোণঠাসা, একাকী করে ফেলতে পারে। অন্যদেরও অনলাইনের অন্ধকার এবং কম নিয়ন্ত্রিত অংশের দিকে ঠেলে দিতে পারে।
আরও পড়ুনশিশুদের জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধ করে অস্ট্রেলিয়ায় প্রস্তাব পাস২৮ নভেম্বর ২০২৪আরও পড়ুনসামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে শিশুদের দূরে রাখতে পারবেন কি০৮ ডিসেম্বর ২০২৫