শ্রম আইন সংশোধনে অনেক ক্ষেত্রেই যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে। বিশেষ করে অনেক দিন ধরেই দাবি ছিল, এমনকি জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে বিবেচনার জন্য বলা হয়েছিল যে ট্রেড ইউনিয়ন গঠনটা যেন সহজ করা হয়। আমরা শ্রম সংস্কার কমিশন থেকে শ্রমিকের সম্মতি আনুপাতিক হার থেকে সংখ্যায় নিয়ে আসার জন্য স্পষ্ট সুপারিশ করেছিলাম।

কোনো প্রতিষ্ঠানে ২০ থেকে ৩০০ জন শ্রমিক থাকলে ২০ জনের সম্মতিতে ইউনিয়ন নিবন্ধন করা যাবে। তবে যেসব প্রতিষ্ঠানে ১০০ বা তার কম শ্রমিক রয়েছে, তাদের জন্য অসুবিধা হবে। এ ক্ষেত্রে শর্ত শিথিল করে ১০ জন বা ১০ শতাংশ করা হলে গ্রহণযোগ্য হয়। না হলে ছোট প্রতিষ্ঠানে ট্রেড ইউনিয়ন করা কঠিন হয়ে যাবে। সে ক্ষেত্রে যে অগ্রগতির কথা বলছি, সেটি ম্লান হয়ে যাবে।

নতুন ব্যবস্থায় আরেকটি চ্যালেঞ্জ থাকবে। সেটি হচ্ছে প্রতিষ্ঠান বা কারখানার শ্রমিকসংখ্যার যে শ্রেণি বা স্ল্যাব করা হয়েছে, সেটি প্রমাণ করতে গিয়ে যেন আবার নতুন করে জটিলতা শুরু না হয়। সেটি হলে কিন্তু পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন হবে না।

শ্রম আইন সংশোধনে আরেকটা বড় অগ্রগতি হয়েছে যে শ্রমিকের সংজ্ঞায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। এর মাধ্যমে অনেককে শ্রমিক হিসেবে সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে। তাতে অস্পষ্টতা দূর হয়েছে। এখন তাদের জন্য বিশেষ করে গৃহশ্রমিক ও ব্যক্তিগত গাড়িচালকদের সংগঠন করার অধিকারটা নিশ্চিত করতে হবে। তাদের ক্ষেত্রে পেশাভিত্তিক সংগঠন করার একটা বিধান আনতে হবে।

নারী শ্রমিকদের জন্য মাতৃত্বকালীন ছুটি ছয় মাস দাবি করেছিলেন শ্রমিকনেতারা। সেখানে মাতৃত্বকালীন ছুটি করা হয়েছে ১২০ দিন (চার মাস)। এ ক্ষেত্রে বড় অগ্রগতি হয়নি। ছয় মাস মাতৃত্বকালীন ছুটি অনেক ক্ষেত্রেই পাচ্ছেন সরকারি কর্মচারীরা। এখানে বৈষম্য নিরসন হওয়া দরকার ছিল।

জাতীয় ন্যূনতম মজুরি ও সর্বজনীন সামাজিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে অগ্রগতি দেখছি না। অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের স্বীকৃতি দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এই বিষয়গুলো লাগবে। না হলে একজন গৃহশ্রমিক বা একজন ব্যক্তিগত গাড়িচালকের মজুরি কিসের ভিত্তিতে ঠিক হবে। তাকে তো কোনো না কোনো সুরক্ষা স্কিমে রাখতে হবে, তা না হলে অবসরের পর সে কোথায় যাবে। সংশোধনীতে দুর্ঘটনাজনিত ক্ষতিপূরণ তহবিল করার কথা বলা হয়েছে। এটি ভালো অগ্রগতি। তবে প্রাতিষ্ঠানিক দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে মালিকপক্ষ আইন অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য। সে কারণে দুর্ঘটনাজনিত ক্ষতিপূরণ তহবিল চেয়ে জাতীয় দুর্ঘটনা তহবিল করা যেতে পারত।

সবশেষে বলতে চাই, সংশোধন যেটি হয়েছে সেটি প্রশংসনীয়। এই অগ্রগতি যাতে সবাই পায়, তার জন্য আইনের সংশ্লিষ্ট ধারায় সংশোধনী আনতে হবে। এ ছাড়া সর্বজনীন সামাজিক নিরাপত্তা, জাতীয় ন্যূনতম মজুরি এবং শ্রমিকের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন হলে সুবিচারের ব্যবস্থা থাকতে হবে। এই তিনটা জিনিস খুবই জরুরি। এগুলো না থাকলে শ্রম আইন সংশোধনের অগ্রগতি সীমাবদ্ধ হয়ে পড়বে। সেটা আমরা কেউই চাই না।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: দ র ঘটন র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

এনসিপিতে আছি, সরকার গঠন পর্যন্ত দলের সাথেই থাকব: নাসীরুদ্দীন

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী পদত্যাগের বিষয়টি গুজব বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি জানান, তিনি এনসিপির সাথেই আছেন এবং সরকার গঠন পর্যন্ত এনসিপির সাথেই থাকবেন।

শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) বিকেলে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে তিনি এ কথা জানান।

আরো পড়ুন:

জুলাই সনদ শুধু কাগজে নয়, বাস্তবায়নের নিশ্চয়তা থাকতে হবে

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে এনসিপির বৈঠক চলছে

পদত্যাগের গুজব ছড়ানো প্রসঙ্গে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, “এসব গুজব ছড়িয়ে থাকে। অনেকে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার নামে ভুল জায়গায় মিসাইল ছুঁড়ে থাকে।”

তিনি বলেন, “সত্যিকার অর্থে আমাদের যেটা প্রয়োজন, আগের আমলে দুর্নীতির যে ধারাবাহিকতা ছিল, বর্তমান সরকারও একই সাথে সচিবালয় থেকে শুরু করে আমলাতন্ত্র সবাই মিলে একই ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখেছে। কোথায় দুর্নীতি হচ্ছে, আমাদের মিলিটারি, পুলিশে যে সংস্কারগুলো রয়েছে এবং বিভিন্ন সংস্কার কমিশনের যে রিপোর্ট এসেছে, সেখানে কোথায় ব্যতয় হয়েছে, এগুলো নিয়ে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা করা উচিত।”

নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, “ব্যক্তিগতভাবে রাতের মধ্যে একটা গুজব ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। এই ধরনের অপসাংবাদিকতা থেকে বেরিয়ে আসা উচিত।”

এনসিপির এই নেতা বলেন, “একটা ব্যবসায়িক গোষ্ঠী, যাদের নিজস্ব পত্রিকা এবং টিভি চ্যানেল রয়েছে, ওই জায়গাতে যারা সুস্থ সাংবাদিকতা করতে চাচ্ছেন, তারাও অপসাংবাদিকতার শিকার হচ্ছেন।”

এ সময় তিনি বাংলাদেশে সুস্থ ধারার রাজনীতি চর্চার আহ্বান জানান।

এর আগে, গতকাল রাতে এনসিপির এই নেতা পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন, এমন একটি সংবাদ গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টিকে গুজব বলে উল্লেখ করে এনসিপি।

ঢাকা/রায়হান/সাইফ

সম্পর্কিত নিবন্ধ