প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়ানো ও অভিবাসন ইস্যুতে কঠোর হওয়ার ঘোষণা জাপানের প্রধানমন্ত্রীর
Published: 24th, October 2025 GMT
জাপানের নতুন প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচি দেশটির প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি চীনকে ইঙ্গিত করে এবং অভিবাসন বিষয়ে কঠোর অবস্থান নেওয়ারও অঙ্গীকার করেছেন। দায়িত্ব গ্রহণের পর সরকারের সম্ভাব্য নীতি নিয়ে আজ শুক্রবার পার্লামেন্টে দেওয়া প্রথম ভাষণে এ অঙ্গীকার করেন তাকাইচি।
জাপানের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী জনমত জরিপে এখন পর্যন্ত বেশ ভালো অবস্থানে রয়েছেন। পার্লামেন্টে তিনি ঘোষণা করেন, চলতি অর্থবছরেই মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ২ শতাংশ প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় করা হবে। এর ফলে সরকার নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা দুই বছর আগেই পূরণ হবে।
এমন সময় তাকাইচি এ ঘোষণা দিলেন, যখন জাপানসহ মিত্রদেশগুলোকে সামরিক ব্যয় বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে আসা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তিন দিন পরই টোকিও সফরে আসছেন। জাপান সফরের পর তিনি দক্ষিণ কোরিয়ায় চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনায় অংশ নেবেন।
লৌহমানবী খ্যাত মার্গারেট থ্যাচারের আদর্শে অনুপ্রাণিত তাকাইচি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আসন্ন সফরের সময় তাঁর সঙ্গে ‘একটি আস্থার সম্পর্ক’ গড়ে তোলার এবং ‘জাপান-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায়’ উন্নীত করারও কথা বলেছেন।
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আগে থেকেই কট্টর চীনবিরোধী হিসেবে পরিচিত তাকাইচি তাঁর ভাষণে আরও বলেন, চীন, উত্তর কোরিয়া ও রাশিয়ার সামরিক কর্মকাণ্ড ‘গুরুতর উদ্বেগের কারণ’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা যে মুক্ত, অবাধ ও স্থিতিশীল আন্তর্জাতিক ব্যবস্থায় অভ্যস্ত, সেটি ক্ষমতার ভারসাম্যের ঐতিহাসিক পরিবর্তন এবং তীব্র ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতার কারণে মারাত্মকভাবে নড়বড়ে হয়ে যাচ্ছে।’
এদিকে ক্রমেই জাপানের প্রতিরক্ষা বাজেট বৃদ্ধি এবং অস্ত্র রপ্তানিতে দেশটি বিধিনিষেধ শিথিল করায় চীন কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গুয়ো জিয়াকুন বলেন, ‘এসব পদক্ষেপ জাপানের এশীয় প্রতিবেশী এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে গুরুতর সন্দেহ সৃষ্টি করছে যে জাপান সত্যিই কেবল আত্মরক্ষামূলক অবস্থানে এবং শান্তিপূর্ণ উন্নয়নের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ কি না।’
আরও পড়ুনজাপানের ‘লৌহমানবী’ হওয়ার স্বপ্ন দেখা কে এই সানায়ে তাকাইচি২১ অক্টোবর ২০২৫.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সম্পূরক বৃত্তির দাবিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
সম্পূরক বৃত্তির দাবিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ করেছেন ‘আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন’ পরিচালিত আবাসন প্রকল্পে থাকা শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বেসরকারি এই প্রকল্পকে ‘হল’ হিসেবে দেখিয়ে আবাসন বৃত্তি থেকে তাঁদের বঞ্চিত করছে, এমন অভিযোগে আজ বুধবার দুপুরে শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনের ফটক অবরোধ করে অবস্থান নেন।
এর আগে দুপুর নাগাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের একাত্তরের গণহত্যা ভাস্কর্য চত্বর থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদ, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ, বিজ্ঞান অনুষদ প্রাঙ্গণ ঘুরে প্রশাসনিক ভবনের সামনে এসে শেষ হয়।
এ সময় শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে স্লোগান দেন। তাঁদের স্লোগানের মধ্যে ছিল: ‘আস–সুন্নাহে বৃত্তি দে, ভুজুংভাজুং ছেড়ে দে’, ‘এক দুই তিন চার, বৃত্তি আমার অধিকার’ এবং ‘আস–সুন্নাহে বৃত্তি দে, নইলে গদি ছেড়ে দে’।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের বৃত্তি নীতিমালায় আস–সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের মেধাবী প্রকল্পকে ‘হল’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। ফলে তাঁরা আবাসন বৃত্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তাঁরা বলছেন, প্রকল্পটি বেসরকারি হওয়ায় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব হল না হওয়ায় তাঁদের বৃত্তি থেকে বাদ দেওয়া যাবে না।
বিক্ষোভ কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী হাবিবুল বাশার সুমন বলেন, ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের জন্য কোনো হল নেই। আস–সুন্নাহ ফাউন্ডেশন নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান তাদের মেধাবী প্রজেক্ট নামের একটি প্রকল্প আমাদের জন্য করেছে। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যত কোনো হল নয়।’
শিক্ষার্থী সুমন আরও বলেন, ‘বৃত্তি নীতিমালায় সুকৌশলে আস–সুন্নাহ প্রজেক্টকে হল হিসেবে উপস্থাপন করে বৃত্তি থেকে আমাদের বাদ দেওয়ার চেষ্টা করছে। আমরা এ পাঁয়তারাকে রুখে দিতে প্রতিবাদ করছি।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মিজানুর রহমান হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘আস–সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের মেধাবী প্রকল্প থেকে যখন আগামী জানুয়ারিতে শিক্ষার্থীরা বের হয়ে যাবে, তখন তাদের আশ্রয়স্থল কোথায়? আমাদের দাবি মানা না হলে আমরা আরও কঠিন আন্দোলন করব।’
শিক্ষার্থীরা প্রায় বিকেল চারটা পর্যন্ত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের ফটক অবরোধ করে থাকেন। পরে তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে করে আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন পরিচালিত আবাসন প্রকল্পে ফিরে যান।
জানা যায়, আস–সুন্নাহ ফাউন্ডেশন পরিচালিত মেধাবী প্রকল্পের আওতায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২২-২৩, ২০২৩-২৪ এবং ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের প্রায় ৭০০ শিক্ষার্থীকে আবাসন সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। সেখানে শিক্ষার্থীরা নির্দিষ্ট পরিমাণ ফি দিয়ে থাকেন। এই প্রকল্পে থাকা–খাওয়ার ব্যবস্থার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের দক্ষতা উন্নয়নে বিভিন্ন প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা রয়েছে।