মাস শেষ হওয়ার এক সপ্তাহ আগেই সর্বোচ্চ সংক্রমণের রেকর্ড
Published: 24th, October 2025 GMT
ডেঙ্গুতে চলতি বছর সর্বোচ্চ সংক্রমণ হয়েছিল গত সেপ্টেম্বর মাসে। তবে চলতি অক্টোবর মাস শেষ হওয়ার এক সপ্তাহ আগেই গত মাসের চেয়ে বেশি সংখ্যায় ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। জনস্বাস্থ্যবিদদের আশঙ্কা, আগামী নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসেও দেশের ডেঙ্গুর প্রকোপ কমবে না, বরং বাড়তে পারে। এর অর্থ হলো, এ বছরের সংক্রমণ ধারাবাহিকভাবে চলতে থাকবে এবং নতুন বছরের সঙ্গে যুক্ত হবে। এতে আগামী বছরেও এ রোগের প্রাদুর্ভাবমুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা আর থাকছে না।
বিশিষ্ট কীটতত্ত্ববিদ তৌহিদউদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘এবার ডেঙ্গুর সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে প্রাকৃতিকভাবে। কি সিটি করপোরেশন, কি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর—কারও কোনো তৎপরতা দেখলাম এর নিয়ন্ত্রণে। এবার যেমন ডেঙ্গুর বিস্তার ঘটেছে প্রাকৃতিকভাবে, কমবেও প্রাকৃতিকভাবে।’
সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় (গত বৃহস্পতিবার সকাল আটটা থেকে গতকাল শুক্রবার সকাল আটটা পর্যন্ত) এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন ৪৬৮ জন। এ সময় কারও মৃত্যু হয়নি এ রোগে। গতকাল বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডেঙ্গু নিয়ে দেওয়া প্রাত্যহিক প্রতিবেদনে এ তথ্য পাওয়া গেছে। এ নিয়ে চলতি বছর এখন পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ৬৩ হাজার ৬৩৮–এ। আর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ২৯৯ জন।
সেপ্টেম্বর মাসে দেশে চলতি বছরের সর্বোচ্চ সংক্রমণ হয়। এর সংখ্যা ছিল ১৫ হাজার ৮৬৬। আর চলতি মাসে ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা ১৬ হাজার ২৯৬।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, নতুন আক্রান্ত ব্যক্তিদের ৬১ শতাংশই পুরুষ। গত ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৬ থেকে ৩০ বছর বয়সী মানুষ।
সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের হাসপাতালগুলোয় ডেঙ্গু নিয়ে ভর্তি হয়েছেন ১৫৮ জন। এ সময় দুই সিটির বাইরে ঢাকা বিভাগে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীরর সংখ্যা ছিল ১০৪। ঢাকা বিভাগের বাইরে বরিশাল বিভাগে রোগীর সংখ্যা বেশি ছিল, এ সংখ্যা ৭৩।
চলতি মাসের শুরু থেকে বৃষ্টি হচ্ছে। সপ্তাহখানেক ধরে বৃষ্টি কমেছে। এতে মশার বংশবৃদ্ধির গতি কমে আসতে পারে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তবে এরই মধ্যে আবহাওয়া অধিদপ্তর পূর্বাভাস দিয়েছে, এ মাসের শেষে সাগরে নিম্নচাপের সৃষ্টি হতে পারে। ইতিমধ্যে একটি লঘুচাপের সৃষ্টি হয়েছে। আর এই লঘুচাপ থেকে যদি নিম্নচাপ হয়, তবে চলতি সপ্তাহের শেষে দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি হতে পারে। এতে ডেঙ্গুর জীবাণু এডিসের বিস্তার আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন জনস্বাস্থ্যবিদ বে-নজীর আহমদ। তিনি গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘এবারের বৃষ্টির ফলে ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশার প্রজননের ধারবাহিকতা অটুট থাকবে। ডেঙ্গু কমেনি, মশাও কমেনি। এর মধ্যে যদি আবার বৃষ্টি হয়, তার অর্থ হলো নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসেও ডেঙ্গু কমবে না। আর এর মাধ্যমে আমরা ডেঙ্গু নিয়ে নতুন বছরে প্রবেশ করব। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো কোনো কার্যকারিতা দেখাচ্ছে না। এটারই ফল ডেঙ্গুর এবারের বড় ধরনের সংক্রমণ।’
চলতি বছরের শুরুতে ডেঙ্গু বেড়ে গেলেও মার্চ মাস থেকে তা কমতে থাকে। তবে জুন মাস থেকে প্রকোপ বাড়তে থাকে। তখনই জনস্বাস্থ্যবিদেরা আশঙ্কা করেছিলেন, এবার ডেঙ্গুর বিস্তার বাড়তে পারে। চলতি বছর এখন পর্যন্ত যত মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন, তা আগের বছরের এই সময়ের চেয়ে বেশি।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা.
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: জনস ব স থ য ম বর ম স স ক রমণ বছর র
এছাড়াও পড়ুন:
তারেক রহমান নভেম্বরের মধ্যে দেশে ফিরবেন
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আগামী নভেম্বর মাসের মধ্যেই দেশে ফিরবেন বলে আশা করছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। গতকাল শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর গুলশানে নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান।
তারেক রহমানের দেশে ফেরার সুনির্দিষ্ট কোনো তারিখ আছে কি না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘খুব শিগগির নির্ধারিত তারিখটি জানতে পারবেন। আশা করি, নভেম্বরের মধ্যেই তিনি ফিরবেন।’
এই প্রথম বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের কোনো নেতা তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে মাসের (নভেম্বর) কথা উল্লেখ করলেন। এর আগে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলটির অন্য নেতারাও একাধিকবার বলেছেন, শিগগিরই তারেক রহমান দেশে ফিরবেন। তবে কোনো নেতাই তারেক রহমানের দেশে ফেরার দিনক্ষণ নিয়ে সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলেননি। অবশ্য গত ২৫ সেপ্টেম্বর ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেছিলেন, তারেক রহমান কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই দেশে ফিরবেন।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তারেক রহমান কোন কোন আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন, এমন প্রশ্নেরও জবাব দিয়েছেন সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অবশ্যই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন। আসন পরে নির্ধারিত হবে। বাংলাদেশের যেকোনো আসন থেকে তিনি নির্বাচন করতে পারেন।
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আগামী নির্বাচনে অংশ নেবেন কি না, এই প্রশ্নে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমরা আশা করছি, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া নিজের শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে নিজের সিদ্ধান্ত নেবেন নির্বাচন করবেন কি না। আমরা তো চাই তিনি নির্বাচনে অংশ নিন।’
জাতীয় পার্টি প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, জাতীয় পার্টি বাংলাদেশে নিষিদ্ধ কোনো রাজনৈতিক দল নয়। তাদের রেজিস্ট্রেশনও বহাল আছে। তাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের কোনো মামলা এখন পর্যন্ত দায়ের করা হয়নি। জাতীয় পার্টি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে কি করবে না, সেটা তাদের নিজস্ব ব্যাপার।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘আওয়ামী লীগের তো কোনো রেজিস্ট্রেশন এখন নাই। নির্বাচন কমিশনে মার্কাও নাই এবং তাদের বিরুদ্ধে, তাদের নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে এবং গণহত্যার অপরাধে বিচার চলছে। অনেকেই বাকি আছে। তারাও হয়তো বিচারের আওতায় আসবে। দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হতে পারে শিগরিই।...এখন যদি জাতীয় পার্টি এসে আওয়ামী লীগকে ছাড়া নির্বাচন না করতে চায়, সেটা তাদের স্বাধীনতা।’
আরপিও নিয়ে আপত্তি, সরকারকে চিঠি দেবে বিএনপিনির্বাচনসংক্রান্ত আইন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ বা আরপিও (সংশোধন) অধ্যাদেশের যে খসড়া উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন হয়েছে, তা নিয়ে আপত্তি রয়েছে বিএনপির। এ প্রসঙ্গে সালাহউদ্দিন আহমদ সাংবাদিকদের বলেছেন, এই খসড়ায় পরিবর্তন আনতে সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে তাঁরা চিঠি দেবেন।
কোনো দল জোটগতভাবে নির্বাচন করলেও নিজেদের প্রতীকে অংশ নিতে হবে। এমন বিধান যুক্ত করে নির্বাচনসংক্রান্ত আইন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (সংশোধন) অধ্যাদেশের খসড়া গত বৃহস্পতিবার অনুমোদন করেছে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ।
আরপিও সংশোধন প্রসঙ্গে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘নির্বাচনী ব্যবস্থা সংস্কার–সংক্রান্ত বিষয়গুলোর অনেকগুলোতে আমরা সবাই সম্মত হয়েছিলাম। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে আইন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে নির্বাচনী আচরণবিধি ও আরপিওর যে খসড়াটা উত্থাপন করা হয়েছে, এটাতে যে পরিবর্তন আনা হয়েছে, তাতে বিএনপির কোনো সম্মতি ছিল না।’
জোটবদ্ধ নির্বাচনে নিজ দলের প্রতীকে নির্বাচন করতে হলে ছোট রাজনৈতিক দলগুলো জোটবদ্ধ হতে উৎসাহিত হবে না বলেও মনে করেন সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, ‘এটাতে তাদেরও (ছোট রাজনৈতিক দলগুলোরও) সম্মতি নেই, আমাদেরও সম্মতি নেই। এটা নির্বাচন কমিশন থেকে একতরফাভাবে কেন উত্থাপন করা হলো, জানি না।’
চলতি মাসেই ২০০ প্রার্থীকে ‘গ্রিন সিগন্যাল’ দেবে বিএনপিচলতি অক্টোবর মাসের মধ্যে ২০০ আসনে দলীয় প্রার্থী বাছাই করে তাঁদের সবুজসংকেত দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, ‘এই মাসের মধ্যেই দলের পক্ষ থেকে কমবেশি ২০০ নির্বাচনী এলাকায় একক প্রার্থীকে হয়তো আমরা গ্রিন সিগন্যাল দেব।’
অনেকে বলে বেড়াচ্ছেন তারেক রহমানের কল পেয়েছেন, তাঁদের প্রার্থিতা নিশ্চিত...এমন এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দিনরাতই কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন। এটি নতুন কিছু নয়। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত সবার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। নির্বাচনের আগে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা হওয়াই স্বাভাবিক।’
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেওয়া জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নিয়ে জোট গঠিত হতে পারে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, রাজনৈতিক দল হিসেবে যোগাযোগ আছে, তবে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক আলোচনা হয়নি।
দুই উপদেষ্টা প্রসঙ্গেঅন্তর্বর্তী সরকারের দুজন উপদেষ্টাকে (আসিফ মাহমুদ ও মাহফুজ আলম) পদত্যাগ করতে বলা হয়েছে—এ বিষয়ে মতামত জানতে চাইলে বিএনপির এই নেতা বলেন, দুজন ছাত্র উপদেষ্টা সরকারের অংশ। তাঁরা যদি আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চান, তাহলে তাঁদের নিজেদের সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত কবে তাঁরা সরকার থেকে সরে আসবেন।
দুজন উপদেষ্টাকে নিয়ে আরেক প্রশ্নে বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘তাঁরা তো বলছেন, তাঁরা ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে আছেন। কোনো দলের অংশ হিসেবে নয়। সে ক্ষেত্রে যদি তাঁরা কোনো দলে যোগদান না করেন, অথবা নির্বাচন না করতে চান, তখন সে বিষয়টা তখন দেখা যাবে।’