এআইয়ের যুগে দর্শনার্থী হারাচ্ছে উইকিপিডিয়া
Published: 25th, October 2025 GMT
ইন্টারনেটের উন্মুক্ত তথ্যভান্ডার হিসেবে একসময় প্রায় একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল উইকিপিডিয়ার। কিন্তু কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তানির্ভর (এআই) সার্চ ও চ্যাটবট প্রযুক্তির বিস্তারে এখন সেই অবস্থান চ্যালেঞ্জের মুখে। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালন সংস্থা উইকিমিডিয়া জানিয়েছে, এআই–চালিত সারাংশ ও কথোপকথনভিত্তিক চ্যাটবট ব্যবহারকারীদের সরাসরি তথ্য দিচ্ছে। ফলে মানুষ উইকিপিডিয়ার মূল সাইটে কম প্রবেশ করছেন। এর প্রভাব এরই মধ্যে স্পষ্ট। উইকিপিডিয়ার সার্বিক দর্শনার্থী বা ট্রাফিকের সংখ্যা কমে যাচ্ছে।
উইকিমিডিয়ার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বিভিন্ন সার্চ মাধ্যম এখন এমনভাবে তথ্য উপস্থাপন করছে যে ব্যবহারকারীর আর মূল উৎসে গিয়ে পড়ার প্রয়োজন হয় না। গুগল, ওপেনএআই বা অন্যান্য সার্চ সেবা বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে তথ্য সংগ্রহ করে সংক্ষেপে ব্যবহারকারীর সামনে তুলে ধরছে। ফলে ‘লিংকে না গিয়েই’ মানুষ তথ্য পাচ্ছেন, আর সেই সুযোগেই কমে যাচ্ছে উইকিপিডিয়ার পাঠকসংখ্যা। বিশ্বজুড়ে কোটি মানুষের জ্ঞানের ভরসাস্থল হিসেবে পরিচিত উইকিপিডিয়া এভাবে ধীরে ধীরে তার প্রভাব হারাচ্ছে। উইকিমিডিয়ার মতে, এটি শুধু দর্শক কমে যাওয়ার বিষয় নয়। এর সঙ্গে জড়িত মাধ্যমটির অস্তিত্ব ও আর্থিক অবস্থান টিকিয়ে রাখার প্রশ্নও।
প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে মানুষের ছদ্মবেশে পরিচালিত নানা বটও এখন তাদের ওয়েবসাইটের বড় ট্রাফিক উৎসে পরিণত হয়েছে। এসব বট নিরাপত্তা ফিল্টার এড়িয়ে উইকিপিডিয়ার কনটেন্ট সংগ্রহ করছে এবং তা ব্যবহার করছে এআই–চালিত সার্চ ইঞ্জিন ও চ্যাটবটগুলো। চলতি বছরের শুরুর দিকে ব্রাজিল থেকে এমনই এক ট্রাফিক বৃদ্ধি পর্যবেক্ষণ করা হয়, যেখানে মানুষ ও বটের ট্রাফিকের পার্থক্য স্পষ্টভাবে ধরা পড়ে। উইকিপিডিয়া একা নয়, একই ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বড় বড় সংবাদমাধ্যমও। তাদের অভিযোগ, এআই সার্চ ইঞ্জিনগুলো সংবাদমাধ্যমের কনটেন্ট ব্যবহার করছে, কিন্তু পাঠকেরা মূল ওয়েবসাইটে প্রবেশ করছেন না। গুগল সম্প্রতি মুঠোফোন ও ওয়েব উভয় প্ল্যাটফর্মে এআই মোড চালু করেছে, যা সার্চ ফলাফলে সংক্ষিপ্ত সারাংশ দেখায়। ফলে মানুষ প্রাথমিক তথ্য সেখানেই পেয়ে যাচ্ছেন, মূল উৎসে যাওয়ার প্রয়োজন হচ্ছে না।
তবু উইকিপিডিয়া প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের বিপক্ষে নয়। এমনকি প্রতিষ্ঠানটি চাইছে পরিবর্তনের এই ধারায় নিজেদের অবস্থান আরও শক্তিশালী করতে। উইকিমিডিয়া জানিয়েছে, তারা এখন নীতিমালায় পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে, যাতে উইকিপিডিয়ার কনটেন্ট দায়িত্বশীলভাবে ব্যবহৃত হয় এবং উৎস হিসেবে তার মর্যাদা বজায় থাকে। তরুণ প্রজন্মকে আরও সম্পৃক্ত করতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয় উপস্থিতি বাড়ানোর পরিকল্পনাও করছে তারা। এর মাধ্যমে কনটেন্টের বিস্তার ঘটিয়ে নতুন প্রজন্মের কাছে উইকিপিডিয়াকে আরও প্রাসঙ্গিক করে তুলতে চায় প্রতিষ্ঠানটি।
সূত্র: নিউজ ১৮ ডটকম
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: উইক প ড য় র উইক ম ড য় কনট ন ট ব যবহ র
এছাড়াও পড়ুন:
কোন ধরনের পেশা ঝুঁকিতে ফেলবে এআই, কোনটি থাকবে নিরাপদ
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমবাজারের কাঠামোকে আমূল বদলে দিতে যাচ্ছে। এ বিষয়ে সমর্থক ও সংশয়বাদী—উভয় পক্ষই একমত। আগে কর্মীরা যেসব কাজ করতেন, প্রযুক্তির ক্রমাগত অগ্রগতির ফলে সেসব কাজ এখন এআই অনায়াসে করতে সক্ষম হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি) থেকে সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণা অনুযায়ী, এআই ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ১২ শতাংশ কর্মীকে স্থলাভিষিক্ত হওয়ার অর্জন করেছে, যা মজুরি হিসেবে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার কোটি ডলারের সমপরিমাণ।
কেন এটি গুরুত্বপূর্ণযুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি ক্রমেই এআই গবেষণা ও ব্যবহারনির্ভর হয়ে উঠছে। কিছু হিসাবে গত এক দশকে বেসরকারি খাতে এআই প্রযুক্তিতে বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ৫০ হাজার কোটি ডলার। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতাও বেড়েছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এআই ও সংশ্লিষ্ট জ্বালানি খাতে শত শত কোটি ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় বিশ্বের শীর্ষ নেতা বানানোর অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন।
তবে এ উদ্দীপনার বিপরীতে রয়েছে উদ্বেগও। অনেকের আশঙ্কা, এআই শ্রমবাজারে অভূতপূর্ব ধাক্কা দেবে। এতে একদিকে পুনরাবৃত্তিমূলক শ্রমভিত্তিক কাজ, অন্যদিকে নকশা ও কোডিংয়ের মতো উচ্চদক্ষ পেশাও ঝুঁকিতে পড়বে।
চলতি বছরে কর্মী ছাঁটাইয়ের যে ঢেউ যুক্তরাষ্ট্রে দেখা গেছে, তার সঙ্গেও এআইকে যুক্ত করা হচ্ছে। প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠান অ্যামাজন প্রায় ১৪ হাজার কর্মী ছাঁটাইয়ের ঘোষণা দেওয়ার সময় এআই প্রযুক্তির রূপান্তরকারী অগ্রগতির কথা উল্লেখ করেছে।
কী জানা গেলএমআইটির গবেষকেরা ‘আইসবার্গ ইনডেক্স’ নামে একটি সূচকের তথ্য ব্যবহার করেছেন, যা শ্রমবাজারে এআইয়ের প্রভাব বা ঝুঁকি পরিমাপের জন্য তৈরি হয়েছে। ৩ হাজার কাউন্টির ৯২৩টি পেশার অন্তর্ভুক্ত ১৫ কোটি ১০ লাখ কর্মী এবং ৩২ হাজারের বেশি দক্ষতা বিশ্লেষণ করে গবেষকেরা অনুমান করেছেন, কত দ্রুত এআইয়ের সক্ষমতা মানুষের পেশাগত দক্ষতার সঙ্গে মিলে যেতে পারে।
তবে গবেষকেরা স্পষ্ট করেছেন, ১২ শতাংশের এই হিসাব হলো প্রযুক্তিগত উন্মুক্ততা, যেখানে এআই পেশাগত কাজ সম্পাদন করতে পারে। এটি সরাসরি চাকরি হারানোর ফলাফল নয়। বাস্তব শ্রমবাজারে এর প্রভাব নির্ভর করবে প্রতিষ্ঠানের কৌশল, কর্মীদের অভিযোজনক্ষমতা ও নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্তের ওপর।
গবেষণায় বলা হয়েছে, বর্তমানে এআইয়ের ব্যবহার মূলত প্রযুক্তি খাতের পেশাগুলোতেই সীমাবদ্ধ, যা শ্রমবাজারের মোট মজুরি মূল্যের ২ দশমিক ২ শতাংশ প্রতিনিধিত্ব করে। তবে এআইয়ের প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বুদ্ধিবৃত্তিক ও প্রশাসনিক কাজ পর্যন্ত বিস্তৃত, যা শ্রমবাজারের ১১ দশমিক ৭ শতাংশ অংশজুড়ে রয়েছে।
গবেষকেরা কয়েকটি বিস্তৃত খাত ও পেশাকে ‘এআই উন্মুক্ত’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন, যেখানে ঝুঁকি তুলনামূলক বেশি। এর মধ্যে রয়েছে কম্পিউটিং ও প্রযুক্তি খাত। যেমন সফটওয়্যার প্রকৌশলী, ডেটা সায়েন্টিস্ট, বিশ্লেষক, প্রোগ্রাম ম্যানেজার ও সংশ্লিষ্ট পেশা—এসব খাতে বর্তমানে এআইয়ের ব্যবহার বেশি। বুদ্ধিবৃত্তিক কাজ, যেমন আর্থিক বিশ্লেষণ ও প্রশাসনিক সমন্বয়। অর্থ, হিসাবরক্ষণ ও অনুরূপ ব্যবসায়িক সেবা খাত এবং পেশাগত সেবা খাত, যার মধ্যে স্বাস্থ্যসেবার প্রশাসনিক ক্ষেত্রও রয়েছে।
তবে গবেষণাটি কেবল প্রযুক্তিগত ও বুদ্ধিবৃত্তিক কাজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল, যেখানে প্রযুক্তির পরিপক্বতা ও ব্যবহারপদ্ধতি পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। গবেষকেরা বলছেন, শারীরিক স্বয়ংক্রিয়তার (ফিজিক্যাল অটোমেশন) প্রভাব ভবিষ্যতে সক্ষমতা আরও বাড়লে শ্রমবাজারে ক্রমেই বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।
এর আগে গত জুলাইয়ে মাইক্রোসফট প্রকাশিত এক গবেষণায় কোন কোন পেশায় এআই স্থলাভিষিক্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে, সে বিষয়ে আরও বিস্তৃত চিত্র তুলে ধরা হয়েছিল।
মাইক্রোসফট তাদের কো-পাইলট চ্যাটবটের সঙ্গে দুই লাখ ব্যবহারকারী কথোপকথনের বিশ্লেষণের ভিত্তিতে প্রতিটি পেশার জন্য একটি করে এআই প্রযোজ্যতা স্কোর নির্ধারণ করেছে এবং সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকা পেশাগুলো চিহ্নিত করেছে। এগুলো হলো—
একটি প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানের ডেস্কে কাজ করছেন কর্মীরা