প্রচারণা ও সরকারি উদ্যোগ বাড়াতে হবে
Published: 27th, November 2025 GMT
দেশব্যাপী যখন টাইফয়েডের টিকাদান কর্মসূচি শেষ হলো, তখন গাজীপুরের ভাওয়ালগড় ইউনিয়নের হোতাপাড়া গ্রামের বেদে সম্প্রদায়ের যাযাবর পরিবারগুলো এ সম্পর্কে কিছুই জানতো না। তাঁবুতে বসবাসরত এই জনগোষ্ঠীর শিশুদের জন্য টিকা ছিল নাগালের বাইরে। এটি কেবল একটি স্বাস্থ্য কর্মসূচির ব্যর্থতা নয়; বরং সমাজের প্রান্তিকতম অংশ রাষ্ট্রীয় সুবিধা থেকে কতটা বিচ্ছিন্ন, সেটিও প্রতীয়মান হয়। তবে শেষ পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তাদের টিকাদানের ব্যবস্থা করেছে বলে জানা গেছে।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানায়, হোতাপাড়ার এই অভিভাবকেরা জানতেন না টাইফয়েড টিকা কী বা কোথায় এটি দেওয়া হচ্ছে। তাঁদের শিশুরা স্কুলে যায় না, তাঁরা ঘন ঘন স্থান পরিবর্তন করেন এবং সরকারি প্রচারণার কোনো মাধ্যমই তাঁদের কাছে পৌঁছায় না। এ কারণে তাঁদের সন্তানেরা সমাজের অন্য শিশুদের মতো স্বাস্থ্যগত সুরক্ষা পাওয়ার মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
বেদে সম্প্রদায় মূলত নদীভাঙন বা অন্য প্রাকৃতিক কারণে বাস্তুচ্যুত হয়ে যুগ যুগ ধরে যাযাবর জীবন যাপন করছে। সিভিল সার্জন মো.
এ রকম কেবল টাইফয়েড টিকা নয়, অন্যান্য নিয়মিত টিকাদান, শিক্ষা এবং জরুরি স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রেও বেদে সম্প্রদায়ের বঞ্চনার চিত্র তুলে ধরে। জেলা–উপজেলার প্রশাসনের মাধ্যমে এসব প্রান্তিক ও বাস্তুচ্যুত গোষ্ঠীকে পরিকল্পনার আওতায় নিয়ে আসতে হবে। প্রয়োজন তাদের খুঁজে বের করে, তাদের যাযাবর জীবনযাত্রার সঙ্গে মানানসই একটি বিশেষ টিকাদান কর্মসূচি তৈরি করা যেতে পারে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সমাজকর্মী, এনজিও বা স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে তাদের কাছে সরাসরি পৌঁছানো যেতে পারে। শুধু স্কুল বা স্থায়ী ক্লিনিকভিত্তিক প্রচারণার ওপর নির্ভর করলে, বেদে বা অন্যান্য ভাসমান জনগোষ্ঠীর শিশুরা বারবার স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়বে।
হোতাপাড়ার বেদে শিশুদের মতো সমাজের প্রান্তিকতম অংশ যখন মৌলিক স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হয়, তখন দেশের সামগ্রিক স্বাস্থ্য সূচক বা উন্নয়নের দাবি প্রশ্নবিদ্ধ হয়। দেরিতে হলেও বেদে শিশুদের টিকাদানের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
করিন্থ: অর্থনৈতিক উন্নতির শিখরে পৌঁছেছিলো যে নগর রাষ্ট্র
প্রাচীন গ্রীসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এবং সমৃদ্ধশালী নগর-রাষ্ট্র ছিলো করিন্থ। এটি তার কৌশলগত অবস্থান, বাণিজ্য এবং সাংস্কৃতিক অবদানের জন্য বিখ্যাত ছিল। এটি পেলোপোনিস এবং মূল গ্রীসের সংযোগকারী ইস্তমাস অফ করিন্থ নামক সংকীর্ণ ভূখণ্ডে অবস্থিত ছিল।
করিন্থ দুটি উপসাগর, করিন্থিয়ান এবং সারোনিক, উভয়ের সাথেই সংযুক্ত ছিল। এই অনন্য ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে এটি স্থলপথ এবং সমুদ্রপথ, উভয় বাণিজ্যেরই প্রধান কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছিল।
আরো পড়ুন:
নিম-হলুদ কী সত্যিই ত্বকের জন্য ভালো?
ইডিপাস: না জেনে নিজের মাকে বিয়ে করেছিলেন
খ্রিষ্টপূর্ব ৭ম এবং ৬ষ্ঠ শতাব্দীতে করিন্থ অর্থনৈতিক উন্নতির শিখরে পৌঁছায়। এই সময়ে তারা মৃৎশিল্প, বিশেষ করে কালো রঙের মৃৎপাত্র তৈরিতে উদ্ভাবনী কৌশল ব্যবহার করে, যা ভূমধ্যসাগর জুড়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে।
প্রথমদিকে করিন্থ একটি রাজতন্ত্র ছিল, যা পরে ব্যাকিয়াড পরিবারের অভিজাতদের দ্বারা শাসিত হয়। পরবর্তীতে সাইপসেলাস এবং তার পুত্র পেরিয়ান্ডার -এর অধীনে নগরীটি স্বৈরশাসকদের দ্বারা শাসিত হয়েছিল (আনুমানিক ৬৫৭ থেকে ৫৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ)।
করিন্থ তার রাজনৈতিক প্রভাব বাড়াতে কর্কিরা এবং সিসিলির সিরাকিউস এর মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানে উপনিবেশ স্থাপন করেছিল, যা পশ্চিম ভূমধ্যসাগরে তাদের বাণিজ্যিক আধিপত্য নিশ্চিত করে।
এই নগরীতে অ্যাপোলোর মন্দিরসহ অসংখ্য স্মৃতিস্তম্ভ এবং স্থাপত্য নিদর্শন ছিল। এখানে অলিম্পিক গেমসের পরেই মর্যাদাপূর্ণ ইস্তমিয়ান গেমস অনুষ্ঠিত হতো, যা এর সাংস্কৃতিক গুরুত্ব তুলে ধরে।
১৪৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দে রোমান জেনারেল লুসিয়াস মুমিয়াস করিন্থ দখল ও ধ্বংস করে দেন। এর প্রায় এক শতাব্দী পরে, ৪৪ খ্রিস্টপূর্বাব্দে জুলিয়াস সিজার এটিকে একটি রোমান উপনিবেশ হিসেবে পুনর্নির্মাণ করেন এবং এটি গ্রীসের রোমান প্রদেশের রাজধানী হয়।
ঢাকা/লিপি