নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ায় আবারো ইলিশ মাছ বেচাকেনায় সরগরম হয়ে উঠেছে চাঁদপুরের বাজারগুলো। তবে, দাম এখনো আকাশচুম্বী। মাছ ব্যবসায়ীরা বলছেন, পদ্মা ও মেঘনা নদীতে ইলিশ কম পাওয়া যাওয়ায় বেশি দামে এই মাছ বিক্রি করতে হচ্ছে তাদের। মৎস্য সমবায় সমিতির এক নেতা জানান, সামনে ইলিশের আমদানি বাড়লে দাম অনেকটা কমে যাবে।

রবিবার (২৬ অক্টোবর) ভোরে সরেজমিনে দেখা গেছে, ইলিশ আহরণ ও বেচাকেনাকে ঘিরে চাঁদপুরের জেলে পাড়াসহ বড়-ছোট সব মাছের বাজারে কর্মচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। তুলনামূলক বড় ইলিশ পাওয়া না গেলেও নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার প্রথম দিনেই ছোট ও মাঝারি সাইজের ইলিশে সয়লাব বাজার। মাছ ধরায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার পর থেকে পদ্মায় জাল ফেলে বেশি সময় কাটাচ্ছেন জেলেরা। 

আরো পড়ুন:

বরগুনায় নদী ও সাগর মোহনা থেকে ১৫০ জেলে গ্রেপ্তার

মেঘনায় গ্রেপ্তার ২৮ জেলেকে জেল-জরিমানা

দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে বড় ইলিশ বেচাকেনার স্থান বড়ষ্টেশন মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের মাছ বিক্রেতা সম্রাট বলেন, “ইলিশ কম পাওয়া যাচ্ছে। যে কারণে ছোট সাইজের ইলিশ প্রতিহালি (২০০ গ্রাম ওজন) বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ থেকে ৭০০ টাকায়। ৮০০ থেকে ৯০০ গ্রাম বা এক ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২২০০ থেকে ২৫০০ টাকা দরে। দুই কেজি ২০০ গ্রাম থেকে আড়াই কেজি পর্যন্ত ওজনের প্রতিকেজি পদ্মার ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৩৫০০ টাকা থেকে ৪ হাজার টাকায়।

মাছ ক্রেতা সফিক বলেন, “নদীতে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা দিলেই হবে না, নিয়মিত বাজার মনিটরিংয়েও ইলিশের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। নিষেধাজ্ঞার আগে এক কেজি ওজনের ইলিশ ২০০০ থেকে ২১০০ টাকা দিয়ে কিনলেও, এখন সেই একই ওজনের মাছ ২২০০ থেকে ২৩০০ টাকা দিয়ে কিনতে হচ্ছে। লাভটা হলো কি?”

জেলে কাদির বলেন, “মেঘনা নদীর ইলিশের সাইজ ছোট। তাই পদ্মা নদীতে নৌকা নিয়ে বেশি সময় কাটালাম। কাঙ্খিত ইলিশ পাইনি। তিন হালি ইলিশ পেয়েছি যা মাঝারি আকারের। এই মাছ বিক্রি করে নৌকার তেল খরছ উঠাতে কষ্ট হয়ে যাবে।”

আড়তদার ঈসমাইল বলেন, “ইলিশের নির্বিঘ্নে চলাচল নিশ্চিতে নদী খননের পরামর্শ রইল। নদীতে যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা ফেলা বন্ধেও কার্যকর পদক্ষেপ প্রয়োজন। তাহলে সাগরের ইলিশ নদীতে আসবে। তখন ইলিশের আমদানি বাড়বে এবং দাম কমবে।”

অনলাইনে ইলিশ বিক্রেতা সজীব বলেন, “ইলিশের কিছু অর্ডার পেয়েছিলাম। নিষেধাজ্ঞায় দিতে পারিনি। এখন আশা করছি সব অর্ডার ডেলিভারি দিতে পারব। পূর্বের মতোই ইলিশের দাম উঠানামা শুরু হয়েছে।”

চাঁদপুর মৎস্য সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক শবে বরাত সরকার বলেন, “প্রাকৃতিক মাছ ইলিশ আবহাওয়ার উপর নির্ভর করে জেলের জালে কম-বেশি ধরা পড়ে। তাই সামনে ভালো সিজন আসছে ইলিশের। তখন দাম কমবে এমনটি প্রত্যাশা করছি। এবারের নিষেধাজ্ঞার পর ভালো পরিমাণ ইলিশ মাছ ঘাটে আসতে শুরু করেছে। এভাবে আরো কয়েকদিন চললে দাম কেজি প্রতি ২০০-৩০০ টাকা পর্যন্ত কমে যাবে।”

চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শ্রীবাস চন্দ্র চন্দ বলেন, “মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান সফলভাবে বাস্তবায়নে জেলা প্রশাসন, মৎস্য অধিদপ্তর, নৌ পুলিশ, কোস্ট গার্ড, নৌবাহিনী এবং স্থানীয় প্রশাসন সমন্বিতভাবে নদীতে কাজ করেছে। জেলে ও মৎস্যজীবীদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছি। এমনকি, নিষেধাজ্ঞার সময় জেলেদের জন্য ভিজিএফ কর্মসূচির আওতায় খাদ্য সহায়তাও দেওয়া হয়েছে। আশা করছি, জেলেরা বড় সাইজের ইলিশ নদীতে পাবেন। ইলিশের দাম ক্রেতাদের নাগালে রাখতে আমরা বাজারগুলোতে নজরদারি রাখব।”

মা ইলিশের বাধাহীন প্রজননের জন্য ৪ থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত সাগর ও নদীতে মাছ ধরায়  নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে সরকার।
 

ঢাকা/মাসুদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ওজন র মৎস য

এছাড়াও পড়ুন:

ইলিশে সয়লাব চাঁদপুরের বাজার, দাম আকাশচুম্বী

নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ায় আবারো ইলিশ মাছ বেচাকেনায় সরগরম হয়ে উঠেছে চাঁদপুরের বাজারগুলো। তবে, দাম এখনো আকাশচুম্বী। মাছ ব্যবসায়ীরা বলছেন, পদ্মা ও মেঘনা নদীতে ইলিশ কম পাওয়া যাওয়ায় বেশি দামে এই মাছ বিক্রি করতে হচ্ছে তাদের। মৎস্য সমবায় সমিতির এক নেতা জানান, সামনে ইলিশের আমদানি বাড়লে দাম অনেকটা কমে যাবে।

রবিবার (২৬ অক্টোবর) ভোরে সরেজমিনে দেখা গেছে, ইলিশ আহরণ ও বেচাকেনাকে ঘিরে চাঁদপুরের জেলে পাড়াসহ বড়-ছোট সব মাছের বাজারে কর্মচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। তুলনামূলক বড় ইলিশ পাওয়া না গেলেও নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার প্রথম দিনেই ছোট ও মাঝারি সাইজের ইলিশে সয়লাব বাজার। মাছ ধরায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার পর থেকে পদ্মায় জাল ফেলে বেশি সময় কাটাচ্ছেন জেলেরা। 

আরো পড়ুন:

বরগুনায় নদী ও সাগর মোহনা থেকে ১৫০ জেলে গ্রেপ্তার

মেঘনায় গ্রেপ্তার ২৮ জেলেকে জেল-জরিমানা

দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে বড় ইলিশ বেচাকেনার স্থান বড়ষ্টেশন মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের মাছ বিক্রেতা সম্রাট বলেন, “ইলিশ কম পাওয়া যাচ্ছে। যে কারণে ছোট সাইজের ইলিশ প্রতিহালি (২০০ গ্রাম ওজন) বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ থেকে ৭০০ টাকায়। ৮০০ থেকে ৯০০ গ্রাম বা এক ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২২০০ থেকে ২৫০০ টাকা দরে। দুই কেজি ২০০ গ্রাম থেকে আড়াই কেজি পর্যন্ত ওজনের প্রতিকেজি পদ্মার ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৩৫০০ টাকা থেকে ৪ হাজার টাকায়।

মাছ ক্রেতা সফিক বলেন, “নদীতে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা দিলেই হবে না, নিয়মিত বাজার মনিটরিংয়েও ইলিশের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। নিষেধাজ্ঞার আগে এক কেজি ওজনের ইলিশ ২০০০ থেকে ২১০০ টাকা দিয়ে কিনলেও, এখন সেই একই ওজনের মাছ ২২০০ থেকে ২৩০০ টাকা দিয়ে কিনতে হচ্ছে। লাভটা হলো কি?”

জেলে কাদির বলেন, “মেঘনা নদীর ইলিশের সাইজ ছোট। তাই পদ্মা নদীতে নৌকা নিয়ে বেশি সময় কাটালাম। কাঙ্খিত ইলিশ পাইনি। তিন হালি ইলিশ পেয়েছি যা মাঝারি আকারের। এই মাছ বিক্রি করে নৌকার তেল খরছ উঠাতে কষ্ট হয়ে যাবে।”

আড়তদার ঈসমাইল বলেন, “ইলিশের নির্বিঘ্নে চলাচল নিশ্চিতে নদী খননের পরামর্শ রইল। নদীতে যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা ফেলা বন্ধেও কার্যকর পদক্ষেপ প্রয়োজন। তাহলে সাগরের ইলিশ নদীতে আসবে। তখন ইলিশের আমদানি বাড়বে এবং দাম কমবে।”

অনলাইনে ইলিশ বিক্রেতা সজীব বলেন, “ইলিশের কিছু অর্ডার পেয়েছিলাম। নিষেধাজ্ঞায় দিতে পারিনি। এখন আশা করছি সব অর্ডার ডেলিভারি দিতে পারব। পূর্বের মতোই ইলিশের দাম উঠানামা শুরু হয়েছে।”

চাঁদপুর মৎস্য সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক শবে বরাত সরকার বলেন, “প্রাকৃতিক মাছ ইলিশ আবহাওয়ার উপর নির্ভর করে জেলের জালে কম-বেশি ধরা পড়ে। তাই সামনে ভালো সিজন আসছে ইলিশের। তখন দাম কমবে এমনটি প্রত্যাশা করছি। এবারের নিষেধাজ্ঞার পর ভালো পরিমাণ ইলিশ মাছ ঘাটে আসতে শুরু করেছে। এভাবে আরো কয়েকদিন চললে দাম কেজি প্রতি ২০০-৩০০ টাকা পর্যন্ত কমে যাবে।”

চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শ্রীবাস চন্দ্র চন্দ বলেন, “মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান সফলভাবে বাস্তবায়নে জেলা প্রশাসন, মৎস্য অধিদপ্তর, নৌ পুলিশ, কোস্ট গার্ড, নৌবাহিনী এবং স্থানীয় প্রশাসন সমন্বিতভাবে নদীতে কাজ করেছে। জেলে ও মৎস্যজীবীদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছি। এমনকি, নিষেধাজ্ঞার সময় জেলেদের জন্য ভিজিএফ কর্মসূচির আওতায় খাদ্য সহায়তাও দেওয়া হয়েছে। আশা করছি, জেলেরা বড় সাইজের ইলিশ নদীতে পাবেন। ইলিশের দাম ক্রেতাদের নাগালে রাখতে আমরা বাজারগুলোতে নজরদারি রাখব।”

মা ইলিশের বাধাহীন প্রজননের জন্য ৪ থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত সাগর ও নদীতে মাছ ধরায়  নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে সরকার।
 

ঢাকা/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ