বরগুনার অসহায় মানুষের সঙ্গে তামাশা
Published: 26th, October 2025 GMT
বরগুনা জেলাসহ দক্ষিণ অঞ্চলের উপকূলীয় এলাকায় সুপেয় পানির অপ্রতুলতা বড় ধরনের সংকট হাজির করেছে। এ কারণে সেখানকার আর্থসামাজিক ক্ষেত্রেও নানা নেতিবাচক পরিবর্তন ঘটছে। কৃষিতে প্রভাব পড়ছে, নারী ও শিশুস্বাস্থ্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
সরকার সেখানকার সুপেয় পানির সংকট নিরসনে নানা প্রকল্প নিলেও সেগুলোকে চরম দুর্নীতি ও অনিয়ম গ্রাস করেছে। এগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা না নিলে ওই অঞ্চলে সুপেয় পানির সংকট আরও বেশি জটিল ধারণ করবে।
সুপেয় পানির সংকট নিরসনে দক্ষিণাঞ্চলে সরকারের ‘রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং সিস্টেম’ প্রকল্পটি ছিল জনস্বাস্থ্যের জন্য এক মহৎ উদ্যোগ। বরগুনা, পটুয়াখালী, ঝালকাঠিসহ ১০ জেলার মানুষের বিশুদ্ধ পানির অধিকার নিশ্চিত করার এই প্রকল্প ছিল এক আশীর্বাদ।
কিন্তু বরগুনায় ৩৬ কোটি টাকার এ মহৎ উদ্যোগ মেসার্স কামাল এন্টারপ্রাইজ নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও স্থানীয় অসাধু চক্রের যোগসাজশে ব্যাপক দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও অনিয়মের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। যে প্রকল্প ছিল উপকূলবাসীর অধিকার, তা আজ নিম্নমানের কাজ ও অর্থ আত্মসাতের কারণে তাদের সঙ্গে তামাশার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
যে ঠিকাদার প্রকল্পটি নিয়ে এত নয়ছয় করলেন, তাঁর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। ঠিকাদার, প্রকল্পের কর্মকর্তা, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি—যাঁরাই এর সঙ্গে জড়িত, কাউকে ছাড় দেওয়া যাবে না। সর্বোপরি প্রকল্পের সুফল যেন প্রকৃত ভুক্তভোগীরাই পান, সেটি নিশ্চিত করা হোক।উপকারভোগীরা অভিযোগ করছেন, প্রতিটি ইউনিটের প্ল্যাটফর্ম তৈরিতে প্রথম শ্রেণির ইটের বদলে ব্যবহৃত হয়েছে দ্বিতীয় শ্রেণির ইট, নিম্নমানের বালু ও প্রয়োজনের চেয়ে কম সিমেন্ট। বহু গ্রামে কেবল নিচের অবকাঠামো তৈরি করেই কাজ ফেলে রাখা হয়েছে। ট্যাংক, পাইপলাইন বা ফিল্টারের মতো প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম দেওয়া হয়নি। অথচ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বরাদ্দের সিংহভাগ বিল তুলে নিয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। এটি স্পষ্টতই সরকারি অর্থ লুটের শামিল।
এই প্রকল্পের সুবিধাভোগী বাছাইয়ের ক্ষেত্রেও দেখা গেছে চরম স্বজনপ্রীতি। পাথরঘাটার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যানের আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে পাঁচটি ট্যাংক বসানো হয়েছে। একই অবস্থা সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের গ্রামের বাড়িতেও। অন্যদিকে প্রকৃত অভাবী মানুষ, যাঁদের বিশুদ্ধ পানির অধিকার সবচেয়ে বেশি, তাঁরা বঞ্চিত হয়েছেন। আবার অনেক গরিব উপকারভোগীর কাছ থেকে চাঁদা বা ঘুষও নেওয়া হয়েছে।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ও প্রকল্পের পরিচালকের পক্ষ থেকে বারবার অনিয়মের অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করা হলেও তাঁদের পদক্ষেপ যথেষ্ট নয়। গোটা প্রকল্প নিয়ে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের চরম অবহেলা ও ব্যর্থতা স্পষ্টভাবে প্রকাশ পেয়েছে। প্রকল্পের দুর্নীতি ও অনিয়মের সঙ্গে প্রকল্প–সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের যোগসাজশ না থাকলে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে এতটা নৈরাজ্য তৈরি হওয়া অসম্ভব। এ ব্যাপারে তদন্ত হওয়া জরুরি।
যে ঠিকাদার প্রকল্পটি নিয়ে এত নয়ছয় করলেন, তাঁর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। ঠিকাদার, প্রকল্পের কর্মকর্তা, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি—যাঁরাই এর সঙ্গে জড়িত, কাউকে ছাড় দেওয়া যাবে না। সর্বোপরি প্রকল্পের সুফল যেন প্রকৃত ভুক্তভোগীরাই পান, সেটি নিশ্চিত করা হোক।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
মেট্রোরেলের উত্তরা-আগারগাঁও অংশ চালু, মতিঝিল অংশে কত সময় লাগবে
রাজধানীর ফার্মগেটে মেট্রোরেলের পিলার থেকে বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে এক যুবকের মৃত্যুর পর আজ দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন মেট্রোরেলের যাত্রীরা।
সড়ক পরিবহন উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান আজ বিকেল তিনটার কিছু পরে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রথম আলোকে বলেন, মেট্রোরেলের আগারগাঁও থেকে উত্তরা অংশে ট্রেন চলাচল শুরু হয়ে গেছে। বাকি অংশ চালু করতে একটু সময় লাগবে। কারণ ক্রেন আসতে হবে। আবার দুর্ঘটনা যাতে না ঘটে, সে জন্য মেরামতের পর পরীক্ষা করতে হবে।
দুর্ঘটনায় নিহত আবুল কালামের মরদেহ শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
আজ দুপুর ২টা ১০ মিনিটে মেট্রোরেল পরিচালনাকারী সংস্থা ঢাকা মাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) তাদের ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে কারিগরি ত্রুটির কারণে মেট্রোরেল চলাচল সাময়িক বন্ধ রয়েছে বলে জানিয়েছে।
এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ যাত্রীদের ধৈর্যধারণের অনুরোধ জানিয়েছে।
ডিএমটিসিএল সূত্র জানিয়েছে, কারিগরি ত্রুটি মেরামতের চেষ্টা চলছে।
২০২৪ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ফার্মগেটে মেট্রোরেলে একটি বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়েছিল। এ কারণে আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ১১ ঘণ্টা বন্ধ থাকে মেট্রো ট্রেন চলাচল।
মেট্রোরেল পরিচালনায় যুক্ত একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আগের বার দুর্ঘটনার সময় প্রায় ১১ ঘণ্টা লেগেছিল মেট্রোরেল সচল করতে। এবার কত সময় লাগে, তা বলা যাচ্ছে না।
মেট্রোরেলের লাইনের নিচে উড়ালপথের পিলারের সঙ্গে রাবারের বিয়ারিং প্যাড থাকে। ডিএমটিসিএল সূত্র জানিয়েছে, এগুলোর প্রতিটির ওজন আনুমানিক ১৪০ বা ১৫০ কেজি। এসব বিয়ারিং প্যাড ছাড়া ট্রেন চালালে উড়ালপথ দেবে যাওয়া কিংবা স্থানচ্যুত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ জন্যই মেট্রোরেলের চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।
ফিরে যাচ্ছেন যাত্রীরা২০২২ সালের ২৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশে প্রথম মেট্রোরেল চালু হয়। উত্তরা থেকে মতিঝিল পথে মেট্রোরেল চলাচল করে। ডিএমটিসিএলের তথ্য বলছে, উদ্বোধনের পর থেকে গত জুন পর্যন্ত ১৫ কোটি ৭৫ লাখের মতো যাত্রী মেট্রোরেলে যাতায়াত করেছে।
মেট্রোরেল এখন রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ ও জনপ্রিয় গণপরিবহন। আজ দুপুরে মেট্রোরেল চলাচল বন্ধের পর স্টেশন থেকে যাত্রীদের চলে যেতে দেখা যায়।
কারওয়ান বাজারের মেট্রো স্টেশনে চারটি প্রবেশপথ রয়েছে। রোববার দুপুরে স্টেশনে গিয়ে দেখা যায় আনসার ও পুলিশ সদস্যরা ভেতরে অবস্থান নিয়ে সব প্রবেশপথ বন্ধ করে রেখেছেন।
কারওয়ান বাজার মোড়ের বিএসইসি ভবন সংলগ্ন প্রবেশপথের মুখে অর্ধশতাধিক যাত্রী ভিড় দেখা গেল। যাত্রীরা কখন মেট্রোরেল চালু হবে জানতে চাইলে আনসার ও পুলিশ সদস্যদের কেউ স্পষ্ট করে কিছু বলতে পারেননি।
এ সময় তোরাব হাসান নামের এক যাত্রী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি কারওয়ান বাজার মেট্রো স্টেশন থেকে মতিঝিল যেতে এসেছিলাম। এসে দেখি প্রবেশপথ বন্ধ। শুনলাম দুর্ঘটনা হয়েছে। পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সদস্যদের কাছে জানতে চেয়েছিলাম কখন মেট্রো চালু হবে। কেউ বলতে পারছেন না কবে চালু হবে।’
মেট্রো স্টেশনের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত আনসার সদস্য জুয়েল আহমদ যাত্রীদের উদ্দেশ্যে বলছিলেন, ‘আজকে মেট্রোরেল চালু হবে না। আপনারা অপেক্ষা না করে চলে যান।’
জুয়েল প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফার্মগেটে দুর্ঘটনার পর সাড়ে ১২টার দিকে গেট বন্ধ করেছি। কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা পেলেই আমরা গেট খুলব।’