বিশ্বের উত্তরতম শহর হিসেবে বিবেচনা করা হয় নরওয়ের লংইয়ারবিন শহরকে।উত্তর মেরু থেকে প্রায় ৮০০ মাইল দূরে অবস্থিত শহরটি পৃথিবীর সবচেয়ে বিচ্ছিন্ন মানববসতিগুলোর অন্যতম। শহরটি পৃথিবীর অন্য যেকোনো স্থানের চেয়ে আলাদা। শহরটি বছরের চার মাস পুরোপুরি অন্ধকার থাকে এবং অন্য চার মাস আলোকিত থাকে। প্রায় ২ হাজার ৪০০ মানুষ বসবাস করে শহরটিতে।

এই অঞ্চলের অন্যান্য বসতির মতো লংইয়ারবিন শহরও খনিনির্ভর শহর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। যদিও খনিটির কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শহরটি বর্তমানে বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও পর্যটনের কেন্দ্র হিসেবে বেশি পরিচিত। লংইয়ারবিন শহরটি এতই শীতল যে এখানে কোনো গাছপালা স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠতে পারে না। শহরটি বিখ্যাত ডুমসডে সিড ভল্টের আবাসস্থল, যেখানে পৃথিবীর প্রতিটি পরিচিত ফসলের বীজ সংরক্ষণ করা হয়ে থাকে।

নরওয়ের রাজধানী অসলো থেকে বিমানে লংইয়ারবিন শহরে যেতে সময় লাগে প্রায় তিন ঘণ্টা। ১৫৯৬ সালে ডাচ অভিযাত্রী উইলেম বারেন্টস সভালবার্ড আবিষ্কার করার পর শহরটি তিমি ও ওয়ালরাস শিকারের ঘাঁটিতে পরিণত হয়। লংইয়ারবিন বিশ্বের অন্যতম সেরা স্থান যেখানে নর্দার্ন লাইটস দেখা যায়। আর তাই চরম প্রতিকূলতা সত্ত্বেও লংইয়ারবিন শহর একটি ক্ষুদ্র মহানগরী হিসেবে পরিচিত। এখানে ৫০টির বেশি দেশের মানুষ বসবাস করেন, যাঁদের বেশির ভাগই নরওয়ে, থাইল্যান্ড ও ফিলিপাইনের নাগরিক।

সভালবার্ডে প্রায় ৩০০টি মেরু ভাল্লুক রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। আর তাই লংইয়ারবিন শহরের বাসিন্দাদের মেরু ভালুকের পাশাপাশি তুষারধসের বিরুদ্ধেও লড়াই করতে হয়। ২০১৫ সালে একটি তুষারধসে শহরটির ১১টি অ্যাপার্টমেন্ট ভবন ধ্বংস হয়েছিল। শহরটিতে গুরুতর অসুস্থ বা অন্তঃসত্ত্বা নারীদের জন্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সুবিধা না থাকায় তাদের অন্য শহরে যেতে হয়।

সূত্র: বিজনেস ইনসাইডার

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র অন য

এছাড়াও পড়ুন:

ভেনেজুয়েলা ছাড়তে যুক্তরাষ্ট্র সহায়তা করেছে: মাচাদো

ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলা মাদুরো সরকারের বিরোধী নেত্রী মারিয়া কোরিনা মাচাদো বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় তিনি ভেনেজুয়েলা ত্যাগ করেছেন। এক বছরের বেশি সময় তিনি দেশটিতে আত্মগোপনে ছিলেন।

নোবেল শান্তি পুরস্কার গ্রহণ উপলক্ষে নরওয়ের রাজধানী অসলো পৌঁছানোর কয়েক ঘণ্টা পর গতকাল বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের মাচাদো এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘আমরা মার্কিন সরকারের সহায়তা পেয়েছি।’

নিজের সহযোগীদের সুরক্ষা দিতে চান জানিয়ে মাচাদো তাঁর দেশ ছাড়ার বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করতে অপারগতা প্রকাশ করেন। ট্রাম্প প্রশাসন মাচাদোর ভেনেজুয়েলা ত্যাগের বিষয়ে প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করেনি।

নরওয়েতে ভেনেজুয়েলার জনসংখ্যা খুবই কম হলেও অসলোতে মাচাদোর উপস্থিতি উপলক্ষে তাঁর দেশের অনেকে তাঁকে দেখতে এসেছেন। বৃহস্পতিবার ভোরে তিনি যখন গ্র্যান্ড হোটেলের বারান্দায় আসেন, তখন সেখানে জড়ো হওয়া ভেনেজুয়েলার প্রবাসীরা উল্লাসে ফেটে পড়েন। তাঁরা স্প্যানিশ ভাষায় ‘স্বাধীনতা’ এবং ‘শান্তি’র পক্ষে স্লোগান দিতে থাকেন। অনেকে ভেনেজুয়েলার জাতীয় সংগীত গাইতে থাকেন।

গত বছর ভেনেজুয়েলায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পরপরই মাচাদো আত্মগোপনে চলে যান। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, সরকারের সমন্বিত হুমকি ও বিরোধীদের ওপর নিপীড়ন সত্ত্বেও নির্বাচনে মাচাদোর সমর্থিত প্রার্থী বিপুল ভোটে জয়ী হন।

অবশ্য নির্বাচনের পর প্রেসিডেন্ট নিকোলা মাদুরোকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। তিনিই ক্ষমতায় থেকে যান। একই সঙ্গে তিনি বিরোধীদের ওপর দমন–পীড়ন চালান বলে অভিযোগ রয়েছে।

বৃহস্পতিবার দিনের শুরুতে মাচাদো বলেন, ভেনেজুয়েলার সরকার তাঁর অবস্থান সম্পর্কে জানত না। জানলে তারা তাঁকে নরওয়েতে যেতে বাধা দিত। নরওয়েতে গত বুধবার মাচাদোর পক্ষে তাঁর মেয়ে শান্তি পুরস্কার গ্রহণ করেছিলেন।

ভেনেজুয়েলার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দিওসদাদো কাবেয়ো বুধবার কোনো প্রমাণ ছাড়াই দাবি করেন, সরকার তাঁর গতিবিধি সম্পর্কে অবগত ছিল। ভেনেজুয়েলার কর্মকর্তারা এর আগে বলেছিলেন, মাচাদো দেশ ছাড়লে তাঁকে পলাতক বলে গণ্য করা হবে।

মাচাদো স্বীকার করেন, বর্তমান সরকারের অধীন ভেনেজুয়েলায় ফিরলে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হতে পারে। তিনি আরও বলেন, ভেনেজুয়েলায় কবে ফিরতে পারবেন, সে সম্পর্কে তিনি নিশ্চিত নন।

নিজের নরওয়ে সফর প্রসঙ্গে মাচাদো বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, ভেনেজুয়েলা ত্যাগ করার ঝুঁকি যদিও খুব বেশি ছিল, তবু তা সার্থক হয়েছে। ফিরে যাওয়ার ঝুঁকি সম্ভবত আরও বেশি।’

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার সরকারের ওপর চাপ নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি করার পর মাচাদো বিশ্ব মঞ্চে ফিরে এলেন। বুধবার যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ আমেরিকার এই দেশটির উপকূল থেকে একটি তেলের ট্যাংকার জব্দ করেছে।

মাচাদো ট্যাংকার জব্দ করার বিষয়ে সরাসরি কোনো মন্তব্য করেননি। তবে বৃহস্পতিবার তিনি বারবার মাদুরোর অর্থের উৎস বন্ধ করতে ওয়াশিংটনের উদ্যোগের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন।

নোবেলজয়ী মাচাদো সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, আমরা এখন যে অবস্থানে পৌঁছেছি, তাতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পদক্ষেপ ভূমিকা রেখেছে। এতে মাদুরোর শাসনব্যবস্থা আগের চেয়ে দুর্বল হয়েছে।’

মাচাদো অবশ্য সাংবাদিকদের সঙ্গে তাঁর পরবর্তী রাজনৈতিক পদক্ষেপ নিয়ে কোনো কথা বলেননি। তিনি কেবল এটুকু বলেছেন, প্রাথমিকভাবে তিনি তাঁর তিন সন্তান এবং দলের সঙ্গে আবার সংযোগ স্থাপন এবং নিজের চিকিৎসায় সময় দেবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভেনেজুয়েলা ছাড়তে যুক্তরাষ্ট্র সহায়তা করেছে: মাচাদো
  • স্বৈরশাসন শেষ করতে দেশে ফিরবেন মারিয়া মাচাদো