অ্যালিয়েন হ্যান্ড সিনড্রোম একটি বিরল নিউরোলজিক্যাল ডিসঅর্ডার বা স্নায়বিক ব্যাধি। এ ব্যাধির কারণে একজন ব্যক্তির কোনো একটি হাত (অথবা কখনো কখনো পা) রোগীর নিজের ইচ্ছার বাইরে স্বতঃস্ফূর্তভাবে নড়াচড়া করে। রোগী অনুভব করেন যেন হাতটি তাঁর ‘নিয়ন্ত্রণে নেই’ বা হাতটি তাঁর নিজের নয়। এ কারণে অনেক সময় রোগী ও তাঁর পরিবার ভয়, বিভ্রান্তি বা মানসিক অস্থিরতায় ভোগেন।
কেন এমন হয়
যখন মস্তিষ্কের একটি নির্দিষ্ট অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, বিশেষত যেসব অংশ চলাচল নিয়ন্ত্রণ ও মস্তিষ্কের দুই পাশের যোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ করে, তখন এই সমস্যা হতে পারে। যেসব এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হলে এই সমস্যা হয় তা হলো—
কোরপাস ক্যালোসম: মস্তিষ্কের দুই পাশের সংযোগ নষ্ট হলে এক পাশ অন্য পাশের নিয়ন্ত্রণ হারায়।
ফ্রন্টাল লোব ড্যামেজ: এটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় স্বেচ্ছায় কাজ করার পরিকল্পনা ও নিয়ন্ত্রণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
প্যারাইটাল লোব ড্যামেজ: স্পর্শ ও স্থানিক সচেতনতা কমে যায়, ফলে হাত অপ্রত্যাশিতভাবে নড়ে।
স্ট্রোক, ব্রেন টিউমার দ্বারা চাপ সৃষ্টি, মাথায় আঘাত, নিউরোসার্জারি (বিশেষত কর্পাস ক্যালোসাম কেটে দেওয়া, যেমন এপিলেপসি অপারেশনে), মস্তিষ্কের ক্ষয়জনিত রোগ যেমন অ্যালঝেইমারস ডিজিজ বা কর্টিকোব্যাসাল ডিজেনারেশনের কারণে এই এলাকাগুলোতে ক্ষতি হতে পারে।
পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে রোগ নির্ণয় করে চিকিৎসা করলে এ রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।লক্ষণ ও চিকিৎসা
অ্যালিয়েন হ্যান্ড সিনড্রোমের লক্ষণগুলো খুব বিশেষ ধরনের। অপ্রত্যাশিত হাতের নড়াচড়া যেমন কোনো বস্তুর দিকে বারবার হাত বাড়ানো, জামা খুলে ফেলা, চুল টানা বা কিছু ফেলে দেওয়া। বিপরীতমুখী কাজ করা। ধরা যাক এক হাত জামা পরাচ্ছে, অন্য হাত খুলে ফেলছে। হাতকে নিজের মনে না হওয়া। রোগী ভাবেন হাতটি যেন অন্য কারও, মানে অ্যালিয়েন। অসচেতনভাবে ধরা বা গ্রাসপ রিফ্লেক্স। হাত হঠাৎ কিছু ধরে ফেলে ও রোগী তা ছাড়াতে পারেন না। মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব যেমন ভয়, উদ্বেগ, হতাশা।
অ্যালিয়েন হ্যান্ড সিনড্রোমের স্থায়ী কোনো চিকিৎসা নেই। তবে হাতকে কোনো কাজে ব্যস্ত রাখা (যেমন কাপড় ধরা, বল ধরা), হাতকে কোলে বসিয়ে রাখা বা অন্য হাত দিয়ে চেপে রাখা—এগুলো কাজে দেয়। ফিজিওথেরাপি ও কগনিটিভ থেরাপি যেমন হাতের অস্বাভাবিক নড়াচড়া নিয়ন্ত্রণের ব্যায়াম করতে হবে। রোগীকে সচেতন করা, যাতে ভয়ের পরিবর্তে তিনি হাত সামলাতে শিখতে পারেন।
কিছু ক্ষেত্রে বেনজোডায়াজেপিন, অ্যান্টি-এপলেপটিক ওষুধ, বটুলিনাম টক্সিন ইনজেকশন ব্যবহার করা হয়। তবে এসবের কার্যকারিতা সীমিত ও রোগীভেদে ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। স্ট্রোক হলে স্ট্রোক ম্যানেজমেন্ট। টিউমারের সার্জারি বা রেডিয়েশন। নিউরোডিজেনারেটিভ ডিজিজে সাপোর্টিভ কেয়ার। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে রোগ নির্ণয় করে সে অনুযায়ী চিকিৎসা করলে রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
ডা.
এম এস জহিরুল হক চৌধুরী: অধ্যাপক (ক্লিনিক্যাল নিউরোলজি), ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতাল
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
বিদেশে উচ্চশিক্ষা: মাস্টার্স থেকে পিএইচডি ও রিসার্চের সাতসতেরো
বিদেশে উচ্চশিক্ষা শুধু একটি ডিগ্রির লক্ষ্য নয়; এটি নিজের জ্ঞান, চিন্তাশক্তি ও গবেষণার পরিসরকে বিস্তৃত করার এক দীর্ঘ যাত্রা। মাস্টার্স থেকে পিএইচডি—এই পথচলায় শিক্ষার্থীরা যেমন নিজেদের একাডেমিক দক্ষতা বাড়ান, তেমনি আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক গড়ে তোলেন, নতুন সংস্কৃতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে শেখেন এবং গবেষণার মাধ্যমে নিজের আগ্রহের ক্ষেত্রকে গভীরভাবে জানতে পারেন।
সঠিক পরিকল্পনাবিদেশে মাস্টার্স বা পিএইচডি প্রোগ্রামে ভর্তি হতে হলে পরিকল্পনা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। প্রথমেই নির্ধারণ করতে হবে নিজের উদ্দেশ্য। আপনি কি শুধুই ডিগ্রি অর্জন করতে চান নাকি গবেষণার মাধ্যমে একাডেমিক বা পেশাগত ক্ষেত্রে অবদান রাখতে চান? এরপর আসে দেশ ও বিশ্ববিদ্যালয় বাছাইয়ের বিষয়টি। বিভিন্ন দেশের উচ্চশিক্ষা কাঠামো, টিউশন ফি, জীবনযাপনের খরচ ও গবেষণার পরিবেশ আলাদা। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি বা নেদারল্যান্ডস—প্রতিটি দেশেরই রয়েছে নিজস্ব গবেষণা ফোকাস ও আলাদা একাডেমিক নেটওয়ার্ক।
সুপারভাইজার নির্বাচনগবেষণানির্ভর প্রোগ্রামের ক্ষেত্রে সঠিক সুপারভাইজার নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একজন উপযুক্ত সুপারভাইজার শুধু গবেষণার দিকনির্দেশনাই দেন না, বরং আপনার কাজের মান, প্রকাশনা এমনকি ভবিষ্যতের ক্যারিয়ারের ওপরও প্রভাব ফেলেন। তাই গবেষণার বিষয় ঠিক করার আগে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে গিয়ে আগ্রহের ক্ষেত্র অনুযায়ী প্রফেসরদের কাজ ও প্রকাশনা পড়া দরকার। প্রাথমিকভাবে ই–মেইলের মাধ্যমে যোগাযোগ করেই জানা যায় আপনার আগ্রহ তাঁদের গবেষণার সঙ্গে মেলে কি না।
আরও পড়ুনবিদেশে উচ্চশিক্ষার প্রস্তুতি নেবেন যেভাবে২৬ অক্টোবর ২০২৫স্কলারশিপের সুযোগআন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য আর্থিক সহায়তা বা স্কলারশিপ পাওয়াও একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। অনেক সময় টিউশন ফি ও জীবনযাপনের খরচ বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তবে প্রায় সব দেশেই রয়েছে সরকারি ও বেসরকারি ফান্ডিংয়ের সুযোগ। যেমন কমনওয়েলথ স্কলারশিপ (যুক্তরাজ্য), ফুলব্রাইট (যুক্তরাষ্ট্র), ডাড (জার্মানি), এরাসমাস মুন্ডুস (ইউরোপ) এবং অস্ট্রেলিয়া অ্যাওয়ার্ডস (অস্ট্রেলিয়া)। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজেদের উদ্যোগেও টিউশন ওয়েভার, রিসার্চ গ্র্যান্ট বা অ্যাসিস্ট্যান্টশিপ অফার করে থাকে। তাই আবেদন করার আগে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে ‘স্কলারশিপ’ বিভাগটি ভালোভাবে দেখা প্রয়োজন।
প্রয়োজনীয় নথিপত্রআবেদনের প্রক্রিয়া অনেক সময়সাপেক্ষ এবং ধাপে ধাপে এগিয়ে যেতে হবে। সাধারণত মাস্টার্স বা পিএইচডি প্রোগ্রামে আবেদন শুরু করতে হয় অন্তত আট থেকে বারো মাস আগে। এই সময়ের মধ্যে প্রস্তুত করতে হয় স্টেটমেন্ট অব পারপাস, রিসার্চ প্রোপোজাল (যদি প্রয়োজন হয়), ইংরেজি ভাষার দক্ষতার প্রমাণ, রিকমেন্ডেশন লেটারসহ প্রাসঙ্গিক নথিপত্র। পাশাপাশি সময়মতো সম্ভাব্য সুপারভাইজারের সঙ্গে যোগাযোগ ও অনলাইন আবেদন সম্পন্ন করতে হবে।
আরও পড়ুনজেনে নিন বিশ্বের সেরা ১০ স্কলারশিপ সম্পর্কে২৬ অক্টোবর ২০২৫বহুমাত্রিক অভিজ্ঞতাবিদেশে পড়াশোনার অভিজ্ঞতা শুধু একাডেমিক নয়, এটি মানসিক ও সাংস্কৃতিকভাবে নিজেকে গড়ে তোলারও সুযোগ। ভিন্ন সংস্কৃতি ও দেশের মানুষের সঙ্গে মেলামেশা, গবেষণার নতুন পদ্ধতি শেখা এবং বৈশ্বিক একাডেমিক পরিবেশে কাজ করা—সব মিলিয়ে এই অভিজ্ঞতা শিক্ষার্থীর দৃষ্টিভঙ্গিকে বহুমাত্রিক করে তোলে। মাস্টার্স বা পিএইচডি শেষে অনেকে যুক্ত হন গবেষণা, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকতা বা বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে উচ্চমানের চাকরিতে। সঠিক পরিকল্পনা, অধ্যবসায় ও সময়মতো পদক্ষেপই শিক্ষার্থীদের নিয়ে যেতে পারে বিশ্বমানের শিক্ষা ও ক্যারিয়ারের গন্তব্যে।