প্রায় এক মাস হয়ে গেল বিহারের নির্বাচনের। ভারতের পূর্ব-দক্ষিণ অঞ্চলে এই নির্বাচনের ফল নিয়ে বিস্ময় কাটছেই না। বিজেপি জোট এখানে কেবল যে জিতেছে তা–ই নয়, বিপক্ষকে অনেকটা ধসিয়ে দিয়েছে। আগের চেয়ে কংগ্রেস জোটের প্রায় ৮০ আসন কমে গেছে। ২৪৩ আসনের বিধানসভায় বিজেপি জোটের দখলে গেল দুই শর বেশি আসন।

যদিও নিবিড় অনুসন্ধানে দেখা যায়, অধিকাংশ জায়গায় খুব অল্প অল্প ভোটে বিরোধীরা হেরেছে; কিন্তু আসনের বড় ব্যবধানে আরএসএস পরিবার দারুণ উজ্জীবিত। এখন তারা বলছে, গঙ্গার পানি বিহার থেকে পশ্চিমবঙ্গে ঢুকতে চলেছে জোয়ার হয়ে। কেন্দ্রীয় প্রধানমন্ত্রী সে রকমই হুঁশিয়ারি দিলেন কলকাতার অভিভাবকদের। সত্যি কি তা–ই ঘটতে চলেছে? গঙ্গার আসন্ন এই প্রবাহে পদ্মাপারের মানুষদের জন্যও বিশেষ বার্তা আছে কি?

এসআইআর তলোয়ার কাকে বধ করবে?

ভারতের রাজনীতিতে বিহার ও বাংলার চরিত্র এক রকম নয়। তা ছাড়া প্রতি স্থানীয় নির্বাচনই স্থানীয় চরিত্রের। ফেডারেল ভারতের সেটা এক সৌন্দর্যও বটে। ভোটের মনোনয়ন ও প্রচারে বিহারে জাতপাতের বিবেচনা যতটা তীব্র, বাংলায় সে রকম ঘটে ধর্মীয় পরিচয়ে।

ফলে এটা বেশ প্রশ্নবিদ্ধ দাবি, বিহারের নির্বাচনী কলাকৌশল পশ্চিমবঙ্গও মাত করবে। তবে মমতার জন্য মাঠপর্যায়ে উদ্বেগজনক অনেক কিছু আছে। প্রায় দেড় দশক তিনি ও তাঁর দল ক্ষমতায়। দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের বহু অভিযোগ জমেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে।

তা ছাড়া সর্বভারতীয় বিজেপির তুলনায় তৃণমূল একান্তই প্রাদেশিক দল। পুরো বিজেপি ইতিমধ্যে প্রায় সব জনপদের উপযোগী দুর্দান্ত এক নির্বাচনী মেশিনে পরিণত হয়েছে। আবার ‘এসআইআর’–এর নামে পশ্চিমবঙ্গসহ কয়েকটি রাজ্যে সূক্ষ্ম পক্ষপাতদুষ্ট এক ব্যবস্থা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে নির্বাচনের আগে-আগে। এর প্রয়োগ থেকে বিহারের মতোই বাংলায়ও রাজনৈতিক সুবিধা পেতে চাইছে বিজেপি।

আরও পড়ুনভারত: যে কারণে উত্তর জনসংখ্যা চায় কমাতে, দক্ষিণ চায় বাড়াতে ২৮ নভেম্বর ২০২৪

‘এসআইআর’ হলো স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন। সরল বাংলায় যাকে বলে ভোটার তালিকার নিবিড় সংশোধন। এই সংশোধনে বসে অনেক ভোটারের বেলায় প্রায় ১২টি নথি দেখাতে হবে। যে রাজ্যগুলোতে বিজেপিবিরোধীদের জমিন শক্ত, মুখ্যত সে রকম জায়গায় এটা শুরু হয়েছে। বিজেপির দাবি, পশ্চিমবঙ্গের মতো কিছু রাজ্যে কথিত বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীরা বড় সংখ্যায় ভোটার তালিকায় নাম তুলে ফেলেছে।

‘নিবিড় সংশোধন’ হলে বাদ পড়বে সেসব ‘অবৈধ বাংলাদেশি’ ও ‘রোহিঙ্গারা’।
বিহারের অভিজ্ঞতা বলছে, এসআইআরে বাদ পড়ছে প্রধানত প্রান্তিক মানুষ; যারা পারিবারিক সব ধরনের নথিপত্র ঠিকঠাক রাখার মতো দক্ষ নয়। বাংলায় এ রকম বেশি ঘটবে মুসলমান, মতুয়া ও আদিবাসী অঞ্চলগুলোতে। এর মধ্যে মুসলমানেরা এখানে তৃণমূল, কংগ্রেস ও বামদের সমর্থক। বিহারে বিধানসভা ভোটের আগে ভোটার তালিকায় এ রকম নিবিড় সংশোধন চালানো হয় অতি প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ভরা আসনগুলোতে। স্থানীয়রা যেগুলোকে বলে ‘মার্জিনাল সিট’।

বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে চলছে এসআইর তথা ভোটার তালিকা সংশোধন.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

‘আমাকে আঘাত করলে ভারত হেলিয়ে দেব’ চরম হুঁশিয়ারি মমতার

‘‘আমাকে আঘাত করলে আমি সারা ভারত হেলিয়ে দেব।’’ এসআইআর ইস্যুতে বিজেপি ও নির্বাচন কমিশনকে এভাবেই হুঁশিয়ারি দিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।  

মঙ্গলবার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে ঠাকুরনগরে ভোটার তালিকা নিবিড় সংশোধন বা এসআইআর-বিরোধী জনসভায় তিনি এ মন্তব্য করেন। তার দাবি, বাংলা দখলের পরিকল্পনা করতে গিয়ে গুজরাটের শক্ত ঘাঁটি হারাবেন মোদী। 

সম্প্রতি ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের ভোটার তালিকার নিবিড় সংশোধন বা ‘স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন’ ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি। ঠিক এমন সময় আবারও বিজেপি ও নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা করলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। 

তিনি হুঙ্কার দিয়ে বলেন, ‘‘আমার বাংলায় আঘাত করলে, মানুষকে আঘাত করলে, আমি মনে করি আমায় আঘাত করা হয়েছে। আমাকে আঘাত করলে আমি সারা ভারত হেলিয়ে দেব। এটা মাথায় রেখো। ভোটের পরে আমিও একটু দেশটা চষে বেড়াব।’’

‘‘কী ভাবছ নিজেদের, কেউকেটা হয়ে গেছ? চিরকাল কেউ সরকারে থাকে না। ২০২৯ বড় ভয়ঙ্কর! তোমাদের সরকার থাকবে না। সেদিন কোথায় পালাবে? এখন থেকে জায়গা ঠিক করে রেখে দাও।’’ যোগ করেন মমতা। 

এ সময় তিনি বিজেপি গুজরাটে পরাজিত হতে চলেছে বলে ভবিষ্যদ্বাণী করেন। 

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিজের রাজ্য গুজরাটে ১৯৯০ সাল থেকে বিজেপি নিরঙ্কুশ ক্ষমতা ধরে রেখেছে। এ প্রসঙ্গে মমতা তার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় জালিয়াতির অভিযোগ তোলেন।

বিজেপির বিরুদ্ধে মমতার আক্রমণের মূল লক্ষ্য পশ্চিমবঙ্গ, তামিলনাড়ু, আসাম এবং কেরালায় নির্বাচনের আগে তড়িঘড়ি স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশনের মাধ্যমে ভোটার তালিকা সংশোধনের এই প্রক্রিয়া। তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘‘কেন এত তাড়াহুড়ো করে এসআইআর করা হচ্ছে? নির্বাচনের ঠিক আগে কেন এসআইআর করার প্রয়োজন পড়ল?’’

তৃণমূলের পাশাপাশি অন্যান্য বিরোধী দলগুলোরও অভিযোগ- এই প্রক্রিয়ার আড়ালে বিজেপি বিরোধী-সমর্থক প্রান্তিক এবং নিপীড়িত সম্প্রদায়ের ভোটারদের অনুপ্রবেশকারী অজুহাতে তালিকা থেকে বাদ দিচ্ছে।

মমতা বলেন, ‘‘আমি পরিষ্কার বলতে এসেছি, আপনারা যারা এখানকার প্রকৃত ভোটার, আগে ভোট দিয়েছেন, এমনকি ২০২৪-এও, নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী হিসাবে নির্বাচিত হয়েছেন কোন লিস্টে? ২০২৪-এর লিস্টে। তাহলে সেই লিস্ট যদি বাতিল হয়ে যায়, তাহলে তো সরকারও বাতিল হয়ে যাওয়া উচিত। তুমি এতদিন এসআইআর করার সময় পেলে না? ভোটের দুই মাস আগে তোমার মাথায় সুড়সুড়ি! নাকি, কাকে বাদ দেবে আর কাকে বাদ দেবে না! আর এলাকায় গিয়ে ধর্মের নামে ফর্ম বিক্রি করতে হচ্ছে। এতদিন কী করছিলে? ভোট এলে তোমার এসব মনে পড়ে?’’   

মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘‘যদি সত্যিই সীমান্ত এলাকায় এত কাল অবৈধ অভিবাসীরা থেকে থাকেন, তবে আন্তর্জাতিক সীমান্ত পাহারার দায়িত্ব কার ছিল? বিমানবন্দর এবং কাস্টমস সবই তো কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণে। যতদিন আমি আছি, ততদিন আমি তাদের আপনাদের ছুঁড়ে ফেলতে দেব না।’’

ভোটার তালিকা এসআইআর প্রক্রিয়া নিয়ে বারবার অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন মমতা। গত সপ্তাহে এসআইআর প্রক্রিয়া স্থগিতের অনুরোধও জানান তিনি। তার অভিযোগ, পরিকল্পনাহীন এই প্রক্রিয়া চালানো হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে রাজ্যের তিনজন বুথ লেভেল অফিসারের মৃত্যুর খবর মিলেছে এবং অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বলেও জানা গেছে। 

মমতার দাবি, এসআইআরের কাজের চাপেই এ ঘটনা ঘটছে। 

ঢাকা/তারা//

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘আমাকে আঘাত করলে ভারত হেলিয়ে দেব’ চরম হুঁশিয়ারি মমতার