সোনার দাম ভরিতে আরও এক হাজার কমেছে। ফলে আজ থেকে এক ভরি সোনা কিনতে খরচ করতে হবে ২ লাখ ৭ হাজার ৯৫৭ টাকা। এই হিসাব ধরলে ৫ লাখ টাকায় সোনা পাওয়া যাবে ২ দশমিক ৪০ ভরি। অর্থাৎ দুই ভরি আট আনা (প্রায়)।

মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাডের আঘাতে মারা গেছেন আবুল কালাম। তাঁর বয়স ছিল মাত্র ৩৫ বছর। কাজ করতেন। স্ত্রী আছে, দুটি শিশুসন্তান আছে। সরকার আবুল কালামের স্ত্রী আইরিন আক্তারকে ৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। অর্থাৎ ৩৫ বছর বয়সী আবুল কালামের জীবনের দামের সমান প্রায় আড়াই ভরি সোনা।

আরও পড়ুনবিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে ফার্মগেটে একজন নিহত, মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ ২৬ অক্টোবর ২০২৫

যদিও সব ধরনের পূর্বাভাস বলছে ২০২৬ সাল নাগাদ সোনার দাম আরও বাড়বে। এখন যেমন বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স সোনার দাম ৪ হাজার ডলারের বেশি। সামনে তা ৫ হাজার ডলারে যেতে পারে। যদি তা–ই হয় তাহলে তো আবুল কালামের জীবনের দাম আরও কমে যাবে। তখন বলতে হবে আবুল কালামের জীবনের দাম দুই ভরি সোনারও অনেক কম।

একটা হিসাব করা যাক। আবুল কালামের বয়স ৩৫ বছর। বাংলাদেশে কর্মক্ষম মানুষের সংজ্ঞায় একজন মানুষ ৬০ বছর পর্যন্ত কাজ করতে পারেন। ধরে নেওয়া যাক, আবুল কালাম মাসে ৫০ হাজার টাকা আয় করতেন। এই আয় যদি আর না–ও বাড়ে, তাহলে বাকি ২৫ বছরে তিনি আয় করতে পারতেন আরও ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা। আর ৫ শতাংশ হারে আয় বাড়লে সেটি হতো প্রায় ২ কোটি ৩০ লাখ টাকা। এই যদি হিসাব হয়, তাহলে পাঁচ লাখ কিসের ভিত্তিতে ক্ষতিপূরণের অঙ্ক ঠিক করা হলো?

এখন সরকার বলতে পারে রাস্তায় দাঁড়িয়ে কেউ যদি চা খান, আর ওপর থেকে কিছু একটা পড়ে মারা যান, এ বিষয়ে ক্ষতিপূরণ কোন আইনের ভিত্তিতে তারা দেবে। দেশে পারিবারিক সহিংসতা আইনে ক্ষতিপূরণের বিধান আছে। এ জন্য দ্য পাবলিক ডিমান্ড রিকভারি অ্যাক্ট ১৯১৩ আছে। এটা আসলে সরকারি নানা দাবি আদায়ের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। কোনো দুর্ঘটনা কর্মস্থলে ঘটলে তবেই কেবল শ্রম আইন প্রযোজ্য। আবার ১৮৫৫ সালের ফ্যাটাল অ্যাক্সিডেন্ট অ্যাক্ট অনুযায়ী অন্যের অবহেলা বা ভুল কাজের কারণে কোনো ব্যক্তির মৃত্যু হলে মৃতের পক্ষে আদালতে ক্ষতিপূরণের মামলা করা যায়। যদিও বাস্তবে এমন মামলা খুবই কম দেখা গেছে। এই যদি হয় অবস্থা, তাহলে আবুল কালামের কী হবে। এই যে দাফনের সময় তাঁর স্ত্রী ‘দুই সন্তান নিয়ে কোথায় দাঁড়াব’ প্রশ্ন করলেন, এর উত্তর কী হবে?

দেশের সংবিধানের ৩৬ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে চলাচলের স্বাধীনতা নিয়ে। সেখানে বলা আছে, ‘প্রজাতন্ত্রের নাগরিকগণ আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসংগত বিধিনিষেধের অধীন হইয়া দেশের যেকোনো অংশে প্রবেশ, সেখানে অবস্থান ও সেখান হইতে প্রস্থান করিবার অধিকার রাখিবেন।’ দেশে যেসব ধারা সবচেয়ে লঙ্ঘন করা হয়, তার মধ্যে সম্ভবত এটি অন্যতম। কারণ, আপনি ঘর থেকে বের হবেন; কিন্তু দিন শেষে আবার অক্ষতভাবে ঘরে ফিরতে পারবেন, এর কোনো নিশ্চয়তা নেই। পদে পদে মৃত্যু ওতপেতে থাকে। সুতরাং স্বাধীনভাবে চলাচল করতে না পারলে এর যথাযথ ক্ষতিপূরণ তো রাষ্ট্রকেই দিতে হবে। সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদে বলা আছে, নাগরিকেরা যদি মনে করেন, রাষ্ট্র বা সরকারি সংস্থা সংবিধান বা মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন করেছে, তাহলে উচ্চ আদালতে রিট করা যায়।

রাসেল সরকারের কথা নিশ্চয়ই মনে আছে? একটি প্রতিষ্ঠানের ভাড়া গাড়ি চালাতেন। ২০১৮ সালের ২৮ এপ্রিল কেরানীগঞ্জ থেকে ঢাকায় ফেরার পথে যাত্রাবাড়ীর হানিফ উড়ালসড়কে গ্রিনলাইন পরিবহনের বাসের চাপায় পা হারান তিনি। এ ঘটনায় ক্ষতিপূরণ চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের একজন আইনজীবী ওই বছরই হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করেছিলেন। তিন বছর মামলায় লড়ে শেষ পর্যন্ত রাসেল ৩৩ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ পেয়েছিলেন। সুতরাং উদাহরণ তো আছে।

রাসেল সরকারের উদাহরণ তো দেওয়া হলো। ক্ষতিপূরণ পাওয়ার আরও কিছু এ রকম উদাহরণ আছে। শাহজাহানপুরে খোলা পাইপে পড়ে শিশু জিহাদের মৃত্যুকে অপরাধজনক প্রাণহানি বলেছিলেন আদালত। এ জন্য ২০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হয়েছিল। ২০১৭ সালে ওয়াসার খোলা ম্যানহোলে পড়ে মারা গিয়েছিলেন ৪৫ বছরের শানু মিয়া। ওয়াসা আদালতের আদেশে ক্ষতিপূরণ দিয়েছিল ৫০ লাখ টাকা।

আমরা যাঁরা নিয়মিত মেট্রোরেলে চড়ে যাতায়াত করি, ফার্মগেট স্টেশনে এলে আবুল কালামের কথা একবার হলেও মনে পড়বেই; কিন্তু রাষ্ট্রের দায় তো আরও বেশি। রাষ্ট্র একজন সাধারণ নাগরিককে চলাচলের স্বাধীনতা দিতে পারেনি। এখন তাহলে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিক। এ জন্য কাউকে রিট করতে হবে, এমনটা যেন না হয়।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

বিশ্বজিৎ হত্যার দৃশ্যচিত্র আজো দেশের মানুষকে কাঁদায়: অধ্যাপক রইছ


“বিশ্বজিৎ হত্যার দৃশ্যচিত্র আজো দেশের মানুষকে কাঁদায় এবং আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, দণ্ডহীনতার সংস্কৃতি রাষ্ট্র ও সমাজ উভয়ের জন্য মারাত্মক হুমকি,”- এমন মন্তব্য করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মো. রইছ উদ্‌দীন।

মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ সাজিদ ভবনের নিচতলায় শিক্ষক সমিতির লাউঞ্জে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই কথা বলেন।

আরো পড়ুন:

জবিতে ভর্তির আবেদন ৫ ডিসেম্বর ১১টা ৫৯ মিনিট পর্যন্ত বৃদ্ধি

জবির ৫ শিক্ষার্থীকে মারধর, আটক ৪

২০১২ সালের এই দিনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে রাজনৈতিক সন্ত্রাসের বর্বরতায় একজন নিরীহ নাগরিককে ভুল পরিচয়ের ভিত্তিতে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয় জানিয়ে অধ্যাপক রইছ উদ্দীন বলেন, “এই নৃশংস ঘটনা বাংলাদেশের বিবেককে আহত করেছে এবং মানবিক ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে গভীরভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। বিশ্বজিৎকে মৃত্যু শুধু একজন মানুষের প্রাণহানি নয়; এটি ছিল মানবতা, ন্যায়বিচার ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের ওপর বর্বর আঘাত।”

অধ্যাপক  রইছ উদ্‌দীন বলেন, 'আজকের এ দিনে আমি বিশ্বজিৎকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি এবং ফ্যাসিবাদের পতনে তার আত্মত্যাগকে গভীরভাবে অনুধাবন করছি। আমি বিশ্বাস করি কোনো রাজনৈতিক মতাদর্শ, সংগঠন বা ক্ষমতার ছায়ায় দাঁড়িয়ে নিরীহ মানুষকে হত্যার ন্যূনতম বৈধতা কারো নেই।'

তিনি আরো বলেন, “বিশ্বজিৎ হত্যার দৃশ্যচিত্র আজও দেশের মানুষকে কাঁদায়, এবং আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে দণ্ডহীনতার সংস্কৃতি রাষ্ট্র ও সমাজ উভয়ের জন্য মারাত্মক হুমকি। আমি গভীর শোকের সঙ্গে স্মরণ করছি, নিহত বিশ্বজিৎ দাসকে, তাঁর শোকাহত পরিবারকে এবং ন্যায়বিচারের জন্য সংগ্রামরত সকল মানবাধিকারকর্মীকে।”

অধ্যাপক  রইছ উদ্‌দীন স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেন, “ন্যায়বিচারের সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। ফৌজদারি বিচারপ্রক্রিয়া শেষ হলেও সাজাপ্রাপ্তদের দণ্ড বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে যেন কোনো বিলম্ব বা শিথিলতা না ঘটে; এটি রাষ্ট্রের প্রতি আমাদের দৃঢ় আহ্বান; রাজনৈতিক সন্ত্রাস ও ছাত্র সংগঠনের সহিংসতা কঠোরভাবে নির্মূল করতে হবে।”

“উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে দলীয় সন্ত্রাসমুক্ত করা শুধু প্রশাসনের দায়িত্বই নয়, আমাদের সকলকেও এ ব্যাপারে সচেষ্ট থাকতে হবে; নিরীহ নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের নৈতিক দায়িত্ব। বিশ্বজিৎ দাসের মতো নিরীহ মানুষ যেন কখনো আর রাজনৈতিক সংঘর্ষের বলি না হয়, তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরো পেশাদার, নিরপেক্ষ ও মানবিক ভূমিকা পালন করতে হবে; বিশ্বজিৎ-এর স্মৃতি সংরক্ষণে স্থায়ী উদ্যোগ প্রয়োজন,” বলেন তিনি।

অধ্যাপক  রইছ উদ্‌দীন বলেন, “ইতোমধ্যে এ মর্মে টোকেন একটি স্মৃতিফলক বা স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপন করা হয়েছে। ভবিষ্যতে বৃহৎ পরিসরে একটি স্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপনের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। এ ব্যাপারে সকলের সহযোগিতা একান্ত কাম্য।”

সংবাদ সম্মেলনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ইমরানুল হক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মোহাম্মদ বিলাল হোসাইনসহ সমিতির অন্যান্য নেতা, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনের নেতা এবং সাংবাদিক প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে বিশ্বজিৎ দাস হত্যা দিবস স্মরণে জবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক রইছ উদ্‌দীনের নেতৃত্বে ‘বিশ্বজিৎ চত্বরে’ পুস্পস্তবক অর্পণ করা হয়। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, ছাত্র সংগঠন নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নিম্নবিত্তের জীবনে সুখের সংজ্ঞা
  • পসরা সাজিয়েছে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান, মিলছে তাৎক্ষণিক ঋণসুবিধাও
  • বাফেলোতে মসজিদের সামনে দীর্ঘ সময় আইস পুলিশের অবস্থান
  • মিরসরাইয়ে বিএনপির ২ পক্ষের সংঘর্ষে যুবক নিহত
  • প্রায় ৭ ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকার পর পুলিশি সহায়তায় সচিবালয় ছাড়লেন অর্থ উপদেষ্টা
  • ‘আমিরুল বিশ্বসেরাদের একজন হতে পারে’
  • চার নায়িকার ‘ট্রাইব্যুনাল’, দেখা যাবে ঈদে
  • কামিন্স তো ফিরেছেনই, অ্যাডিলেড টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার স্কোয়াডে আরও যাঁরা আছেন
  • সন্তান জন্মে কেন সি সেকশন দরকার হয়
  • বিশ্বজিৎ হত্যার দৃশ্যচিত্র আজো দেশের মানুষকে কাঁদায়: অধ্যাপক রইছ