বরিশাল সরকারি ব্রজমোহন (বিএম) কলেজে ছাত্র সংসদ (বাকসু) নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার দাবিতে গতকাল রোববার দুপুর থেকে আমরণ অনশন শুরু করেছেন ফেরদৌস রুমি নামের শিক্ষার্থী। আজ সোমবার দুপুরে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত তাঁর অনশন অব্যাহত ছিল।

শিক্ষার্থীরা বলেন, রোববার বেলা দেড়টা থেকে কলেজের প্রশাসনিক ভবনের সামনে ইতিহাস বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ফেরদৌস রুমি অনশন শুরু করেন। তবে কলেজ কর্তৃপক্ষ এখনো তাঁর দাবির বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা দেয়নি।

অনশনকারী ফেরদৌস রুমি বলেন, ‘৩২ হাজার শিক্ষার্থীর পদচারণে মুখর ঐতিহ্যবাহী বিএম কলেজে ২৪ বছর ধরে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হচ্ছে না। ছাত্র সংসদ না থাকায় শিক্ষার্থীদের ন্যায্য অধিকার ও দাবিদাওয়ার বিষয়গুলো উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে। ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবিতে আমরা এক মাসের বেশি সময় ধরে নানা কর্মসূচি পালন করেছি, কিন্তু প্রশাসন কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। তাই বাধ্য হয়ে আমি আমরণ অনশনে বসেছি। দাবি মেনে না নেওয়া পর্যন্ত অনশন চলবে।’

অনশনস্থলে অনেক শিক্ষার্থী সংহতি প্রকাশ করে অবস্থান নিয়েছেন। তাঁরা বলছেন, বিএম কলেজে মোট ২২টি বিভাগ আছে। বর্তমানে ২২টি বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) এবং ১৯টি বিষয়ে স্নাতকোত্তর কোর্স চালু আছে। শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৩২ হাজার। কিন্তু অনুমোদিত ১৯৯টি শিক্ষকের পদের বিপরীতে আছেন মাত্র ১৬৫ জন। সরকারি মানদণ্ড অনুযায়ী, প্রতিটি বিভাগে ন্যূনতম ১২ জন শিক্ষক থাকা উচিত। কিন্তু বিএম কলেজের কোনো বিভাগে তা পূরণ হয়নি। ফিন্যান্স বিভাগে শিক্ষক মাত্র দুজন আর মার্কেটিং বিভাগে একজন। ফলে অনেক বিভাগে তিন-চারজন শিক্ষক দিয়েই পুরো কার্যক্রম চলছে।

এ ছাড়া ৩২ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে মাত্র আড়াই হাজার ছাত্রাবাসে থাকতে পারেন। ছেলেদের জন্য তিনটি এবং মেয়েদের জন্য একটি আবাসন আছে, যেখানে আসনসংখ্যা মাত্র ১ হাজার ১৫০টি। সেখানে গাদাগাদি করে থাকছেন প্রায় আড়াই হাজার শিক্ষার্থী। অন্যদের থাকতে হয় বাইরের মেসে, যা ব্যয়বহুল ও অনিরাপদ। চারটি হলের মধ্যে তিনটি হলও ঝুঁকিপূর্ণ। ৩২ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য কলেজের বাস মাত্র তিনটি। শিক্ষকস্বল্পতা, শ্রেণিকক্ষ ও আবাসন–ঘাটতি, পরিবহন সমস্যা—সব মিলিয়ে কলেজের শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

অনশনে সংহতি প্রকাশ করে অবস্থান নেওয়া শিক্ষার্থী আকবর মোবিন বলেন, ২৪ বছর ধরে ছাত্র সংসদ না থাকায় কলেজটি পাহাড়সম সমস্যায় জর্জরিত। পাশাপাশি ছাত্র সংসদ নির্বাচন না হওয়ায় রাজনীতিতে নেতৃত্বের বিকাশও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

শিক্ষার্থীরা বলেন, ১৮৮৯ সালে বিএম কলেজ প্রতিষ্ঠার পর প্রথম ছাত্র সংসদ গঠিত হয় ১৯৫২-৫৩ শিক্ষাবর্ষে। সর্বশেষ ২০০২ সালের ১৩ আগস্ট ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে সেন্টু-বাদল-নেয়ামুল পরিষদ বিজয়ী হয়েছিল। এরপর আর ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়নি।

দাবির বিষয়ে বিএম কলেজের অধ্যক্ষ শেখ মো.

তাজুল ইসলাম বলেন, ছাত্র সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে। এ বিষয়ে ছাত্র প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক শেষে চূড়ান্ত রোডম্যাপ ঘোষণা করা হবে। দ্রুত বাকসু নির্বাচনের তারিখ জানানো হবে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ৩২ হ জ র কল জ র

এছাড়াও পড়ুন:

অসুস্থ হয়ে পড়েছেন অনশনরত রাবির চিকিৎসা মনোবিজ্ঞান বিভাগের ৫ শিক্ষ

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) চিকিৎসা মনোবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. এনামুল হকের পদত্যাগের দাবিতে আমরণ অনশনে বসেছেন পাঁচ শিক্ষার্থী।

টানা ২১ ঘণ্টা ধরে অনশন থাকায় অসুস্থ হয়ে পড়েছেন তারা। এর মধ্যে, গুরুতর অসুস্থ হওয়ায় দুই শিক্ষার্থীকে স্যালাইন দেওয়া হয়েছে।

আরো পড়ুন:

বাকসু অকার্যকর থাকায় সাঁটানো হলো ‘সেন্ট্রাল ভাতের হোটেল’ লেখা ব্যানার

টিউশনিতে গিয়ে শ্লীলতাহানির শিকার জবি ছাত্রী, অভিযুক্ত পলাতক

এর আগে, টানা চারদিন ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে শাটডাউন কর্মসূচি পালন করেন তারা।

সোমবার (২৭ অক্টোবর) সকাল ১০টার দিকে অনশনরত শিক্ষার্থীদের স্যালাইন দেওয়া হয়। এ সময় উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব এসে তাদের খোঁজ নেন। দ্রুত সময়ের মধ্যে সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেন তাদের।

এদিকে, শিক্ষার্থীরা বলছেন প্রশাসন শুধু আমাদের আশ্বাসই দিচ্ছে, কিন্তু কার্যকর কোনো পদক্ষেপ তারা নিচ্ছে না।

অনশনরত শিক্ষার্থীরা হলেন, চিকিৎসা মনোবিজ্ঞান বিভাগের ১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের মো. সুমন আলী, ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ইকরা, হুমাইরা, ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ইমন ও ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের সাদিক।

এ সময় শিক্ষার্থী রাইসুল আহমেদ বলেন, “আমাদের এক দফা দাবি ছিল, বহিরাগত সভাপতির অপসারণ। আমরা চাই, বিভাগ থেকেই বিভাগের সভাপতি করতে হবে। গতকাল প্রশাসনের সঙ্গে বসেছিলাম। কিন্তু তারা বহিরাগত চেয়ারম্যানকে বহাল রাখতে চায়। এজন্য গতকাল থেকে আমরা অনশনে বসেছি।”

তিনি বলেন, “আমাদের কয়েকজন অনশনরত অবস্থা অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তাদের মধ্যে দুইজনকে স্যালাইন দেওয়া হয়েছে। যতক্ষণ না পর্যন্ত তাকে অপসারণ করা হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের অনশন চলবে।”

২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী জান্নাত জামান বলেন, “আমরা গতকাল প্রশাসনের সঙ্গে বসেছিলাম। কিন্তু তারা আমাদের কোনো আশ্বাস দেয়নি, আরো সময় চেয়েছেন। তারা আমাদের বলেছে বর্তমান সভাপতি সঙ্গে নিগোশিয়েট করে তাকে মেনে নেওয়ার কথা বলেছেন। কিন্তু আমরা তাকে চাই না। যেহেতু আমাদের দাবি মেনে নেওয়া হচ্ছে না, তাকে অপসারণ না করা পর্যন্ত অনশন চলবে।”

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব বলেন, “একটা প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে আমার দায়িত্ব সব বিভাগ যেন ভালোভাবে চলে, সেটা দেখা। সেটার জন্য আমি চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমরা সমাধান বের করার চেষ্টা করছি। একটা সমাধান বের হবে দ্রুতই। এখন এই কাজগুলো করতে গেলে যে সময়টুকু লাগে, সেটা তো আমাদের দিতে হবে।”

রবিবার (২৬ অক্টোবর) দুপুরে উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীবের সঙ্গে এক আলোচনায় বসেন শিক্ষার্থীরা। তবে কোনো রকম আশ্বাস না পাওয়ায় তারা আমরণ অনশনে বসেছেন বলে জানিয়েছেন তারা। প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে আমরণ অনশনের ঘোষণা দেন চিকিৎসা মনোবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের রাইসুল মাহমুদ।

ঢাকা/ফাহিম/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • অসুস্থ হয়ে পড়েছেন অনশনরত রাবির চিকিৎসা মনোবিজ্ঞান বিভাগের ৫ শিক্ষ
  • রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভাগীয় সভাপতির পদত্যাগ দাবিতে অনশনে ৬ শিক্ষার্থী, অসুস্থ দুজন
  • সভাপতির পদত্যাগ দাবিতে অনশনে চিকিৎসা মনোবিজ্ঞান বিভাগের ৪ শিক্ষার্থী
  • রাবি নাট্যকলা বিভাগে শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন, অনশন অব্যাহত
  • রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির প্রতিবাদে আমরণ অনশনে দুই শিক্ষার্থী
  • ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয়ে সেশনজট নিরসনের দাবিতে আমরণ অনশনে শিক্ষার্থীরা