আমাদের টাকায় নির্মিত কাঠামো প্রিয়জনের জীবন কেড়ে নিয়েছে: সিয়াম
Published: 27th, October 2025 GMT
রাজধানীর ফার্মগেটে মেট্রোরেলের পিলার থেকে বিয়ারিং প্যাড পড়ে এক পথচারীর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। রবিবার (২৬ অক্টোবর) দুপুর ১২টা ২০ মিনিটের দিকে ফার্মগেট মেট্রোরেল স্টেশনের নিচে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
তেজগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোবারক হোসেন জানান, নিহতের নাম আবুল কালাম (৪৫)। তার বাড়ি শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া উপজেলার ঈশরপাটি গ্রামে।
আরো পড়ুন:
মেট্রোরেলে নাশকতার পরিকল্পনা আছে কি-না, খতিয়ে দেখতে হবে: সপু
দুই শিশু সন্তান নিয়ে অথৈ সাগরে প্রিয়া
এই দুর্ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। অভিনেতা সিয়াম আহমেদও সেই ক্ষোভের স্রোতে নিজের অবস্থান জানান দিয়েছেন। রবিবার সন্ধ্যায় নিজের ফেসবুক পেজে দেওয়া একটি দীর্ঘ পোস্টে তিনি লিখেন, “ঢাকা মেট্রোরেল ট্র্যাজেডির ভয়াবহতা আমাকে অসাড় করে তোলে এবং সত্যি বলতে বীতশ্রদ্ধ করে। আমরা অবকাঠামো নির্মাণের জন্য ট্যাক্স দিই, যা আমাদের জীবনকে উন্নত করবে—ধ্বংস করবে না। অথচ আমার টাকায় এমন কিছু তৈরি করা হয়েছে, যা এক পরিবারের প্রিয়জনের জীবন কেড়ে নিয়েছে।”
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কড়া সমালোচনা করে সিয়াম আহমেদ লেখেন, “পরিহাসটা খুবই যন্ত্রণাদায়ক—অন্য দেশে আপনি দুর্ঘটনাবশত রেললাইনের ওপর পড়ে যেতে পারেন। কিন্তু এই অভিশপ্ত দেশে রেললাইন ও তার টুকরো আকাশ থেকে আপনার ওপর পড়ে যায়! এটি কোনো সৃষ্টিকর্তার কাজ নয়, এটি গাফিলতির মারাত্মক পরিণতি। অথচ সংশ্লিষ্ট সবাই দাবি করবে, তারা ‘ভুলভাবে তৈরি করেনি’, ‘চেক করতে ভুলেনি’, কিংবা ‘দায় এড়ায়নি’।”
জবাবদিহিতার দাবি জানিয়ে সিয়াম আহমেদ লেখেন, “আমাদের শুধু সমবেদনা নয়, এর চেয়ে অনেক বেশি কিছু প্রয়োজন। এই বিশাল ব্যর্থতার জবাব ও জবাবদিহিতা আমাদের দরকার।”
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সিয়ামের এই বক্তব্য মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়েছে, যেখানে অনেকে অভিনেতার সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে বলেন—“জবাবদিহি ছাড়া উন্নয়ন কোনোদিন নিরাপদ হয় না।”
ঢাকা/রাহাত/শান্ত
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর চলচ চ ত র আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
চাকরিপ্রত্যাশী প্রতিবন্ধীদের আন্দোলনে হামলার অভিযোগ, পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন
চোখে নেই আলো, হাতে সাদাছড়ি। চাকরির দাবিতে রাস্তায় বসা প্রতিবন্ধী তরুণ-তরুণীদের চোখেমুখে ক্লান্তি আর ক্ষোভ। দাবিদাওয়া না মানা শুধু নয়, এবার আন্দোলনরত প্রতিবন্ধী চাকরিপ্রার্থীদের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে পুলিশ ও বহিরাগত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে।
চাকরিপ্রত্যাশী প্রতিবন্ধীরা জানান, ৫ দফা দাবিতে ১৯ অক্টোবর থেকে তাঁরা রাজধানীর শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন। এর আগে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলেও বারবার পুলিশি বাধার মুখে পড়তে হয়েছে। গতকাল রোববার দুপুরে শাহবাগে পুলিশি ব্যারিকেডের ভেতরে অবস্থান নেওয়ার সময় হঠাৎ বহিরাগত কয়েকজন এসে তাঁদের ওপর হামলা চালায়। হামলার পর আহত ব্যক্তিদের কেউ কেউ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে আবারও আন্দোলনের স্থানে ফিরে আসেন।
দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মাসুদুর রহমানের ভাষ্য, ‘প্রথমে কিছু বহিরাগত এসে আমাদের মারধর করে। পুলিশ দাঁড়িয়ে দেখে। পরে তিনজন পুলিশ আমাকে ধরে থানায় নিয়ে যায়। সেখানে আমাকে মেরেছে, শার্ট ছিঁড়ে দিয়েছে। পথচলার প্রধান মাধ্যম সাদাছড়ি ভেঙে ফেলেছে। পানি চাইলে দেয়নি।’
আরেক আন্দোলনকারী গোলাম কিবরিয়া বলেন, ‘পুলিশ আমাকে সরে যেতে বলেছিল। আমি উঠতেই একজন পা দিয়ে পেটের নিচে আঘাত করে। প্রচণ্ড ব্যথায় কুঁকড়ে উঠি, রাস্তায় পড়ে যাই, বমি করি।’ তাঁর দাবি, তাঁরা শান্তিপূর্ণভাবে দাঁড়িয়েছিলেন, কিন্তু পুলিশ ও বহিরাগত ব্যক্তিরা বর্বরোচিত হামলা করছে।
আন্দোলনকারীরা জানান, হামলায় আহত হয়েছেন অন্তত পাঁচজন প্রতিবন্ধী। তাঁদের মধ্যে দুজন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ও একজন হুইলচেয়ার ব্যবহারকারী বলে জানা গেছে।
আরও পড়ুনচাকরির পাশাপাশি যে পাঁচটি কাজ আপনার আয় বাড়াবে২৬ অক্টোবর ২০২৫পুলিশের দাবি, ‘সব মিথ্যা’এদিকে চাকরিপ্রত্যাশী প্রতিবন্ধীদের অভিযোগ অস্বীকার করেছে পুলিশ। শাহবাগ থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ খালিদ মনসুর প্রথম আলোকে বলেন, ‘থানায় কাউকে মারধর করা হয়নি। এগুলো নির্জলা মিথ্যা। তারা রাস্তায় বসে যানজট তৈরি করেছিল। এতে অ্যাম্বুলেন্সের রোগীর স্বজনসহ পথচারীরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। উত্তেজিত জনতা হয়তো হামলা করেছে।’
তবে আন্দোলনকারীদের দাবি, হামলার সময় পুলিশ উপস্থিত ছিল এবং কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি।
আরও পড়ুনকানাডায় টিউশন ফি ছাড়াই স্কলারশিপ, ৭০০টির বেশি প্রোগ্রাম১১ ঘণ্টা আগেসংবাদ সম্মেলনে বিচার দাবিহামলার প্রতিবাদে আজ সোমবার বিকেল চারটায় রাজু ভাস্কর্যের সামনে সংবাদ সম্মেলন করে প্রতিবন্ধী গ্র্যাজুয়েট পরিষদ। পরিষদের আহ্বায়ক আলী হোসাইন বলেন, ‘৯ দিন ধরে রাস্তায় আছি, সরকার কোনো উত্তর দিচ্ছে না। উল্টো হামলা হচ্ছে। থানায় নিয়ে মারধর করা হয়েছে। দোষী পুলিশ সদস্য ও সন্ত্রাসীদের বিচার করতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা কোনো আশ্বাস শুনতে চাই না। অবিলম্বে প্রজ্ঞাপন জারি করে চাকরির ব্যবস্থা করতে হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক শিমুল কুম্ভকার আন্দোলনকারীদের প্রতি সংহতি জানান এবং হামলার দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তি দাবি করেন।
প্রতিবন্ধী গ্র্যাজুয়েটরা সংবাদ সম্মেলন থেকে পাঁচ দফা দাবি জানান। তাঁদের প্রধান দাবিগুলো হলো প্রতিবন্ধী প্রার্থীদের জন্য বিশেষ নিয়োগপ্রক্রিয়া চালু করা; মৌখিক পরীক্ষা ছাড়াই নিয়োগের সুযোগ দেওয়া; চাকরিতে যোগদানের বয়সসীমা শিথিল করা এবং চলমান আন্দোলনে হামলার বিচার করা।
আন্দোলনকারীরা বলছেন, দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। অন্যদিকে পুলিশের বক্তব্য, ব্যস্ত রাস্তায় অবস্থানের কারণে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হচ্ছে।
আরও পড়ুনকাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটে বড় নিয়োগ, পদসংখ্যা ৯৯২৫ অক্টোবর ২০২৫আরও পড়ুনসরকারি চাকরিতে কোটাসহ ৫ দফা দাবিতে প্রতিবন্ধী গ্র্যাজুয়েটদের অবস্থান কর্মসূচি২৫ অক্টোবর ২০২৫