চট্টগ্রাম দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী ও গুরুত্বপূর্ণ বন্দরনগরী। এই শহরের জনসংখ্যা কত, তা একটি সাধারণ প্রশ্ন হলেও রাষ্ট্রের দুটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার তথ্যে প্রায় দ্বিগুণ পার্থক্য দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) জনশুমারি ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) প্রতিবেদনে তথ্যের বড় তারতম্য দেখা যাচ্ছে।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) জনশুমারি অনুযায়ী, সংখ্যাটি যেখানে ৩২ লাখের কিছু বেশি, সেখানে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) অনুমান করছে ৬০ থেকে ৭০ লাখ। একটি নগরের জনসংখ্যা কত, তার পরিসংখ্যানে বিশাল এই ফারাক প্রমাণ করে আমরা উন্নয়নের ভিত্তিভূমিকে কতটা অনুমাননির্ভর করে তুলেছি। চসিক ৭০ লাখ বাসিন্দার কথা বলছে, তার মধ্যে ১৫ লাখকে ‘ভাসমান’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। মাত্র ১৯ লাখ ভোটার থাকা সত্ত্বেও ৭০ লাখের দাবি প্রমাণ করে, চসিকের হিসাব জরিপভিত্তিক নয়, বরং এটি অনুমাননির্ভর।

বিশেষজ্ঞদের মতে, কোনো অঞ্চলের উন্নয়ন প্রকল্প, বাজেট বরাদ্দ, অবকাঠামোর আকার নির্ধারণ এবং সেবাদানের সক্ষমতা—সবকিছুর মূল চাবিকাঠি হলো জনসংখ্যার নির্ভুল হিসাব। কিন্তু চট্টগ্রাম নগরে এই মৌলিক তথ্যেরই চরম ঘাটতি রয়েছে। এই তথ্যের দ্বৈততা ও অনিশ্চয়তা কিছু গুরুতর সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। যদি জনসংখ্যা ৩২ লাখ হয়, আর ৭০ লাখের ভিত্তিতে অবকাঠামো ও সেবা প্রকল্প নেওয়া হয়, তবে সরকারি সম্পদের বড় ধরনের অপচয় হয়। আবার যদি প্রকৃত জনসংখ্যা ৬০ লাখ হয়, কিন্তু বাজেট বরাদ্দ হয় ৩২ লাখের ভিত্তিতে, তবে জনগণ প্রত্যাশিত নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত হয়।

সঠিক সংখ্যা জানা না থাকলে পানির সরবরাহ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, রাস্তাঘাট নির্মাণ, স্বাস্থ্য ও শিক্ষাব্যবস্থার মতো মৌলিক নাগরিক সুবিধাগুলোর পরিকল্পনা ভুলভাবে নির্ধারিত হয়। উদাহরণস্বরূপ, ৩২ লাখের জন্য নির্মিত পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থা ৬০ লাখ মানুষের চাপ নিতে পারবে না। যখন দুটি সরকারি সংস্থার তথ্যে এত বড় ফারাক থাকে, তখন উন্নয়ন বা সেবার ব্যর্থতার দায়ভার কার ওপর পড়বে, তা নির্ধারণ করা কঠিন হয়ে পড়ে। বিবিএসের জরিপ যে কমিটি অনুমোদন করে, তার প্রধান স্বয়ং সিটি মেয়র, ফলে এই বৈপরীত্য সত্যিই দুঃখজনক।

জনশুমারি এবং সিটি করপোরেশনের প্রশাসনিক প্রতিবেদন—উভয় তথ্য বিশ্লেষণ করে একটি গ্রহণযোগ্য ও বিজ্ঞানসম্মত ফলাফল প্রণয়ন করতে হবে। এর জন্য সরকার এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় বিবিএস ও চসিকের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে একটি যৌথ টাস্কফোর্স গঠন করতে পারে। চট্টগ্রামের টেকসই ও সুষম উন্নয়নের স্বার্থে নগরটির প্রকৃত জনসংখ্যা কত, সেই তথ্যের জট দ্রুত নিরসন করা জরুরি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: জনস খ য ৩২ ল খ ব ব এস ৭০ ল খ সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

ডেমরায় সিটি করপোরেশনের ময়লাবাহী গাড়ির সঙ্গে মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে দুই শিক্ষার্থী নিহত

রাজধানীর ডেমরায় আজ শুক্রবার ভোররাতে সিটি করপোরেশনের ময়লাবাহী গাড়ির সঙ্গে মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। তাঁরা একটি গায়েহলুদের অনুষ্ঠান শেষে ফিরছিলেন।

নিহত ব্যক্তিরা হলেন শিক্ষার্থী তাহসিন তপু (২৫) ও ইরাম হৃদয় (২৩)। দুজন বেসরকারি দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তাহসিন সপরিবার ডেমরার সানারপাড়ায় থাকতেন। আর ইরাম চিটাগং রোড এলাকার একটি বাসায় থাকতেন।

ডেমরা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. রুবেল হাওলাদার আজ সকালে ‌প্রথম আলোকে বলেন, ডেমরার মিনি কক্সবাজার রোডের ধার্মিকপাড়ায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) একটি ময়লাবাহী গাড়ির সঙ্গে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি মোটরসাইকেলের সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় মোটরসাইকেলে থাকা দুই শিক্ষার্থী রাস্তায় ছিটকে পড়ে গুরুতর আহত হন। তাঁদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজে নেওয়ার পর দুজন মারা যান। ময়লাবাহী গাড়িটি জব্দ করা গেলেও চালক পালিয়ে গেছেন।

গায়েহলুদে অংশ নেওয়া ধর্মপাড়ার বাসিন্দা ও নিহত দুই শিক্ষার্থীর বন্ধু তাওসিফ হোসেন হাসপাতালে আজ সকালে প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা এলাকার অনেকেই একই এলাকার এক বড় ভাইয়ের গায়েহলুদে গিয়েছিলেন। অনুষ্ঠান শেষে তাঁরা কয়েকজন চা খাচ্ছিলেন। এ সময় তাহসিন ও ইরাম মোটরসাইকেলে ঘুরতে যান। কিছু দূর যেতেই তাঁরা বিকট শব্দ শুনতে পান। গিয়ে গাড়ির নিচে মোটরসাইকেলটি দেখতে পান। রাস্তায় ছিটকে পড়ে ছিলেন তাহসিন ও ইরাম। পরে তাঁদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজে নেওয়া হয়।

সকালে হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের দায়িত্বে থাকা পরিদর্শক মো. ফারুক প্রথম আলোকে বলেন, ভোর পৌনে পাঁচটার দিকে চিকিৎসক তাহসিনকে পরীক্ষা–নিরীক্ষা করে মৃত ঘোষণা করেন। আর ইরাম চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে মারা যান। লাশ দুটি ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ