একই মাঠ। একই উইকেট। অথচ ব‌্যাটিংয়ে কেমন রাত-দিনের তফাৎ। সন্ধ‌্যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্রেফ ৩ ওভারের ঝড়ো ব‌্যাটিংয়ে ওলটপালট স্কোরবোর্ড। ওই ঝড়টাই যেন এলোমেলো করে দিলো মনোবল, আত্মবিশ্বাস।

জবাব দিতে নেমে রাতে বাংলাদেশের ব‌্যাটসম‌্যানরা পথে পথে হোঁচট খেল। একটু মাথা তুলে দাঁড়ায় তো, আবার ঝাঁকুনি খেয়ে নিচে পড়ে। ফলাফল ম‌্যাচ হার।

আরো পড়ুন:

দায়িত্বহীন ব্যাটিংয়ে ১৬ রানে হারল বাংলাদেশ

খেলা চলাকালিন মারা গেলেন বরিশাল দলের ফিজিও হাসান আহমেদ

চট্টগ্রামের বীরশ্রেষ্ঠ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে দুই দলের তিন ম‌্যাচ সিরিজের প্রথমটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১৬ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশকে। আগে ব‌্যাটিংয়ে নেমে অতিথিরা মাত্র ৩ উইকেটে ১৬৫ রান তোলে। বাংলাদেশের ইনিংস আটকে যায় ১৪৯ রানে।

ওয়ানডে সিরিজ জেতার কারণে বাংলাদেশের থেকে প্রত‌্যাশা ছিল বেশি। তাইতো চট্টগ্রামের দর্শকরা দলকে উজ্জীবিত করতে মাঠে হাজির হয়েছিলেন। মিরপুর শের-ই-বাংলায় দর্শক খরা ছিল। চট্টগ্রামের গ‌্যালারি ছিল প্রায় কানায় কানায় পূর্ণ। যা নিশ্চিতভাবেই আয়োজকদেরও স্বস্তি এনে দেবে। কিন্তু মাঠের ক্রিকেট! তা নিশ্চিতভাবেই মন ভরাতে পারেনি দর্শকদের।

টস জিতে ব‌্যাটিং করতে নামা ওয়েস্ট ইন্ডিজের লক্ষ‌্য ছিল বড় সংগ্রহ পাওয়া। তাদের শুরুর ব‌্যাটিং সেই বার্তাই দিচ্ছিল। কিন্তু মাঝের ওভারে স্বাগতিক বোলাররা তাদের রানের চাকায় লাগাম টানেন। কিন্তু শেষের ঝড়ে স্বস্তির পুঁজি পায় অতিথিরা।

রোভমান পাওয়েল ও শেই হোপ শেষ ৩ ওভারে ৫১ রান পায়। তাসকিন আহমেদ ১৮তম ওভারে ১টি করে চার ও ছক্কায় ১৫ রান দিয়ে তাদের হাত খুলে দেন। পরের ওভারে মোস্তাফিজ দেন ১৪ রান। শেষ ওভারে ছক্কার হ‌্যাটট্রিক হজম করেন তানজিম হাসান। সব মিলিয়ে ২২ রান দিয়ে তার বোলিং স্পেল শেষ করেন বিনা উইকেটে ৪৭ রান দিয়ে।

অধিনায়ক হোপ ২৮ বলে ৪৬ রান করেন ১ চার ও ৪ ছক্কায়। সমান বলে রোভমান পাওয়েল ৪৪ রান করেন সমান ১ চার ও ৪ ছক্কায়। চতুর্থ উইকেটে তাদের বিধ্বংসী ব‌্যাটিংয়ে যোগ হয় ৪৬ বলে ৮৩ রান।

এর আগে দুই ওপেনার আলিক আথানজে ও ব্রেন্ডন কিং ৫৯ রান করেন। দুজনই ত্রিশের ঘরে গিয়ে আউট হন। আথানজে ২৭ বলে ৩৪ রান করেন। কিং ৩৬ বলে করেন ৩৩ রান। চারে নামা রাদারফোর্ড খুলতে পারেননি রানের খাতা।

বোলারদের মধ‌্যে তাসকিন ৩৬ রানে ২ উইকেট নিয়ে ছিলেন সেরা। রিশাদ ৪০ রান দিয়ে পেয়েছেন ১ উইকেট।  

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট মানেই খানিকটা সময় ছন্দ পাওয়া সেটাই পুরোপুরি আগলে নেওয়া। হোপ ও পাওয়েল শেষ ৩ ওভারে যা করেছেন সেটাই এই ফরম‌্যাটের আসল মজা। সেখানে বাংলাদেশের প্রথম ৫ ব‌্যাটসম‌্যান আউট হয়ে যান ৫৭ রানে। শতরানের আগে সাজঘরের পথে আরো ১ ব‌্যাটসম‌্যান। মানে লড়াইয়ের আগেই ম‌্যাচের এপিটাফ লিখা হয়ে যায়!

নিবেদন, আবেদন সবটাই তো শেষ। ব‌্যাটসম‌্যানদের ফেরার ধরনগুলো প্রায় একই রকম। তানজিদ ৫ বলে ২ চার ও ১ ছক্কায় ১৫ রান করে উইকেট বিসর্জন দিয়ে আসেন। ফেরার ম‌্যাচে লিটন করেন মাত্র ৫ রান। ফিরতি ক‌্যাচ দেন বাঁহাতি স্পিনার আকিল হোসেনকে। ফর্মে থাকা সাইফ সুইপ করতে গিয়ে ফাইন লেগে শেফার্ডের তালুবন্দি হন ৮ রানে। শামীম বল উইকেটে টেনে বোল্ড। আর সোহান উইকেট থেকে সরে শট খেলতে গিয়ে পিয়েরের শিকার হন। কিছুটা আশা দেখিয়েছিলেন তাওহীদ হৃদয়। তারপরও ২৫ বলে ২৮ রানের বেশি করতে পারেননি।

এরপর লেজের ব‌্যাটসম‌্যানদের কেবল ম‌্যাচটা টেনে বড় করার লড়াই। যেখানে তারা সফল। দলের সর্বোচ্চ স্কোরার তানজিম ২৭ বলে ৩৩ রান করেন। ৩টি চার ও ১টি ছক্কা তার ব‌্যাটে। হোল্ডারের বল সীমানা তাড়া করতে গিয়ে ডিপ থার্ড ম‌্যান অঞ্চলে তালুবন্দি হন। তাকে সঙ্গ দিয়ে ব‌্যাটিং করা নাসুম ১৩ বলে ২০ রান করেন ৩ চার ও ১ ছক্কায়। দলের সবচেয়ে বড় জুটিটা আসে তাদের ব‌্যাটে, ২৩ বলে ৪০ রান।

তাসকিন-মোস্তাফিজ এসে যথাক্রমে ১০ ও ১১ রান তুলে দর্শকদের আশা দেখালেও ক‌্যারিবীয়ানদের বোলিংয়ে আর পেরে ওঠেনি বাংলাদেশ।

সিলস ও হোল্ডার ৩টি করে উইকেট নিয়ে বাংলাদেশকে নাড়িয়ে দিয়েছেন। ২ উইকেট পেয়েছেন আকিল।

বোলিং ও ব‌্যাটিংয়ের সঙ্গে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ফিল্ডিং ছিল দারুণ। সীমানায় দুয়েকটি নিশ্চিত বাউন্ডারি বাঁচিয়েছেন তারা। ক‌্যাচ লুফেছেন দারুণভাবে। যা দলকে জেতাতে বড় সাহায‌্য করেছে।

২৯ অক্টোবর একই মাঠে সিরিজের দ্বিতীয় ম‌্যাচ। বাংলাদেশ সিরিজটা বাঁচাতে পারে কিনা সেটাই দেখার।

ঢাকা/ইয়াসিন/আমিনুল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র ন কর ন ইন ড জ র ছক ক য় য টসম উইক ট

এছাড়াও পড়ুন:

মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে সাহসী ভূমিকার স্বীকৃতি পেলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কুবরা

ফ্যাসিবাদী শাসন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে সাহসী ভূমিকার স্বীকৃতি হিসেবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৯–২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কুবরাকে সম্মাননা দেওয়া হয়েছে। সোমবার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় দিবস–২০২৫ উপলক্ষে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের আয়োজনে ‘ফ্যাসিবাদী দুঃশাসন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনে রাষ্ট্রের দায়’ শীর্ষক আলোচনা সভা ও সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে খাদিজাতুল কুবরাকে সম্মাননা স্মারক দেওয়া হয়।

২০২০ সালের অক্টোবরে এক ফেসবুক ওয়েবিনারে অতিথির বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে খাদিজাতুল কুবরা ও অবসরপ্রাপ্ত মেজর দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দুটি মামলা করে পুলিশ। পুলিশ অভিযোগপত্র দাখিলের পর রাজধানীর কলাবাগান ও নিউমার্কেট থানায় দায়ের করা এই মামলায় ২০২২ সালের ২৭ আগস্ট খাদিজাকে গ্রেপ্তার করা হয়। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের এই শিক্ষার্থী ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় ১৪ মাস কারাগারে থাকার পর ২০২৩ সালের ২০ নভেম্বর মুক্তি পান।

এ বিষয়ে খাদিজাতুল কুবরা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি এখন কিছুটা স্বস্তির নিশ্বাস নিতে পারব এই ভেবে যে আমি হারিয়ে যাইনি। আপনারা আমাকে মনে রেখেছেন ও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, আমার পাশে আপনারা সব সময় থাকবেন এবং সাহায্য করে যাবেন। সব সময় বলে এসেছি এবং এখনো বলি, আমি ও আমরা চেষ্টা করব যাতে আমার মতো কারও মানবাধিকার ক্ষুণ্ন না হয়, কেউ যাতে কোনো নির্যাতনের শিকার না হয়, দেশে কোনো ফ্যাসিবাদের জন্ম না হয়। সবকিছুর উন্নয়নে কাজ করে যাব আমরা।’

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. রেজাউল করিম। প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. রইছ্ উদ্‌দীন এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মো. মোশাররাফ হোসেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ