পাঁচ বিভাগ ও বগুড়ার মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের বৈঠক
Published: 27th, October 2025 GMT
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীসহ দলটির তৃণমূল পর্যায়ের পাঁচ বিভাগ ও বগুড়ার নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপি। দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সঞ্চালনায় লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে বৈঠকে মনোনয়নপ্রত্যাশীসহ নেতাদের সঙ্গে কথা বলেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। প্রতিটি বৈঠকেই সভাপতিত্ব করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ সোমবার বিকেলে রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে ঢাকা, বরিশাল, খুলনা, সিলেট বিভাগ ও বগুড়া জেলার নেতাদের সঙ্গে পৃথক বৈঠক হয়েছে। বিকেল চারটা থেকে শুরু হয়ে রাত আটটায় ঢাকা বিভাগের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের মধ্য দিয়ে এসব বৈঠক শেষ হয় বলে বিএনপির মিডিয়া সেলের পক্ষ থেকে প্রথম আলোকে নিশ্চিত করা হয়।
বৈঠকে উপস্থিত সিলেট ও খুলনা বিএনপির একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি দ্রুত ৩০০টি আসনে দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষণা করবে বলে জানিয়েছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেছেন, বিএনপি ও দেশের বিরুদ্ধে বিশাল ষড়যন্ত্র চলছে। তাই সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। যাঁকেই প্রার্থী ঘোষণা করা হবে, তাঁর পক্ষেই অপর মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।
সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি ও সিলেট-৩ (দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ) আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী প্রথম আলোকে জানান, বৈঠকে সিলেট বিভাগের ১৯টি সংসদীয় আসনের ৬৬ জন মনোনয়নপ্রত্যাশী উপস্থিত ছিলেন। আগামী নির্বাচন সামনে রেখে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার পরামর্শ দিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। যিনি মনোনয়ন পাবেন, তাঁর বিজয় সুনিশ্চিত করতে সবাইকে কাজ করার নির্দেশনাও দেন।
দলটির সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। নীতিনির্ধারণী পর্ষদ স্থায়ী কমিটির পরবর্তী বৈঠকে দুই শতাধিক আসনে মনোনীত প্রার্থীদের তালিকা চূড়ান্ত হবে। এরপর আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁদের নাম প্রকাশ করা হবে। কয়েক দিনের মধ্যে এ কার্যক্রম সম্পন্ন হবে।
এর আগে ২৫ অক্টোবর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ প্রথম আলোকে বলেছেন, ‘আমরা দুই শতাধিক প্রার্থী চূড়ান্ত করেছি। খুব শিগগির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এসব প্রার্থীকে নির্বাচনপ্রস্তুতির জন্য গ্রিন সিগন্যাল দেওয়া হবে। দুই-তিন দিনের মধ্যে স্থায়ী কমিটির বৈঠক হবে।’
দলীয় প্রার্থী বাছাইপ্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত বিএনপির নেতারা বলছেন, তাঁরা প্রাথমিকভাবে দুই শতাধিক আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করছেন। বাকি আসনগুলোর মনোনয়ন নিয়েও কাজ চলছে। এর মধ্যে যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গী ও জোট শরিকদের আসনও রয়েছে।
এর আগে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীসহ দলটির তৃণমূল পর্যায়ের নেতাদের ফোন করে নির্বাচনের জন্য মাঠে কাজ করার নির্দেশ দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। ধারাবাহিক সাংগঠনিক প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে মনোনয়নপ্রত্যাশী ও তৃণমূল পর্যায়ের নেতাদের নিয়ে আজ গুলশান কার্যালয়ে বৈঠক হয়।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রথম আল ক ব এনপ র ম কম ট র পর য য় দলট র
এছাড়াও পড়ুন:
বিএনপির প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে তিন জেলায় বিক্ষোভ
মুন্সিগঞ্জ-৩ (সদর-গজারিয়া), দিনাজপুর-৫ (পার্বতীপুর-ফুলবাড়ী) ও পটুয়াখালী-২ (বাউফল) আসনে বিএনপির প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ, মশালমিছিল, ‘শাটডাউন’ কর্মসূচি ও কাফনের কাপড় পরে বিক্ষোভ করেছেন মনোনয়নবঞ্চিত নেতার অনুসারীরা।
৪ ডিসেম্বর দ্বিতীয় দফায় রাজধানীর গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে ৩৬টি আসনে বিএনপির প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এতে বিএনপির কেন্দ্রীয় সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক মো. কামরুজ্জামানকে মুন্সিগঞ্জ-৩ আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয়। এ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন মুন্সিগঞ্জ জেলা বিএনপির সদস্যসচিব মো. মহিউদ্দিন আহমেদ।
অন্যদিকে দিনাজপুর-৫ আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন এ কে এম কামরুজ্জামান। সেখানে দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এ জেড এম রেজওয়ানুল হক।
আর পটুয়াখালী-২ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য শহিদুল আলম তালুকদার। এই আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহদপ্তর সম্পাদক মু. মুনির হোসেন ও নির্বাহী সদস্য এ কে এম ফারুক আহম্মেদ তালুকদার।
দলীয় মনোনয়ন ঘোষণার পর থেকে মনোনয়নবঞ্চিত নেতাদের অনুসারী নেতা-কর্মীরা নানা কর্মসূচি পালন করে আসছেন।
মুন্সিগঞ্জে মশালমিছিল
প্রার্থী পরিবর্তনের কর্মসূচিতে মুন্সিগঞ্জ ও মিরকাদিম পৌরসভার ১৮টি ওয়ার্ড ও সদর উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের হাজারো নেতা-কর্মী অংশ নেন। প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন বলেন, আজ বিকেলের পর থেকে জেলা বিএনপির কার্যালয়ের সামনের সড়কে বিভিন্ন এলাকা থেকে ছোট ছোট মিছিল নিয়ে জড়ো হন মহিউদ্দিন আহমেদের সমর্থকেরা। এতে শহরের প্রধান সড়কের এক পাশ দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। মাগরিবের নামাজের পরপরই তাঁরা মশাল জ্বালিয়ে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন।
মিছিলটি শহরের সুপারমার্কেট, জুবলী সড়ক, পুরাতন কাছারি এলাকা ঘুরে আবার দলীয় কার্যালয়ের সামনে এসে শেষ হয়। এ সময় মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেন নেতা-কর্মীরা। সেই সঙ্গে মনোনয়ন বাতিল না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
কর্মসূচিতে অংশ নেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আতোয়ার হোসেন, কাজী আবু সুফিয়ান, শহিদুল ইসলাম, সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান, মিরকাদিম পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ওবাইদুর রহমান, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি আবুল হাসেম, জেলা যুবদলের সাবেক সদস্যসচিব মোহাম্মাদ মাসুদ রানা, শহর যুবদলের আহ্বায়ক এনামুল হক প্রমুখ।
কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া নেতারা বলেন, এখানে মনোনয়নের একমাত্র যোগ্য ছিলেন মো. মহিউদ্দিন। তৃণমূলের সবার পছন্দের প্রার্থী ছিলেন তিনি। অথচ তাঁকে বাদ দিয়ে অযোগ্য একজনকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এখানকার প্রতিটি ইউনিটের নেতারা কামরুজ্জামানের মনোনয়ন প্রত্যাখ্যান করেছেন। প্রার্থী পরিবর্তন করে মহিউদ্দিনকে মনোনয়ন দিতে হবে। অন্যথায় মহিউদ্দিন বা তাঁর পরিবার থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে কাউকে নির্বাচনে আনা হবে। এ সময় বিএনপি মনোনীত কামরুজ্জামানকে মুন্সিগঞ্জ শহরে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়।
পার্বতীপুরে আধা বেলা শাটডাউন
দিনাজপুর-৫ আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে দিনাজপুরের পার্বতীপুরে আধা বেলা শাটডাউন কর্মসূচি পালন করেছেন বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত এ কর্মসূচি পালন করা হয়।
সকাল ১০টার দিকে পার্বতীপুর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল চৌরাস্তায় বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ করা হয়। এ সময় পার্বতীপুর থেকে সৈয়দপুর, দিনাজপুর ফুলবাড়ী ও রংপুরগামী পরিবহনের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের পার্বতীপুর রেলওয়ে হেড ডিপো থেকে উত্তরাঞ্চলের ৮ জেলায় তেল সরবরাহ বন্ধ থাকে। কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল গোলচত্বরে টায়ার জ্বালিয়ে পার্বতীপুরের সঙ্গে চারদিকের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ করে দেন বিক্ষোভকারীরা।
খবর পেয়ে পার্বতীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সাদ্দাম হোসেন ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। দুপুর ১২টার দিকে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। এদিন দুপুর ১২টা পর্যন্ত পার্বতীপুর শহরের নতুন বাজারের কাপড় মার্কেট, স্বর্ণপট্টি, মনিহারি পট্টিসহ সব দোকানপাট বন্ধ রাখেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।
প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য দেন পার্বতীপুর উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি সালেহ আহমেদ, যুগ্ম সম্পাদক আকরাম হোসেন মাস্টার, সাংগঠনিক সম্পাদক মোখলেছুর রহমান, দপ্তর সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম, পৌর বিএনপির সভাপতি আতিয়ার রহমান, পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মঞ্জুরুল আজিজ, পৌর যুবদলের আহ্বায়ক রবিউল ইসলাম প্রমুখ।
বাউফলে কাফনের কাপড় পরে বিক্ষোভ
পটুয়াখালী-২ (বাউফল) আসনে বিএনপির প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন দলের একাংশের নেতা–কর্মীরা। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে মনোনয়নপ্রত্যাশী দুই প্রার্থীর নেতা–কর্মী ও সমর্থকেরা কাফনের কাপড় পরে উপজেলা পৌর শহরে এ কর্মসূচি পালন করেন।
বিকেল সোয়া চারটার দিকে বিএনপির উপজেলা, পৌরসভা ও ১৫টি ইউনিয়ন কমিটির নেতা-কর্মী ও সমর্থকেরা উপজেলা বিএনপির দলীয় কার্যালয় থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবদুল জব্বার মৃধার নেতৃত্বে মিছিলটির সামনের সারির নেতাদের গায়ে কাফনের কাপড় ছিল। মিছিলটি পৌরসভার গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ঘুরে দলীয় কার্যালয়ের সামনে এসে শেষ হয়। এর আগে নেতা–কর্মীরা দলীয় কার্যালয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় দোয়া ও মোনাজাত অনুষ্ঠানে অংশ নেন।
উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবদুল জব্বার মৃধা বলেন, আসনটিতে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী শহিদুল আলম ১৭ বছর ধরে কোনো আন্দোলন-সংগ্রামে ছিলেন না। তিনি দুর্দিনে কোনো নেতা-কর্মীর খোঁজখবর নেননি। কোনো হামলা-মামলার শিকার হননি। ২০০৮ সালে মামলাসংক্রান্ত জটিলতায় মনোনয়ন না পেয়ে দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন। এমন ব্যক্তিকে তাঁরা কোনোভাবেই মেনে নেবেন না। প্রার্থী পরিবর্তন করে মনোনয়ন পুনর্বিবেচনার দাবি জানান তিনি।