জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিতে আগামী নভেম্বরের মধ্যে গণভোট করাসহ পাঁচ দাবিতে নির্বাচন কমিশনের কাছে স্মারকলিপি জমা দিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলনসহ সাতটি দল।

জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম সাংবাদিকদের বলেন, বর্তমান সময়ের আলোচিত বিষয় হচ্ছে জুলাই জাতীয় সনদের আইনি ভিত্তি। আমরা দলের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনের কাছে নভেম্বরের মধ্যে গণভোট আয়োজনের দাবি জানিয়েছি।

কোনো কোনো দল জাতীয় নির্বাচন আর গণভোট একদিনে আয়োজনের প্রস্তাব করেছে উল্লেখ করে এই জামায়াত নেতা বলেন, 'ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন হোক, কিন্তু জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের যে চেতনা, ছাত্রজনতার রক্তের যে স্বীকৃতি আমাদের দিতে হবে, সে জন্য জাতীয় নির্বাচন আর গণভোট একদিনে নয়।'

সংশোধিত আরপিওর আলোকে জাতীয় নির্বাচন ও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিতেও দলগুলো নির্বাচন কমিশনকে অনুরোধ জানিয়েছে বলে জানান এই জামায়াত নেতা। তিনি বলেন, ‘কোনো কোনো দল আরপিওকে সংসদে আনার কথা বলেছে। আমরা মনে করি, আরপিও যেটা উপদেষ্টা পরিষদ অনুমোদন করেছে, এটাকে কোনো কাঁট ছাঁট করা যাবে না।'

আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা থেকে জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, খেলাফত মজলিস, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টিসহ (জাগপা), নেজামে ইসলাম পার্টি, ডেভেলপমেন্ট পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন রাজধানীর আগারগাঁওয়ে মেট্রো স্টেশন থেকে মিছিল নিয়ে নির্বাচন কমিশনের সামনে আসে। সেখানে দলগুলো সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে ।

দলের নেতা-কর্মীরা বলেন, জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন, অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন, গণভোট আয়োজনসহ পাঁচ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। নেতারা বলেন, সরকারের প্রতি জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাব দ্রুত বাস্তবায়নই এখন সময়ের দাবি।

পরে আগারগাঁও মেট্রো স্টেশন থেকে মিছিল নিয়ে নির্বাচন কমিশন ভবনের সামনে যায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। মিছিলের নেতৃত্বে ছিলেন দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম ও ঢাকা-১৩ আসনে জামায়াত সমর্থিত সংসদ সদস্য প্রার্থী মোবারক হোসাইন। মিছিলে জামায়াতের কেন্দ্রীয় এবং ঢাকা মহানগরী উত্তর ও দক্ষিণ নেতা-কর্মীরা অংশ নেয়।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইসল ম গণভ ট

এছাড়াও পড়ুন:

শশী থারুর-মোদি সখ্যের জের, কেরালার তিরুবনন্তপুরম পৌর করপোরেশন বিজেপির দখলে

কংগ্রেস সংসদ সদস্য শশী থারুরের সঙ্গে সখ্যের জেরে কেরালা রাজ্যের তিরুবনন্তপুরম শহরের পৌর করপোরেশনের দখল নিল বিজেপি। এর মধ্য দিয়ে রাজ্যের রাজধানীর এই পৌর করপোরেশনে দীর্ঘ ৪৫ বছরের বাম আধিপত্যের অবসান ঘটল।

এই জয় বিজেপিকে যেমন উৎফুল্ল করেছে, তেমনই জোরালো প্রশ্ন উঠেছে শশী থারুরের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে। বেশ কয়েক মাস ধরেই থারুরের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মাখামাখি চলছে। দুজনেই প্রকাশ্যে দুজনের প্রশংসাই শুধু করছেন না, কংগ্রেসকে না জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদি বিভিন্ন দায়িত্বও দিয়েছেন শশী থারুরকে।

শশী থারুরও দলের অনুমতি না নিয়ে তা গ্রহণ করেছেন। যেমন পেহেলগাম হামলা ও অপারেশন সিঁদুরের পর সর্বদলীয় প্রতিনিধিদলের নেতা হিসেবে শশী থারুরকে মোদি যুক্তরাষ্ট্রে পাঠিয়েছিলেন। সম্প্রতি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সম্মানে রাষ্ট্রপতির দেওয়া নৈশভোজে লোকসভা ও রাজ্যসভার বিরোধী নেতা যথাক্রমে রাহুল গান্ধী ও মল্লিকার্জুন খাড়গেকে আমন্ত্রণ না জানালেও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে শশী থারুরকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তিনি তা গ্রহণও করেছিলেন।

তিরুবনন্তপুরম পৌর করপোরেশন দখল করার পর এখন নতুন করে শশী থারুরকে নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে। জনপ্রিয় ধারণা, আগামী বছর কেরালা বিধানসভার নির্বাচনে শশী থারুরই হতে চলেছেন বিজেপির মুখ। কংগ্রেসের রাজ্য নেতাদের বিশ্বাস, পৌর ভোটে প্রচার করলেও শশী থারুর কংগ্রেসের জয়ের জন্য কিছুই করেননি। বরং অনুগামীদের উৎসাহিত করেছিলেন যাতে বিজেপি ভোট পায়। এ অভিযোগ বা ধারণা কত দূর সত্য, তা প্রমাণিত না হলেও ফল প্রকাশের পর শশী থারুর বিজয়ীদের অভিনন্দন জানিয়েছেন।

ঘটনা হলো বাম জোট, কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউডিএফ জোট ও বিজেপির মধ্যে ত্রিমুখী লড়াইয়ে বিজেপিই লাভবান হয়েছে। তিরুবনন্তপুরমের মোট ১০১টি ওয়ার্ডের মধ্যে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ পেয়েছে ৫০টি, বাম জোট এলডিএফ জিতেছে ২৯টি এবং কংগ্রেস জোট ইউডিএফ পেয়েছে ১৯টি। দুটি আসনে জিতেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। বিজেপিকে পৌর করপোরেশন বোর্ড গড়তে হলে ওই দুজনের মধ্যে একজনের সমর্থন প্রয়োজন।

তিরুবন্তপুরম জেতা ছাড়াও বিজেপি ২০২০ সালে জেতা পালাক্কড় পৌরসভাও দখলে রাখতে পেরেছে। কিন্তু সংখ্যার বিচারে সামগ্রিকভাবে তারা এখনো স্রেফ নগণ্য এবং তৃতীয় শক্তি। এই ভোটে সবচেয়ে চমকপ্রদ ফল করেছে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউডিএফ জোট। কয়েক মাস পর বিধানসভা ভোটে তারা যে বাম ফ্রন্টকে সরিয়ে ক্ষমতা দখলের দিকে এগোচ্ছে, এই ভোট তারই ইঙ্গিতবাহী।

শুধু পৌর করপোরেশন ও পৌরসভাই নয়, ৯ ও ১১ ডিসেম্বরে রাজ্যের সর্বত্র ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েতেরও ভোট হয়। প্রতিটি স্তরেই বামদের হারিয়ে প্রথম শক্তি হিসেবে উঠে এসেছে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউডিএফ। মোট ছয়টি পৌর করপোরেশনের মধ্যে চারটিই দখল করেছে তারা। অপর দিকে এনডিএফ জিতেছে একটিতে, অন্যটিতে বিজেপি। ভোট হয় মোট ৮৬ পৌরসভা, ১৪টি জেলা পরিষদ, ১৫২টি ব্লক পঞ্চায়েত ও ৯৪১টি গ্রাম পঞ্চায়েতে।

গণনায় দেখা গেছে, ৮৬টি পৌরসভার মধ্যে ইউডিএফ জিতেছে ৫৪টি (গতবার ৪৩), এলডিএফ ২৮টিতে (গতবার ৪১)। ১৪টি জেলা পরিষদে ইউডিএফ ও এলডিএফ জিতেছে ৭টি করে। আগেরবার যা ছিল এলডিএফের অনুকূলে ১১–৩। ব্লক পঞ্চায়েতের ১৫২ আসনের মধ্যে ইউডিএফ জিতেছে ৭৯টি (গতবার ছিল ৩৮), এলডিএফ ৬৩ (গতবার ১০৮)। ১০টিতে ‘টাই’—দুই দল সমান সমান। জেলা পরিষদ ও ব্লক পঞ্চায়েতে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ একটিও জেতেনি। গ্রাম পঞ্চায়েতের ৯৪১ আসনের মধ্যে ইউডিএফের দখলে এসেছে ৫০১টি, এলডিএফের ৩৪১। এনডিএ আগেরবার পেয়েছিল ১৯টি, এবার ২৬। এবার ‘টাই’ হয়েছে ৬৪ আসনে।

কেরালা দখলের চেষ্টায় কংগ্রেস সার্বিকভাবে উৎফুল্ল। কেননা, বিধানসভা নির্বাচনের আগে পৌর করপোরেশন, পৌরসভা ও ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েতের ভোটই সাধারণত মাপকাঠি হয়ে ওঠে। হাওয়া কোন দিকে বইছে, বোঝা যায়। তবুও এই জয়ে কংগ্রেসের কাঁটা হিসেবে খচখচ করছে তিরুবনন্তপুরম পৌর করপোরেশন ও শশী থারুর। কংগ্রেস হাইকমান্ড ঠিকই করে নিয়েছে, বিধানসভা ভোটের আগে শশী থারুরের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক কোনো ব্যবস্থা নেবে না।

অন্যদিকে শশী থারুরও কংগ্রেস ত্যাগ করতে চান না। কারণ, সে ক্ষেত্রে লোকসভার সদস্যপদ তাঁকে ছাড়তে হবে। উপনির্বাচনে জেতা সহজ হবে না। শশী থারুর কংগ্রেস ত্যাগ করলে বিজেপি তাঁকে রাজ্যসভায় নিয়ে আসতে পারে, কিন্তু তিরুবনন্তপুরমের সংসদ সদস্য চান কেরালার মুখ্যমন্ত্রী হতে। যদিও ওই পদে তিনি কংগ্রেসের পছন্দের ব্যক্তি নন। প্রবীণ নেতা রমেশ চেন্নিথালা আছেন। আছেন রাহুল গান্ধীর ঘনিষ্ঠ এআইসিসির সাধারণ সম্পাদক ও সংসদ সদস্য কে সি বেনুগোপাল। দুজনেই মুখ্যমন্ত্রিত্বের জোরালো দাবিদার।

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে থারুরের সম্পর্ক মাখো মাখো হলেও তিরুবনন্তপুরমে বিজেপির শীর্ষ নেতা সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রাজীব চন্দ্রশেখর। রাজীবকে হারিয়েই লোকসভা ভোটে শশী থারুর জিতেছিলেন। রাজীবের সাংগঠনিক দক্ষতাও প্রশ্নাতীত। শশী থারুর বিজেপিতে এলে রাজীবের সঙ্গে তাঁর সমীকরণ বিজেপিরও মাথাব্যথার কারণ হতে পারে। কিন্তু সেসব পরের কথা। তিরুবনন্তপুরম জয় নরেন্দ্র মোদিকে এতটাই উৎফুল্ল করে তুলেছে যে তিনি ইতিমধ্যেই ‘বিকশিত কেরালা’ স্লোগান তুলে দিয়েছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ