খুলনার রূপসা উপজেলায় বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী দুই নেতার অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয় পক্ষের অন্তত পাঁচজন কর্মী-সমর্থক আহত হয়েছেন। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলার কাজদিয়া বাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

আহত ব্যক্তিরা হলেন শান্ত শেখ (৩৭), শাহাজাদা (৪১), মেহেদী হাসান (৩৮), জাহিদুল ইসলাম (৩৫) ও ইমরান শেখ (৩০)। তাঁদের রূপসা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, খুলনা-৪ (রূপসা-তেরখাদা-দিঘলিয়া) আসনে দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী বিএনপির কেন্দ্রীয় তথ্যবিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী (হেলাল) এবং যুক্তরাজ্য বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি পারভেজ মল্লিক আলাদা আলাদা প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে আসছেন। গত সোমবার বিকেলে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের বৈঠকেও তাঁরা উপস্থিত ছিলেন।

প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন বলেন, আজ রূপসার কাজদিয়া বাজার এলাকায় বিএনপি নেতা পারভেজ মল্লিকের গণসংযোগ করার কথা ছিল। এ জন্য তাঁর অনুসারী শান্ত শেখের নেতৃত্বে কর্মী-সমর্থকেরা কাজদিয়া বাজারে অবস্থান নেন। এ সময় বিএনপির অপর মনোনয়নপ্রত্যাশী আজিজুল বারীর পক্ষের কিছু কর্মী-সমর্থক সেখানে গেলে দুপক্ষের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে সংঘর্ষ বেধে যায়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে উভয় পক্ষ সটকে পড়ে। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের পাঁচজন আহত হন।

জানতে চাইলে বিএনপি নেতা পারভেজ মল্লিক প্রথম আলোকে বলেন, পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ টিএসবি ইউনিয়নে মুয়াজ্জিনদের মধ্যে পাঞ্জাবি উপহার ও কাজদিয়া বাজারে ৩১ দফার লিফলেট বিতরণের কথা ছিল। কিন্তু কাজদিয়া বাজারে তাঁর কর্মীদের ওপর অতর্কিতে হামলা করেন হেলাল (আজিজুল বারী) ভাইয়ের লোকজন। তখন তাঁর কর্মীরা প্রতিরোধ করেন। খবর পেয়ে তিনি টিএসবি ইউনিয়নে গিয়ে দলীয় কার্যালয়ে বসে ঘটনা শুনছিলেন। তখন হেলাল ভাইয়ের নামে স্লোগান দিয়ে আবার হামলা করা হয়। নেতা-কর্মীরা তাঁকে নিরাপদে সরিয়ে নেন। এতে তাঁর কয়েকজন কর্মী গুরুতর আহত হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এ নিয়ে আমার কর্মীদের ওপর তৃতীয়বারের মতো হামলার ঘটনা ঘটল। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান কয়েক দিন আগে আমাদের ডেকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন। এই ঐক্য নষ্ট তো প্রথমেই আমার হেলাল ভাই করে ফেললেন।’

এ বিষয়ে কথা বলতে বিএনপির তথ্যবিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলালের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।

রূপসা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়। কিন্তু পুলিশ যাওয়ার আগেই তাঁরা সটকে পড়েন। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। এ ঘটনায় কেউ কোনো মামলা করেনি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আজ জ ল ব র য় ব এনপ ব এনপ র স ঘর ষ

এছাড়াও পড়ুন:

আড়াইহাজারে বিএনপির প্রার্থীর বিরুদ্ধে ছাত্রদল নেতাকে বাড়িছাড়া করার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ

নারায়ণগঞ্জ-২ (আড়াইহাজার) আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী নজরুল ইসলাম আজাদের বিরুদ্ধে ছাত্রদলের এক নেতাকে ফোন করে হাত-পা ভেঙে এলাকাছাড়া করার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ওই ছাত্রদল নেতার দাবি, বিএনপির অন্য মনোনয়নপ্রত্যাশীর সঙ্গে কাজ করায় গত শুক্রবার তাঁকে এ হুমকি দেওয়া হয়। ওই কথোপকথনের তিন মিনিট তিন সেকেন্ডের একটি অডিও রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

ওই ছাত্রদল নেতার নাম মো. আবু হানিফ রাসেল ভূঁইয়া। তিনি নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি। স্থানীয় রাজনীতিতে তিনি নারায়ণগঞ্জ-২ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-অর্থবিষয়ক সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের (সুমন) অনুসারী। অভিযুক্ত নজরুল ইসলাম বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির ঢাকা বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক।

উপজেলার পাঁচরুখী ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সভাপতি আরিফের মুঠোফোন নম্বর থেকে ওই ছাত্রদল নেতাকে হুমকি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। অডিওটি যাচাই করা সম্ভব হয়নি। এ বিষয়ে কথা বলতে বিএনপি নেতা নজরুল ইসলামের ব্যবহৃত চারটি মুঠোফোন নম্বরে কল করলেও তিনি সাড়া দেননি। যুবদল নেতা আরিফের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘রাসেল (ছাত্রদল নেতা) আমার মামা হয়। আমি তাঁকে ফোন করেছি। আমিই কথা বলেছি। আজাদ ভাই কথা বলেননি।’

ছড়িয়ে পড়া অডিও কথোপকথনে ছাত্রদল নেতার উদ্দেশে বলতে শোনা যায়, ‘তুমি আমার কথা রেকর্ড কইরা রাইখো। আমি তোমাকে বললাম, কালকে থেইকা তুমি হাইজাদীতে (বিএনপির অন্য মনোনয়নপ্রত্যাশী মাহমুদুর রহমানের বাড়ি) থাকবা অথবা ধানমন্ডিতে। যদি মনোনয়ন চেঞ্জ হয়ে যায়, তাহলে তো ভাই ফাইন, পাচরুখীতে চলে আসবা। আর যদি চেঞ্জ না হয় তাহলে আর কোনো দিন তুমি পাচরুখীতে আসবা না, তোমার কোনো প্রতিষ্ঠান, কোনো ব্যবসা-বাণিজ্য কিছু থাকবে না পাঁচরুখীতে। আমি বললাম, আমার বাপ-চাচা, আমার পরিবারের কাউকে কোনো কিছু বললেও কোনো লাভ হবে না।’

অডিওতে আরও বলতে শোনা যায়, ‘তুমি অনেক বড় বেয়াদব, তোমার অনেক বেয়াদবি আমি দেখছি। তুমি তোমার ওস্তাদের সাথে কথা বলো। কথা বইলা তোমাকে যেটা বললাম এটা করো। নয়তো বা কিন্তু তোমার হাত-পা কিছু থাকবে না। আমি তো ডাইরেক্টই বললাম, কোনো ভায়া মিডিয়া না, আমি তোমাকে মিন করে বললাম, আমি তোমাকে বুঝাইতে পারছি?’

তখন ছাত্রদল নেতা আবু হানিফ বলেন, ‘আমি তো ভাই আপনার কোনো ক্ষতি করি নাই।’ জবাবে অপর প্রান্ত থেকে বলা হয়, ‘তুমি আমার ক্ষতি না করলে তো তোমাকে আমি এত সুন্দর কথা বলতাম না। তুমি থাকবা না কালকে থেকে। সুমনের মনোনয়ন যদি চেঞ্জ হয়, যদি ও মনোনয়ন পায় তারপর আসবা। আর যদি চেঞ্জ না হয় তাহলে তুমি পার্মানেন্টলি চলে যাবা। এদিকে আর আসবা না।’

এ বিষয়ে ছাত্রদল নেতা আবু হানিফ বলেন, তিনি ও নজরুল ইসলাম একই এলাকার বাসিন্দা হলেও স্থানীয় রাজনীতিতে ভিন্ন অবস্থানে আছেন। এ কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে গত শুক্রবার নজরুল ইসলাম তাঁর এক অনুসারীর মুঠোফোন থেকে তাঁকে ফোন করে হুমকি দেন। এখন তিনি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। নিজের নিরাপত্তার জন্য আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে লিখিত অভিযোগ করবেন বলে তিনি জানান।

যোগাযোগ করলে বিএনপির অন্য মনোনয়নপ্রত্যাশী মাহমুদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি অডিও রেকর্ডটি শুনেছি। ভিন্নমতের প্রতি সহনশীলতা জাতীয়তাবাদী রাজনীতির প্রাথমিক গুণ। একজন দলীয় কর্মীর সঙ্গে দলের একজন পদধারী নেতার এমন আচরণ আমাকে মর্মাহত করেছে। এ বিষয়ে দল যা ভালো মনে করে তা–ই করবে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আড়াইহাজারে বিএনপির প্রার্থীর বিরুদ্ধে ছাত্রদল নেতাকে বাড়িছাড়া করার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ