আড়াইহাজার উপজেলায় কৃষক দলের সদস্য বাতেন হত্যা মামলায় সাতগ্রাম ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি রেজাউল করিমসহ ২৪ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের হওয়ায় এলাকাবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

‎জানাগেছে, গত ১৫ অক্টোবর উপজেলার সাতগ্রাম ইউনিয়নের রসুলপুর এলাকায় দুই পক্ষের সংঘর্ষে ৩ নং ওয়ার্ডের কৃষক দলের সদস্য বাতেন আহত হন। ‎পরের দিন ১৬ অক্টোবর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

‎এর আগে গত ৩ অক্টোবর রসুলপুর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে জুমার নামাজের আগে সাতগ্রাম ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি রেজাউল করিমের ছোট ভাই হাসান মাদক বিরোধী বক্তব্য রাখেন।

সেই বক্তব্যের এক পর্যায়ে নিহত বাতেনের ছেলে ও ৩ নং ওয়ার্ড যুবদলের সহ-সভাপতি শাহজাহানের বক্তব্যের কটাক্ষ করেন। এনিয়ে নামাজ শেষে হাতাহাতি হয়, যা পরে স্থানীয় মুসল্লিরা মিটমাট করে দেন।

‎এর জের ধরে ১৫ অক্টোবর সন্ধ্যায় সাতগ্রাম ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি রেজাউল করিমের ছোট ভাই হাসান তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মাধবদী যাওয়ার পথে রাস্তায় বাতেনের ছেলে শাহজাহান ও তার দলবল দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হাসানকে আটকে মারধর করেন। এখবর পেয়ে এলাকাবাসী ঘটনাস্থলে এলে গনপিটুনির শিকার হন মাদক ব্যবসায়ি বাতেন।

‎পরে ঢাকা মেডিকেল নিয়ে যাওয়ার পরেরদিন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। নিহত বাতেনের ছেলে শাহজাহান ১৯ অক্টোবর ২৪ জনকে নামীয় ও ১৫/১৬ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

যুবদল সভাপতি রেজাউল করিম জানান, ঘটনার সময় তিনি একটি কমিশনের দলিল করার কাজে উপস্থিত ছিলেন। তার ছোট ভাই মোমেন ঢাকায় ছিলেন এবং ফজলুল বারী ঢাকায় একটি মসজিদে নামাজ আদায় করছিলেন, যার ভিডিও ফুটেজও রয়েছে।

তিনি অভিযোগ করেন, তার পরিবারকে রাজনৈতিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য এলাকার একটি কুচক্রী মহল উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে মিথ্যা মামলায় জড়িয়েছে।

এলাকাবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, যুবদল সভাপতি রেজাউল করিম ও তার পরিবারের লোকজন দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় মাদকবিরোধী কার্যক্রম চালাচ্ছিলেন।

‎তাদের দাবি, নিহত বাতেনের পরিবারের লোকজন মাদক ব্যবসায় জড়িত ছিল এবং বারবার সতর্ক করা সত্ত্বেও তারা ব্যবসা চালিয়ে যাওয়ায় এলাকাবাসী তাদের প্রতি ক্ষিপ্ত ছিল। ১৫ অক্টোবরের সংঘর্ষে এলাকার লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে বাতেনের পরিবারের ওপর হামলা চালায় এবং বাতেন তখন আহত হয়ে মারা যান।

‎এলাকাবাসী আরও জানান যে সংঘর্ষে যুবদল সভাপতি রেজাউল করিম, তার ভাই ফজলুল বারী ও মোমেন জড়িত না থাকা সত্ত্বেও তাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা দেওয়ায় তারা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
 

.

উৎস: Narayanganj Times

কীওয়ার্ড: হত য ম মল ন র য়ণগঞ জ এল ক ব স র পর ব র য বদল র ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

মুক্তিযুদ্ধে ঢাবির ১৯৫ শহীদের ইতিহাস জানাতে ছাত্রদল নেতার ভিন্নধর্মী উদ্যোগ

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আত্মত্যাগের ইতিহাস শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছে দিতে ভিন্নধর্মী উদ্যোগ নিয়েছেন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের এক নেতা।

রোববার দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত পুরো ক্যাম্পাসে মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যাকাণ্ডের শিকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯৫ জন শহীদের নাম ও পরিচয় লেখা ছোট ছোট প্ল্যাকার্ড স্থাপন করেন তিনি।

এই কর্মসূচির উদ্যোগ নেন ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক আবু হায়াত মো. জুলফিকার। তিনি ক্যাম্পাসের টিএসসি প্রাঙ্গণ, কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সম্মুখভাগ, হাকিম চত্বর, মধুর ক্যানটিন, কলাভবন প্রাঙ্গণ, মল চত্বর, ভিসি চত্বর, স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বর, আইন অনুষদ প্রাঙ্গণ, মোতাহার হোসেন ভবন, বিজ্ঞান গ্রন্থাগার, কার্জন হল এলাকা, দোয়েল চত্বর, চারুকলাসহ প্রতিটি আবাসিক হলসংলগ্ন এলাকায় মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এবং রাজাকার, আলবদর ও আলশামস বাহিনীর হাতে হত্যাকাণ্ডের শিকার শহীদদের নাম ও পরিচয় লেখা ছোট ছোট প্ল্যাকার্ড স্থাপন করেন।

এ বিষয়ে জুলফিকার প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা অনুযায়ী মহান মুক্তিযুদ্ধে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট ১৯৫ জন শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী শহীদ হন। দেশের স্বাধীনতা অর্জনে তাঁদের এই আত্মত্যাগ ইতিহাসের এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় হলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই ত্যাগ ও অবদান অনেকাংশে তরুণ প্রজন্মের আড়ালে চলে যাচ্ছে। এ বাস্তবতা উপলব্ধি করেই শহীদদের নাম-পরিচয় ও তাঁদের আত্মোৎসর্গের ইতিহাস নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরার উদ্দেশ্যেই তিনি এ উদ্যোগ নেন।

আবু হায়াত মো. জুলফিকার বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের শহীদেরা কেবল ইতিহাসের পাতায় সীমাবদ্ধ কোনো নাম নন; তাঁরা আমাদের অস্তিত্ব, স্বাধীনতা ও আত্মমর্যাদার ভিত্তি। তাঁদের আত্মত্যাগকে নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেওয়া আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। তাই মুক্তিযুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যাঁরা শহীদ হয়েছেন, তাঁদের ইতিহাস সবার কাছে পৌঁছে দেওয়া আমাদের অবশ্য কর্তব্য।’

মুক্তিযুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯৫ জন শহীদের ইতিহাস জানানোর ভিন্নধর্মী এ উদ্যোগের বিষয়টি ইতিবাচকভাবে দেখছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এ ধরনের কাজ যেন অব্যাহত থাকে, সে বিষয়ে ছাত্রদলের পক্ষ থেকে সহযোগিতা থাকবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষার্থী শাহরিয়ার তানজিল বলেন, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধ আমাদের জাতিসত্তা, চেতনা ও প্রেরণার এক অমলিন উৎস। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে আমাদের প্রাণের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। যেখানে ১৯৭১ সালে ১৯৫ জন শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা–কর্মচারী প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন।’

শাহরিয়ার তানজিল বলেন, ‘এই আত্মত্যাগ আমাদের জন্য যেমন গভীর বেদনার, তেমনি এটি সাহস, দায়িত্ববোধ ও অনুপ্রেরণার এক অনন্য দৃষ্টান্ত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্ল্যাকার্ড স্থাপনের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধ ও শহীদদের স্মরণ করার যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ