শিশুর সেপারেশন অ্যাংজাইটি নিয়ে যা কিছু জানা জরুরি
Published: 30th, October 2025 GMT
সেপারেশন অ্যাংজাইটি বা বিচ্ছেদের উদ্বেগ কী
এককথায় সেপারেশন অ্যাংজাইটি বা বিচ্ছেদ উদ্বেগ হলো শিশু যাকে সবচেয়ে কাছের মানুষ মনে করে, তাঁর অনুপস্থিতির ভয়।
বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মায়ের জন্যই শিশুর বিচ্ছেদ উদ্বেগ দেখা দেয় সবচেয়ে বেশি। মজার ব্যাপার হলো, কেবল শিশুরাই নয়, যেকোনো বয়সের নারী-পুরুষ, বিশেষ করে বয়স্ক মানুষেরাও ভোগেন এ ধরনের উদ্বিগ্নতায়।
৬ মাস থেকে ৩ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে বিচ্ছিন্নতা উদ্বেগ ও অপরিচিত মানুষের ভয় খুবই সাধারণ বিষয়। এটি আপনার শিশুর স্বাভাবিক বিকাশের অংশ। সাধারণত তারা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটি কাটিয়ে ওঠে।
কীভাবে বুঝবেন শিশুর বিচ্ছেদ উদ্বেগ আছেআপনি যদি এই বয়সী শিশুর মা, বাবা কিংবা কাছের কেউ হন, তাহলে আপনি ইতিমধ্যে বিচ্ছেদ উদ্বেগের লক্ষণগুলোর সঙ্গে পরিচিত।
বিচ্ছেদের আশঙ্কা দেখা দিলে মা বা অন্য যেকোনো যত্নকারীকে শক্ত করে আঁকড়ে ধরা, তাঁদেরকে কোথাও যেতে দিতে না চাওয়া।
বিশ্বস্ত, নির্ভরশীল ব্যক্তির অনুপস্থিতিতে চিৎকার করে কাঁদা, বিচ্ছেদ নিয়ে রাগ হওয়া, খাওয়া-ঘুমের রুটিন ঠিক না থাকা, বিচ্ছেদ নিয়ে দুঃস্বপ্ন দেখা, স্কুল বা অন্য কোথাও যেতে অনিচ্ছা প্রকাশ ইত্যাদি।
নতুন কোনো ব্যক্তিকে সহজে গ্রহণ না করা, এক মুহূর্তও অপরিচিত কারও কাছে থাকতে না চাওয়া।
মা বা অন্য যত্নকারীর অনুপস্থিতিতে তীব্র কষ্ট বা যন্ত্রণা অনুভব করা, যা স্বল্পস্থায়ী বা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে।
কোনো কিছুতেই শান্ত হতে না চাওয়া।
আরও পড়ুনশিশুর জন্য কফ সিরাপ কতটা নিরাপদ, যা জানা অত্যন্ত জরুরি২১ অক্টোবর ২০২৫বিচ্ছিন্নতার উদ্বেগ মন্দ নয়আপনার শিশু আগে হয়তো শান্তভাবে আপনাকে ঘর থেকে বের হতে দিত। অপরিচিত লোকদের কোলে যেতেও কোনো আপত্তি করত না। একদিন হঠাৎই আপনি অল্প কিছু সময়ের জন্য বাইরে গেলেও কাঁদতে শুরু করল। অপরিচিত লোকদের ভয় পেতে শুরু করল। শুরুতে সেটি আপনার কাছে অদ্ভুত মনে হতে পারে।
বাস্তবে এটি একটি ইতিবাচক লক্ষণ। এর মানে আপনার শিশু এখন বুঝতে শিখেছে যে সে তার মা, বাবা ও অন্য যত্নকারীদের ওপর কতটা নির্ভরশীল। এই যত্নকারীদের মধ্যে মা–বাবা ছাড়াও আছেন দাদা-দাদি, নানা-নানি বা বিশ্বস্ত কেউ। এর মানে সে এখন হুট করে কাউকে বিশ্বাস করতে রাজি নয়। আর এটি তার স্বাভাবিক বিকাশের খুবই গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ।
যখন শিশুরা তাদের চারপাশ সম্পর্কে সচেতন হয়, তখন তারা যাঁদের ওপর নির্ভরশীল, সেই ছোট গোষ্ঠীর সদস্যদের ভালোভাবে চিনে নেয়। কেবল তাঁদেরকেই তারা ভরসা করে। তাঁদের সঙ্গে শিশুদের মানসিক সংযোগ এত গভীর হয় যে তাদের অনুপস্থিতিতে নিরাপত্তাহীন বোধ করে।
এ ছাড়া নতুন মানুষ বা নতুন পরিস্থিতিতে থাকাও, এমনকি আপনি পাশে থাকলেও, তাদের জন্য অস্বস্তিকর হতে পারে। শিশুর জীবনে কোনো বড় ধরনের চাপ বা আঘাতমূলক ঘটনা; যেমন হাসপাতালে থাকা, প্রিয়জনের মৃত্যু, পড়াশোনা বা কাজের সুবাদে মা–বাবার দেশের বাইরে যাওয়া এবং বাসা বা শহর বদলানোর মতো পরিবেশের পরিবর্তনের ফলেও বিচ্ছেদের উদ্বেগ দেখা দিতে পারে।
বিচ্ছিন্নতা উদ্বেগ মোকাবিলা করার উপায়বিচ্ছিন্নতা উদ্বেগের কারণে আপনার শিশুকে নার্সারিতে বা অন্য কারও তত্ত্বাবধানে রেখে তার চোখের আড়াল হওয়া বা বাইরে যাওয়া কঠিন হতে পারে। আপনি হয়তো তাদের কান্নায় কষ্ট পাবেন। বা ভাববেন, এতে শিশুর ওপর খারাপ প্রভাব পড়বে কি না।
তবে মনে রাখবেন, আপনার অনুপস্থিতিতে শিশুর দুশ্চিন্তা বা অস্থিরতা একদম স্বাভাবিক। এতে নিজেকে অপরাধী ভাবার কিছু নেই। বরং এটি প্রমাণ করে আপনি ও আপনার শিশুর মধ্যে গভীর বন্ধন তৈরি হয়েছে।
ধৈর্য হারানো চলবে না, শিশুকে বোঝান যে আপনি যদি চলে যান, তবু সে নিরাপদে থাকবে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব চ ছ দ উদ ব গ ব চ ছ ন নত আপন র শ শ র উদ ব গ অপর চ ত পর চ ত র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
জকসুতে একটি বিশেষ গোষ্ঠীকে সুবিধা দিতে তাড়াহুড়ো করেছে প্রশাসন: ছাত্রদল
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জকসু) নির্বাচনের বিধিমালা প্রণয়নে প্রশাসন একটি বিশেষ গোষ্ঠীকে সুবিধা দিতে তাড়াহুড়ো করেছে বলে অভিযোগ করেছে শাখা ছাত্রদল।
বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষা শহীদ রফিক ভবনের নিচে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির নেতারা এ অভিযোগ তুলে ধরেন।
আরো পড়ুন:
ইডিএস মাস্টার্স ফেলোশিপ পেলেন ঢাবি শিক্ষার্থী
সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে মাদকবিরোধী কার্যক্রমে এগিয়ে আসতে হবে: জবি উপাচার্য
লিখিত বক্তব্যে শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মেহেদী হাসান হিমেল বলেন, “আমাদের প্রত্যাশা ছিল প্রশাসন একটি আধুনিক, যুগোপযোগী ও বাস্তবসম্মত জকসু নীতিমালা প্রণয়ন করবেন। কিন্তু আমরা দেখেছি, প্রশাসন একটি বিশেষ গোষ্ঠীকে সুবিধা দিতে তাড়াহুড়ো করেছে, যা হতাশাজনক।”
তিনি বলেন, “জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর প্রথমবার জকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আমরা চাই এটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হোক—যাতে জকসু শিক্ষার্থীদের প্রকৃত প্রতিনিধি নির্বাচনের মুক্ত মঞ্চে পরিণত হয়, কোনো দলীয় প্রভাবের শিকার না হয়।”
তিনি আরো বলেন, “জকসুর মেয়াদ ও দায়িত্বের ক্ষেত্র নির্দিষ্ট ও বাস্তবসম্মত করা, সদস্যপদের যোগ্যতা সহজ করা এবং সংবিধানে শিক্ষার্থীদের কল্যাণমূলক কার্যক্রমে গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। এছাড়া উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষের সঙ্গে সমন্বয়ের ক্ষমতা শুধু সহ-সভাপতির মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে সাধারণ সম্পাদক ও সহসাধারণ সম্পাদককেও যুক্ত করতে হবে।”
সংগঠনটি জকসুর কাঠামোতে নতুন ১০টি পদ সংযোজনের প্রস্তাব করেছে তারা। প্রস্তাবিত পদগুলো হলো— বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীবিষয়ক সম্পাদক, ছাত্রীকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক (শুধু নারীদের জন্য), দক্ষতা উন্নয়ন (ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট) সম্পাদক, ধর্ম ও সম্প্রীতি সম্পাদক, মিডিয়া ও যোগাযোগ সম্পাদক, দফতর সম্পাদক, বিতর্ক সম্পাদক, স্বাস্থ্য সম্পাদক, পরিবেশ সম্পাদক, সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সম্পাদক এবং কমনরুম ও ক্যাফেটেরিয়াবিষয়ক সম্পাদক।
এর আগে, ছাত্রদলের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে মুক্তিযুদ্ধ ও গণতন্ত্র সম্পাদক, আইন ও মানবাধিকার সম্পাদক, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সম্পাদক এবং একটি সদস্য পদ জকসু বিধিমালায় সংযোজন করা হয়েছে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে শাখা ছাত্রদলের সদস্য সচিব শামসুল আরেফিন বলেন, “আমাদের নেতাকর্মীরা সবাই যোগ্য। তবে এখনো প্যানেল নিয়ে চূড়ান্ত আলোচনা হয়নি। নির্বাচনে অধিক গ্রহণযোগ্য প্রার্থীদের নিয়েই প্যানেল প্রকাশ করা হবে।”
তিনি বলেন, “আমরা এমফিল ও পিএইচডি শিক্ষার্থীদের অন্তর্ভুক্ত রাখার দাবি জানিয়েছিলাম, কিন্তু তা রাখা হয়নি। অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ থাকলেও জকসুতে তা নেই। এছাড়া বিগত ফ্যাসিস্টদের বিচার না হওয়াটা প্রশাসনের ব্যর্থতা।”
সংবাদ সম্মেলনে শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক, আহ্বায়ক সদস্যসহ অন্যান্য নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা/লিমন/মেহেদী