সন্তানকে ধর্ষণের অভিযোগে বাবাকে পিটিয়ে পুলিশে দিলো এলাকাবাসী
Published: 30th, October 2025 GMT
গাইবান্ধার পলাশবাড়ীতে নিজের মেয়েকে (১৪) ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে বাবার বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় পাষণ্ড বাবাকে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছেন এলাকাবাসী।
বুধবার (২৯ অক্টোবর) রাতে উপজেলার কিশোরগাড়ি ইউনিয়নের বুজরুক টেংরা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় বুধবার রাতেই শিশুর নানা জাহাঙ্গীর হোসেন বাদী হয়ে পলাশবাড়ী থানায় ধর্ষণ-মামলা করেন।
অভিযুক্ত পিতা সাদেকুল ইসলাম (৪২) বুজরুক টেংরা গ্রামের বাসিন্দা। তিনি পেশায় বাদাম বিক্রেতা।
স্থানীয়রা জানান, চার মাস ধরে নিজের মেয়েকে ধর্ষণ করছেন সাদেকুল। ভয়ে বিষয়টি কাউকে জানাতে পারেনি শিশুটি। প্রতিবেশীদের সন্দেহ হলেও বিষয়টি অবিশ্বাস্য বিবেচনায় এবং প্রমাণের অভাবে ঘটনা আড়ালেই ছিল। কিন্তু বুধবার সন্ধ্যায় ঘটনাটি শিশুটির ছোট বোন দেখে ফেললে সে চিৎকার করে কান্না জুড়ে দেয়। এ সময় আশপাশের লোকজন ছুটে আসে। এবং সাদেকুলকে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেয়।
পলাশবাড়ী থানার ওসি জুলফিকার আলী ভুট্টু বলেন, ‘‘গত কয়েক মাস ধরেই বড় মেয়েকে ধর্ষণ করে আসছিল অভিযুক্ত ব্যক্তি। বুধবার সন্ধ্যায় আবারও একই ঘটনার চেষ্টা করলে ছোট মেয়ে দেখে ফেলে এবং ভয় পেয়ে চিৎকার শুরু করে। আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে এসেছি। মেয়েটিকে পুলিশের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে রাখা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে অভিযুক্ত ঘটনা স্বীকারও করেছে। সে পুরোপুরি মাদকাসক্ত।’’
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে অভিযুক্তকে আদালতে সোপর্দ করা হয়। এ সময় ভুক্তভোগী শিশুকেও আদালতে জবানবন্দির জন্য উপস্থাপন করা হয়। আদালত থেকে শিশুটিকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও শারীরিক পরীক্ষার জন্য সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
ঢাকা/মাসুম//
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
মুক্তিযুদ্ধে ঢাবির ১৯৫ শহীদের ইতিহাস জানাতে ছাত্রদল নেতার ভিন্নধর্মী উদ্যোগ
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আত্মত্যাগের ইতিহাস শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছে দিতে ভিন্নধর্মী উদ্যোগ নিয়েছেন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের এক নেতা।
রোববার দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত পুরো ক্যাম্পাসে মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যাকাণ্ডের শিকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯৫ জন শহীদের নাম ও পরিচয় লেখা ছোট ছোট প্ল্যাকার্ড স্থাপন করেন তিনি।
এই কর্মসূচির উদ্যোগ নেন ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক আবু হায়াত মো. জুলফিকার। তিনি ক্যাম্পাসের টিএসসি প্রাঙ্গণ, কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সম্মুখভাগ, হাকিম চত্বর, মধুর ক্যানটিন, কলাভবন প্রাঙ্গণ, মল চত্বর, ভিসি চত্বর, স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বর, আইন অনুষদ প্রাঙ্গণ, মোতাহার হোসেন ভবন, বিজ্ঞান গ্রন্থাগার, কার্জন হল এলাকা, দোয়েল চত্বর, চারুকলাসহ প্রতিটি আবাসিক হলসংলগ্ন এলাকায় মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এবং রাজাকার, আলবদর ও আলশামস বাহিনীর হাতে হত্যাকাণ্ডের শিকার শহীদদের নাম ও পরিচয় লেখা ছোট ছোট প্ল্যাকার্ড স্থাপন করেন।
এ বিষয়ে জুলফিকার প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা অনুযায়ী মহান মুক্তিযুদ্ধে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট ১৯৫ জন শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী শহীদ হন। দেশের স্বাধীনতা অর্জনে তাঁদের এই আত্মত্যাগ ইতিহাসের এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় হলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই ত্যাগ ও অবদান অনেকাংশে তরুণ প্রজন্মের আড়ালে চলে যাচ্ছে। এ বাস্তবতা উপলব্ধি করেই শহীদদের নাম-পরিচয় ও তাঁদের আত্মোৎসর্গের ইতিহাস নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরার উদ্দেশ্যেই তিনি এ উদ্যোগ নেন।
আবু হায়াত মো. জুলফিকার বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের শহীদেরা কেবল ইতিহাসের পাতায় সীমাবদ্ধ কোনো নাম নন; তাঁরা আমাদের অস্তিত্ব, স্বাধীনতা ও আত্মমর্যাদার ভিত্তি। তাঁদের আত্মত্যাগকে নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেওয়া আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। তাই মুক্তিযুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যাঁরা শহীদ হয়েছেন, তাঁদের ইতিহাস সবার কাছে পৌঁছে দেওয়া আমাদের অবশ্য কর্তব্য।’
মুক্তিযুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯৫ জন শহীদের ইতিহাস জানানোর ভিন্নধর্মী এ উদ্যোগের বিষয়টি ইতিবাচকভাবে দেখছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এ ধরনের কাজ যেন অব্যাহত থাকে, সে বিষয়ে ছাত্রদলের পক্ষ থেকে সহযোগিতা থাকবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষার্থী শাহরিয়ার তানজিল বলেন, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধ আমাদের জাতিসত্তা, চেতনা ও প্রেরণার এক অমলিন উৎস। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে আমাদের প্রাণের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। যেখানে ১৯৭১ সালে ১৯৫ জন শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা–কর্মচারী প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন।’
শাহরিয়ার তানজিল বলেন, ‘এই আত্মত্যাগ আমাদের জন্য যেমন গভীর বেদনার, তেমনি এটি সাহস, দায়িত্ববোধ ও অনুপ্রেরণার এক অনন্য দৃষ্টান্ত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্ল্যাকার্ড স্থাপনের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধ ও শহীদদের স্মরণ করার যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়।’