২৭০ দিন আলোচনার পর অনৈক্যে হতাশ উপদেষ্টা
Published: 30th, October 2025 GMT
জুলাই সনদ বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর পরস্পরবিরোধী অবস্থানে হতাশা প্রকাশ করেছেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। ২৭০ দিন আলোচনার পরও ঐকমত্য না হওয়ায় তিনি বলেন, সরকার কীভাবে কাজ করবে, তা বোঝা কঠিন। গণভোটের সময় ও পদ্ধতি নিয়ে মতভেদ চরমে পৌঁছেছে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন দুটি বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে গণভোট অথবা নির্বাচিত সংসদের হাতে দায়িত্ব হস্তান্তর। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অনৈক্য ঐকমত্যের সরকারের ধারণাকে দুর্বল করে দিচ্ছে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পথে সরকার এগোলে স্বাক্ষরেও অগ্রগতি হবে: এনসিপি
জুলাই সনদে বাস্তবায়নে এখন অন্তর্বর্তী সরকারের পদক্ষেপ দেখার পরই এতে স্বাক্ষরের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।
এই বাস্তবায়নের পথরেখা দিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন তাদের সুপারিশ জমা দেওয়ার এক দিন পর আজ বুধবার সংবাদ সম্মেলন করে এ কথা জানিয়েছে জুলাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের গড়া দলটি।
এনসিপির মুখ্য সমম্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী সংবাদ সম্মেলনে বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়নে খসড়া আদেশের প্রথমটি গ্রহণ করার মাধ্যমে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি নিশ্চিত করতে হবে এবং সংবিধান সংস্কার বিলের খসড়া প্রণয়ন ও উন্মুক্ত করার উদ্যোগ নিতে হবে। আইনি ভিত্তিসম্পন্ন আদেশের খসড়া সরকার গ্রহণ করলে তাদের সনদ স্বাক্ষরের বিষয়েও অগ্রগতি হবে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন জুলাই সনদ প্রণয়নের পর গত ১৭ অক্টোবর বিএনপি–জামায়াতে ইসলামীসহ অধিকাংশ দল তাতে স্বাক্ষর করলেও এনসিপি সই করেনি। দলটির পক্ষ থেকে বলা হয়, সনদ বাস্তবায়নের নিশ্চয়তা পেলেই কেবল তারা এতে সই করবে।
গতকাল মঙ্গলবার ঐকমত্য কমিশন সনদ বাস্তবায়নের রূপরেখা প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের হাতে তুলে দেন। কমিশন মূলত জুলাই সনদ বাস্তবায়নের আদেশের একটি খসড়া দিয়েছে, যে আদেশ জারি করতে হবে সরকারকে। খসড়া আদেশ অনুসারে, সংবিধান সংস্কার–সম্পর্কিত অংশ পরিবর্তনে গণভোট আয়োজন করতে হবে। আর ৯টি সুপারিশ অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাহী আদেশে বাস্তবায়ন করতে পারবে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী এই সনদে সই না করার পটভূমি তুলে ধরে বলেন, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি নিশ্চিত করার দাবিতে এনসিপি জুলাই সনদে স্বাক্ষর করা থেকে বিরত থেকেছে। তাঁরা বরাবরই বলেছেন যে জুলাই সনদ যেন স্রেফ রাজনৈতিক সমঝোতার ফাঁকা বুলি না নয়, এর আইনি ভিত্তি যেন নিশ্চিত হয়।
জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশের খসড়া দেখেই এনসিপি স্বাক্ষরের বিষয়টি বিবেচনা করবে, দলের সেই অবস্থানের কারণেই ঐকমত্য কমিশন সরকারের কাছে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ করেছে বলে মনে করেন নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী।
এখন স্বাক্ষরের বিষয়ে এনসিপির সিদ্ধান্ত কী হবে, তা জানিয়ে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, দুই ধরনের সংস্কারের জন্য স্বতন্ত্র বাস্তবায়ন রূপরেখা কমিশন পেশ করেছে। সংবিধান-সম্পর্কিত নয়, এমন সংস্কার সাধনের লক্ষ্যে প্রজ্ঞাপন ও অধ্যাদেশের খসড়া কমিশন সরকারের কাছে সুপারিশ করেছে। কালবিলম্ব না করে অতি সত্বর এই সংস্কার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের উদ্যোগ অন্তর্বর্তী সরকারকে নিতে হবে। প্রথম খসড়া, তথা প্রস্তাব-১ বাস্তবায়নের পথে সরকারকে যেতে হবে।
সংবিধান সংস্কারের প্রস্তাবাবলি নিয়ে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, এখানে ৮(ঙ) ধারায় বলা হয়েছে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সংবিধান সংস্কার পরিষদ কাজ সম্পন্ন করতে না পারলে সংবিধান সংস্কার বিল পরিষদ কর্তৃক গৃহীত হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হবে। সনদের ওপর গণভোটের ম্যান্ডেট বাস্তবায়নে বাধ্যবাধকতা তৈরির লক্ষ্যে এটি একটি অত্যাবশকীয় সুপারিশ, যার নজির বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রয়েছে।
নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী আরও বলেন, কমিশনের প্রস্তাবিত প্রস্তাব-২-এর বিষয়ে কোনো স্পষ্ট বক্তব্য নেই। এর ফলে গোটা সংস্কার কার্যক্রমই ভন্ডুল হয়ে যেতে পারে।
প্রস্তাব-১–এর ক্ষেত্রে কিছু জায়গায় অস্পষ্টতা চিহ্নিত করে তা সংশোধনের আহ্বান জানান নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। এর মধ্যে রয়েছে, ‘আগামী নির্বাচিত সভা সংবিধান সংস্কার বিষয়ে গাঠনিক ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবে’—এ স্থানে ‘করতে পারবে’র স্থলে ‘করবে’ করতে হবে এবং সংবিধান সংস্কার বিলের বিষয় ‘বিবেচনা করবে’—এ অস্পষ্টতাও দূর করতে হবে।
গণভোটে প্রদত্ত সংবিধান সংস্কার বিলের খসড়া দ্রুত প্রণয়ন এবং জনগণের কাছে উন্মুক্ত করতে সরকারকে আহ্বানও জানান নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী।
রাজধানীর বাংলামোটরে এনসিপির অস্থায়ী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন। দলের যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার, খালেদ সাইফুল্লাহ, যুগ্ম সদস্যসচিব ফরিদুল হক প্রমুখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।