জাবি অধ্যাপককে হুমকি গণতান্ত্রিক চেতনার পরিপন্থি: ইউট্যাব
Published: 30th, October 2025 GMT
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক নাহরিন ইসলামকে হুমকি দেওয়ার নিন্দা জানিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইউট্যাব)।
বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) ইউট্যাবের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম ও মহাসচিব অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান এক বিবৃতিতে এ নিন্দা জানান।
আরো পড়ুন:
টুঙ্গিপাড়ায় সহকারী শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রধান শিক্ষকের সংবাদ সম্মেলন
ইবিতে ছাত্রীর পোশাক নিয়ে শিক্ষকের কটূক্তি, শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ
বিবৃতিতে তারা বলেন, সম্প্রতি অধ্যাপক ড.
ইউট্যাব মনে করে, অধ্যাপক ড. নাহরিন ইসলাম খান বিভিন্ন টকশো ও গণমাধ্যমে বাংলাদেশের একটি রাজনৈতিক দলের বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থান ও অতীতের স্বাধীনতাবিরোধী ভূমিকার সমালোচনা করে বক্তব্য দেওয়ার কারণেই এই হুমকিমূলক ইমেইলগুলো পাঠানো হয়েছে।
তারা আরো বলেন, একজন শিক্ষককে হুমকি দেওয়া বা তার পেশাগত দায়িত্ব পালনে বাধা দেওয়া কেবল একজন ব্যক্তির ওপর আক্রমণ নয়, বরং এটি দেশের শিক্ষাব্যবস্থা ও উচ্চশিক্ষার পরিবেশের ওপর সরাসরি আঘাত। শিক্ষকরা সমাজের বিবেক এবং জ্ঞান বিতরণের অগ্রদূত; তাদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হলে মুক্তবুদ্ধি চর্চা ও স্বাভাবিক শিক্ষাকার্যক্রম ব্যাহত হয়।
কেননা, একটি মুক্ত গণতান্ত্রিক সমাজে যে কোনো নাগরিক তার যুক্তিনির্ভর মতামত প্রকাশ করতে পারেন। মত প্রকাশের স্বাধীনতা দমন বা ভয়ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে তা সীমিত করার প্রচেষ্টা গণতান্ত্রিক চেতনার বিরুদ্ধে।
ইউট্যাবের শীর্ষ দুই নেতা বলেন, আমরা আবারও অধ্যাপক নাহরিন ইসলামকে হুমকি দেওয়ার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই এবং এই ধরনের অগণতান্ত্রিক ও সন্ত্রাসী আচরণের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানাই। এই ধরনের ঘটনা ক্যাম্পাসের সুষ্ঠু ও নিরাপদ পরিবেশের জন্য হুমকিস্বরূপ, যা শিক্ষকদের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি করে। শিক্ষকতা পেশার মর্যাদা ও শিক্ষকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের নৈতিক দায়িত্ব। এই ধরনের ঘটনা প্রমাণ করে যে, দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের নিরাপত্তা এখনও যথেষ্ট নয়।
ইউট্যাব অবিলম্বে এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত অপরাধী/অপরাধীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ও দৃষ্টান্তমূলক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছে। পাশাপাশি ইউট্যাব জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে অবিলম্বে অধ্যাপক নাহরিন ইসলামসহ সংশ্লিষ্টদের পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানাচ্ছে।
ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
জাবিতে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের অপতৎপরতার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ
নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের অপতৎপরতা ও নাশকতার পরিকল্পনার বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) বিক্ষোভ মিছিল করেছেন শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) রাতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু), ছাত্রদল ও ছাত্রশক্তির উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়কে এ মিছিল করা হয়েছে। মিছিল শেষে তারা বটতলায় মানববন্ধন করেন তারা।
আরো পড়ুন:
স্কুল পরিচালকের বিরুদ্ধে ৮ শিক্ষার্থীকে বেত্রাঘাতের অভিযোগ
গোপনে বাকৃবি ছাত্রীদের ব্যক্তিগত মুহূর্তের ছবি তুলে সাবেক ছাত্রকে দিতেন আরেক ছাত্রী
নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের অপতৎপরতা বিরুদ্ধে রাত ৯টায় বিক্ষোভ করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল। বিক্ষোভ মিছিল টিএমএইচ গেইট থেকে ডেইরি গেইট হয়ে ঢাকা আরিচা মহাসড়ক প্রদক্ষিণ করে ক্যাম্পাসের বটতলা হয়ে রবীন্দ্র চত্বরে গিয়ে শেষ হয়।
একই সময় বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা জাতীয় ছাত্রশক্তি।
এছাড়া রাত ১০টায় বিক্ষোভ মিছিল বের করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু)।
বিক্ষোভে তারা প্রশাসনের উদাসীনতার সুযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের বিক্ষোভ মিছিলের প্রতিবাদ ও জুলাইয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় জড়িত ছাত্রলীগ নেতা ও শিক্ষক-কর্মকর্তাদের রাষ্ট্রীয় আইনে বিচার দাবি করে। জাকসুর কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়েছে শাখা ইসলামি ছাত্রশিবির।
এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘ছাত্রলীগের চামড়া তুলে দেবো আমরা’, ‘আলিফ-শ্রাবন যেই গেটে, ছাত্রলীগ কেনো সেই গেটে’, ‘বিচার বিচার বিচার চাই, ছাত্রলীগের বিচার চাই’, ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেনো বাহিরে’ প্রভৃতি স্লোগান দেন।
মিছিল শেষে জাকসুর সাধারণ সম্পাদক (জিএস) মাজহারুল ইসলাম বলেন, “২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবরে আওয়ামীলীগ তার রক্তপিপাসু রূপ দেখানোর মাধ্যমে তাদের ফ্যাসিবাদী যাত্রা শুরু করেছিল। তারপর পিলখানা হত্যাকাণ্ড, শাপলার গণহত্যা, সাইদি সাহেবের রায়কে কেন্দ্র করে হত্যাকাণ্ড এবং ২৪ এর গণহত্যার মাধ্যমে সেই ফ্যাসিবাদী রক্তপিপাসার সিলিসিলা বজায় রেখেছিল। আমরা আজ দেখেছি ছাত্রলীগ নামের কিছু কুলাঙ্গার নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের ব্যানারে সামনে এসেছে। আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই যে সন্ত্রাসীদের আমাদের চব্বিশের শহীদেরা রক্ত দিয়ে নিষিদ্ধ করেছে, তারা আজীবন নিষিদ্ধই থাকবে।”
তিনি আরো বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের গাফিলতির কারণেই ছাত্রলীগ আজ নাশকতা পরিকল্পনা করার সুযোগ পাচ্ছে। আপনারা অতিদ্রুত ছাত্রলীগের আশ্রয়দাতাদের চিহ্নিত করুন, অপরাধীদের বিচার করুন। অন্যথায় ছাত্রলীগ পুণর্বাসনের দায় আপনাদের নিতে হবে।”
জাকসুর সহ-সভাপতি (ভিপি) আব্দুর রশিদ জিতু বলেন, “জাকসুর আগেও আমরা জুলাই আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় জড়িতদের বিচার নিয়ে সোচ্চার ছিলাম, জাকসুতে নির্বাচিত হওয়ার পরেও আমরা বিচারের দাবি থেকে এক চুলও সরে আসিনি। জুলাই হামলার বিচারের জন্য গঠিত তদন্ত কমিটিতে যেসব শিক্ষক রয়েছেন, তারা যদি জুলাই হামলায় জড়িত শিক্ষকদের বিচার এবং নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে মামলা না করেন, তাহলে আমরা ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে অ্যাকশনে যাওয়ার আগে আপনাদের বিরুদ্ধে অ্যাকশনে যাব।”
তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “যদি আর কখনো নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের কোনো নেতাকর্মী ক্যাম্পাসের ত্রিসীমানায় কোনো ধরনের কর্মসূচি দেওয়ার দুঃসাহস দেখান, তাহলে আপনারা এখান থেকে জীবিত হয়ে মায়ের কোলে ফিরে যেতে পারবেন না। এখনো আমাদের অনেক মায়ের সন্তান বিভিন্ন হাসপাতালের মর্গে আছেন, অনেক জুলাই যোদ্ধা এখনো হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছে। আর আপনারা এখানে মানববন্ধন করার দুঃসাহস দেখান, আপনাদের দুঃসাহসকে দুঃস্বপ্নে পরিণত করবো আমরা।”
ছাত্রশক্তি আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিলে শাখা ছাত্রশক্তির নেতা ও জাকসুর সমাজসেবা সম্পাদক আহসান লাবীব বলেন, “এনাম ও সোহলের মতো ছাত্রলীগের কুখ্যাত সন্ত্রাসীরা এই ক্যাম্পাসে প্রধান ফটকের সামনে মিছিল করে। অথচ প্রক্টর অফিস এ বিষয়ে অবগত না! প্রক্টর অফিস কেন জানে না? নিরাপত্তা অফিস কেন জানে না? তাহলে কি আমরা ধরে নেব সেই নিরাপত্তা অফিসের ইন্ধনে সেই প্রোগ্রামগুলো হচ্ছে?”
তিনি বলেন, “আমরা জানি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা অফিসের কাজ হলো শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এই নিরাপত্তা অফিসারদের আমরা দেখেছি জুলাই আন্দোলনকারীদের তথ্য ছাত্রলীগের কাছে বিলিয়ে দিতে। আন্দোলনকারীরা কোথায় আছে তাদের সেই তথ্য পৌঁছে দিত ছাত্রলীগের কাছে, যাতে আমরা হামলার শিকার হই, সেই ব্যবস্থা নিরাপত্তা অফিসাররা করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনের উচিত নিরাপত্তা অফিস থেকে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের এই দালালকে সরানো এবং উপাচার্য অফিস থেকে আওয়ামী পাণ্ডাগুলোকে সরানো।”
ঢাকা/আহসান/মেহেদী