চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট সংশোধনের কাজ আগামী মাসে (ডিসেম্বর) করা হবে বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ডিসেম্বরে সংশোধন শেষে জানুয়ারিতে সংশোধিত বাজেট তৈরি রাখব পরের সরকারের জন্য।

আজ সোমবার সচিবালয়ে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে সালেহউদ্দিন আহমেদ এ কথা বলেন।

চলতি অর্থবছরের পুরো বাজেট সংশোধনের পাশাপাশি নির্বাচনের বাজেট নিয়েও কথা বলেন সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘মনে হচ্ছে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর ওরা (নির্বাচন কমিশন) আর নতুন করে কোনো খরচ চাইবে না। নিয়মিত ও জরুরি খরচ থাকতে পারে। তার ব্যবস্থা করা যাবে। তাদের কিছু তহবিল আছে, অর্থ মন্ত্রণালয় আছে। ফলে নির্বাচনের খরচের ব্যাপারে চিন্তা করার কিছু নেই।’

প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছেন যে গণভোট এবং সংসদ নির্বাচন এক দিনে আয়োজন করা তাদের জন্য চ্যালেঞ্জ হবে। এ বিষয়ে সরকার নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করেছে কি না, জানতে চাইলে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, চ্যালেঞ্জ হলেও আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট এক দিনেই হওয়া উচিত। এটা নির্বাচন কমিশনকে গ্রহণ করতে হবে।

অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ এ বিষয়ে আরও বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা এক দিনে নির্বাচন করার কথা বলে দিয়েছেন। সরকার থেকে আমরাও এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কারণ, দুই দিনে কাজটি করা খুব সোজা কাজ নয়। রিটার্নিং কর্মকর্তা থেকে শুরু করে ব্যাংকের জুনিয়র অফিসার, স্কুল-কলেজের শিক্ষকেরা নির্বাচনের দায়িত্ব পালন করেন। দুই দিনের জন্য তাঁদের নিয়ে আসা খুবই কঠিন। ফলে নির্বাচন এক দিনে করাই ভালো। বিশ্বের অনেক দেশেই এ রকম হয়।’

এক দিনে নির্বাচন ও গণভোট আয়োজনের বাজেট সম্পর্কে জানতে চাইলে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ জানান, তারা (নির্বাচন কমিশন) তো বলেছে যে নির্বাচন ও গণভোটের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যয় বাড়বে। এটি খোলাখুলি বলেছে। তারা এখন তাদের বাজেট সংশোধন করছে।

চলতি অর্থবছরের বাজেটে নির্বাচনের জন্য যে তিন হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে, তা থেকে বাড়বে কি না, জানতে চাইলে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমি বলতে পারব না। গণভোটের ব্যাপারটা তো সামনে এল। এটা তো বাজেট দেওয়ার সময় প্রাক্কলনে ছিল না।’

অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ জানান, আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাস ও হাইকমিশনগুলোতে ভোটারদের তালিকাভুক্তি শুরু হবে। তখন দূতাবাসের খরচ যুক্ত হতে পারে। সেখানকার কর্মকর্তারা তখন অতিরিক্ত সময় (ওভার টাইম) কাজ করবেন।

এদিকে জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পাঠিয়ে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন বলে মন্তব্য করেছেন সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, এ সমস্যার সমাধান প্রশাসন দিয়ে হয় না। এ জন্য দরকার রাজনৈতিক সরকার। বিশ্বের উন্নত দেশেও জিনিসপত্রের দাম বাড়ে, যার পেছনে যৌক্তিক কারণ থাকে। কিন্তু বাংলাদেশে দেখা যায় অনেক চাল থাকার পরও হঠাৎ এক জায়গায় মিলেমিশে দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ল হউদ দ ন আহম দ এক দ ন র জন য সরক র গণভ ট

এছাড়াও পড়ুন:

যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের রপ্তানি কমলেও চীনে বেড়েছে, ট্রাম্পের শুল্কের প্রভাব

ভারত চীনের রাজনৈতিক সম্পর্ক ভালো না হলেও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বরাবরই জোরদার ছিল। তবে চলতি বছর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের বিরুদ্ধে শুল্কযুদ্ধ শুরু করার পর ভারত-চীন বাণিজ্য সম্পর্কে আরও গতি এসেছে।

পরিষ্কারভাবে বললে, চীন-ভারত বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ভারতের পালে হাওয়া লেগেছে। ফলে মার্কিন বাজারে রপ্তানি কমলেও চীনের বাজারে বেড়েছে। সেই সঙ্গে বছরের প্রথমার্ধে সামগ্রিকভাবে ভারতের রপ্তানি বেড়েছে। দ্বিতীয় প্রান্তিকের হিসাবে চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে এযাবৎকালের সর্বোচ্চ রপ্তানি করেছে ভারত। খবর ইকোনমিক টাইমস ও ফরচুন ইন্ডিয়ার

ভারতের সরকারি তথ্যে দেখা যাচ্ছে, চলতি বছরের অক্টোবর মাসসহ টানা সাত মাস চীনে ভারতের রপ্তানি বেড়েছে। ভারতের চলতি অর্থবছরের (এপ্রিল থেকে শুরু) প্রতি মাসে ভারতের রপ্তানি বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ শুল্কের জেরে ভারতীয় রপ্তানিকারকেরা চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলেন। এই পরিস্থিতিতে চীনের সঙ্গে বাণিজ্য বৃদ্ধিতে তাঁরা নিশ্চিতভাবে অনেকটা চিন্তামুক্ত হয়েছেন। সেই সঙ্গে চলতি অর্থবছরে নানা অনিশ্চয়তার মধ্যেও বছরের প্রথম দুই ত্রৈমাসিকে ভারতের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬ শতাংশের বেশি।

ভারতের সরকারি তথ্যে দেখা যাচ্ছে, গত বছরের তুলনায় চলতি বছরের অক্টোবর মাসে চীনে ভারতীয় পণ্যের রপ্তানি ৪২ শতাংশেরও বেশি বেড়েছে। এপ্রিল থেকে অক্টোবরের মধ্যে এই রপ্তানির পরিমাণ গত বছরের এই সময়ের তুলনায় বেড়েছে ২৪ দশমিক ৭ শতাংশ। এই সময় ভারত মোট ১ হাজার ৩ কোটি ডলারের পণ্য চীনে রপ্তানি করেছে।

চীনের বাজারে রপ্তানি হওয়া পণ্য তালিকার শীর্ষে আছে পেট্রোলিয়াম পণ্য, টেলিকম যন্ত্রাংশ ও মেরিন গুডস। এ বিষয়ে ভারতের এক সরকারি কর্মকর্তা বলেছেন, ‘গত কয়েক বছরে দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে এটা সবচেয়ে স্থিতিশীল পর্যায়। বিশেষ করে যখন বৈশ্বিক চাহিদা নিয়ে অনিশ্চয়তা বেড়েছে, তখন চীনে ভারতের রপ্তানি বৃদ্ধি ইতিবাচক বিষয়।’

পেট্রোলিয়াম পণ্যের রপ্তানি সবচেয়ে ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে। এপ্রিল মাসে তা বেড়েছে ১১ শতাংশ, জুলাই মাসে বেড়েছে ২৮ শতাংশ, সেপ্টেম্বর মাসে বেড়েছে ৩৩ শতাংশ। এই বৃদ্ধির জেরে এপ্রিল থেকে অক্টোবর মাসের মধ্যে ভারতীয় পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চতুর্থ বৃহত্তম গন্তব্য হয়ে উঠেছে চীন।

এদিকে চীনের বাজারে রপ্তানি বাড়লেও চলতি অর্থবছরে মার্কিন বাজারে ভারতের রপ্তানি কমেছে। মূলত অনিশ্চয়তা ও উচ্চ শুল্কের কারণে এই পতন, যদিও অক্টোবর মাসে, অর্থাৎ ৫০ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের রপ্তানি সেপ্টেম্বরের তুলনায় বেড়েছে। যদিও গত বছরের অক্টোবর মাসের তুলনায় তা কম।

ভারতের বাণিজ্যবিষয়ক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভের তথ্যানুসারে, সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের রপ্তানি ধারাবাহিকভাবে চার মাস ধরে কমেছে। মে থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ভারতের রপ্তানি ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ কমেছে বলে জানিয়েছে তারা। সম্প্রতি এত অল্প সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ভারতের রপ্তানি আর কখনো এতটা কমেনি।

প্রথম ছয় মাসে সর্বোচ্চ রপ্তানি

বছরের প্রথম প্রান্তিকে ভারত রপ্তানি করেছে মোট ২০৯ বিলিয়ন বা ২০ হাজার ৯০০ কোটি ডলারের পণ্য। দ্বিতীয় প্রান্তিকে করেছে ২০৯ দশমিক ৯ বিলিয়ন বা ২০ হাজার ৯৯০ কোটি ডলারের পণ্য। ভারতীয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে, দ্বিতীয় প্রান্তিকে এটাই এযাবৎকালের সর্বোচ্চ রপ্তানি; অর্থাৎ দ্বিতীয় প্রান্তিকে রপ্তানির ক্ষেত্রে সর্বকালীন রেকর্ড গড়েছে ভারত।

সার্বিকভাবে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথমার্ধে ভারতের রপ্তানি ইতিহাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট রপ্তানি হয়েছে ৪১৮ দশমিক ৯ বিলিয়ন বা ৪১ হাজার ৮৯০ কোটি ডলারের পণ্যে, আগের বছরের তুলনায় যা ৫ দশমিক ৮৬ শতাংশ বেশি। ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই সফলতা থেকে বোঝা যায়, ভারতের রপ্তানি ব্যবস্থার শক্তি কতটা বেড়েছে। লজিস্টিকস উন্নয়ন, বন্দর সক্ষমতা বৃদ্ধি, রপ্তানি সহজীকরণ, কাঠামোগত সংস্কার ও প্রতিযোগিতামূলক সক্ষমতার মাধ্যমে এই সফলতা অর্জিত হয়েছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া পোস্টে ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, রপ্তানি প্রবৃদ্ধিতে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ ভূমিকা পালন করেছে। তার মধ্যে আছে রপ্তানিতে প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি, আধুনিক সরবরাহ শৃঙ্খল নিশ্চিত করা ও স্মার্টফোন রপ্তানিতে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি।

বিশ্লেষকদের মতে, সরকার নীতিসংস্কার, বাণিজ্য চুক্তি ও লজিস্টিকস উন্নয়নের মাধ্যমে রপ্তানিকারকদের সমর্থন দিচ্ছে। তাঁরা আরও জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক এই অর্জন ভবিষ্যতে ভারতের পালে আরও হাওয়া দেবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ৪ মাসে প্রকল্পের ১% টাকা খরচ করতে পারেনি ৫ মন্ত্রণালয় ও বিভাগ
  • যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের রপ্তানি কমলেও চীনে বেড়েছে, ট্রাম্পের শুল্কের প্রভাব