নতুন বাংলাদেশ গড়তে যাচ্ছেন উল্লেখ করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেছেন, ‘আমরা দেশকে বদলানোর কাজ শুরু করেছি, যার ফলে জনগণের চাওয়া ও চাহিদা বদলেছে। সামনে যাঁরা নির্বাচিত হয়ে আসবেন, সবাইকে এই ধারা অব্যাহত রাখতে হবে।’

আজ শুক্রবার বিকেলে কক্সবাজার শহরের বাহারছড়া এলাকার মুক্তিযোদ্ধা মাঠে আট দিনব্যাপী বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বিকেল পাঁচটায় বেলুন ও কবুতর উড়িয়ে বইমেলার উদ্বোধন করেন তিনি।

অনুষ্ঠানে মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, ‘গত জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে যাঁরা প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন, তাঁদের কারণে আমরা আজ কথা বলার স্বাধীনতা পেয়েছি। তাঁদের কারণে আমরা নতুন বাংলাদেশ গড়ার শক্তি পাচ্ছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের পর ১৫ দিন দেশে পুলিশ ছিল না। তখন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে ট্রাফিকের কাজ সামলিয়েছে। পুলিশবিহীন ওই ১৫ দিনে দেশে খুব বেশি ক্রাইমও হয়নি। সবাই রাত জেগে নিজেদের মহল্লা পাহারা দিয়েছেন। মুসলমান-মাদ্রাসার ছাত্ররা গিয়ে মন্দির পাহারা দিয়েছেন। একে অন্যের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন—এটিই আমাদের সংস্কৃতি।’

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিনের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাকিল আহমেদ, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক আফসানা বেগম, জেলা জামায়াতের আমির নুর আহমদ আনোয়ারি, কক্সবাজার প্রেসক্লাবের সভাপতি মাহবুবুর রহমান প্রমুখ।

সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র আয়োজিত এই মেলার ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছে জেলা প্রশাসন। ‘এসো দেশ বদলাই, পৃথিবী বদলাই’ স্লোগানে আয়োজিত এই বইমেলায় বাংলা একাডেমি, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র, প্রথমাসহ ৫৯ প্রকাশনী অংশগ্রহণ করেছে। মেলা ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত রাখা হবে। প্রতিদিন বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মেলার পাশাপাশি চলবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

শূন্য করদাতাদের হিসাব খাতিয়ে দেখা উচিৎ অর্থ উপদেষ্টা

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ক্ষেত্রে অডিট করা খুবই জরুরি। সংস্থাটির মতে, প্রতি ১০০ জনে ৭০ জনই জিরো ট্যাক্স দেয়, এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। যে ৭০ ভাগ শূন্য কর দেখাচ্ছে তাদের হিসাব খতিয়ে দেখা উচিৎ বলে মন্তব্য করেছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। 

আজ বুধবার রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে আয়োজিত অডিট অ্যান্ড একাউন্টিং সামিটের প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। অনুষ্ঠানে এফআরসির চেয়ারম্যান ড. সাজ্জাদ হোসেন ভুঁইয়া প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতা নিশ্চিতে অডিটিং-অ্যাকাউন্টটি বড় বিষয়। তবে যারা এসব কাজে জড়িত তাদের স্বচ্ছতা ও সততা সবার আগে বড় বিষয়। অনেক প্রতিষ্ঠান অডিটের যে পেপার সাবমিট করে যার বেশিরভাগই মানসম্পন্ন না। 

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, এনবিআরের ক্ষেত্রে অডিট করা খুবই জরুরি। এনবিআরের মতে, প্রতি ১০০ জনে ৭০ জনই জিরো ট্যাক্স দেয়, এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। যে ৭০ ভাগ শূন্য কর দেখাচ্ছে তাদের হিসাব খতিয়ে দেখা উচিৎ। আবার ১৮ লাখ রিটার্ন জমা পড়ছে সে তথ্যেও গড়মিল থাকতে পারে। যারা অডিট করেন তাদের অন্তর দৃষ্টি দিয়ে অডিট কার্যক্রম পরিচালনার আহ্বান রইল। বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানো বিষয়ে তিনি বলেন, যদি আমরা বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে চাই তাহলে অডিটিং এবং একাউন্টিংকে গুরুত্ব দিতে হবে। 

ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আর্থিক খাতের সংস্কার নিয়ে অনেক বাধা বিপত্তি আছে। অনেকেই মনে করছেন আর্থিক খাতের সংস্কার বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ প্রস্তাবেই হচ্ছে, বাস্তবে এমনটা না। সরকারের নিজস্ব উদ্যোগেও সংস্কার হচ্ছে। তবে তার ভালো পদক্ষেপ নিলে আমরা কোনো তা নেব না।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড আহসান এইচ মনসুর বলেন, অধিকাংশ ব্যাংকের অডিট রিপোর্ট গড়মিল পাওয়া যায়। ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ঝুঁকিভিত্তিক তদারকি (রিস্ক বেসড সুপারভিশন) পুরোপুরি কার্যকর হবে। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বিশ্বাস অর্জন করতে গেলে অডিট রিপোর্টে স্বচ্ছতা ও সঠিক তথ্য দিয়ে রিপোর্ট সাবমিট করতে হবে। এটার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক জয়েন্টলি কাজ করবে। পাওনা নিয়ে চার সরকারি প্রতিষ্ঠানে অডিট করতে গেলে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেনি। যদি একাউন্টিং স্ট্যান্ডার্ড কোনো প্রতিষ্ঠান অনুসরণ না করে তাদের ওপর শাস্তি আরোপ করা উচিৎ। 

অডিটরদের সৎ থাকার পরামর্শ দিয়ে দুদক আব্দুল মোমেন চেয়ারম্যান বলেন, বর্তমানে আমি যদি বিচার করি তাদের অডিট রিপোর্ট দিয়ে তাহলে স্বচ্ছ অডিটর পাওয়া যাবে না। আইএফআইসি ব্যাংকে প্রচুর কেলেঙ্কারি হয়েছে। সালমান এফ রহমান অডিট রিপোর্টের সহায়তায় একটা পেপার কোম্পানির ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে তথ্য দেখিয়ে অর্থ নিয়েছেন। গত শাসনামলে ব্যাংক খাতের একের পর এক আর্থিক অনিয়ম হলে বাংলাদেশ ব্যাংক কোনো পদক্ষেপ নিতে পারিনি। এসব অডিট রিপোর্ট লুকানোয় শীর্ষ অডিট ফার্মকে চিহ্নিত করেছে এটা প্রশংসার দাবিদার। তবে তাদের বিরুদ্ধে কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ