যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসের পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলে ছড়িয়ে পড়া ভয়াবহ দাবানলের ব্যাপক প্রভাব পড়েছে বিনোদন অঙ্গনে। অনেক সাধারণ মানুষের মতো তারকাদের বাড়ি পুড়েছে, বাতিল হয়েছে শুটিং, ছবির প্রিমিয়ার। ধীরে ধীরে আরও ক্ষয়ক্ষতির চিত্র প্রকাশ্যে আসতে শুরু করেছে।
গত বুধবার রাতে অস্কার, এমি ও গোল্ডেন গ্লোবজয়ী অভিনেত্রী জেমি লি কার্টিস সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানিয়েছেন, তাঁর পরিবার নিরাপদ; কিন্তু তাঁদের বাড়ি রক্ষা পায়নি। তিনি উদ্ধারকারীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। এবার তিনি দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য তৈরি তহবিলে ১০ লাখ ডলার বা প্রায় ১২ কোটি টাকা অনুদানের ঘোষণা দিলেন। ইনস্টাগ্রামে এক পোস্টে এ ঘোষণা দেন ৬৬ বছর বয়সী অভিনেত্রী।
জেমি লি কার্টিস ইনস্টাগ্রামে লিখেছেন, ‘আগুন এখনো জ্বলছে, উদ্ধারকারী দল, ফায়ার ফাইটারসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো এখনো কঠোর পরিশ্রম করছে। প্রতিবেশীরা ও বন্ধুরা একে অপরকে বাঁচানোর জন্য একসঙ্গে লড়াই করছে। এমন পরিস্থিতিতে আমি, আমার স্বামী ও সন্তানেরা মিলে আমাদের পরিবারের ফাউন্ডেশন থেকে এক মিলিয়ন ডলার অনুদানের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি।’
সেলেনা গোমেজ.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
অরক্ষিত বেলতলী বধ্যভূমি, চলে মাদকের আড্ডা
মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বহনকারী কুমিল্লার লাকসাম রেলওয়ে জংশনের বেলতলী বধ্যভূমি স্বাধীনতার ৫৪ বছর পেরিয়ে গেলেও অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে। রাত নামলেই সেখানে বসছে মাদকসেবীদের আড্ডা। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মতে, এটি শহীদদের অবমাননা। অবিলম্বে বধ্যভূমিটি সংরক্ষণের দাবি জানিয়েছেন সচেতন মহল।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে লাকসাম রেলওয়ে জংশন ছিল পাকিস্তানি বাহিনীর একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটি। বিভিন্ন এলাকা থেকে আটক নিরীহ বাঙালি নারী-পুরুষ ও মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনে করে এখানে আনা হতো। নির্মম নির্যাতনের পর তাদের হত্যা করে বেলতলী এলাকায় গণকবর দিয়ে মাটি চাপা দিত পাকিস্তানি বাহিনী।
আরো পড়ুন:
মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীদের লাল চিঠি পাঠাতাম
কক্সবাজার হানাদারমুক্ত দিবস ১২ ডিসেম্বর
লাকসাম রেলওয়ে জংশনের দক্ষিণ পাশে প্রায় ২ হাজার ফুট এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই বধ্যভূমিতে মাটি খুঁড়লে আজও বেরিয়ে আসে মানুষের হাড়গোড় ও কঙ্কাল। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের ভাষ্যমতে, ১৯৭১ সালে পাক সেনারা এখানে প্রায় ১০ হাজার বাঙালি নারী-পুরুষকে হত্যা করে মাটিচাপা দেয়।
১৯৯৯ সালে ঢাকার একদল সাংবাদিকের অনুরোধে ডোম শ্রীধাম দাস বেলতলী বধ্যভূমিতে খনন কাজ চালিয়ে মাটিচাপা দেওয়া মানুষের কয়েকটি কঙ্কাল, মাথার খুলি ও হাড়গোড় উদ্ধার করেন। সেসময় উদ্ধারকৃত কিছু নিদর্শন বর্তমানে ঢাকার মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে সংরক্ষিত রয়েছে।
লাকসামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল কাদের বলেন, “১৯৭১ সালে নিজের চোখে দেখেছি, কীভাবে ট্রেন থেকে নামিয়ে মানুষকে এনে নির্যাতনের পর হত্যা করা হতো। আজ সেই জায়গায় কোনো সাইনবোর্ড নেই, কোনো স্মৃতিচিহ্ন নেই—এটা আমাদের জন্য লজ্জার। নতুন প্রজন্ম জানবেই বা কীভাবে আমাদের ইতিহাস?”
বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. শাহজাহান বলেন, “বেলতলী বধ্যভূমিতে মাটি খুঁড়লেই মানুষের হাড়গোড় বেরিয়ে আসে। এই জায়গা অরক্ষিত থাকায় মাদকসেবী আর অপরাধীরা আড্ডা দেয়। আমরা বেঁচে থাকতে থাকতে চাই, রাষ্ট্র যেন এই বধ্যভূমিকে সংরক্ষণ করে, শহীদদের সম্মান দেয়।”
লাকসাম উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোহাম্মদ আলী বলেন, “মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের জরিপ অনুযায়ী দেশের চিহ্নিত ১০টি বধ্যভূমির মধ্যে লাকসাম বেলতলী একটি। অথচ আজও এটি অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে আছে, যা আমাদের জন্য লজ্জার।”
তিনি আরো বলেন, “বধ্যভূমিটি সংরক্ষণের অভাবে সেখানে মাদকসেবীদের আড্ডা বসছে, যা শহীদদের আত্মত্যাগের অবমাননার শামিল।”
লাকসাম উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) নার্গিস সুলতানা বলেন, “আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নিয়েছি।”
ঢাকা/রুবেল/মাসুদ