যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসের পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলে ছড়িয়ে পড়া ভয়াবহ দাবানলের ব্যাপক প্রভাব পড়েছে বিনোদন অঙ্গনে। অনেক সাধারণ মানুষের মতো তারকাদের বাড়ি পুড়েছে, বাতিল হয়েছে শুটিং, ছবির প্রিমিয়ার। ধীরে ধীরে আরও ক্ষয়ক্ষতির চিত্র প্রকাশ্যে আসতে শুরু করেছে।
গত বুধবার রাতে অস্কার, এমি ও গোল্ডেন গ্লোবজয়ী অভিনেত্রী জেমি লি কার্টিস সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানিয়েছেন, তাঁর পরিবার নিরাপদ; কিন্তু তাঁদের বাড়ি রক্ষা পায়নি। তিনি উদ্ধারকারীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। এবার তিনি দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য তৈরি তহবিলে ১০ লাখ ডলার বা প্রায় ১২ কোটি টাকা অনুদানের ঘোষণা দিলেন। ইনস্টাগ্রামে এক পোস্টে এ ঘোষণা দেন ৬৬ বছর বয়সী অভিনেত্রী।
জেমি লি কার্টিস ইনস্টাগ্রামে লিখেছেন, ‘আগুন এখনো জ্বলছে, উদ্ধারকারী দল, ফায়ার ফাইটারসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো এখনো কঠোর পরিশ্রম করছে। প্রতিবেশীরা ও বন্ধুরা একে অপরকে বাঁচানোর জন্য একসঙ্গে লড়াই করছে। এমন পরিস্থিতিতে আমি, আমার স্বামী ও সন্তানেরা মিলে আমাদের পরিবারের ফাউন্ডেশন থেকে এক মিলিয়ন ডলার অনুদানের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি।’
সেলেনা গোমেজ.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক: গ্রাহক নেই, কাজও নেই
একসময় গ্রাহকের ভিড় সামলাতেই যাদের ঘাম ছুটে যেত, এখন তারা অলস সময় পার করছেন ব্যাংকের মধ্যে বসে। শাখা পর্যায়ে এখনো অর্থ ছাড় না হওয়ায় গ্রাহকের আনাগোনা শুরু হয়নি এসব ব্যাংকে। কাজ নিয়েও দেখা যায়নি ব্যতিব্যস্ততা।
লুটপাটে ফোকলা করে ফেলা দেশের পাঁচটি শরিয়াভিত্তিক ব্যাংককে বাঁচিয়ে রাখতে এগুলোর কার্যক্রম এক ছাতার নিচে নিয়ে এসেছে বাংলাদেশ ব্যাংক; ব্যাংকগুলো মিলে ‘সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক’ নামে একটি একক ব্যাংক যাত্রা শুরু করেছে, ২ ডিসেম্বর যার লাইসেন্সও দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগের প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ‘সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক পিএলসি’কে তফসিলি ব্যাংকের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। তবে ২ ডিসেম্বর পর্যন্ত কোনো শাখা অর্থ পায়নি।
মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) রাজধানী ঢাকার মতিঝিল, পল্টন, তোপখানা রোড ও কাকরাইলে একীভূত হওয়া ব্যাংকগুলোর বেশ কয়েকটি শাখায় ঘুরে দেখা যায়, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাজের কোনো চাপ নেই; গ্রাহকদেরও উপস্থিতি নেই।
একীভূত হওয়া পাঁচ ব্যাংক হলো ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও এক্সিম ব্যাংক।
এগুলোর মধ্যে মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের তোপখানা রোড শাখায় গিয়ে দেখা যায় সুনশান নীরবতা। কর্মকর্তারা নিজেদের ডেস্কে কাজ করছেন। কাউন্টারে নেই কোনো ভিড়। টাকা গণনার মেশিনের কট কট শব্দ নেই। ডিজিটাল কাউন্টিং মেশিনে সিরিয়াল দেওয়া-নেওয়ার কোনো ব্যস্ততাও দেখা গেল না।
প্রায় এক ঘণ্টার মধ্যে শাখাটিতে এলেন মাত্র একজন গ্রাহক। কথা হলো তার সঙ্গে। মাসিক সঞ্চয় প্রকল্পের (ডিপিএস) টাকা জমা দিতে এসেছেন তিনি। কয়েক মিনিটের মধ্যে আরেকজন গ্রাহককে পাওয়া গেল। তবে তারও একই প্রয়োজন।
প্রথম যে গ্রাহক ব্যাংকটির এই শাখায় আসেন তার নাম আবুল হোসেন। তিনি বলেন, “আমার পাঁচ বছর মেয়াদি একটা ডিপিএস আছে। সেই ডিপিএসের মাসিক কিস্তির টাকা জমা দিতে এসেছি। শুনেছি কয়েকটি ব্যাংক একত্র করে একটি ব্যাংক করেছে সরকার; যার মধ্যে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকও রয়েছে। যেহেতু সরকার ব্যাংকের দায়িত্ব নিয়েছে, তাই বিশ্বাস আরো বেড়ে গেছে। ডিপিএসের টাকা পাবই। তাই নিয়মিত টাকা জমা দিয়ে যাচ্ছি।”
একীভূত ব্যাংকের মূলধন হিসেবে সরকার দিয়েছে ২০ হাজার কোটি টাকা। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ থেকে এই টাকা ব্যাংকটির অ্যাকাউন্টে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। আর আমানতকারীদের শেয়ার থেকে ১৫ হাজার কোটি টাকা নিয়ে মোট মূলধন করা হচ্ছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা।
এই বিষয়ে জানতে কথা হয় ফার্স্ট সিকিউরিটির তোপখানা রোড শাখার ব্যবস্থাপক তৌফিক এলাহীর সঙ্গে। তিনি বলেন, “শুনেছি সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের জন্য বাজেট থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা দিয়েছে সরকার। কিন্তু আমাদের শাখা পর্যায়ে এখনো কোনো টাকা বা নির্দেশনা পৌঁছায়নি।”
সাধারণ গ্রাহকদের টাকা দেওয়ার মতো অবস্থা তাদের শাখার এখনো হয়নি জানিয়ে তৌফিক এলাহী বলেন, “ব্যাংকের লিখিত নির্দেশনা ছাড়া আমরা কিছুই করতে পারব না। আমরা অপেক্ষায় আছি। আমাদের শাখায় অর্থ ও নির্দেশনা এলে সেই মোতাবেক গ্রাহক সেবায় নিয়োজিত হব।”
গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের নয়াপল্টন শাখায় গিয়ে প্রায় একই চিত্র দেখা গেছে। অফিসের ভেতর সুনশান অবস্থা। কর্মকর্তারা নিজেদের ডেস্কে অলস সময় পার করছেন। নেই কোনো গ্রাহক উপস্থিতি।
দুপুরের পর এক্সিম ব্যাংকের মতিঝিল শাখায় গিয়ে কোনো কর্মচাঞ্চল্য চোখে পড়েনি। অথচ এই শাখায় একসময় গ্রাহকদের ভিড় সামলাতে হিমশিম খেতে হতো কর্মকর্তা-কর্মচারীদের।
এই শাখার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে অনুমতি না থাকায় তারা সংবাদমাধ্যমকে কিছু জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এমনকি শাখা ব্যবস্থাপকও কথা বললেন না। তিনি শুধু এতটুকু বলেন যে, “ওপর থেকে নিষেধ রয়েছে যেন গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপ না করি।”
একীভূতি ব্যাংকটিকে গ্রাহকের আস্থায় ফেরাতে বাংলাদেশ ব্যাংক তৎপর রয়েছে। সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে একীভূত ব্যাংকটির সার্বিক কার্যক্রম শুরু করার বিষয়ে কথা হয়। গভর্নরের কাছ থেকে বিস্তারিত দিকনির্দেশনা পেয়েছেন তিনি।
বৈঠক শেষে আইয়ুব মিয়া বলেন, “গ্রাহকের আস্থা ফেরানোই হবে সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের প্রথম কাজ।”
“সরকারি মালিকানায় একটি ইসলামী ব্যাংক কার্যক্রম শুরু করেছে, এটা জাতির জন্য সুসংবাদ,“ যোগ করেন তিনি।
ব্যাংকটি সঠিকভাবে প্রতিষ্ঠা করতে অনেক কারিগরি টিম কাজ করছে জানিয়ে আইয়ুব মিয়া বলেন,“দায়িত্ব নেওয়ার পর আমাদের প্রধান কাজ হবে আমানতকারীদের আস্থা ফেরান। সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক জাতির কাছে আস্থার প্রতীক হয়ে উঠবে।”
গভর্নরের সঙ্গে সাক্ষাৎ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “ব্যাংকের যাবতীয় কার্যক্রম সম্পর্কে ধারণা নেওয়া, আইন-কানুন পর্যালোচনা করা এবং ব্যাংকের ভিশন ও মিশন সম্পর্কে ধারণা নেওয়া বৈঠকের প্রধান লক্ষ্য ছিল। পাঁচটি মিলে একটি পূর্ণাঙ্গ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করাই প্রধান চ্যালেঞ্জ।”
সোমবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে লাইসেন্স ইস্যুর পর মঙ্গলবার থেকে সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের কার্যক্রম শুরু হয়ে গেছে বলেও মন্তব্য করেন সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের নতুন এই চেয়ারম্যান।
ঢাকা/রাসেল