চীন সরকার বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীদের বিনা মূল্যে স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি প্রোগ্রামে পড়ার সুযোগ দিচ্ছে। চায়নিজ গভর্নমেন্ট স্কলারশিপের মাধ্যমে চায়না স্কলারশিপ কাউন্সিল (সিএসসি) ২০২৫-এর আওতায় নির্বাচিত মেধাবী শিক্ষার্থীরা বেইজিং ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে অধ্যয়নের সুযোগ পাবেন। বিশ্বের অন্য দেশের শিক্ষার্থীদের মতো বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরাও এ স্কলারশিপের জন্য আবেদন করতে পারবেন।

চীনের প্রায় ১ হাজার ১০০-এর অধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন প্রোগ্রামের আওতায় বিভিন্ন কোর্স অফার করে থাকে। এর মধ্যে প্রকৌশল, কৃষি, মেডিকেল ও স্বাস্থ্যবিজ্ঞান, বিজনেস, ম্যানেজমেন্টসহ অনেক বিষয়ে পড়ানো হয়।

ছবি: ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

দামেস্কের কিংবদন্তি আলেম ইমাম ইবনে আসাকির

মধ্যযুগে ইসলামি জ্ঞানচর্চার ইতিহাসে যাঁদের মনন ও ভাবনা পৃথিবীতে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে, তাঁদের অন্যতম হলেন কিংবদন্তি ইমাম ইবনে আসাকির। তাঁর মূল নাম আলী বিন হাসান, উপনাম আবুল হাসান। তবে ‘ইবনে আসাকির’ নামেই তিনি বেশি পরিচিত।

এ নামে কেন তিনি বিখ্যাত, এর স্পষ্ট কোনো ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। তবে কারও কারও ধারণা—এটি পিতৃবংশের কারও নাম ছিল, যার সূত্র ধরে তিনি এই উপাধি অর্জন করেন। (ইমাম জাহাবি, সিয়ারু আ’লামিন নুবালা, ১৫/২৪৭, দারুল হাদিস, কায়রো, ২০০৬)

তিনি প্রতি জুমাবারেই অন্তত একবার কোরআন খতম করতেন, আল্লাহর আনুগত্যহীন কোনো মুহূর্ত ব্যয় হলো কি না—এ বিষয়েও তিনি নিজেই নিজের হিসাব নিতেন।তাজউদ্দিন সুবকি (রহ.), তাবাক্বাতুশ শাফিয়িয়্যাতিল কুবরা

ইবনে আসাকির হিজরি ৪৯৯ সনে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর জন্মস্থান বর্তমান সিরিয়ার দামেস্ক নগরী। সেসময় দামেস্ক ছিল জ্ঞানচর্চা, তত্ত্ব বিশ্লেষণ ও গবেষণার অন্যতম শ্রেষ্ঠ কেন্দ্র। তাই তিনি সেখান থেকেই জ্ঞানার্জনের পথে যাত্রা শুরু করেন। (ভূমিকা, তারিখু মাদিনাতি দিমাশক্ব, ১/১১, দারুল ফিকর, বৈরুত, ১৯৯৫)

পারিবারিক দীক্ষা

ইবনে আসাকির (রহ.)-এর পরিবার ছিল অত্যন্ত ধর্মপরায়ণ ও আলেমদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল; যে কারণে শৈশবেই তিনি ধর্মীয় নীতিবোধ ও আত্মিক উন্নয়নের দীক্ষা লাভ করেন। তা ছাড়া পিতা ছিলেন একজন প্রজ্ঞাবান আলেম ও ফকিহ। তাই অল্প বয়সেই তিনি ফিকহ ও অন্যান্য শাস্ত্রে মৌলিক ধারণা লাভ করেন। (ভূমিকা, তারিখু মাদিনাতি দিমাশক্ব, ১/১১, দারুল ফিকর, বৈরুত, ১৯৯৫)

আরও পড়ুনশিক্ষা নিয়ে ইবনে খালদুনের ভাবনা০৪ অক্টোবর ২০২৫ইবনে আসাকিরের হাদিস ও ইতিহাসচর্চা অসংখ্য আলেমকে মুগ্ধ করে। ফলে অনেকেই তাঁকে নির্ভরতার প্রতীক ও শ্রদ্ধার পাত্র হিসেবে বিবেচনা করেন।আল্লাহভীতির অনন্য প্রতীক

তিনি ছিলেন আল্লাহভীতির এক উজ্জ্বল প্রতিচ্ছবি। জীবনের অধিকাংশ সময়ই তিনি কাটান আল্লাহর স্মরণ, ইবাদত ও সত্যনিষ্ঠার পথে। যশ-খ্যাতি কিংবা পার্থিব সম্পদ অর্জনে তিনি কখনো আগ্রহ দেখাননি। গবেষণা ও জ্ঞানের জগতে তিনি যেমন অতুলনীয় ছিলেন, তেমনই তাকওয়া, আত্মনিবেদন ও সত্যনিষ্ঠায়ও ছিলেন অনন্য। (ভূমিকা, তারিখু মাদিনাতি দিমাশক্ব, ১/২৪, দারুল ফিকর, বৈরুত, ১৯৯৫)

আল্লামা তাজউদ্দিন সুবকি (রহ.) তাঁর ব্যাপারে লেখেন, ‘তিনি প্রতি জুমাবারেই অন্তত একবার কোরআন খতম করতেন, (ইবাদত, জ্ঞানচর্চা বা লেখালেখিতে) সর্বদাই মগ্ন থাকতেন, আল্লাহর আনুগত্যহীন কোনো মুহূর্ত ব্যয় হলো কি না—এ বিষয়েও তিনি নিজেই নিজের হিসাব নিতেন।’ (তাজউদ্দিন সুবকি, তাবাক্বাতুশ শাফিয়িয়্যাতিল কুবরা, ৪/১৩৮, দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যা, বৈরুত, ১৯৯৯)

শিক্ষায় অবদান

শিক্ষাজীবনের সূচনা থেকেই ইবনে আসাকির (রহ.) ছিলেন অনুসন্ধিৎসু, জ্ঞানপিপাসু ও মননশীল। জ্ঞান ও গবেষণা ছিল তাঁর জীবনের মূল লক্ষ্য। জীবনের সিংহভাগ সময়ই তিনি কাটান জ্ঞান অন্বেষণ, ভ্রমণ, গ্রন্থ সংকলন ও শাইখদের সান্নিধ্যে গমন করে।

তিনি গভীর জ্ঞান আহরণের জন্য পাড়ি দেন হাজার মাইল পথ; পৌঁছেন বিভিন্ন ঐতিহাসিক নগরে। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য:

বাগদাদ (ইরাক): সে যুগের প্রধান জ্ঞানকেন্দ্র। ইবনে আসাকির (রহ.) সেখানে পাঁচ বছর অবস্থান করেন। এই সময়ে তিনি বিখ্যাত ‘মাদরাসায়ে নিজামিয়্যা’ থেকে হাদিস, ইতিহাস, নাহু, ফিকহসহ নানা শাস্ত্রে গভীর জ্ঞান লাভ করেন।

নিশাপুর (ইরান): সে সময়ে হাদিসশাস্ত্র ও তত্ত্বচিন্তার সমৃদ্ধ কেন্দ্র।

ইস্পাহান (ইরান): ইমাম আবু নুআইম ও আবু আবদুল্লাহ ইবনে মানদাহসহ অনেক খ্যাতনামা মুহাদ্দিসের শহর।

হেজাজ: জ্ঞানার্জনের এক ঐতিহাসিক কেন্দ্র, যেখান থেকেই গড়ে উঠেছেন অসংখ্য আলেম, ফকিহ ও মুহাদ্দিস। (ভূমিকা, তারিখু মাদিনাতি দিমাশক্ব, ১/১৬-১৮, দারুল ফিকর, বৈরুত, ১৯৯৫)

দামেস্কে ইবনে আসাকিরের সমাধি

সম্পর্কিত নিবন্ধ