গাজার যুদ্ধবিরতি আলোচনা ‘চূড়ান্ত পর্যায়ে’
Published: 14th, January 2025 GMT
গাজার যুদ্ধবিরতি আলোচনা ‘চূড়ান্ত পর্যায়ে’, কিন্তু অগ্রগতি নিয়ে জনগণের ‘অতি উত্তেজিত’ হওয়া উচিত নয়। মঙ্গলবার কাতারের পররাষ্ট্র দপ্তর এ তথ্য জানিয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল-আনসারি জানিয়েছেন, তার দেশ বিশ্বাস করে যে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মি মুক্তির আলোচনা ‘চূড়ান্ত পর্যায়ে’ রয়েছে। তবে তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, “এখন যা ঘটছে তা নিয়ে জনগণের অতিরিক্ত উত্তেজিত হওয়া উচিত নয়।”
দোহায় সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে, এই পরিস্থিতিতে প্রত্যাশা এমন স্তরে যেন না বাড়ে যখন গাজায় যা ঘটছে তার সাথে কোনো সম্পর্ক নেই।”
মুখপাত্র মাজেদ বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি, আমরা একটি উন্নয়নমূলক পর্যায়ে আছি। আমরা বিশ্বাস করি, আমরা শেষ পর্যায়ে আছি। কিন্তু সুস্পষ্ট বার্তা না আসা পর্যন্ত কোনো ঘোষণা হবে না এবং এখন যা ঘটছে তা নিয়ে আমাদের অতিরিক্ত উত্তেজিত হওয়া উচিত নয়।”
আল-আনসারি আলোচনায় অংশগ্রহণকারী বাইডেন প্রশাসন এবং আগামী কয়েক দিনের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্ব নিতে যাওয়া ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতিনিধিদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, “দোহায় যে বৈঠকগুলো হয়েছে তা ফলপ্রসূ হয়েছে। এগুলো ইতিবাচক এবং আমরা কিছু আপডেট শুনতে পাব বলে আশা করি।”
প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজায় হামলা শুরু করে ইসরায়েল। গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহতের সংখ্যা ৪৬ হাজার ছাড়িয়েছে, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। এর আগে বেশ কয়েকবার যুদ্ধবিরতির উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা ইসরায়েলের অনীহার কারণে ভেস্তে গেছে।
ঢাকা/শাহেদ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
মিয়ানমারের জান্তাবিরোধী বিপ্লব যেভাবে নষ্ট করল চীন
মিয়ানমারের সাধারণ জনগণ থেকে শুরু করে বিপ্লবী আন্দোলনের অনেকেই বিশ্বাস করেন, চীন হস্তক্ষেপ না করলে হয়তো ভিন্ন হতো দেশটির বর্তমান বাস্তবতা। অনেকের বিশ্বাস, ২০২৪ সালে সামরিক সরকারবিরোধী অভিযান ‘অপারেশন ১০২৭’ শুরু হওয়ার পর চীন হস্তক্ষেপ না করলে এখন পর্যন্ত প্রতিরোধযোদ্ধারা নেপিডো ঘিরে ফেলতেন; অর্থাৎ বসন্ত বিপ্লব ইতিমধ্যেই পৌঁছে যেত জয়ের খুব কাছে।
চীন প্রায়ই মিয়ানমারের সঙ্গে তাদের ‘পওক-ফও’ বা ‘ভ্রাতৃসুলভ’ সম্পর্কের কথা বলে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এই ভ্রাতৃসুলভ সম্পর্ক কি মিয়ানমারের জনগণের সঙ্গে, নাকি কেবল নেপিডোর শাসকদের সঙ্গে?
২০২৪ সালের জুনে এমএনডিএএ, টিএনএলএ, এএ এবং পিপলস ডিফেন্স ফোর্স নিয়ে গঠিত ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্সের অপারেশন ১০২৭-এর দ্বিতীয় ধাপ শুরু হয়। এই অভিযান আকারে ও সফলতার ক্ষেত্রে ছিল নজিরবিহীন। উত্তর শান অঙ্গরাজ্যের রাজধানী লাশিও দখলের পর প্রতিরোধযোদ্ধাদের জোট আরও এগিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল।
আরও পড়ুনভারত, পাকিস্তান, মিয়ানমার ঘিরে ট্রাম্পের নতুন কূটনীতি০৭ আগস্ট ২০২৫শাসক সেনাবাহিনী তখন ভেঙে পড়ছিল। ছয়জন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আটক হন, অসংখ্য সৈন্য আত্মসমর্পণ করেন আর নর্থ ইস্টার্ন কমান্ড পুরোপুরি ধসে পড়ে। একসময়ের শক্তিশালী মিয়ানমার সেনাবাহিনী তখন হয়ে পড়ে মনোবলহীন ও নেতৃত্বহীন। আর ঠিক সেই মুহূর্তেই সামরিক সরকারের জন্য এক ‘রক্ষাকর্তা’ হাজির হলো। সেই রক্ষাকর্তাই চীন।
অপারেশন ১০২৭-এর সর্বোচ্চ সাফল্যের সময় সামরিক জান্তার অনুরোধে বেইজিং প্রতিরোধযোদ্ধাদের ওপর যুদ্ধবিরতির আলোচনা শুরু করার জন্য চাপ সৃষ্টি করে। লাশিও পতনের পর সেই চাপ আরও বাড়ে। ২০২৪ সালের আগস্টে চীন ঘোষণা করে যে ‘মিয়ানমারের রাজনীতিতে সেনাবাহিনীই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান’। চীন হুমকি দেয় যে যদি লড়াই না থামে, তবে তারা সব ধরনের সহায়তা বন্ধ করে দেবে। এই হুমকি ছিল মূলত তাদের নিজস্ব সংস্করণের ‘ফোর-কাটস’ কৌশল; যা মিয়ানমারের সেনাবাহিনীও দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার করে আসছে।
আশ্চর্যের বিষয় হলো, মিয়ানমারের জেনারেলরা সব সময় চীনকে ভয় ও অপছন্দ করেছে। অথচ অপারেশন ১০২৭-এর সময় যখন মিন অং হ্লাইংয়ের সেনাবাহিনী টিকে থাকতে লড়াই করছিল, তখন তিনিই বেইজিংয়ের সাহায্য চান। আর চীন সাহায্য করার পর তিনি চীনকে ‘ভালো প্রতিবেশী’ এবং ‘বিশ্বস্ত বন্ধু’ বলে প্রশংসা করেন।এই চাপের মুখে এমএনডিএএ তাদের অগ্রযাত্রা থামিয়ে দেয় এবং ২০২৫ সালের এপ্রিলে কোনো যুদ্ধ ছাড়াই লাশিও আবার জান্তার কাছে ফিরিয়ে দেয়। জুলাই নাগাদ টিএনএলএ-ও চীনের চাপ সহ্য করতে না পেরে দখল করা এলাকা থেকে সরে যেতে বাধ্য হয়। বেইজিংয়ের সহায়তার কারণেই জান্তা আবার সেই সব এলাকা ফিরে পায়, যেগুলো প্রতিরোধযোদ্ধারা জীবন দিয়ে মুক্ত করেছিলেন।
২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে ২০২৩ পর্যন্ত চীন প্রকাশ্যে মিন অং হ্লাইংকে সমর্থন বা স্বীকৃতি দেয়নি। এমনকি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স অপারেশন ১০২৭ শুরু করার সময়ও বেইজিং অতটা হস্তক্ষেপ করেনি। কারণ, এই জোট সীমান্ত এলাকার টেলিকম প্রতারণা দমনের অঙ্গীকার করেছিল।
অপারেশন ১০২৭ শুরু হওয়ার সময় চীনের নির্লিপ্ততা আসলে মিয়ানমার সেনাবাহিনীকে আক্রমণ করার একটি নীরব অনুমতি ছিল। অন্য দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে, এই নীরবতা মিন অং হ্লাইংয়ের শাসনের প্রতি চীনের পরোক্ষ বিরোধিতাও বটে।
মিয়ানমারে স্থিতিশীলতাকে চীন অত্যন্ত গুরুত্ব দেয়। কারণ, এতে চীন ধারাবাহিকভাবে তাদের অর্থনৈতিক লক্ষ্য এগিয়ে নিতে পারে। ২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থান দেশটিকে সম্পূর্ণ বিশৃঙ্খল করে তোলে। এ কারণে মিন অং হ্লাইংকে পছন্দ করেন না চীন প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং। সির আং সান সু চির প্রতি ইতিবাচক মনোভাব ছিল। যেহেতু সু চির সরকার ছিল গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত, জনপ্রিয় এবং স্থিতিশীল। ফলে চীনের ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য তা ছিল নিরাপদ।
আরও পড়ুনমিয়ানমার কি পারমাণবিক বোমা বানাতে পারে১৮ জুন ২০২৪যদিও চীনের কাছে শেষ পর্যন্ত বাস্তবতা এবং অর্থনৈতিক স্বার্থই প্রাধান্য পায়। চীন মেনে নেয় যে মিন অং হ্লাইং এখনো ক্ষমতায় রয়েছে এবং মিয়ানমারের সম্পদে প্রবেশাধিকার পেতে হলে চীনকে সামরিক জান্তার সঙ্গেই কাজ করতে হবে। তাই বেইজিং জান্তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর ওপর চাপ বাড়াতে শুরু করে।
আশ্চর্যের বিষয় হলো, মিয়ানমারের জেনারেলরা সব সময় চীনকে ভয় ও অপছন্দ করেছে। অথচ অপারেশন ১০২৭-এর সময় যখন মিন অং হ্লাইংয়ের সেনাবাহিনী টিকে থাকতে লড়াই করছিল, তখন তিনিই বেইজিংয়ের সাহায্য চান। আর চীন সাহায্য করার পর তিনি চীনকে ‘ভালো প্রতিবেশী’ এবং ‘বিশ্বস্ত বন্ধু’ বলে প্রশংসা করেন।
চীন প্রায়ই বিশ্বকে শেখায় যে মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে কোনো বিদেশি দেশ হস্তক্ষেপ করা উচিত নয়। অথচ সবাই জানে, সিপিবি যুগ থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত মিয়ানমারের রাজনীতিতে চীনের কতটা হাত রয়েছে। মিয়ানমারের সংকটকে তারা যখন ‘দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়’ বলে দাবি করে, তখন একই সঙ্গে সক্রিয়ভাবে হস্তক্ষেপও করে। এভাবে চীনই হয়ে উঠেছে মিয়ানমারে সবচেয়ে বেশি হস্তক্ষেপকারী বিদেশি শক্তি।
আরও পড়ুনমিয়ানমার নিয়ে আমাদের কূটনৈতিক সক্ষমতা বাড়াতে হবে২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪চীন যদি মিয়ানমারের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ না করত, তবে দেশটি নিজের ভবিষ্যৎ নিজে গড়তে পারত। কিন্তু বেইজিং যদি দেশটির রাজনীতিতে এভাবে জড়িয়ে থাকতে থাকে, তবে তা কেবল মিয়ানমারের দুর্ভোগ বাড়াবে এবং একনায়কতন্ত্রকে আরও শক্তিশালী করবে। এখন মিয়ানমারের জনগণের সামনে দুটি শত্রু। সবচেয়ে কাছে আছে মিন অং হ্লাইংয়ের শাসন আর বাইরে আছে সেই বিদেশি শক্তিগুলো, যারা জান্তাকে সহায়তা করছে। বিশেষ করে চীন।
মিয়ানমারের বিপ্লবীদের এখন শুধু জান্তাকে হারালেই হবে না, চীনের হস্তক্ষেপকেও নিবৃত্ত করতে হবে। চীন হয়তো মনে করে, তারা খুব বুদ্ধিমানভাবে খেলছে। কিন্তু বাস্তবে তারা আগুন নিয়ে খেলছে। জান্তাকে সমর্থন করলে মিয়ানমারের মানুষের মধ্যে চীনবিরোধী মনোভাব আরও গভীর হবে। আর একদিন সেই আগুন চলে যেতে পারে নিয়ন্ত্রণের বাইরে।
ক্যো জ্ওয়া মো দ্য ইরাবতীর নির্বাহী সম্পাদক
দ্য ইরাবতীর থেকে নেওয়া, ইংরেজিতে থেকে সংক্ষিপ্তাকারে অনূদিত