ভারতীয় কর্মীদের জন্য ভিসা প্রক্রিয়া অনেকটা কঠোর করল সৌদি আরব। এখন থেকে সৌদিতে কাজের ভিসা পেতে ভারতীয়দের পেশাগত ও শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রাক-যাচাই করাতে হবে। খবর এনডিটিভির।

সৌদি দূতাবাসের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ১৪ জানুয়ারি থেকে এ নিয়ম কার্যকর হয়েছে। নতুন এ প্রক্রিয়া ছয় মাস আগে প্রস্তাব করা হয়েছিল। এর লক্ষ্য হলো সৌদি আরবে প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোর সীমিত সক্ষমতা বিবেচনায় শ্রমবাজারের মান বজায় রাখা এবং দক্ষ কর্মী নিয়োগ নিশ্চিত করা। 

নতুন নিয়ম অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানের মালিক ও মানবসম্পদ বিভাগগুলোকে প্রবাসী কর্মীদের জমা দেওয়া তথ্য এবং সনদ যাচাই করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, সৌদি আরব ইকামা (বাসস্থানের অনুমতি) নবায়ন ও এক্সিট-রিএন্ট্রি ভিসা বাড়ানোর নিয়মও হালনাগাদ করেছে।

আরো পড়ুন:

অর্থ উপদেষ্টা সৌদি আরব যাচ্ছেন শনিবার 

ভারী বৃষ্টিতে মক্কা-মদিনায় বন্যা

ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, সৌদি আরবে বাংলাদেশি কর্মীদের পর দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রবাসী গোষ্ঠী ভারতীয়। বর্তমানে দেশটিতে ২৪ লাখেরও বেশি ভারতীয় কাজ করছেন। যার মধ্যে বেসরকারি খাতে ১ লাখ ৬৪ হাজার কর্মী এবং ৭ লাখ ৮৫ হাজার গৃহকর্মী রয়েছেন। 

ভারতীয় কর্মীরা সৌদি আরবের শ্রমবাজারের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তবে, ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে যে, আবেদনকারীদের যাচাই করার জন্য ভারতে পর্যাপ্ত পরীক্ষা কেন্দ্র নেই।

সৌদি আরবের ভিশন ২০৩০ অনুযায়ী, নিয়োগের মান উন্নয়নে দক্ষ প্রবাসী প্রতিভা আকর্ষণের লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। এর ফলে, নিয়োগ প্রক্রিয়া আরো উন্নত হবে। 

ঢাকা/ফিরোজ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স দ আরব

এছাড়াও পড়ুন:

আক্রমণের মুখে পাকিস্তানি বাহিনী পালিয়ে যায়

লক্ষ্মীপুরের ইতিহাসে এক গৌরবময় দিন ৪ ডিসেম্বর। ১৯৭১ সালের এই দিনে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণের মুখে পাকিস্তানি বাহিনী কৌশলে পালিয়ে যায়। লক্ষ্মীপুর সদরের অবরুদ্ধ মানুষ পায় মুক্তির স্বাদ, বিজয়ের আনন্দ।

পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে এই জেলায় প্রথম প্রতিরোধ গড়ে ওঠে এপ্রিল মাসে। বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি প্রকাশিত বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ (নবম খণ্ড) বইয়ে বলা হয়েছে, শত্রুবাহিনী যেন লক্ষ্মীপুর সদরে ঢুকতে না পারে, সে জন্য স্বাধীনতাকামী জনগণ ও মুক্তিযোদ্ধারা নোয়াখালীর চৌমুহনী থেকে লক্ষ্মীপুর সদর পর্যন্ত প্রধান সড়কের মাদাম ব্রিজ, মন্দারী বাজার ব্রিজ ও চন্দ্রগঞ্জের পশ্চিম বাজার ব্রিজ ভেঙে প্রাথমিক প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। সেই স্মৃতি হিসেবে মাদাম ব্রিজের পিলারগুলো এখনো দাঁড়িয়ে আছে।

বইটিতে উল্লেখ আছে, পাকিস্তানি বাহিনী ২৫ এপ্রিল লক্ষ্মীপুর সদরে ঢুকে বাজারডিতে সার্কেল অফিসারের কার্যালয় ও বাসভবনে প্রধান ক্যাম্প স্থাপন করে। ওই দিনই মজপুর গ্রামে হামলা চালায় এবং ৩৫ জনকে হত্যা করে। লক্ষ্মীপুরের ইতিহাসে এ ঘটনা ‘মজপুর গণহত্যা’ নামে পরিচিত। পরে তারা লক্ষ্মীপুর সদরের বাজারের বটু চৌধুরীর বাড়ি, দালাল বাজার হাইস্কুল, মান্দারী হাইস্কুল, বাজারের বড় মসজিদ, প্রবণাতন হাইস্কুল, পেয়ারাপুর, মজপুর ও আলমপুরে সাব–ক্যাম্প স্থাপন করে।

লক্ষ্মীপুর সদরে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পাকিস্তানি বাহিনীর বেশ কয়েকটি যুদ্ধ হয়। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো দালাল বাজার রাজাকার ক্যাম্প অপারেশন, মান্দারী বাজার রাজাকার ক্যাম্প অপারেশন, প্রতাপগঞ্জ হাইস্কুল আক্রমণ, বড়ালিয়া অপারেশন ইত্যাদি। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রকাশিত মুক্তিযুদ্ধে সামরিক অভিযান (দ্বিতীয় খণ্ড) বইয়ে এমন ১৭টি সম্মুখযুদ্ধের তথ্য দেওয়া আছে।

৩ ডিসেম্বর গভীর রাতে পাকিস্তানি বাহিনী ক্যাম্পে রাজাকারদের রেখে কৌশলে নোয়াখালীর চৌমুহনীর দিকে পালিয়ে যায়। ৪ ডিসেম্বর সকালে সেই খবর ছড়িয়ে পড়তেই মুক্তির আনন্দে উল্লাসে ফেটে পড়েন লক্ষ্মীপুরের মানুষ।

নভেম্বরের দিকে সম্মুখযুদ্ধ বাড়তে থাকে। সেই সময়ের স্মৃতিচারণা করে স্থানীয় দুই বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহবুবুল আলম ও খোরশেদ আলম পাটোয়ারী (ফিরোজ) প্রথম আলোকে বলেন, নভেম্বর থেকেই পাকিস্তানি বাহিনী ক্রমে কোণঠাসা হয়ে পড়ছিল। সীমিত চলাফেরা করত। অবস্থান ছিল শুধু বাগবাড়ির মাদাম ও থানার ক্যাম্পে। ২ ডিসেম্বর রাতে বীর মুক্তিযোদ্ধারা রফিকুল হায়দার চৌধুরী, আক্তারুজ্জামান ও সুবেদার আবদুল মতিনের নেতৃত্বে পাকিস্তানি বাহিনীর দুই ক্যাম্প ঘিরে ফেলেন। ৩ ডিসেম্বর ভোরের আলো ফুটতেই পাকিস্তানি বাহিনীকে আত্মসমর্পণের আহ্বান জানানো হয়। কিন্তু তারা আত্মসমর্পণে রাজি হয়নি। তারপর শুরু হয় সম্মুখযুদ্ধ। সেদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত টানা বন্দুকের শব্দ, মর্টারের বিস্ফোরণ আর আকাশজুড়ে কালো ধোঁয়া ছিল।

ওই বিকেলে অভূতপূর্ব এক দৃশ্য দেখা যায় লক্ষ্মীপুরে। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পাশে দাঁড়াতে এলাকার হাজার হাজার মানুষ মিছিল নিয়ে রাস্তায় নেমে আসেন। হাতে লাঠি, বাঁশ, কাস্তে—যা পেয়েছেন, তা নিয়েই ছুটে এসেছেন তাঁরা। মনে হচ্ছিল, আর কোনো শক্তিই বিজয় আটকে রাখতে পারবে না।

হয়েছিলও তা–ই। ৩ ডিসেম্বর গভীর রাতে পাকিস্তানি বাহিনী ক্যাম্পে রাজাকারদের রেখে কৌশলে নোয়াখালীর চৌমুহনীর দিকে পালিয়ে যায়। ৪ ডিসেম্বর সকালে সেই খবর ছড়িয়ে পড়তেই মুক্তির আনন্দে উল্লাসে ফেটে পড়েন লক্ষ্মীপুরের মানুষ। মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে আত্মসমর্পণ করে রাজাকাররা।

মাহবুবুল আলম ও খোরশেদ আলম সেই সময়কার লড়াই ও বিজয়ের কথা বলার পাশাপাশি একটি বেদনার কথাও জানান। সেটি হলো জেলার রাজাকার কমান্ডার আবদুল হাইয়ের নেতৃত্বে ওই দিন রাতে মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালানো হয়। তখন মুক্তিযোদ্ধা আবু সাঈদ মারা যান। আহত হন আরও তিনজন। এভাবেই আনন্দ–বেদনায় রচিত হয় বিজয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ