জেনেভা ক্যাম্পে বিশেষ অভিযানে গ্রেপ্তার ২৩
Published: 22nd, January 2025 GMT
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্প এলাকায় বিশেষ অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন অপরাধে জড়িত ২৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত সোমবার দুপুর ১২টা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত এ অভিযান চালানো হয়। গতকাল মঙ্গলবার গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানায় ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগ।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার ইবনে মিজানের নেতৃত্বে বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার, মোহাম্মদপুর জোনের সহকারী কমিশনার, সহকারী কমিশনার (প্যাট্রল), মোহাম্মদপুর থানার ওসি, পিআই, পরিদর্শক (তদন্ত) ও মোহাম্মদপুর থানার চৌকস দল এই বিশেষ অভিযান চালায়। এ সময় গ্রেপ্তারদের কাছে অবৈধ মাদকদ্রব্য ও দেশীয় অস্ত্র পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে রয়েছে মাদক কারবারি, ছিনতাইকারী, সন্ত্রাসী ও মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ম হ ম মদপ র
এছাড়াও পড়ুন:
সমাজে শুধু একটা বয়ানই থাকবে, এটা সমস্যার
সমাজে শুধু একটা বয়ানই থাকবে—এটা সব সময়ই একটা সমস্যাজনক পথ। কারণ, নানা ধরনের মানুষ আছেন, তাঁদের নানা ধরনের মত ও ধারণা রয়েছে। সেই ধারণাগুলোর প্রতি অবশ্যই শ্রদ্ধা থাকতে হবে। কোনো চিন্তা যদি কারও চিন্তার সঙ্গে না মেলে, শুধু একটি চিন্তা হওয়ার কারণে সেটাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা যাবে না। মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধ করতে হলে সমাজের মানসিকতা এবং সংস্কৃতিতেও পরিবর্তন আসতে হবে।
আজ বুধবার সকালে রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় অংশ নিয়ে বিশিষ্টজনেরা এসব কথা বলেছেন। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি (এইচআরএসএস) ও বাংলাদেশে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় যৌথভাবে এ আয়োজন করে।
আলোচনায় অংশ নিয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার দপ্তরের (ওএইচসিএইচআর) ঢাকা কার্যালয়ের প্রধান হুমা খান বলেন, ‘শুধু একটা বয়ানই থাকবে—এটা সব সময়ই একটা সমস্যাজনক পথ। কারণ, নানা ধরনের মানুষ আছেন, তাঁদের নানা ধরনের মত ও ধারণা রয়েছে। সেই ধারণাগুলোর প্রতি অবশ্যই শ্রদ্ধা থাকতে হবে। কোনো চিন্তা যদি আমার নিজের চিন্তার সঙ্গে না মেলে, শুধু একটি চিন্তা হওয়ার কারণে সেটাকে অপরাধ হিসেবে ঘোষণা করা যাবে না।’
সাংবাদিকদের সুরক্ষা নিশ্চিতের পাশাপাশি কোনো ব্যক্তি, সম্প্রদায় বা পক্ষকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে—এমন বক্তব৵কেও নিয়ন্ত্রণ করার আহ্বান জানান হুমা খান। ডিজিটাল পরিমণ্ডলে মতপার্থক্যের ক্ষেত্রে পারস্পরিক শ্রদ্ধার অভাবের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘শত বছর ধরে আমরা যে সংস্কৃতি তৈরি করেছি, এগুলো সেই সংস্কৃতিরই প্রতিফলন। এই সংস্কৃতির পরিবর্তন প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে সংস্কারপ্রক্রিয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।’
মব সহিংসতাকে ‘উদ্বেগজনক প্রবণতা’ হিসেবে উল্লেখ করেন হুমা খান। তিনি বলেন, ‘বিগত বছরগুলোতে তৈরি হওয়া “জোর যার মুল্লুক তার” মানসিকতার কারণে অগণতান্ত্রিক ও মানবাধিকারসম্মত নয়, এমন উপায়ে ফল অর্জনের একটা মানসিকতা সমাজে তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে আমাদের যৌক্তিক চিন্তা ও ভঙ্গি প্রয়োজন।’
‘আগামীতে দিনের ভোট রাতে দেখতে চাই না’আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। তিনি বলেন, জুলাই বিপ্লবের পর একটি গুমের ঘটনারও খবর আসেনি। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঘটনার খবরও খুবই কম এসেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মিথ্যা মামলা উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘আগামী দিনে এই বাংলাদেশে আমরা দিনের ভোট রাতে হতে দেখতে চাই না। আমরা চাই না এই দেশে কোনো মৃত মানুষ কবর থেকে উঠে এসে আগের রাতে ভোট দিয়ে চলে যাবে। আমরা চাই না আর কোনো সজলকে পুড়িয়ে হত্যা করা হোক, আর কোনো মুগ্ধকে গুলি করে হত্যা করা হোক, আর কোনো আবু সাঈদকে জীবন দিয়ে মানুষকে মুক্ত করতে হোক। আমরা চাই না ১০ বছরের শিশু আনাস মাকে চিঠি লিখে বিপ্লবে ঝাঁপিয়ে পড়ুক। আমরা মনে করি, এনাফ ইজ এনাফ।’
সুস্থ জায়গায় যাওয়া যাবে কি না, বলা যাচ্ছে নাগত ১৩-১৪ মাসের মানবাধিকার পরিস্থিতির দিকে নজর রেখেছেন অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের সদস্য ও এইচআরএসএসের প্রধান উপদেষ্টা মো. নূর খান লিটন। অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় “ক্রসফায়ারের” নামে হত্যাকাণ্ড অথবা গুমের যে সংস্কৃতি চালু হয়েছিল, সেই জায়গা থেকে আমরা সরে এসেছি এটা সত্য। কিন্তু এখনো মানুষের লাশ নদীতে ভাসে।’
জুলাই অভ্যুত্থানের পর বিভাজন, একে অপরের প্রতি দোষারোপ করা, সবার সফলতার দাবি, দলবাজি এবং বিভক্তির কথা উল্লেখ করে নূর খান বলেন, ‘দুর্ভাগ্যজনক যে আমরা ইনক্লুসিভের (অন্তর্ভুক্তি) জায়গায় এক্সক্লুসিভের (অন্তর্ভুক্তিমূলক নয় এমন) জায়গায় চলে যাচ্ছি।...আজকে যে জায়গাটায় এসেছে, সেখানে দাঁড়িয়ে এটা বলার কোনো সাহস আমার নেই যে আগামী দিনে আমরা একটি সুস্থ অবস্থায় যেতে পারব।...নির্বাচন সামনে রেখে যে ভয়াবহতার আলামত আমাদের সামনে আসছে, সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে আমার একটা সম্ভাবনাময় আগামীর কথা বলার সাহস নেই।’
আর কোনো সন্তান যেন ঝরে না যায়জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদ পরিবারের সদস্য এবং আহত ব্যক্তিরাও আলোচনায় অংশ নেন। শহীদ শাহরিয়ার খান আনাসের মা সানজিদা খান দীপ্তি কাঁদতে কাঁদতে বলেন, সবার কাছে অনুরোধ, বাংলাদেশটাকে এমনভাবে তৈরি করতে হবে, যেখানে কোনো মানবাধিকার লঙ্ঘিত হবে না। শহীদদের রক্ত যেন বৃথা না যায়, সে জন্য সবাইকে মানবাধিকার নিয়ে সচেতন থাকতে হবে।
শহীদ সাজ্জাদ হোসেন সজলের মা মোসা. শাহীনা বেগম বলেন, ‘আমার সন্তানকে জীবন্ত অবস্থায় পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে। আর কোনো সন্তান যেন মায়ের বুক থেকে ঝরে না যায়। সবাই মিলে দেশকে সেভাবে সুন্দর করে গড়ে তুলতে হবে।’
মানবাধিকার লঙ্ঘনের ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর জন্য সরকার যাতে একটি তহবিল গঠন করে ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করে, সেই দাবি জানান ২০১৪ সালে পুলিশি নির্যাতনে হত্যার শিকার ইশতিয়াক হোসেন জনির ছোট ভাই ইমতিয়াজ হোসেন।
এইচআরএসএসের চেয়ারপারসন মোহাম্মদ শাহজাদা আলামিন আয়োজনে সভাপতিত্ব করেন। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে ঢাকায় জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারীর কার্যালয়ের মানবাধিকার কর্মকর্তা মো. জাহিদ হোসেন, শহীদ সামিউ আমান নূরের বাবা আমান উল্লাহ, অভ্যুত্থানে আহত মিয়া মোহাম্মদ কাজল, এইচআরএসএসের নির্বাহী পরিচালক ইজাজুল ইসলাম, আওয়ামী লীগ আমলে গুমের শিকার ইসরাত জাহান মৌ প্রমুখ বক্তব্য দেন।