চুনারুঘাটের অন্তত ১০টি ইউনিয়নে রীতিমতো তাণ্ডব চালাচ্ছে অবৈধ বালু উত্তোলনকারীরা। এর মধ্যে শানখলা ইউনিয়নের পানছড়ি ইকো রিসোর্ট-সংলগ্ন স্থানসহ কালিনগরের গাধাছড়ায় পাহাড় ও টিলা কেটে সাবাড় করছে চক্রটি।
এ অঞ্চলে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের প্রতিযোগিতায় মেতেছে বালু ব্যবসায়ীদের একাধিক চক্র। প্রশাসনের অভিযানেও লাগাম টানা যাচ্ছে না তাদের বেপরোয়া কর্মকাণ্ডের। টিলা ও পাহাড় ছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন এলাকার বাগান, ছড়া, খাল ও নদী থেকেও বেপরোয়াভাবে বালু উত্তোলন করছে অবৈধ বালু ও মাটি ব্যবসায়ীরা। 
প্রায় প্রতিদিনই উপজেলার বিভিন্ন নদী, খাল ও ছড়া থেকে শক্তিশালী ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করছে চক্রের সদস্যরা। সেই সঙ্গে টিলা ও পাহাড়ি বনাঞ্চলও ধ্বংস করছে তারা। যেসব স্থান থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে, সেখানকার রাস্তাঘাট, ফসলি জমিসহ প্রাকৃতিক পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ড্রেজার মেশিন ও বালু পরিবহনে ব্যবহৃত ডাম্প ট্রাক ও ট্রাক্টরের বিকট শব্দে এলাকাবাসী অতিষ্ঠ। যেখানে সেখানে বালু উত্তোলন করায় পথঘাট নষ্ট হচ্ছে। এ অবৈধ বালু ব্যবসা চলছে প্রভাবশালীদের ছত্রচ্ছায়ায়। যার কারণে স্থানীয়রা প্রতিবাদও জানাতে পারে না।
উপজেলার বিভিন্ন নদী-খাল-ছড়া থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। ফসলি জমির টপ সয়েল কেটে নেওয়া হচ্ছে এসব চক্রের মাধ্যমে। স্থানীয়রা বলছেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) এক জায়গায় বালু তোলা বন্ধ করলে চক্রের সদস্যরা অন্য জায়গায় বালু তোলা শুরু করে। বালু উত্তোলন বন্ধে অভিযান চালিয়ে সরঞ্জাম জব্দ করা হলেও উত্তোলন করা বালু বিক্রিতে বাধা দেওয়া হচ্ছে না।
স্থানীয়দের অভিযোগ, অবাধে বালু উত্তোলনের ফলে পানছড়ি ও গাধাছড়ার বিভিন্ন এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিভিন্ন স্থানে বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়ে গেছে। এদের মধ্যে সম্প্রতি সবচেয়ে ভয়াবহ হয়ে উঠেছে পাহাড় কেটে বালু সংগ্রহকারী চক্রটি। এ ঘটনায় সম্প্রতি অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে হবিগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তর। এরপরেও থেমে নেই পাহাড় খুবলে খাওয়ার প্রতিযোগিতা। গত বছরের ১৩ নভেম্বর চুনারুঘাট থানায় করা মামলায় চক্রের বেশ কয়েকজন সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে জামিনে বের হয়ে এসে আবারও তারা একই কাজে লিপ্ত হন।
বালু ব্যবসায়ীদের অভিনব কায়দায় টিলা কেটে বালুতে রূপান্তরিত করার প্রক্রিয়া চোখে পড়ার মতো। তারা প্রথমে মেশিনের সাহায্যে পানির চাপ দিয়ে টিলার নিচের অংশ পানিতে নিমজ্জিত করে। এক পর্যায়ে নিচের অংশ থেকে ধীরে ধীরে মাটি সরে গিয়ে টিলার উপরিভাগ থেকে গড়িয়ে সৃষ্ট গর্তের মতো অংশে পুরো টিলা ধসে পড়ে। পরে সেই পানির মধ্যে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালুতে রূপান্তরিত করা হয়। এভাবে এলাকাজুড়ে অন্তত ২০ থেকে ২৫টি শ্যালো মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে টিলা ধসিয়ে বালু সংগ্রহ করা হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, স্থানীয় এক বালু উত্তোলনকারী শ্রমিক জানান, ওই এলাকার আমজত উল্লার নেতৃত্বে ২০ থেকে ২৫ জনের একটি দল বালু তোলার কাজ করছেন। উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন শ্যালো মেশিন চালানো হচ্ছে টিলার বুকে; দিন-রাত চলে বালু তোলার কাজ। ডাম্প ট্রাকসহ ভারী মালবাহী যানবাহনে করে এসব বালু পরিবহন করা হচ্ছে বিভিন্ন স্থানে।
একটি স্থানে কর্মরত শ্রমিকদের একাংশ জানান, শতাধিক শ্রমিক ছোটখাটো শিল্প কারখানার মতোই বালু তোলার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। পাহাড় ও টিলা কেটে বালু উত্তোলনের সেগুলো স্তূপ করে রাখা হচ্ছে আরেক টিলায়। কেউ কেউ আবার ডাম্প ট্রাক কিংবা ট্রাক্টরে আনলোড করছেন মালপত্র। প্রায় ২০ থেকে ২৫টি নিষিদ্ধ ড্রেজার মেশিন ব্যবহার করে পাহাড়ের ১০ থেকে ১৫টি স্পটে চলছে বালু তোলার কাজ। পাহাড়ি ছড়ার পানি সেচ দিয়ে শ্রমিকরা এসব স্পট থেকে বালু তুলছেন। এভাবে দৈনিক কয়েক লাখ টাকার বালু সংগ্রহ করা হচ্ছে পাহাড়ি টিলা কেটে। এ বিষয়ে জালাল নামে এক ব্যক্তি জানান, বালু উত্তোলনের কাজ করে সংসারের খরচ চালান তারা। এর বেশি কিছু জানেন না। অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় তহশিলদার এবং বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিদের সম্পৃক্ততায় গড়ে উঠেছে বালুখেকোদের এ চক্র। নামসর্বস্ব একাধিক সংবাদমাধ্যমের সাংবাদিকরাও রয়েছেন তাদের চক্রে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, বালুখেকো চক্র লালচান্দ চা বাগানের বিভিন্ন ছড়া থেকে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন করে পাচার করছে দীর্ঘদিন ধরে। দৈনিক কমপক্ষে ১৫ থেকে ২৫ ট্রাক্টর বালু পাচার হয় ওই বাগান থেকে। বাগানের ভুলকিছড়া, কাঁঠালবাড়ি, শাহজিবাজার টিলাসহ বিভিন্ন ছড়া থেকে বালু উত্তোলন করে বিক্রির জন্য নির্ধারিত স্থানে নিয়ে আসা হয়। পরে সেখান থেকে ট্রাক্টরযোগে বালু পাঠানো হয় নির্ধারিত গন্তব্যে। অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন করায় বাগানের পরিবেশ বিপন্ন। সেই সঙ্গে সেখানকার স্থানীয় সড়ক ব্যবস্থা প্রায় ভেঙে পড়েছে। একইভাবে বিভিন্ন বাগানের ভেতরে থাকা টিলাগুলোও কেটে নেওয়া হচ্ছে। ছড়া থেকে বালু উত্তোলন হলে টিলাগুলো ধীরে ধীরে ধসে যাচ্ছে। পরে সেখান থেকেও বালু সংগ্রহ করা হচ্ছে।
উপজেলার শানখলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম জানান, অপরিকল্পিত বালু উত্তোলনের ফলে ব্রিজ ও রাস্তার ক্ষতি হচ্ছে। বিষয়টি প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। চা বাগান ব্যবস্থাপক মোফাজ্জল হোসেন জানান, বালু চুরি বন্ধে তিনি কঠোর অবস্থানে রয়েছেন। বাগানের চৌকিদারদের দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল জানান, চা বাগানের ভেতর থেকে বালু উত্তোলন বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। চুনারুঘাট উপজেলা ভূমি সহকারী কমিশনার মাহবুব আলম মাহবুব জানান, জায়গাটি দূরবর্তী হওয়ায় অভিযান পরিচালনায় সমস্যা হচ্ছে। তা ছাড়া পুলিশে জনবল সংকট থাকা ও নজরদারি করা যাচ্ছে যথাযথভাবে।
স্থানীয়দের ক্ষোভ, বালুবাহী ডাম্প ট্রাক চলতে চলতে রাস্তাঘাট ধ্বংস হয়ে গেছে। বছরের পর বছর ধরে নির্বিচারে ধ্বংস করা হচ্ছে টিলা ও পাহাড়ি বনাঞ্চল। এই বালু উত্তোলন একটা সিন্ডিকেটে যারা কাজ করছে তারা প্রতিদিন শতাধিক ট্রাক বালু পাচার করছে। প্রশাসন অভিযান পরিচালনা করলেও মূল হোতাদের নাগাল কখনোই কেন পায় না, এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। দুর্গম পাহাড় কেটে যে রাস্তা করছে, তা বন্ধ করে দিয়ে সিলগালা করে দিতে হবে।
ইউএনও রবিন মিয়া জানান, অভিযানে এরই মধ্যে জেল-জরিমানা করা হয়েছে। অবৈধ বালু উত্তোলন ও মাটি কাটার বিরুদ্ধে একের পর এক মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে। উপজেলাজুড়ে অভিযান চলমান। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: উপজ ল র ব ভ ন ন অব ধ ব ল পর ব শ ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

৩০ হাজার টাকায় সেরা স্মার্টফোন, কিনবেন কীভাবে

জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে গেছে স্মার্টফোন। কারণ, স্মার্টফোনে প্রয়োজনীয় অনেক কাজ করা যায়। ছবি থেকে ভিডিও এডিটিংসহ সব ধরনের যোগাযোগ, বিনোদন, শিক্ষা ও পেশাগত কাজে স্মার্টফোনের ব্যবহার বেড়েছে। ৩০ হাজার টাকার মধ্যে ভালো ব্র্যান্ডের স্মার্টফোন পাওয়া যায়।

এ ধরনের স্মার্টফোন কেনার আগে ব্যবহারকারীরা এর ব্যাটারি, ক্যামেরা, ডিসপ্লে, প্রসেসরসহ বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য দেখে কেনেন। দেশের বাজারে ৩০ হাজার টাকার মধ্যে স্যামসাং, হুয়াওয়ে, অনর, নকিয়া, মটোরোলা, আইকিউ, রেডমি, রিয়েলমি, অপো, ভিভো, ইনফিনিক্স, নাথিং ফোনসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের স্মার্টফোন পাওয়া যায়।

কেনার আগে যা ভাবা দরকার

ভালো ফোন কেনার জন্য প্রথমেই নিজের বাজেট ঠিক করা দরকার। এর পাশাপাশি ফোনটি মূলত কোন কাজে বেশি ব্যবহার হবে, তা–ও চিন্তা করতে হবে। যেমন কেউ যদি ছবি তুলতে চান, তাহলে ভালো ক্যামেরা দরকার, কেউ গেমস খেলতে চাইলে শক্তিশালী প্রসেসর ও র‍্যাম প্রয়োজন। আর কেউ যদি দৈনন্দিন ব্যবহারের জন্য কিনতে চান, তাঁর প্রয়োজন ভালো ব্যাটারি ও ডিসপ্লে।

বাজেট অনুযায়ী, বাজারে বিভিন্ন ব্র্যান্ড ও মডেলের ফোন পাওয়া যায়। তাই কয়েকটি ফোনের বৈশিষ্ট্য ও মূল্য তুলনা করে দেখাই বুদ্ধিমানের কাজ। ফোন কেনার আগে ইউটিউব রিভিউ, টেক ব্লগ ও ব্যবহারকারীদের মতামত খতিয়ে দেখা উচিত। এর ফলে সেই ফোনের বাস্তব ব্যবহারিক দিক জানা যায়। এ ছাড়া ফোনের আসল বা নকল হওয়া যাচাই করার জন্য আইএমইআই (IMEI) নম্বর যাচাই করা জরুরি। এর সঙ্গে অফিশিয়াল ওয়ারেন্টি ও বিক্রয়োত্তর সেবা পাওয়া যায় কি না, তা নিশ্চিত করতে হবে।

ফোন কেনার সময় বিশ্বস্ত শোরুম বা অফিশিয়াল অনলাইন স্টোর থেকে কেনা উত্তম। এর ফলে বিক্রয়োত্তর সেবা যেন সহজে পাওয়া যায়, তা নিশ্চিত করলে ফোন ব্যবহারে ঝামেলা কম হবে।

বাজেটের মধ্যে যেসব ব্র্যান্ড

বাজারে এই বাজেটে স্যামসাং, শাওমি, রিয়েলমি ইত্যাদির বেশ কিছু মডেল রয়েছে। তবে সফটওয়্যার আপডেটের নিশ্চয়তা, ব্যাটারির ক্ষমতা, প্রসেসরের পারফরম্যান্স ও বিক্রয়োত্তর সেবা—এসব দিক বিবেচনায় স্যামসাং গ্যালাক্সি এ১৬ ৫জি, অনর এক্স ৮সি, ভিভো ভি৫০ লাইট ৪জি, শাওমি রেডমি নোট ১৪ প্রো ৪জি, অপো এ৫ প্রো, নাথিং সিএমএফ ফোন ২ প্রো, স্যামসাং গ্যালাক্সি এ২৬, ভিভো ওয়াই ৩৫, রিয়েলমি নারজো ৬০ ৫জি, স্যামসাং গ্যালাক্সি এম ১৪ ৫জি, শাওমি রেডমি নোট ১২ ও মটোরোলা মটো জি৭৩ ৫জিসহ বেশ কয়েকটি ফোন পাওয়া যায়।

ফোনের মধ্যে যত পার্থক্য

স্মার্টফোন কেনার ক্ষেত্রে ‘অফিশিয়াল’ও ‘আনঅফিশিয়াল’ ফোনের মধ্যে পার্থক্য বুঝে নেওয়া জরুরি। অফিশিয়াল ফোন সাধারণত ব্র্যান্ডের নিজস্ব শোরুম বা অনুমোদিত ডিলারের কাছে পাওয়া যায়। যেখানে ফোনের সঙ্গে এক বছর কিংবা তার বেশি ওয়ারেন্টি ও বিক্রয়োত্তর সেবা পাওয়া যায়। অন্যদিকে আনঅফিশিয়াল ফোন মূলত বিভিন্ন মাধ্যমে শুল্ক–কর ফাঁকি দিয়ে দেশে আসে। আনঅফিশিয়াল ফোন তুলনায় দাম কম হলেও এতে ব্র্যান্ডের অফিশিয়াল ওয়ারেন্টির মতো সুবিধা পাওয়া যায় না।

বর্তমানে দেশের বিভিন্ন ই–কমার্স প্ল্যাটফর্ম, যেমন দারাজ, পিকাবো, স্টার টেক ও গ্যাজেট অ্যান্ড গিয়ার বিভিন্ন উৎসবে ও বিশেষ ক্যাম্পেইনের সময়ে ছাড়, ক্যাশব্যাক ও বিশেষ অফার থাকে। এ ছাড়া নির্দিষ্ট ব্যাংকের কার্ড ব্যবহার করলে অতিরিক্ত ছাড় বা কিস্তিতে কেনার সুবিধা (ইএমআই) পাওয়া যায়।

বিক্রয়োত্তর সেবা

স্যামসাং দেশের প্রায় সব বড় শহরে উন্নত সার্ভিস সেন্টার ও গ্রাহক সেবা দিয়ে থাকে। এ ছাড়া শাওমি ও রিয়েলমির নিজস্ব সার্ভিস সেন্টার রয়েছে। অফিশিয়াল ফোনে ব্র্যান্ডের এক বছরের ওয়ারেন্টি থাকে, যা সার্ভিস সেন্টারে কার্যকর হয়। যেখানে আনঅফিশিয়াল ফোনে সাধারণত বিক্রেতার দেওয়া ৭ থেকে ১৫ দিনের প্রতিস্থাপন ওয়ারেন্টি বা সীমিত সার্ভিস ওয়ারেন্টি পাওয়া যায়। বাজারের দাম, অফার ও বিক্রয়োত্তর সেবা ভালোভাবে যাচাই করলে ৩০ হাজার টাকার মধ্যে সাশ্রয়ী দামে ভালো ফোন পাওয়া সম্ভব।

সম্পর্কিত নিবন্ধ