মাদারীপুরে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে আওয়ামী লীগের ৫০ জনের নামে মামলা, গ্রেপ্তার ১
Published: 17th, November 2025 GMT
মাদারীপুরে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে আওয়ামী লীগের ৫০ জনের নামে মামলা, গ্রেপ্তার ১
মাদারীপুরে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে গাছ ফেলে অবরোধ কর্মসূচি পালনের ঘটনায় কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ৫০ জন নেতা–কার্মীর নামে একটি মামলা করা হয়েছে। গতকাল রোববার সন্ধ্যায় কালকিনি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবু তালেব বাদী হয়ে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলাটি করেন।
এই মামলায় আওয়ামী লীগের এক নেতাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। তাঁর নাম মহিউদ্দিন হাওলাদার (৪৫)। তিনি কালকিনি পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহসভাপতি।
কালকিনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার মোহাম্মদ সোহেল রানা প্রথম আলোকে বলেন, কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের লোকজন মহাসড়কে অবরোধ কর্মসূচি পালন করায় তাঁদের বিরুদ্ধে পুলিশ বাদী হয়ে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একটি মামলা করেছে। কর্মসূচিতে নেতৃত্বে দেওয়া নেতা–কর্মীদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এজাহারভুক্ত ৫০ জনকে আসামি করে অন্যদের গং হিসেবে ধরা হয়েছে। এ মামলায় পুলিশ অভিযান চালিয়ে এক আওয়ামী লীগ নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে। অন্যদের ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
গতকাল সকাল সাড়ে ৬টার দিকে অনলাইনে ঘোষিত আওয়ামী লীগের শাটডাউন কর্মসূচি বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে গোপালপুর এলাকায় একাধিক গাছ ফেলে অবরোধ করা হয়। এ সময় মহাসড়কে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভও করেন দলের নেতা–কর্মীরা। একটি বিক্ষোভ মিছিলও বের করা হয়। প্রায় চার ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর সকাল সাড়ে ৯টায় কালকিনি ও ডাসার থানার পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস আন্দোলনকারীদের সড়ক থেকে সরিয়ে দেয় এবং যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
আরও পড়ুনমাদারীপুরে মহাসড়কে গাছ ফেলে অবরোধ, চার ঘণ্টার পর চলাচল স্বাভাবিক২০ ঘণ্টা আগেপুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভোর থেকে গোপালপুর বাসস্ট্যান্ডের উত্তর পাশে জড়ো হন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। পরে যন্ত্র দিয়ে ১০ থেকে ১২টি গাছ কেটে মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে ফেলে রাখেন তাঁরা। এ ঘটনায় উভয় পাশে দীর্ঘ যানজট তৈরি হয়। দূরপাল্লার যাত্রী ও চালকদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এ সময় টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন নেতা-কর্মীরা এবং নানা স্লোগান দেন।
শাটডাউন কর্মসূচির নেতৃত্ব দেন কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মীর গোলাম ফারুক ও কালকিনি পৌরসভা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পৌর মেয়র এনায়েত হোসেন হাওলাদার। মহাসড়কে একটি ভ্যান এনে সেটিকে মঞ্চের মতো সাজিয়ে তাঁরা দুজন বক্তব্য দেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ক লক ন আওয় ম অবর ধ ৫০ জন
এছাড়াও পড়ুন:
মারিয়া মান্দার লেখা: লড়ি মাঝমাঠে, লড়ি জীবনের মাঠেও
ধোবাউড়ার মন্দিরগোনা গ্রামে জন্ম আমার। আমি গারো সম্প্রদায়ের মেয়ে। গারোরা এমনিতেই অনগ্রসর। তবে গারো হিসেবে আমার ফুটবল ক্যারিয়ারে বাধা আসেনি। কেউ বলেনি যে ফুটবল খেলো না। আমার সম্প্রদায় নিরুৎসাহিত করেনি কখনো। তবে মেয়ে হিসেবে আমরা যে গ্রামাঞ্চলে খেলাধুলা করেছি, তাতে সমস্যায় পড়তে হয়েছে।
বলা হতো, গ্রামের মেয়েরা কেন ফুটবল খেলবে! তা-ও আবার হাফপ্যান্ট পরে! এটাই ছিল সবচেয়ে বড় বাধা। রক্ষণশীল সমাজ থেকে নিষেধ করা হতো ফুটবল খেলতে। বাধাটা পেয়েছি আদতে এলাকার কিছু মানুষের কাছ থেকে।
অনেকে আমার মাকে বলতেন, ‘মেয়েকে খেলতে দিয়েছেন, এটা ভালো না।’ অভিভাবকেরা মেয়েদের নিষেধ করতেন ফুটবল খেলতে। বলা হতো, মেয়েরা ফুটবল খেলতে পারবে না।
বাধা পেরিয়েতারপরও কলসিন্দুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কোচ মফিজ উদ্দিন স্যার থেমে থাকেননি। সঙ্গে ছিলেন মিনতি রানী শীল ম্যাডাম। সপ্তাহে এক দিন-দুই দিন অভিভাবকদের সভা ডাকতেন; বোঝাতেন, কেন মেয়েদের খেলার সুযোগ দেওয়া উচিত। তাঁদের নেতৃত্বে আমরা ছোটবেলা থেকেই ফুটবল-পাগল হয়ে উঠেছিলাম, বাধা দিলেও অনেকে লুকিয়ে খেলত। তবে খেলার জগতে আসতে পরিবার থেকে বাধার মুখে পড়তে হয়নি বলে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি।
তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময়ই বাবা বীরেন্দ্র মারাক মারা যান। তাঁর কোনো স্মৃতি আমার মনে নেই। ঘরে তাঁর কোনো ছবি নেই, চেহারাটাও মনে করতে পারি না। তাই বাবার স্নেহ কাকে বলে, তা ঠিক জানি না। বাবার মৃত্যুর পর আমাদের চার ভাইবোনকে একাই বড় করেছেন মা—এনতা মান্দা।
গারোরা ধান কাটা, ধন বোনার কাজই বেশি করেন। আমার মা-ও সেটাই করতেন। আমাদের লালন–পালনের জন্য প্রতিদিন যে পরিশ্রম তিনি করেছেন, সেটা সত্যিই অসাধারণ। ধান কাটার কাজ মানে দৈনিক মজুরি, আমাদের নিজের জমি ছিল না, অন্যের জমিতে কাজ করতেন মা। দিনে পেতেন মাত্র ২০০ টাকা। এই টাকায় সংসার চলত না। ঋণ করতে হতো। ছোটবেলা থেকে মা ঘামে, চোখের জলে এগিয়ে নিয়েছেন আমাদের। তাঁর সেই পরিশ্রম আর ত্যাগের মধ্যেই আমার শৈশব কেটেছে।
ময়মনসিংহের কলসিন্দুর গ্রামে নিজ বাড়ির উঠানে কিশোরী মারিয়া মান্দার অনুশীলন