বাংলাদেশ সীমান্তে বেড়া দেওয়ার বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছে ভারত। দেশটি জানিয়েছে, সীমান্ত এলাকা অপরাধমুক্ত করতেই বাংলাদেশ সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া হচ্ছে। সীমান্ত সুরক্ষিত করার ক্ষেত্রে বেড়া নির্মাণ গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা ব্যবস্থা বলে মনে করে দিল্লি। মঙ্গলবার দেশটির প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরোর (পিআইবি) সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা বলা হয়েছে। 

‘ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে বেড়া’ শীর্ষক শিরোনামের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দুই দেশের সীমান্তের মোট দৈর্ঘ্য ৪ হাজার ৯৬ দশমিক ৭ কিলোমিটার। এর মধ্যে ৩ হাজার ২৩২ দশমিক ২১৮ কিলোমিটার বেড়া দিয়ে সুরক্ষিত করা হয়েছে। সীমান্ত বেড়ার কার্যকারিতা ব্যাখ্যা করে বলা হয়, বেড়া তৈরির মাধ্যমে আন্তঃসীমান্ত অপরাধমূলক কার্যকলাপ, চোরাচালান ও অপরাধীদের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়। তা ছাড়া পাচার রোধের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে অপরাধমুক্ত সীমান্ত নিশ্চিত করা সহজ হয়। 

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশের সঙ্গে সব প্রটোকল ও চুক্তি মেনেই সীমান্তের নিরাপত্তা ব্যবস্থা, বেড়া নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে ভারত। এ বিষয় নিয়ে ঢাকাকে ইতোমধ্যে অবহিত করেছে দিল্লি। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মধ্যে সব সময় সহযোগিতামূলক দৃষ্টিভঙ্গি বজায় থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে।  

ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের ৮৬৪ দশমিক ৪৮২ কিলোমিটারে এখনও বেড়া নির্মাণ করা হয়নি বলে উল্লেখ করা হয়। এর মধ্যে ১৭৪ কিলোমিটারে বেড়া নির্মাণ করা অসম্ভব। কারণ এসব এলাকায় জমি অধিগ্রহণ নিয়ে সমস্যা আছে এবং কিছু এলাকায় জলাভূমি রয়েছে। তা ছাড়া কিছু এলাকায় বেড়া নির্মাণ নিয়ে বিজিবির রয়েছে ঘোর আপত্তি। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিত্যানন্দ রায় লোকসভায় উত্থাপিত এক প্রশ্নের লিখিত উত্তরে এসব তথ্য জানিয়েছিলেন বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। 
 

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

জোরজবরদস্তি করে সরকার এসব চুক্তি করছে

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান কাজ হলো একটু সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক রূপান্তর এগিয়ে নেওয়া। এ জন্য যে ধরনের সংস্কার দরকার, সেই সংস্কার নিশ্চিত করা। আর কয়েক মাস পর নির্বাচন। নির্বাচন ভালোমতো করার জন্য যা যা করা দরকার, সেটি করার জন্য এখন মনোযোগ দেওয়া দরকার। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য দরকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক করা। পাশাপাশি সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে নিরাপত্তাবোধ ফিরিয়ে আনা। অথচ এসব দিকে সরকারের মনোযোগ বা সক্রিয়তা দেখা যাচ্ছে না।

নির্বাচনের এসব বিষয়ে মনোযোগ না দিয়ে যেটিতে তাদের এখতিয়ার নেই, সেই দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতেই সরকারের যত আগ্রহ। রীতিমতো জোরজবরদস্তি করে সরকার এসব চুক্তি করছে। দেশের মানুষ, বিশেষজ্ঞ—কারও কথা না শুনে, জাতীয় স্বার্থ বিবেচনা না করে ভয় দেখিয়ে একের পর এক চুক্তি করছে সরকার।

একটা দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করার কোনো এখতিয়ার এ রকম অস্থায়ী সরকারের থাকে না। এসবের জন্য নির্বাচিত সরকার দরকার হয়। শুধু নির্বাচিত সরকারও এভাবে করতে পারে না। নির্বাচিত সরকার এ ধরনের চুক্তি করলে সেগুলো সংসদে তুলতে হবে, সেখানে তর্ক-বিতর্ক হবে, দেশের মানুষ জানবে। আর কয় মাস পর নির্বাচন। এই সময় সরকারের এই ধরনের চুক্তিতে এত আগ্রহ কেন? বন্দর নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি যদি দেশের উন্নয়নের জন্যই হয়, তাহলে এত গোপনীয়তা, অস্বচ্ছতা ও তাড়াহুড়া কেন?

চুক্তি নিয়ে এই সরকারের অতি আগ্রহ বড় সন্দেহের কারণ। মনে হচ্ছে বিদেশি কোম্পানির কিছু লবিস্ট এই সরকার চালাচ্ছে। তাদের কাজ হলো কোনো না কোনোভাবে বিদেশি কোম্পানির স্বার্থ রক্ষায় গোপনে অস্বচ্ছভাবে চুক্তি করে ফেলা। সেটা দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি, যাতে পরবর্তী কোনো সরকার এসে কিছু করতে না পারে। কিন্তু এই চুক্তির বোঝা বাংলাদেশের মানুষকে ভোগ করতে হবে বহু বছর।

গণ–অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জনগণের যে প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল, স্বচ্ছতা নিয়মনীতি মেনে কাজ হবে, তার প্রতি এটা বিশ্বাসঘাতকতা ছাড়া আর কিছু নয়। একই সঙ্গে যেসব রাজনৈতিক দল সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন সময় আলাপ-আলোচনা করছে, অথচ সরকারের জাতীয় স্বার্থবিরোধী তৎপরতা নিয়ে তারা যে নিশ্চুপ থাকল, সেটার দায়িত্বও তাদের নিতে হবে।

আমরা দেখেছি, এ রকম চুক্তির আগে সব সময় যুক্তি দেওয়া হয়, বিদেশি কোম্পানি বিশ্বের শ্রেষ্ঠ কোম্পানি। আবার মানুষের মধ্যে এই বোধ তৈরি করা হয় যে আমরা পারব না। আমাদের পক্ষে কিছুই সম্ভব নয়। বিদেশিরা এলে কাজ হবে। আবার আমরা থাকলে দুর্নীতি হবে। বিদেশিরা এলে দুর্নীতি হবে না। এই হীনম্মন্যতা তৈরি করে এবং তার ওপর ভর করে বিদেশি কোম্পানিকে সুবিধা দেওয়ার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরা হয়। বিদেশিদের পক্ষে বিজ্ঞাপনী প্রচার চালাতে থাকে তাদের সুবিধাভোগী দেশি লোকজন। কিন্তু বিদেশিরা এলে যে দুর্নীতি হবে না, সেটার নিশ্চয়তা কীভাবে দেওয়া হয়? আন্তর্জাতিকভাবে কি দুর্নীতি হয় না? চুক্তির আগে মাশুল যে বাড়ানো হলো, এটাও তো দুর্নীতির একটা ধরন।

বিদেশি কোম্পানি যে দক্ষ, আন্তর্জাতিক যে স্বীকৃতি, সেই কোম্পানিগুলো কিন্তু এমনিতেই গড়ে ওঠেনি। জাতীয় সক্ষমতার প্রক্রিয়ার মধ্যে গড়ে ওঠেছে এসব কোম্পানি। বাংলাদেশকেও জাতীয় সক্ষমতার ওপর দাঁড়াতে হবে। সে জন্য নিজেদের প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। একটা দেশ শক্তভাবে দাঁড়াতে পারে, যখন নিজের সক্ষমতা তৈরি হয়। এই সরকার দেশকে বিপন্ন করে তার উল্টো দিকে যাত্রা করছে।

লেখক পরিচয়: অর্থনীতিবিদ ও সম্পাদক, সর্বজনকথা

সম্পর্কিত নিবন্ধ