তিন দশক পর দিল্লির মসনদে বসছে বিজেপি
Published: 8th, February 2025 GMT
১৯৯৮ সালে শেষবার দিল্লির মসনদে ছিল বিজেপি। শেষ মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন সুষমা স্বরাজ। তারপর কংগ্রেস দিল্লির ক্ষমতা দখল করে। ২০১৩ সালে প্রথমবার ক্ষমতায় আসে আম আদমি পার্টি (আপ)। ১২ বছরেই মোহভঙ্গ দিল্লিবাসীর। রাজধানীতে হারল আম আদমি পার্টি। তিন দশকের খরা কাটিয়ে মোদির ম্যাজিকে দিল্লিতে গেরুয়া ঝড়ের দাপট। ২৭ বছর পর ২০২৫ সালে আবার ফিরতে চলেছে বিজেপি।
৫ ফেব্রুয়ারি দিল্লি বিধানসভা ভোটের পর সব এক্সিট পোল বা বুথফেরত জরিপে এগিয়ে রাখা হয়েছিল বিজেপিকে। কংগ্রেস লড়াইয়ে থাকলেও এবার দিল্লি ভোটে মূল প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল আপ ও বিজেপি। ৭০ আসনের দিল্লি বিধানসভায় লড়েছেন ৬৯৯ জন প্রার্থী। তার মধ্যে ৬০৩ জন পুরুষ ও ৯৬ জন নারী।
বুধবার দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে ভোট পড়েছিল ৬০ দশমিক ৫৪ শতাংশ। শনিবার গণনা শুরু হতেই বোঝা যায়, বুথফেরত জরিপের সমীক্ষাই সত্যি হতে চলেছে। গেরুয়া ঝড়ে নাস্তানাবুদ আপ। আর শূন্যের হ্যাট্রিক করল কংগ্রেস।
সর্বশেষ খবরে ৭০টি বিধানসভা আসনের মধ্যে ৪৮টি আসনে এগিয়ে মোদির বিজেপি। অন্যদিকে, গত ২০২০ সালে ৬২ আসনে জেতা কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টি মাত্র ২২টিতে এগিয়ে রয়েছে। কংগ্রেস এখনও পর্যন্ত সব আসনেই তৃতীয় স্থান দখলের চেষ্টায় দৌড়াচ্ছে।
চতুর্থ দফায় জয়লাভ করতে ব্যর্থ দিল্লির সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও আপ প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়াল। নয়াদিল্লি কেন্দ্র থেকে হেরে গেলেন তিনি। তাকে হারালেন বিজেপির প্রবেশ সিং। তাদের ভোটের ব্যবধান ৩ হাজার ১৮২। জঙ্গপুরা কেন্দ্রে হেরে গেলেন মণীশ সিসোদিয়াও। প্রায় ৬০০ ভোটে তিনি হারলেন বিজেপির তারবিন্দর সিংয়ের কাছে। হেরেছেন আপ নেতা সত্যেন্দ্র জৈনও। দিল্লির শকুর বস্তী কেন্দ্র থেকে সত্যেন্দ্র জৈনকে প্রায় ১৮ হাজার ভোটে হারিয়েছেন বিজেপির কর্নেল সিং। আম আদমি পার্টির আরেক বিখ্যাত নেতা সৌরভ ভরদ্বাজও ৩ হাজার ভোটের ব্যবধানে বিজেপির শিখা রায়ের কাছে হেরেছেন।
তবে কালকাজি কেন্দ্রে প্রায় ৪ হাজার ভোটে জিতে মানরক্ষা করলেন দিল্লির বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী অতিশী। পিছিয়ে থেকেও জয় তুলে নিলেন তিনি। শেষ রাউন্ড পর্যন্ত তার সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চলে রমেশ বিধুরীর।
দিল্লির সাবেক মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিতের ছেলে সন্দীপ দীক্ষিত নয়াদিল্লি কেন্দ্র থেকে কংগ্রেসের টিকিটে ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন। তিনিও হেরে গিয়েছেন।
এদিন হার নিশ্চিত হওয়ার পর অরবিন্দ কেজুয়াল বলেন, ক্ষমতায় থাকতে রাজনীতিতে আসিনি, বিরোধী হিসেবেও মানুষের সেবা করবে আপ।
তিনি বলেন, আশা করি বিজেপি প্রতিশ্রুতি পালন করবে। বিজেপিকে অভিনন্দন। গত ১০ বছরে আমরা অনেক কাজ করেছি। দিল্লিতে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, জল—সব ক্ষেত্রে মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত করার চেষ্টা করেছি। দেশের রাজধানীর পরিকাঠামোগত উন্নয়নের চেষ্টা করেছি। এখন দিল্লির মানুষের রায় অনুযায়ী আমরা এখানে গঠনমূলক বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করব। সুখে-দুঃখে মানুষের পাশে থাকব।
তিনি আরও বলেন, ক্ষমতার লোভে রাজনীতিতে আসিনি। মানুষের সেবা করতে এসেছিলাম। আগামী দিনেও মানুষের সেবা করব। দলের সব কর্মী, সমর্থককে অভিনন্দন। অনেক পরিশ্রম করেছেন সবাই। ভালো লড়াই করেছেন।
এদিকে ফলাফল সামনে আসতেই খুশির হাওয়া গেরুয়া শিবিরে। শনিবার নির্বাচনী ফলাফলের গতিপ্রকৃতি জয়ের আভাস দিতে থাকায় বিজেপির সদর কার্যালয়ের সামনে হাজির হন শত শত সমর্থক। ঢাকঢোল বাজিয়ে নাচ, আতসবাজির পাশাপাশি লাড্ডু বিলি করেন তারা।
দুপুরে দিল্লি বিজেপি পক্ষ থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়, রাত আটটার দিকে বিজেপি সদরদপ্তরে যাবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
এদিন জয় সুনিশ্চিত হতেই সোশ্যাল মিডিয়ায় বার্তা দেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। দিল্লি বিধানসভা ভোটে বিজেপির বিপুল জয়কে উন্নয়নের জয়, সুশাসনের জয় বলে ব্যাখ্যা করেন তিনি।
শনিবার দুপুরে এক্স হ্যান্ডেলে মোদি লেখেন, সবার উপরে জনশক্তি। এই ভোটে বিকাশ জিতেছে, আর দক্ষ সুশাসনের জয় হয়েছে।
দিল্লিবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, সব ভোটার ভাই-বোনকে আমি প্রণাম জানাই। দিল্লির উন্নয়নের জন্য আমরা কোনো চেষ্টার ত্রুটি রাখিনি। আমরা যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, তা রেখেছি।
তিনি আরও বলেন, বিকশিত ভারত গড়ে তুলতে দিল্লির ভূমিকা অগ্রণী হবে। আমার সব কর্মকর্তা ও কর্মীদের জন্য গর্ববোধ হয়। তারা এই বিশাল জয় ছিনিয়ে নিয়ে এসেছেন তাদের অক্লান্ত পরিশ্রম দিয়ে। এরপর থেকে আমরা আরও জোর দিয়ে দিল্লির বিকাশে কাজ করতে পারব।
এদিকে দিল্লি বিধানসভায় বিজেপি সরকার গঠনের সাফল্যকে মোদির গ্যারান্টি বলে বর্ণনা করছেন দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। এদিন এক্স হ্যান্ডেলে তিনি বলেন, দিল্লিতে মিথ্যাচারের শাসনের অবসান হলো। এই হার অহংকার ও অরাজকতার পরাজয়। এই বিরাট জয়ের জন্য দিল্লিবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন শাহ।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ম খ যমন ত র ব ধ নসভ ক ষমত
এছাড়াও পড়ুন:
কমল হাসানের পায়ের ধুলোরও যোগ্য নন শাহরুখ: লিলিপুট
বলিউড বাদশা শাহরুখ খান দীর্ঘ অভিনয় ক্যারিয়ারে অসংখ্য সফল সিনেমা উপহার দিয়েছেন। দর্শকদের মুঠো মুঠো ভালোবাসা কুড়ালেও ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার কখনো পাননি। এ নিয়ে চাপা আক্ষেপ বয়ে বেড়াচ্ছিলেন। ৭১তম জাতীয় চলচ্চিত্রে পুরস্কার সেই আক্ষেপ ঘুচিয়ে দিয়েছে। ‘জওয়ান’ সিনেমার জন্য সেরা অভিনেতার পুরস্কার পেয়েছেন শাহরুখ।
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের তালিকা প্রকাশের পর থেকে নানা ধরনের সমালোচনা চলছে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে। অনেকে শাহরুখ খানকে আক্রমণ করেও মন্তব্য করেছেন। এবার শাহরুখ খানকে নিয়ে প্রশ্ন তুললেন বলিউড অভিনেতা লিলিপুট। কেবল তাই নয়, কমল হাসানের সঙ্গে তুলনা করে বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন ৭৪ বছরের এই অভিনেতা।
কয়েক দিন আগে একটি পডকাস্টে অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়েছিলেন লিলিপুট। এ আলাপচারিতায় তিনি বলেন, “যে অন্ধ নয়, সে অন্ধের অভিনয় করতে পারে। কিন্তু যে বামন নয়, সে কীভাবে একজন বামনের চরিত্রে অভিনয় করবে? কারণ বামনরাও স্বাভাবিক—তাদের হাতের নাড়াচড়া স্বাভাবিক, তারা হাসে, ভাবে—সব কিছু স্বাভাবিক মানুষের মতোই, শুধু তাদের চেহারাটা আলাদা। তাহলে আপনি এতে কীভাবে অভিনয় করবেন? আপনাকে প্রযুক্তির মাধ্যমে ছোট করে দেখাতে হবে।”
আরো পড়ুন:
হুমা কুরেশির ভাই খুন
বলিউডের নয়া ‘ক্রাশ’ অনীত
শাহরুখ খানের সমালোচনা করে লিলিপুট বলেন, “আমরা জানি আপনি সুদর্শন, চমৎকার দেখতে—সেখানেই আমাদের ধারণা থমকে যায়। আমরা একজন বামনকে দেখছি না, বরং এমন একজন হিরোকে দেখছি যাকে ভিএফএক্স দিয়ে ছোট করে দেখানো হয়েছে। আপনার চিত্রনাট্য কী বলার চেষ্টা করছে?”
তামিল ভাষার ‘অপ্পু রাজা’ সিনেমায় অভিনয় করেছেন কমল হাসান। বরেণ্য এই অভিনেতার সঙ্গে শাহরুখ খানের ‘জিরো’ সিনেমার তুলনা করেন লিলিপুট। এ সিনেমায় শাহরুখ একজন বামনের চরিত্রে অভিনয় করেন। পাশাপাশি শাহরুখ খান যথেষ্ট হোমওয়ার্ক করেননি বলেও দাবি তার।
এ বিষয়ে লিলিপুট বলেন, “আপনি ‘অপ্পু রাজা’ এর বুদ্ধিমত্তা দেখেন। কমল হাসান একজন বামন ব্যক্তির শারীরিক বৈশিষ্ট্য খুব সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন। বামনদের শরীর কিছুটা বিকৃত থাকে, তাদের আঙুল ছোট হয়, একটু মোটা হয়, হাত, মুখ ও পা অন্যরকম হয়—তাহলে আপনি যখন সেই ধরনের প্রভাব ফেলতে পারছেন না, তখন কেন এমন একটা কাজ করলেন? কীভাবে ভাবলেন আপনি এর মাধ্যমে প্রভাব ফেলতে পারবেন?”
কমল হাসানকে অনুকরণ করেছেন শাহরুখ খান। এ দাবি করে লিলিপুট বলেন, “আপনি কমলজির অনুকরণ করেছেন। কিন্তু আপনি তার পায়ের ধুলোরও যোগ্য নন।”
আনন্দ এল রাই নির্মিত ‘জিরো’ সিনেমা ২০১৮ সালে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়। মুক্তির পর দর্শক-সমালোচকদের নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া পান। ২০০ কোটি রুপি বাজেটের এ সিনেমা বক্স অফিসে আয় করেছিল ১৯১.৪৩ কোটি রুপি। এ ব্যর্থতার পরই শাহরুখ খান আড়ালে চলে যান। দীর্ঘ বিরতিতে নিজেকে প্রস্তুত করেন। ২০২৩ সালে ‘পাঠান’ দিয়ে তার রাজকীয় প্রত্যাবর্তন হয়।
‘জওয়ান’ সিনেমার জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন শাহরুখ খান। এ সিনেমা ২০২৩ সালের ২২ সেপ্টেম্বর প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়। এতে শাহরুখের বিপরীতে অভিনয় করেন দক্ষিণী সিনেমার লেডি সুপারস্টার নয়নতারা। এটি পরিচালনা করেন অ্যাটলি কুমার। বক্স অফিসে দারুণ সাড়া ফেলেছিল এটি।
ঢাকা/শান্ত