নানান প্রশ্ন-কৌতুহলের মাঝে আসছে রাফীর ‘আমলনামা’
Published: 11th, March 2025 GMT
‘আমলনামা–নির্মিত হয়েছে সত্য ঘটনার ছায়া অবলম্বনে’ ট্রেলার প্রকাশের আগে এমন দাবি করেছিলেন নির্মাতারা। দর্শকের কৌতূহল বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য এটুকুই ছিল যথেষ্ট। ট্রেলার প্রকাশের পর শুধু দর্শকের কৌতূহল নয়, একই সঙ্গে উঠে এসেছে কিছু প্রশ্ন আর দর্শকের নানা জল্পনা-কল্পনা। ট্রেলারটি শুরু হয় একটি কবিতা দিয়ে।
যার লাইন এমন, ‘আমাকে এবার পিছমোড়া করো, চোখ বেঁধে ফেলো প্রভু; আমি কোনোখানে কোনো মানুষের হৃদয় দেখিনি কভু।’ কবিতার এই লাইন ছাড়াও ট্রেলারের ক্যাপশনে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, ‘সাদা পোশাকের কালো থাবায় যারা হারিয়ে গেছে, তারা কি আর কখনও ফিরবে?’
প্রশ্নের পাশাপাশি সংলাপে তুলে ধরা হয়েছে একটি বাক্য, ‘মধ্যরাতে সাদা পোশাকে যাদের নিয়ে যায় ধরে, তাহারা কি সবাই আবার ফিরে আসে ঘরে?’ অর্থাৎ ক্যাপশনের কথাটি সংলাপের মধ্য দিয়ে তুলে আনা হয়েছে ট্রেলার। এখানেই শেষ নয়, ‘আমলনামা’র পূর্বাভাস ভিডিওর ক্যাপশনও দারুণভাবে দর্শককে চমকে দিয়েছে। কারণ, এর ক্যাপশনে লেখা ছিল ‘অবিচার যখন হয়ে উঠেছিল বিচারের মাপকাঠি’; যা দর্শকের মনে ধারণা এনে দিয়েছিল, এটি হয়তো মাদকবিরোধী অভিযানের কথা বলে একজনকে ধরে নিয়ে যাওয়ার কাহিনি।
এরপর এসেছে থিমেটিক পোস্টার। যেখানে দেখা গেছে, ভাঙা ফ্রেমের ভেতর দুই কন্যাসন্তানকে নিয়ে এক ব্যক্তির ছবি। তবে বাবার মুখটি ছবিতে নেই। বুলেটের আঘাতে বাবার মুখের জায়গাটি ছিদ্র হয়ে গেছে, ভেঙে গেছে ওপরের কাচ। আর প্রতীকীভাবে সেই ভাঙা অংশ দিয়ে বেয়ে পড়ছে রক্ত; যার ক্যাপশনে লেখা, ‘যেই অবিচার আমরা চোখ বুজে সহ্য করে এসেছি!’
এ সবই পরিচালক রায়হান রাফীর ওয়েব সিনেমা ‘আমলনামা’ নিয়ে দর্শক কৌতূহলের পারদ, চূড়ায় পৌঁছে দিয়েছে। কী হতে পারে এর গল্প, কোন ঘটনার ছায়া নিয়ে এটি নির্মিত– এমন অসংখ্য প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে দর্শক মনে। যারা ট্রেলার দেখে একে একে মিলিয়ে নেওয়ার চেষ্টা সাম্প্রতিককালের বিভিন্ন ঘটনার সূত্র। এত গেল মুক্তির আগের কথা। অবশেষে সব প্রশ্ন আর জল্পনা-কল্পনার মাঝে আজ যখন চরকিতে ‘আমলনামা’ এলো তখন দেখার বিষয় এটাই, এটি দর্শক মনে কতটা ছাপ ফেলে।
যদিও নির্মাতা ওয়েব সিনেমাটি নিয়ে আশাবাদী হতেই পারেন। কারণ, এর আগে সত্য ঘটনার অনুপ্রেরণায় নির্মিত ‘দহন’, ‘জানোয়ার’, ‘ফ্রাইডে’, ‘টান’, ‘খাঁচার ভেতর অচিন পাখি’ সিরিজ ও সিনেমাগুলো দর্শকের মাঝে দারুণ সাড়া ফেলেছিল। সত্যি ঘটনার ছায়ায় যখন আরেকটি সিনেমার রাফী দর্শকের সামনে তুলে ধরছেন, তখন ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হওয়া আস্বাভাবিক নয়। তবে উত্তরটা সময়ই বলে দেবে। তাই এখন আমরা যেনে নিতে পারি, কোন শিল্পীরা রাফীর গল্পে প্রাণসঞ্চার করতে নিরলস কাজ করে গেছেন।
‘আমলনামা’ সিনেমার সুবাদে অনেকদিন পর ওটিটিতে দেখা যাবে নন্দিত অভিনেতা জাহিদ হাসানকে। তাঁর সহশিল্পী হিসেবে গাজী রাকায়েত, তমা মির্জা, সারিকা সাবরিনের পাশাপাশি আছেন কবি, গীতিকার ও নির্মাতা কামরুজ্জামান কামু।
এ ছাড়াও গীতশ্রী চৌধুরী, হাসনাত রিপন, জান্নাতুল মাওয়া ঝিলিক, ইনায়া আর্যা অভিনয় করেছেন বিভিন্ন চরিত্রে। যাদের সবাই এখন অপেক্ষায় বাস্তব ঘটনায় ছায়ায় লেখা রায়হান রাফী ও এসএম নজরুল ইসলামের এই ফিকশন কাহিনি নিয়ে দর্শক প্রতিক্রিয়ার।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র ক য পশন আমলন ম ক ত হল ঘটন র
এছাড়াও পড়ুন:
জোরজবরদস্তি করে সরকার এসব চুক্তি করছে
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান কাজ হলো একটু সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক রূপান্তর এগিয়ে নেওয়া। এ জন্য যে ধরনের সংস্কার দরকার, সেই সংস্কার নিশ্চিত করা। আর কয়েক মাস পর নির্বাচন। নির্বাচন ভালোমতো করার জন্য যা যা করা দরকার, সেটি করার জন্য এখন মনোযোগ দেওয়া দরকার। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য দরকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক করা। পাশাপাশি সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে নিরাপত্তাবোধ ফিরিয়ে আনা। অথচ এসব দিকে সরকারের মনোযোগ বা সক্রিয়তা দেখা যাচ্ছে না।
নির্বাচনের এসব বিষয়ে মনোযোগ না দিয়ে যেটিতে তাদের এখতিয়ার নেই, সেই দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতেই সরকারের যত আগ্রহ। রীতিমতো জোরজবরদস্তি করে সরকার এসব চুক্তি করছে। দেশের মানুষ, বিশেষজ্ঞ—কারও কথা না শুনে, জাতীয় স্বার্থ বিবেচনা না করে ভয় দেখিয়ে একের পর এক চুক্তি করছে সরকার।
একটা দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করার কোনো এখতিয়ার এ রকম অস্থায়ী সরকারের থাকে না। এসবের জন্য নির্বাচিত সরকার দরকার হয়। শুধু নির্বাচিত সরকারও এভাবে করতে পারে না। নির্বাচিত সরকার এ ধরনের চুক্তি করলে সেগুলো সংসদে তুলতে হবে, সেখানে তর্ক-বিতর্ক হবে, দেশের মানুষ জানবে। আর কয় মাস পর নির্বাচন। এই সময় সরকারের এই ধরনের চুক্তিতে এত আগ্রহ কেন? বন্দর নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি যদি দেশের উন্নয়নের জন্যই হয়, তাহলে এত গোপনীয়তা, অস্বচ্ছতা ও তাড়াহুড়া কেন?
চুক্তি নিয়ে এই সরকারের অতি আগ্রহ বড় সন্দেহের কারণ। মনে হচ্ছে বিদেশি কোম্পানির কিছু লবিস্ট এই সরকার চালাচ্ছে। তাদের কাজ হলো কোনো না কোনোভাবে বিদেশি কোম্পানির স্বার্থ রক্ষায় গোপনে অস্বচ্ছভাবে চুক্তি করে ফেলা। সেটা দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি, যাতে পরবর্তী কোনো সরকার এসে কিছু করতে না পারে। কিন্তু এই চুক্তির বোঝা বাংলাদেশের মানুষকে ভোগ করতে হবে বহু বছর।
গণ–অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জনগণের যে প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল, স্বচ্ছতা নিয়মনীতি মেনে কাজ হবে, তার প্রতি এটা বিশ্বাসঘাতকতা ছাড়া আর কিছু নয়। একই সঙ্গে যেসব রাজনৈতিক দল সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন সময় আলাপ-আলোচনা করছে, অথচ সরকারের জাতীয় স্বার্থবিরোধী তৎপরতা নিয়ে তারা যে নিশ্চুপ থাকল, সেটার দায়িত্বও তাদের নিতে হবে।
আমরা দেখেছি, এ রকম চুক্তির আগে সব সময় যুক্তি দেওয়া হয়, বিদেশি কোম্পানি বিশ্বের শ্রেষ্ঠ কোম্পানি। আবার মানুষের মধ্যে এই বোধ তৈরি করা হয় যে আমরা পারব না। আমাদের পক্ষে কিছুই সম্ভব নয়। বিদেশিরা এলে কাজ হবে। আবার আমরা থাকলে দুর্নীতি হবে। বিদেশিরা এলে দুর্নীতি হবে না। এই হীনম্মন্যতা তৈরি করে এবং তার ওপর ভর করে বিদেশি কোম্পানিকে সুবিধা দেওয়ার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরা হয়। বিদেশিদের পক্ষে বিজ্ঞাপনী প্রচার চালাতে থাকে তাদের সুবিধাভোগী দেশি লোকজন। কিন্তু বিদেশিরা এলে যে দুর্নীতি হবে না, সেটার নিশ্চয়তা কীভাবে দেওয়া হয়? আন্তর্জাতিকভাবে কি দুর্নীতি হয় না? চুক্তির আগে মাশুল যে বাড়ানো হলো, এটাও তো দুর্নীতির একটা ধরন।
বিদেশি কোম্পানি যে দক্ষ, আন্তর্জাতিক যে স্বীকৃতি, সেই কোম্পানিগুলো কিন্তু এমনিতেই গড়ে ওঠেনি। জাতীয় সক্ষমতার প্রক্রিয়ার মধ্যে গড়ে ওঠেছে এসব কোম্পানি। বাংলাদেশকেও জাতীয় সক্ষমতার ওপর দাঁড়াতে হবে। সে জন্য নিজেদের প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। একটা দেশ শক্তভাবে দাঁড়াতে পারে, যখন নিজের সক্ষমতা তৈরি হয়। এই সরকার দেশকে বিপন্ন করে তার উল্টো দিকে যাত্রা করছে।
লেখক পরিচয়: অর্থনীতিবিদ ও সম্পাদক, সর্বজনকথা