আগের মতো চাঁদাবাজি চলছে: আসিফ মাহমুদ
Published: 27th, March 2025 GMT
৫ আগস্ট–পরবর্তী বাংলাদেশে আগের মতো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও চাঁদাবাজির মতো ঘটনাগুলো চলছে বলে মন্তব্য করেছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া।
আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলা কমপ্লেক্স মাঠে হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া এ মন্তব্য করেন।
আসিফ মাহমুদ বলেছেন, ‘জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের শত-সহস্র শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা নতুন স্বাধীনতার কথা বলছি। কিন্তু আগের মতো এখনো সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজির মতো ঘটনাগুলো চলমান রয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘আমাকে যে কেউ একটা টোকেন ধরিয়ে দিল, আমাকে ৫০ টাকা ১০০ টাকা দিতে হবে। আবার যারা চাঁদা আদায় করে, তারা মনে করে চাঁদাবাজি তাদের অধিকার। তারা মনে করে অতীতে এভাবে চলে আসছে, এখন কেন চলবে না?’
চাঁদাবাজদের হুঁশিয়ারি করে আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘যারা মনে করে চাঁদা নেওয়া আমার অধিকার, আমি তাদের একটি বার্তা দিতে চাই—জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পর এ ধরনের কর্মকাণ্ড বরদাশত করা হবে না। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের শহীদেরা যে জন্য রক্ত দিয়েছে, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার সেই লক্ষ্যে কাজ করছে। পূর্ববর্তী সময়ে চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসসহ যে বিষয়গুলো সমাজকে ধ্বংস করেছে, তরুণ প্রজন্মকে ধ্বংস করেছে—সেই বিষয়গুলো শক্ত হাতে দমন করা হবে।’
নিজের উপজেলা মুরাদনগরে চাঁদাবাজির প্রেক্ষাপট নিয়ে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের সৌভাগ্য এখানে এমন মানুষজন আছেন, যাঁরা চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন। যাঁরা আঘাতপ্রাপ্ত হয়েও চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছেন। এটা আমাদের গর্ব, এখানেও এমন মানুষজন আছেন। সারা দেশের তরুণ সমাজকে আহ্বান জানাতে চাই, যেখানেই চাঁদাবাজি দেখবেন, সেখানেই প্রতিবাদ করতে হবে, রুখে দাঁড়াতে হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসন চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসীদের দমন করতে কাজ করে যাচ্ছে। আমি মুরাদনগরবাসীকে অনুরোধ জানাব, আপনারা চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসীদের সঠিক তথ্য দিয়ে প্রশাসনকে সহযোগিতা করবেন।’
তরুণ প্রজন্মের জন্য শিক্ষামূলক প্রতিযোগিতা বেশি আয়োজন করতে হবে উল্লেখ করে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘তরুণ ও শিশু-কিশোরেরাই আগামীর বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ। আমরা তাদের যেভাবে গড়ে তুলব, ভবিষ্যতে ঠিক তেমনি একটি বাংলাদেশ পাব। তরুণদের মাদক থেকে দূরে রেখে খেলাধুলা এবং বিভিন্ন শিক্ষামূলক প্রতিযোগিতায় বেশি যুক্ত করতে হবে। আজকের এই হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতা একটি অনন্য উদ্যোগ। এমন আয়োজনের জন্য আমি উপজেলা প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানাই।’
মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবদুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মো.
অনুষ্ঠান শেষে হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতায় তিন ক্যাটাগরিতে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকারী নয়জনের মধ্যে ল্যাপটপ ও সনদ বিতরণ করেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
মধ্যরাতে শিক্ষার্থীকে মেসে ডেকে নিয়ে নির্যাতন, আট শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার
ঢাকার সাভারে গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের এক শিক্ষার্থীকে মধ্যরাতে মেসে ডেকে নিয়ে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে একই বিভাগের আট শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে প্রশাসন। আজ বুধবার গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. ওহিদুজ্জামান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানা যায়।
সাময়িক বহিষ্কার হওয়া শিক্ষার্থীরা হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ২৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী অন্তু দেওয়ান, তরিকুল ইসলাম; ২৮তম ব্যাচের মেহেদী হাসান, আসিফ রহমান (লাবিব); ৩২তম ব্যাচের আসাদুর রহমান, আশরাফুল ইসলাম, নাঈম ও মেহেদী।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যসচিব কনক চন্দ্র রায় প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনাটি জানার পরপরই আইন বিভাগের শিক্ষকদের নিয়ে একটি ও প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের নিয়ে আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। বিভাগীয় তদন্ত কমিটির প্রাথমিক প্রতিবেদনে যে আটজন শিক্ষার্থীর নাম এসেছে, তাঁদের সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। তিনি বলেন, আগামী তিন কর্মদিবসের মধ্যে প্রক্টরিয়াল বডির তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দেবে। উভয় কমিটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন শৃঙ্খলা কমিটির মাধ্যমে সিন্ডিকেটে উত্থাপনের মাধ্যমে যাঁদের ঘটনায় জড়িত থাকার প্রমাণ মিলবে, তাঁদের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
আট শিক্ষার্থীর নামে পৃথক সাময়িক বহিষ্কারাদেশে বলা হয়, ‘আপনার বিরুদ্ধে গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মশৃঙ্খলা লঙ্ঘন করে আইন বিভাগের শিক্ষার্থী শের আলীকে (৩৩তম ব্যাচ, প্রথম সেমিস্টার) র্যাগিং ও নৃশংস নির্যাতন করার অভিযোগ উঠেছে। প্রাথমিক তদন্তে র্যাগিংয়ে আপনার সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া গেছে, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মশৃঙ্খলা পরিপন্থী। উক্ত পরিস্থিতিতে ক্যাম্পাসে শৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং পরবর্তী সময়ে সুষ্ঠু তদন্ত পরিচালনার স্বার্থে আপনাকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হলো। এই আদেশ পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বহাল থাকবে। সাময়িক বহিষ্কারাদেশ চলাকালীন আপনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না।’
গত সোমবার দিবাগত রাতে সাভারের পাথালিয়া ইউনিয়নের নলাম এলাকার একটি মেসে ভুক্তভোগী শের আলীকে মেসে থেকে ডেকে নিয়ে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে সাময়িক বহিষ্কৃত আট শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে। আহত শের আলী রংপুরের পীরগঞ্জের মাহমুদপুর এলাকার বাসিন্দা। তিনি আশুলিয়ার একটি মেসে থাকেন।
এ ঘটনায় আজ বুধবার সকালে ঘটনায় জড়িতদের বিচারের দাবিতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেন ভুক্তভোগীর সহপাঠীরা। একপর্যায়ে বিক্ষোভে যোগ দেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও তাঁর বাবা। দুপুরের দিকে গণ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (গকসু) প্রতিনিধি ও ভুক্তভোগীর সহপাঠীদের সঙ্গে বৈঠক করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিকেলের দিকে অভিযুক্ত অন্তু দেওয়ানের পক্ষেও ২৫ থেকে ৩০ জন শিক্ষার্থী বিক্ষোভ মিছিল করেন। তাঁরা অন্তুর বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ দেওয়ার অভিযোগ করেন। পরে বিকেল সোয়া চারটার দিকে গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আবুল হোসেন আট শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে বলে উপস্থিত শিক্ষার্থীদের জানিয়ে দেন।
আরও পড়ুনমধ্যরাতে শিক্ষার্থীকে মেসে ডেকে নিয়ে নির্যাতন, প্রতিবাদে সহপাঠীদের অবস্থান২৫ নভেম্বর ২০২৫