রূপগঞ্জে রবিনটেক্স গার্মেন্টস নামে একটি রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানায় শ্রমিক ছাটাই, বোনাস ও বকেয়া বেতনের দাবিতে শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।

এ সময় ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে কয়েকটি স্থানে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ চলাকালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংঙ্গে শ্রমিকদের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় শ্রমিকরা পুলিশের দুটি গাড়ি ভাংচুর করে।  

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নীতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী লাঠিচার্জ করলে শ্রমিকরাও ইটপাটকেল নিক্ষেপে করে। এতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ শতাধিক লোক আহত হয়েছে।

আহতদের মধ্যে তাৎক্ষনিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য সেনাবাহিনীর লেফটেনেন্ট মুবীন, সৈনিক বাঁধন, সোহরাব, মেহেদী, শিল্প পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাদিকুর রহমান, শ্রমিকদের মাঝে শাফিয়া, রুনা, মলিনা, মাজেদা ও রুপুর নাম জানা গেছে।

বুধবার (৯ এপ্রিল) দুপর ১২টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত উপজেলার ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের আউখাবো এলাকায় ওই গার্মেন্টসের সামনে এ ঘটনা ঘটে।  এ ঘটনায় ১০ জন শ্রমিককে আটক করেছে পুলিশ।

এদিকে টানা ৪ ঘন্টা ঢাকা সিলেট মহাসড়কে শ্রমিকদের বিক্ষোভের কারণে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। ভোগান্তিতে পড়তে হয় সাধারণ মানুষকে। 

শ্রমিকরা জানান, ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গত ২৯ মার্চ থেকে ৭ এপ্রিল পর্যন্ত পোষাক পোশাক কারখানাটি বন্ধ রাখা হয়। বন্ধ দেওয়ার আগে গত ২৮ মার্চ বিনা নোটিশে কোন প্রকার কারণ ছাড়াই ৬৫ জন শ্রমিককে ছাটাই করা হয়। এছাড়া পোশাক কারখানা বন্ধ দেওয়ার আগে শ্রমিকদের ৬৫ শতাংশ বোনাস দেওয়ার কথা থাকলেও ৫০শতাংশ মালিকপক্ষ প্রদান করেন। 

এছাড়া এক মাসের বেতন প্রদানের কথা থাকলেও ২০ দিনের বেতন দিয়েই কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়। গত ৮ এপ্রিল মঙ্গলবার কারখানা খোলার দিন শ্রমিকরা মালিকপক্ষকে ছাটাইয়ের কারণ, বেতন ও বোনাস দেওয়ার কথা বললে মালিকপক্ষ নানা রকম টালবাহানা শুরু করেন। 

বুধবার সকালে আগের মতোই তাদের দাবি নিয়ে কারখানার ভিতরে অবস্থান করছিল। এসময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাদেরকে কাজে যোগ দেওয়ার কথা বললে তাদের সাথে বাকবিতন্ডা হয়।

দুপুর ১২টার দিকে শ্রমিকরা উত্তেজিত হয়ে উঠলে সেনাবাহিনী, পুলিশ তাদের বাধা দেয়। এতে শ্রমিকরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ওপর চড়াও হন। উভয়ের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাদেরকে লাঠিচার্জ করে সরিয়ে দেন। 

পরে শ্রমিকরা কারখানার বাহিরে এসে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে বিদ্যুৎের খুঁটি ফেলে মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন। এসময় মহাসড়ক থেকে শ্রমিকদের সরাতে গেলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে শ্রমিকদের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসময় শ্রমিকরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সদস্যদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। 

নারায়ণগঞ্জের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (সি সার্কেল) মো.

মেহেদী ইসলাম বলেন, দুপুর ১২টার দিকে সংঘর্ষ শুরু হয়। এতে সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট মবিন ও কয়েকজন সৈনিকসহ পুলিশের ১৫-২০ জন আহত হয়েছেন।

সংঘর্ষের সময় আমার এবং রুপগঞ্জ থানার ওসির গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। এ ঘটনায় আমরা ১০ জনকে আটক করতে সক্ষম হয়েছি। বর্তমানে পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক আছে।

উৎস: Narayanganj Times

কীওয়ার্ড: স ঘর ষ র পগঞ জ ন র য়ণগঞ জ ব হ ন র সদস য স ঘর ষ

এছাড়াও পড়ুন:

তুলশীগঙ্গার তীরে সন্ন্যাসতলীর শতবর্ষী ঘুড়ির মেলা

জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার মামুদপুর ইউনিয়নের মহব্বতপুর গ্রাম ঘেঁষে তুলশীগঙ্গা নদীর অদূরে সন্ন্যাসতলীর বটতলা। জায়গাটিতে প্রায় একশ বছর আগে থেকে বাংলা জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষ শুক্রবার আয়োজন হয় ঘুড়ির মেলা। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। অন্তত ৫০ গ্রামের হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে শুক্রবার সন্ন্যাসতলী ঘুড়ি উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। 

মেলার দিনক্ষণ মনে রেখে সময়মতো দোকানিদের পাশাপাশি দর্শনার্থীরা ভিড় জমান নিভৃত পল্লীতে। আগে মেলার দিন বৃষ্টি হওয়া যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু এবার ব্যতিক্রম ঘটনা ঘটেছে। প্রচণ্ড গরম ও তাপপ্রবাহের মধ্যেই চলে এ আয়োজন। বৈরী পরিবেশের কারণে উৎসবের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

স্থানীয় প্রবীণ বাসিন্দারা বলছেন, সন্ন্যাসতলীর এ ঘুড়ি উৎসব শুরুর দিন বিকেলে বটতলায় স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায় সন্ন্যাস পূজা পালন করেন। তাদের এ পূজা-অর্চনা ঘিরেই মূলত এ মেলার উৎপত্তি। তবে শুরুর কথা কেউ বলতে পারেননি। প্রবীণরা শুধু জানেন, একশ বছরের বেশি সময় ধরে তারা এ মেলার আয়োজন দেখে আসছেন।

মেলার নিজস্ব জায়গা না থাকলেও এর ব্যাপ্তি প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে। প্রচণ্ড গরমের মধ্যেই এক দিনের এ মেলা ঘিরেই জেলার জামালগঞ্জ চারমাথা থেকে ঐতিহাসিক আছরাঙ্গাদীঘি পর্যন্ত রকমারি পণ্যের দোকান বসে। এখান থেকে সংসারের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন আসবাব থেকে শুরু করে ছোট মাছ ধরার বাঁশের তৈরি পণ্য খলসানি, টোপা, ডালা, চালুন কিনে নেন অনেকে।

সুতার তৈরি তৌরা জাল, গৃহস্থালি কাজে ব্যবহৃত দ্রব্যাদি, বিভিন্ন ধরনের খেলনা, মিষ্টান্ন, প্রসাধনী, মাটির তৈজসপত্রসহ বিভিন্ন সামগ্রী বিক্রি হয়। শিশুদের বিনোদনের জন্য ছিল নাগরদোলার ব্যবস্থাও। আর মেলার বড় আকর্ষণ ঘুড়ি ওড়ানো ও বিক্রি। পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা এসেছিলেন ঘুড়ি বিক্রি করতে।

প্রচণ্ড গরমের পাশাপাশি তেমন হাওয়া-বাতাস না থাকায় এবার ঘুড়ি ওড়ানোর প্রতিযোগিতা সেভাবে জমে ওঠেনি। তবে ঘুড়ি বেচাকেনা ও শিশু-কিশোরদের উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো। এ উপলক্ষে আসা হাজার হাজার দর্শনার্থীর নিরাপত্তার জন্য মেলায় সার্বক্ষণিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের টহল ছিল।

আদমদীঘির শিববাটি গ্রামের ঘুড়ি ব্যবসায়ী সালাম হোসেনের ভাষ্য, সন্ন্যাসতলীর মেলা বড় হওয়ায় তিনি এসেছেন ঘুড়ি বিক্রির জন্য। মেলায় প্রত্যাশা অনুযায়ী ঘুড়ি বিক্রি করতে পেরে তিনি খুশি। জয়পুরহাটের পার্বতীপুর এলাকার ঘুড়ি ব্যবসায়ী মফিজ উদ্দিন ও মজনু সরদার বলেন, পূর্বপুরুষের আমল থেকে এ মেলার কথা শুনে আসছেন তারা।

মেলা উদযাপন ও পূজা কমিটির সদস্য মহব্বতপুর গ্রামের মন্টু মণ্ডল বলেন, মেলাটি হিন্দু সম্প্রদায়ের হলেও এটি আসলে সব ধর্মালম্বীর মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে। 

মামুদপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মিলন হোসেনের ভাষ্য, এক দিনের আয়োজনে যে এত লোকের সমাগম হতে পারে, তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। মেলায় যেন অনৈতিক কর্মকাণ্ড না হয়, সে ব্যাপারে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

ক্ষেতলাল থানার ওসি মোহাম্মদ ফরিদ হোসেন বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং মেলায় আসা দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ প্রশাসন সতর্ক আছে। মেলায় অনৈতিক আচরণ লক্ষ্য করা গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • চট্টগ্রামে সাংবাদিক পরিচয়ে হোটেল কক্ষে তল্লাশি, সমালোচনা 
  • ভারতে কোনো বাংলাদেশি থাকলে উপযুক্ত চ্যানেলে পাঠাতে হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • নির্বাচনের জন‌্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রস্তুত: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • নির্বাচন উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রস্তুতি রয়েছে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • গাজীপুরে ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদে কারখানার কর্মকর্তাদের অবরুদ্ধ করে মারধর, আটক ৪৩
  • সিদ্ধিরগঞ্জে প্রবাসী স্বামীর বাড়িতে স্ত্রীর তালা
  • তুলশীগঙ্গার তীরে সন্ন্যাসতলীর শতবর্ষী ঘুড়ির মেলা
  • বিএনপি ও গণ অধিকারের মধ্যে উত্তেজনার জেরে পটুয়াখালীর ২ উপজেলায় ১৪৪ ধারা জারি
  • দীর্ঘ ছুটি শেষে জীবিকার তাগিদে ঢাকায় ফিরছে মানুষ