কিশোরগঞ্জে আ.লীগের ব্যানারে ঝটিকা মিছিল
Published: 20th, April 2025 GMT
কিশোরগঞ্জে জেলা আওয়ামী লীগের ব্যানারে ঝটিকা মিছিল করা হয়েছে। রবিবার (২০ এপ্রিল) দুপুর ২টা ৪৩ মিনিটে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন মোল্লা সুমন তাঁর ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে মিছিলের ভিডিওটি শেয়ার করেছেন।
মিছিলে ইউনুস সরকারের বিরুদ্ধে নানা ধরণের স্লোগান দেওয়া হয়। মিছিল থেকে ‘শেখ হাসিনা বীরের বেশে, আসবে আবার বাংলাদেশে’, ‘জয় বাংলার হাতিয়ার, গর্জে ওঠো আরেকবার’, ‘মুজিব সেনা ভীরু নয়, লড়াই করে আনবে জয়’, ‘শেখ হাসিনা আসবে, বাংলাদেশ হাসবে’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে শোনা যায়।
ধারণা করা হচ্ছে, আজ ভোরে কিংবা সকালে মিছিল হয়েছে। বিক্ষোভ মিছিল কিশোরগঞ্জ-ভৈরব আঞ্চলিক মহাসড়কে করা হয়েছে। তবে এতে কারা অংশ নিয়েছে, তা স্পষ্ট নয়।
ভিডিওতে দেখা যায়, ২০-৩০ জন তরুণ ‘আইসিটি ট্রাইবুনালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা ও নেতাদের বিরুদ্ধে অসাংবিধানিক ও বেআইনি কার্যক্রমের প্রতিবাদে মিছিল ও স্মারকলিপি’ লেখা ব্যানার নিয়ে বিক্ষোভ করছে। এ সময় মিছিলকারীদের অধিকাংশের মুখ কালো কাপড়ে বাধা ছিল। ফলে তাদের চেনা যায়নি।
এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কিশোরগঞ্জের অন্যতম সমন্বয়ক ও গণঅধিকার পরিষদ কিশোরগঞ্জ জেলা শাখার জেষ্ঠ্য যুগ্ম আহ্বায়ক অভি চৌধুরী বলেন, ‘‘আওয়ামী লীগ সরকারের পতনে ছাত্র-জনতা মাঠে ছিল। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হাসিনা সরকারের পতন হয়েছে। আবার যদি আওয়ামী লীগ ও এর দোসররা রাজপথে নেমে আন্দোলনের কিংবা নাশকতার অপচেষ্টা চালায়, তাহলে আমরা তাদের প্রতিহত করবো। আমরা এখনো মাঠে আছি।’’
জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খালেদ সাইফুল্লাহ সোহেল বলেন, ‘‘ইউনূস সরকারের ব্যর্থতার কারণে আওয়ামী লীগ ঘর থেকে বেরিয়ে আসছে। এখন সরকারের উচিত তাদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার করা। সরকার এ ব্যপারে ব্যবস্থা না নিলে জনগণ আবার ফুঁসে উঠবে।’’
কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী বলেন, ‘‘শুনেছি একটি ঝটিকা মিছিল হয়েছে। আমরা এ বিষয়ে খোঁজ খবর নিচ্ছি। এ ধরনের ঝটিকা মিছিল প্রতিহত করতে আমাদের গোয়েন্দা বিভাগগুলো তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। মিছিলে কারা অংশগ্রহণ করেছে, তাদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে।’’
তিনি বলেন, বিশ্বরোড ছাড়াও কটিয়াদীর বনগ্রাম এলাকাতেও এ ধরনের আরেকটি মিছিলের খবর পাওয়া গেছে।
ঢাকা/রুমন/বকুল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ক শ রগঞ জ সরক র র আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
ওসমান হাদিকে গুলি: সর্বদলীয় প্রতিবাদ সভার সিদ্ধান্ত
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদির ওপর হামলার ঘটনায় সম্মিলিতভাবে প্রতিবাদ সভা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।
আজ শনিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দল তিনটির নেতাদের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয় বলে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে জানানো হয়েছে। বৈঠকে জানানো হয়, ওসমান হাদির ওপর হামলার পরিপ্রেক্ষিতে ইনকিলাব মঞ্চের উদ্যোগে সর্বদলীয় প্রতিবাদ সভার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আগামী দু-এক দিনের মধ্যে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
বৈঠকে অংশ নেওয়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ সাংবাদিকদের জানান, বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রধান উপদেষ্টা সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, আগামীকাল এবং পরশুও শাহবাগ অথবা শহীদ মিনারে যে প্রতিবাদ সভা হবে। সেখানে যেন সব রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করে, সেই আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। বিএনপি তাতে অংশ নেবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
১২ ফেব্রুয়ারি ভোট গ্রহণের দিন রেখে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল ঘোষণার পরদিনই রাজধানীর সড়কে প্রকাশ্যে গুলি করা হয় জুলাই অভ্যুত্থানে সক্রিয় থাকা ওসমান হাদিকে। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ এবং ভারতবিরোধী হিসেবে পরিচিত ওসমান হাদি ঢাকা–৮ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে প্রচার চালাচ্ছিলেন।
মাথায় গুলিবিদ্ধ ওসমান হাদি এখন ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। তাঁর অবস্থা এখনো সংকটাপন্ন। গুলিবর্ষণকারী হিসেবে সন্দেহভাজন একজনের ছবি প্রকাশ করেছে পুলিশ। তাঁকে ধরিয়ে দিতে ৫০ লাখ টাকা পুরস্কারের ঘোষণাও দিয়েছে সরকার।
হাদির ওপর হামলার ঘটনায় নিন্দা জানাচ্ছে জুলাই অভ্যুত্থানে সক্রিয় দল ও সংগঠনগুলো। অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণরা বলছেন, পতিত আওয়ামী লীগ জুলাই আন্দোলনের নেতাদের খুন করার লক্ষ্য নিয়ে নেমেছে।
অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের গড়া দল এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম আজ প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বলেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থান নিয়ে মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন ন্যারেটিভ তৈরি করা হচ্ছে, যাতে মনে হয় যারা অভ্যুত্থান করেছে, তারা অপরাধ করেছে। আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টিকে নরমালাইজ করতে নানা চেষ্টা চলছে। টিভি টক শোতে তারা নিয়মিত অংশ নিচ্ছে, প্রশাসনের বিভিন্ন জায়গায় বৈঠক করছে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় মিলিত হচ্ছে এবং আদালত প্রাঙ্গণে স্লোগান দিচ্ছে।’
অভ্যুত্থানের পর রাজনৈতিক দলগুলোর অনৈক্য ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগকে সুযোগ করে দিচ্ছে মন্তব্য করে এনসিপির মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘রাজনৈতিক স্বার্থে দলগুলো আওয়ামী লীগকে নানা রকম সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছে।’
গত বছর জুলাই অভ্যুত্থানের সময় এক থাকলেও নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে অভ্যুত্থানের পক্ষ শক্তির মধ্যে দূরত্ব দেখা দেয়। এক দলের নেতারা অন্য দলকে লক্ষ্য করে ক্রমাগত বাক্ আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে।
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে তা স্বীকার করে নিয়ে জামায়াতে ইসলামীর নেতা মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের নানা বক্তব্য একে অন্যকে দোষারোপ করার প্রবণতা বাড়িয়েছে, যার ফলে আমাদের বিরোধীরা সুযোগ পেয়েছে। ক্ষুদ্র দলীয় স্বার্থে আমরা একে অন্যকে প্রতিপক্ষ বানিয়ে ফেলেছি। জাতিকে বিভক্ত করে, এমন কথা আমরা কেন বলব?’
বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘এই পরিস্থিতিতে আমাদের অবশ্যই ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। যে কোনো অবস্থাতেই পরস্পরের দোষারোপ থেকে বিরত থাকতে হবে। ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে আওয়াজ তুলতে হবে।’
বৈঠকে উপস্থিত থাকা আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল দলগুলোকে সতর্ক করে বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে হানাহানি শুরু হওয়ার পর থেকেই আওয়ামী লীগ শক্তিশালী হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র চলছে বলে দলগুলোকে হুঁশিয়ার করেন। তিনি বলেন, ওসমান হাদির ওপর হামলা পূর্বপরিকল্পিত ও গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ; এর পেছনে বিরাট শক্তি কাজ করছে। ষড়যন্ত্রকারীদের উদ্দেশ্য হচ্ছে নির্বাচনটি হতে না দেওয়া।
এই আক্রমণটি ‘খুবই সিম্বলিক’ আখ্যায়িত করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘তারা তাদের শক্তি প্রদর্শন করতে চায়, নির্বাচনের সব আয়োজন ভেস্তে দিতে চায়। এখন পর্যন্ত যে তথ্য পাওয়া গেছে, তাতে মনে হচ্ছে ষড়যন্ত্রকারীরা তাদের নেটওয়ার্ক বিস্তৃত করেছে। তারা প্রশিক্ষিত শুটার নিয়ে মাঠে নেমেছে।’
রাজনৈতিক দলগুলো বিরোধিতা যতই থাকুক না কেন, জাতির স্বার্থে এবং জুলাইয়ের স্বার্থে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান তিনি।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘নিজেদের মধ্যে যেন দ্বন্দ্ব ছড়িয়ে না পড়ে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। রাজনৈতিক বক্তব্য থাকবে, কিন্তু কাউকে শত্রু ভাবা বা আক্রমণ করার সংস্কৃতি থেকে সরে আসতে হবে। নির্বাচনের সময় উত্তেজনা সৃষ্টি হয়, তবে মাথায় রাখতে হবে—এটি যেন একটি নির্দিষ্ট মাত্রার মধ্যে নিয়ন্ত্রণে থাকে।’
তাঁর আহ্বানে সাড়া দিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, এ ক্ষেত্রে সুদৃঢ় অবস্থান নেবেন তারা। ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক ঐক্যে যাতে ফাটল না ধরে, সে জন্য পরস্পরের মধ্যে যোগাযোগ বাড়ানোর কথাও বলেন বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি নেতারা।