রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। রোববার দুপুর ২টার দিকে উপজেলার শিলমাড়িয়া ইউনিয়নের মঙ্গলপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। মৃত দুই শিশু সম্পর্কে মামাতো-ফুফাতো বোন।

তারা হলো- মঙ্গলপাড়া গ্রামের সাইদুর রহমানের মেয়ে হামিদা খাতুন (৮) এবং একই গ্রামের সোলেমান আলীর মেয়ে সাইফা খাতুন (৭)।

স্থানীয় ইউপি সদস্য কামাল হোসেন জানান, দুপুরে বাড়ির উঠানে লুকোচুরি খেলছিল শিশু দুটি। খেলতে খেলতে তারা পাশের বাড়িতে যায়। ওই বাড়ির একটি ফ্রিজের আড়ালে গিয়ে লুকানোর সময় হঠাৎ বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয় তারা। ঘটনাস্থলেই তাদের মৃত্যু হয়।

পুঠিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কবির হোসেন বলেন, আমি নিজে ঘটনাস্থলে গিয়েছি। পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মরদেহ দুটি দাফনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে থানায় অপমৃত্যুর মামলা হবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ন হত

এছাড়াও পড়ুন:

ফৌজদারি কার্যবিধি সংশোধনে কি কাজ হবে

ভুয়া মামলা থেকে নিরপরাধ মানুষকে পরিত্রাণ দিতে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল ফৌজদারি কার্যবিধি সংশোধনের যে বার্তা দিলেন, সেটা ইতিবাচক। কিন্তু এই উদ্যোগের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এর প্রধান কারণ হলো তদন্তাধীন থাকা অবস্থায় মামলা প্রত্যাহারের বিষয়টি জটিল ও দীর্ঘ প্রক্রিয়া।

সংশোধিত ফৌজদারি কার্যবিধিতে বলা আছে, কমিশনার, এসপি বা এসপি পদমর্যাদার কোনো পুলিশ কর্মকর্তা তাঁর নিয়ন্ত্রণাধীন কোনো মামলার বিষয়ে যদি ‘মনে করেন’, তদন্ত কর্মকর্তার কাছে প্রাথমিক প্রতিবেদন চাওয়া যৌক্তিক, তাহলে তিনি তা চাইতে পারবেন। প্রতিবেদন প্রস্তুত হলে তখন তা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেবেন। ম্যাজিস্ট্রেট যদি দেখেন, মামলায় কোনো আসামিকে বিনা অপরাধে জড়ানো হয়েছে, যাঁর বিরুদ্ধে যথাযথ কোনো প্রমাণ নেই, তখন তিনি (ম্যাজিস্ট্রেট) সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে (বিনা অপরাধে জড়ানো ব্যক্তি) মুক্তি দিতে পারবেন।

এখানে ‘মনে করার’ বিষয়টি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির (পুলিশ কর্মকর্তা) সম্পূর্ণ ইচ্ছাধীন। তিনি মনে করলে মামলার তদন্ত চলাকালে প্রাথমিক প্রতিবেদন চাইবেন, না মনে করলে চাইবেন না। আইনি বিধান এখানে বাধ্যতামূলক নয়। দু–একটি ভুয়া মামলা হলে হয়তো এই বিধান কার্যকর হতে পারে। কিন্তু যেখানে হাজার হাজার ভুয়া মামলা করা হয়েছে এবং একটি মামলায় শতাধিক কিংবা তার বেশি ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে, সেখানে আইন প্রয়োগের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তার মর্জির ওপর ছেড়ে দেওয়া কতটা সমীচীন, তা–ও ভেবে দেখার বিষয়।

পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, জুলাই অভ্যুত্থানে হতাহতসহ বিভিন্ন ঘটনায় অন্তত ১ হাজার ৪৯৯টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে হত্যা মামলা ৫৯৯টি। অন্যান্য ৯০০টি। এসব মামলায় ১০ হাজারের বেশি ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। হত্যা মামলার মধ্যে অনেকগুলোর তদন্তে অগ্রগতি আছে বলেও পুলিশ সূত্র জানিয়েছে। তবে ৪০টি মামলা পর্যালোচনা করে ঢালাওভাবে আসামি করাসহ নানা অসংগতি খুঁজে পেয়েছে। এসব মামলায় ঘটনার সঙ্গে সরাসরি জড়িত ব্যক্তিদের চেয়ে উদ্দেশ্যমূলকভাবে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।

ডেইলি স্টার–এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২৬৬ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যাসহ ফৌজদারি মামলা হয়েছে। এ ছাড়া আইনজীবী, শিক্ষাবিদ, সংস্কৃতিসেবীদের বিরুদ্ধেও ঢালাও হত্যা মামলা হয়েছে। পেশাজীবীদের কেউ দুর্নীতি করলে, কেউ স্বৈরাচারী সরকারের অপকর্মে সহায়তা করলে সংশ্লিষ্ট ধারায় মামলা হতে পারত। কিন্তু সবাইকে গয়রহ হত্যা বা হত্যাচেষ্টা মামলায় ফাঁসানো কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী নিজেও স্বীকার করেছেন, ‘আগে ভুয়া মামলা করত পুলিশ। তারা ১০টা নাম আর ৫০টা বেনামি আসামি দিত। এখন পাবলিক (জনগণ) দিচ্ছে ১০টা নাম, ৫০টা ভুয়া নাম।’

পুলিশ মামলা দেয়নি বলে সরকার দায় এড়াতে পারে না। একই ঘটনায় একাধিক মামলা, এমনকি একই ঘটনায় ঢাকা ও চট্টগ্রামে মামলা হওয়ার রহস্য কী? কেউ যদি ব্যক্তিস্বার্থ উদ্ধারের জন্য মামলা করে থাকেন, সরকারের কর্তব্য হলো তাঁর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া।

কারও বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করা ও মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া—দুটিই ফৌজদারি অপরাধ এবং এর জন্য শাস্তির বিধান রয়েছে। বিচারক যদি মনে করেন, আসামির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো মিথ্যা, ভিত্তিহীন, তুচ্ছ, বিরক্তিকর বা হয়রানিমূলক এবং আসামির প্রতি চাপ সৃষ্টি করতে মামলাটি করা হয়েছে, তাহলে তিনি ওই মামলাকে মিথ্যা মামলা হিসেবে গণ্য করতে পারেন।

আওয়ামী লীগ আমলে আলোচিত ছিল গায়েবি মামলা। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে তার স্থান নিয়েছে ঢালাও মামলা। কেবল ফৌজদারি কার্যবিধি অল্প কিছু সংশোধন করে নিরীহ মানুষকে রক্ষা করা যাবে না; বরং সরকার উচ্চপর্যায়ে কমিটি করে মামলাগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। যেভাবেই হোক, মামলার হয়রানি থেকে যেমন নিরপরাধ মানুষ রেহাই দিতে হবে, তেমনি প্রকৃত অপরাধীদের বিচারও নিশ্চিত করতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ