রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। রোববার দুপুর ২টার দিকে উপজেলার শিলমাড়িয়া ইউনিয়নের মঙ্গলপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। মৃত দুই শিশু সম্পর্কে মামাতো-ফুফাতো বোন।

তারা হলো- মঙ্গলপাড়া গ্রামের সাইদুর রহমানের মেয়ে হামিদা খাতুন (৮) এবং একই গ্রামের সোলেমান আলীর মেয়ে সাইফা খাতুন (৭)।

স্থানীয় ইউপি সদস্য কামাল হোসেন জানান, দুপুরে বাড়ির উঠানে লুকোচুরি খেলছিল শিশু দুটি। খেলতে খেলতে তারা পাশের বাড়িতে যায়। ওই বাড়ির একটি ফ্রিজের আড়ালে গিয়ে লুকানোর সময় হঠাৎ বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয় তারা। ঘটনাস্থলেই তাদের মৃত্যু হয়।

পুঠিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কবির হোসেন বলেন, আমি নিজে ঘটনাস্থলে গিয়েছি। পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মরদেহ দুটি দাফনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে থানায় অপমৃত্যুর মামলা হবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ন হত

এছাড়াও পড়ুন:

বিদ্যালয়ে এসে শিক্ষার্থীরা জানল আজ পরীক্ষা হবে না

জোসনা রানী রায় আজ সোমবার সকালে মেয়ে পুর্বাশাকে সঙ্গে নিয়ে দিনাজপুর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে পৌঁছান। সময় তখন সকাল ৯টা ৪০ মিনিট। বিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে এসে তিনি দেখেন শিক্ষকদের কর্মবিরতির ব্যানার ঝুলছে। জোসনার মতো অনেক অভিভাবকই স্কুলের ফটক বন্ধ দেখে সন্তানকে নিয়ে ফিরে যান।

দিনাজপুর শহরের বালুবাড়ী এলাকায় জোসনা রানীদের বাড়ি। মেয়ে পুর্বাশা বিদ্যালয়টির নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী। আজ ‘তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি’ বিষয়ের পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। গত ২৪ নভেম্বর শুরু হওয়া বার্ষিক পরীক্ষার অংশ হিসেবেই এ পরীক্ষা নেওয়ার কথা ছিল।

জোসনা রানী বলেন, ‘এখানে এসে শুনলাম পরীক্ষা হবে না। রাতে নাকি মোবাইলে মেসেজ দিয়েছে, আমরা পাইনি।’ পুর্বাশা বলে, ‘রাত জেগে পড়লাম। সকালে এসে এখন শুনলাম পরীক্ষা হবে না। স্যাররা আজকের পরীক্ষাটা নিয়ে তারপর ঘোষণা দিলে ভালো হতো।’

দেশের সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা চার দফা দাবিতে লাগাতার কর্মবিরতি ঘোষণা করেছেন। বাংলাদেশ সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির (বাসমাশিস) ব্যানারে দিনাজপুর জিলা স্কুল ও দিনাজপুর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা কর্মবিরতিতে আছেন।

চার দফা দাবির মধ্যে রয়েছে—‘সহকারী শিক্ষক’ পদকে বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডারভুক্ত করে গেজেট প্রকাশ করা; বিদ্যালয় ও পরিদর্শন শাখায় শূন্য পদে দ্রুত নিয়োগ, পদোন্নতি ও পদায়ন; সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুযায়ী বকেয়া টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেডের মঞ্জুরি আদেশ তিন কর্মদিবসের মধ্যে প্রদান; এবং ২০১৫ সালের মতো সহকারী শিক্ষকদের ২-৩টি ইনক্রিমেন্টসহ অগ্রিম বর্ধিত বেতন পুনর্বহাল করা।
পরীক্ষা চলাকালীন আকস্মিক স্থগিত ঘোষণায় অভিভাবকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।

অভিভাবক আনিসুল জুয়েল বলেন, ‘আমার ছেলে জিলা স্কুলে নবম শ্রেণিতে পড়ে। আজ জীববিজ্ঞান বিষয়ে পরীক্ষা ছিল। যদ্দুর জানলাম, শিক্ষকদের এই দাবিগুলো অনেক পুরোনো। তাহলে গত ১৫ বছর আন্দোলনে যান নাই কেন? আর যাই বলেন, পরীক্ষা চলাকালীন এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়াটা উচিত হয়নি।’

অন্য অভিভাবক নুরুল ইসলাম বলেন, ‘মেয়ে বালিকা স্কুলের শিক্ষার্থী। রাত ৯টা ৪০ মিনিটে হঠাৎ মোবাইলে মেসেজ পেলাম পরীক্ষা হবে না। প্রথমে ভাবলাম ভুয়া মেসেজ। পরে আবার এক শিক্ষককে ফোন করে বিষয়টি নিশ্চিত হলাম। সকালে শুনলাম অনেকের কাছে মেসেজ পৌঁছেনি। অনেকে নিশ্চিত হতে সকালে স্কুলে চলে আসছেন। মেনে নিতে হবে, কিছু করার নাই। তাদেরও নিশ্চয়ই যৌক্তিক আন্দোলন। তা না হলে শিক্ষকেরা এমন হার্ড লাইনে যাবেন কেন?’

আন্দোলনের বিষয়ে দিনাজপুর জিলা স্কুলের সহকারী শিক্ষক মমতাজউদ্দিন বলেন, ‘২৬ বছর ধরে চাকরি করছি। একটা টাইমস্কেল পাইনি। শিক্ষার্থীরা ভালো ফলাফল না করলে শিক্ষকদের দোষ হয়। কিন্তু শিক্ষকদের কথা কেউ ভাবে না। নিয়মতান্ত্রিকভাবে দীর্ঘদিন আন্দোলন করে আসছি। মামলা হয়েছে। মামলার রায়ও আমাদের পক্ষে। কিন্তু কার্যকর হয় না। আজকে শিক্ষকেরা কর্মবিরতির মতো সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছেন।’

জিলা স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক সাইফুদ্দিন বলেন, ‘মাধ্যমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে নিরলস কাজ করা সত্ত্বেও দীর্ঘদিন ধরে পদোন্নতি ও অন্যান্য সুবিধা থেকে আমরা বঞ্চিত। আজকে এ ধরনের কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীরা সাময়িক অসুবিধায় পড়েছে, কিন্তু এ ছাড়া আর কোনো উপায় আমরা খুঁজে পাইনি। আগের রাতেই শিক্ষার্থীদের অভিভাবকের মোবাইলে মেসেজ দেওয়া হয়েছে। তবে সরকারকে বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে দাবি পূরণ না হলে শিক্ষকদের সংগঠন থেকে কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ