প্রবাসী বাবার খালার (দাদি) বাড়ি পাশের গ্রামে হওয়ায় প্রায়ই সেখানে যাওয়া-আসা করতো মেয়েটি। দাদির বাড়িতে মাঝেমধ্যে রাতেও থাকতো। পহেলা বৈশাখের দিন বিকেলেও দাদির বাড়িতে সেমাই খাওয়ার কথা বলে বের হয়। পরদিন সকালে মেয়েকে আনতে যান মা। কিন্তু তাকে আর পায়নি। দাদির ভাষ্য, আগের দিনই সে কিছুক্ষণ থেকে চলে গেছে। এরপরই উদ্বিগ্ন হয়ে মাসহ স্বজনরা খোঁজাখুঁজি শুরু করেন শিশুটিকে। একপর্যায়ে খোঁজ মেলে শিশুটির। কিন্তু ততক্ষণে তাঁর শরীরে প্রাণ নেই। এলাকার একটি ভুট্টা ক্ষেতে মুখ ঝলসানো অবস্থায় তার মরদেহ পাওয়া যায়। 

পুলিশ তদন্তে বেরিয়ে এসেছে, পহেলা বৈশাখের দিন দাদির বাড়ি থেকে ফেরার পথে তাকে ধরে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে চার কিশোরসহ পাঁচজন। পরে শ্বাসরোধ করে ঘাড় মটকে হত্যা নিশ্চিতের পর মুখে এসিড নিক্ষেপ করে মরদেহ ফেল চলে যায়। এরপর বাংলা নববর্ষ উদযাপনে মেতে ওঠে তারা। 

এ ঘটনায় গ্রেপ্তার পাঁচজন পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, সোহেলসহ চারজন পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে দেহ ব্যবসা করা মেয়ে এনে আনন্দ-ফুর্তি করবে বলে পরিকল্পনা করেছিল। নিজেরা চাঁদা তুলে গাঁজা কিনে সেবনও করে।

শিশুটির বাড়ি নাটোরের বড়াইগ্রামে। ঘটনাটি ঘটেছে পাবনার চাটমোহরে। দুই উপজেলার দুটি গ্রামই পাশাপাশি। শিশুটির বাবা মালয়েশিয়াপ্রবাসী। সে স্থানীয় একটি ক্যাডেট মাদ্রাসার শিশু শ্রেণির ছাত্রী ছিল। তাকে একটি কলাবাগানে ধর্ষণের পর নৃশংসভাবে হত্যা করে ভুট্টা ক্ষেতে ফেলে যায় পাঁচজন। ঘটনার পর শিশুটির মা চাটমোহর থানায় মামলা করেন। পাবনার পুলিশ সুপার মোরতোজা আলী খাঁনের নির্দেশে ওসি মনজুরুল আলমে নেতৃত্বে এসআই আওলাদ হোসাইনসহ অন্যরা তদন্ত শুরু করেন। এরই একপর্যায়ে তারা জানতে পারেন শিশুটি হত্যার পেছনের ঘটনা।

আজ রোববার চাটমোহর থানায় সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত জানান ওসি মঞ্জুরুল আলম। চাটমোহর ও বড়াইগ্রাম থানা এবং ডিবি পুলিশের যৌথ অভিযানে তারা গ্রেপ্তার হয়েছে।  জিজ্ঞাসাবাদে শিশুটিকে হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকারও করেছে। গ্রেপ্তার চার কিশোরের বাড়ি চাটমোহর ও বড়াইগ্রামে। তাদের সবার বয়স ১৩ থেকে ১৬ বছর। অপর আসামি বড়াইগ্রামের তরুণ সোহেল রানা (২৫)।

স্থানীয় এক ব্যক্তি ভুট্টা ক্ষেতে শিশুটির মরদেহ পড়ে থাকতে দেখে চাটমোহর থানায় খবর দেয়। পুলিশ গিয়ে মরদেহ উদ্ধারের পর ময়নাতদন্তের জন্য পাবনা জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। পরের চারদিনে গ্রেপ্তার পাঁচজন পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, সোহেলসহ চারজন পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে দেহ ব্যবসা করা মেয়ে এনে আনন্দ-ফুর্তি করবে বলে পরিকল্পনা করেছিল। নিজেরা চাঁদা তুলে গাঁজা কিনে সেবনও করে।

এরইমধ্যে অপর এক কিশোর শিশুটির বাড়ির পাশে আমগাছের আড়ালে অপেক্ষায় ছিল। মেয়েটি বাগানে আম কুড়াতে ও খেলতে গেলে তার হাত ধরে পাশের একটি কলাবাগানে নিয়ে যায় সে। সেখানে আগে থেকে অবস্থান করা চারজন তাকে একে একে ধর্ষণ করে। এ সময় শিশুটি সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়লে তাকে পাশের ভুট্টা ক্ষেতে নিয়ে যায়। সেখানে আরেক কিশোর ধর্ষণ করে। এরপর তার পরনে থাকা প্যান্ট গলায় বেঁধে এক কিশোর শ্বাসরোধে হত্যা করে। সোহেল তার ঘাড় মটকে দেয়। অপর কিশোর পা ধরে রাখে। এরপর আরেক কিশোর তার মুখে এসিড জাতীয় পদার্থ নিক্ষেপ করে।

পুলিশ জানিয়েছে, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পাঁচজনই হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত বলে স্বীকার করেছে। ডিএনএ সংরক্ষণ ও পরীক্ষাসহ অন্যান্য আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। 

চাটমোহর থানার ওসি বলেছেন, ঘটনার পর থেকে চাটমোহর ও বড়াইগ্রাম থানার পুলিশ হত্যার কারণ উদঘাটনে কাজ শুরু করে। চার দিনের মধ্যে সবাই গ্রেপ্তার হয়েছে। তাদের রোববার পাবনার আদালতে তোলা হলে তারা ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প বন মরদ হ

এছাড়াও পড়ুন:

নারীর সঙ্গে সম্পর্ক ঘিরে তরুণকে খুন করে দেহ টুকরা টুকরা করলেন বন্ধু

ভারতের গুজরাট রাজ্যের ২০ বছর বয়সী এক তরুণ ছয় দিন ধরে নিখোঁজ ছিলেন। সম্প্রতি পুলিশ তাঁর মরদেহ উদ্ধার করেছে। পুলিশ জানতে পেরেছে, এক নারীকে কেন্দ্র করে ঝগড়ার জেরে ওই তরুণের বন্ধুই তাঁকে হত্যা করেছেন। শুধু হত্যা করেই ক্ষান্ত হননি, দেহটি টুকরা টুকরা করে ফেলেছিলেন।

২ ডিসেম্বর রমেশ মহেশ্বরী গুজরাটের মহেশ্বরী নখত্রানার মুরু গ্রাম থেকে নিখোঁজ হন। এরপর থানায় একটি নিখোঁজ ডায়েরি নথিভুক্ত করে পুলিশ। এরপর ওই তরুণের খোঁজে তল্লাশি শুরু করা হয়।

তদন্ত করতে গিয়ে রমেশের বন্ধু কিশোরের ওপর সন্দেহ বাড়তে থাকে পুলিশের। একপর্যায়ে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কিশোরকে আটক করে।

এই মামলার সঙ্গে এক কিশোরেরও সংশ্লিষ্টতা ছিল। ওই কিশোরের উপস্থিতিতে জিজ্ঞাসাবাদের সময় কিশোর স্বীকার   করেন, তাঁদের দুজনের পরিচিত এক নারীকে নিয়ে ঝগড়ার এক পর্যায়ে তিনি রমেশকে খুন করেছেন।

পুলিশ জানিয়েছে, কিশোর ওই নারীকে ইনস্টাগ্রামে বার্তা পাঠিয়ে তাঁর সঙ্গে সম্পর্ক করার জন্য চাপ দিচ্ছিলেন। ওই নারী রমেশকে এ কথা জানালে দুই বন্ধুর মধ্যে ঝামেলা শুরু হয়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে কিশোর রমেশকে খুন করার সিদ্ধান্ত নেন বলে জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন।

পুলিশ জানিয়েছে, জিজ্ঞাসাবাদে কিশোর তাদের জানিয়েছেন, তিনি রমেশকে তাদের এলাকার বাইরে নিয়ে যান। সেখানে তাঁকে খুন করেন। তারপর একটি ছুরি দিয়ে তাঁর মাথা, হাত ও পা কেটে আলাদা করে ফেলেন। এরপর রমেশের দেহের টুকরাগুলো একটি গভীর কুয়োর মধ্যে ফেলে দেন। আর বাকি দেহটি কাছাকাছি এক জায়গায় মাটিচাপা দেন।

কিশোরের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে নখত্রানা পুলিশ ও জেলা প্রশাসন গত সোমবার ঘটনাস্থলে যায়। সেখানে তারা মাটিচাপা দেওয়া দেহটি উদ্ধার করে। পরে কুয়া থেকে টুকরা টুকরা করে ফেলে দেওয়া দেশের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ উদ্ধার করা হয়। এ হত্যার ঘটনায় আরও তদন্ত চলছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • তারেক রহমান দেশে ফিরছেন ২৫ ডিসেম্বর
  • হাদিকে গুলি: সিসিটিভি ফুটেজে যা দেখা গেল
  • রণবীরের হাঁটুর বয়সি নায়িকা সারাকে কতটা জানেন?
  • শত বছরের পুরোনো বিমানবন্দরে হচ্ছে ৩ হাজার কোটি ডলারের শহর
  • চট্টগ্রাম চেম্বারের নির্বাচন নিয়ে অচলাবস্থা কেটেছে
  • ‘এরপর তাঁর পালা’: কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট পেত্রোকে ট্রাম্পের হুমকি
  • ৮ ম্যাচে মাত্র ২ জয় রিয়ালের, চাকরি হারানোর শঙ্কার মুখেও ‘ইতিবাচক’ আলোনসো
  • সাজিদকে উদ্ধারে ৪০ ফুট গর্ত করে চলছে সুড়ঙ্গ করার কাজ
  • নির্বাচন করব, পদত্যাগের বিষয়ে যথাসময়ে জানবেন: আসিফ মাহমুদ
  • নারীর সঙ্গে সম্পর্ক ঘিরে তরুণকে খুন করে দেহ টুকরা টুকরা করলেন বন্ধু