গাঁজা সেবন করে ধর্ষণের পরিকল্পনা, আদালতে স্বীকারোক্তি
Published: 20th, April 2025 GMT
প্রবাসী বাবার খালার (দাদি) বাড়ি পাশের গ্রামে হওয়ায় প্রায়ই সেখানে যাওয়া-আসা করতো মেয়েটি। দাদির বাড়িতে মাঝেমধ্যে রাতেও থাকতো। পহেলা বৈশাখের দিন বিকেলেও দাদির বাড়িতে সেমাই খাওয়ার কথা বলে বের হয়। পরদিন সকালে মেয়েকে আনতে যান মা। কিন্তু তাকে আর পায়নি। দাদির ভাষ্য, আগের দিনই সে কিছুক্ষণ থেকে চলে গেছে। এরপরই উদ্বিগ্ন হয়ে মাসহ স্বজনরা খোঁজাখুঁজি শুরু করেন শিশুটিকে। একপর্যায়ে খোঁজ মেলে শিশুটির। কিন্তু ততক্ষণে তাঁর শরীরে প্রাণ নেই। এলাকার একটি ভুট্টা ক্ষেতে মুখ ঝলসানো অবস্থায় তার মরদেহ পাওয়া যায়।
পুলিশ তদন্তে বেরিয়ে এসেছে, পহেলা বৈশাখের দিন দাদির বাড়ি থেকে ফেরার পথে তাকে ধরে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে চার কিশোরসহ পাঁচজন। পরে শ্বাসরোধ করে ঘাড় মটকে হত্যা নিশ্চিতের পর মুখে এসিড নিক্ষেপ করে মরদেহ ফেল চলে যায়। এরপর বাংলা নববর্ষ উদযাপনে মেতে ওঠে তারা।
এ ঘটনায় গ্রেপ্তার পাঁচজন পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, সোহেলসহ চারজন পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে দেহ ব্যবসা করা মেয়ে এনে আনন্দ-ফুর্তি করবে বলে পরিকল্পনা করেছিল। নিজেরা চাঁদা তুলে গাঁজা কিনে সেবনও করে।
শিশুটির বাড়ি নাটোরের বড়াইগ্রামে। ঘটনাটি ঘটেছে পাবনার চাটমোহরে। দুই উপজেলার দুটি গ্রামই পাশাপাশি। শিশুটির বাবা মালয়েশিয়াপ্রবাসী। সে স্থানীয় একটি ক্যাডেট মাদ্রাসার শিশু শ্রেণির ছাত্রী ছিল। তাকে একটি কলাবাগানে ধর্ষণের পর নৃশংসভাবে হত্যা করে ভুট্টা ক্ষেতে ফেলে যায় পাঁচজন। ঘটনার পর শিশুটির মা চাটমোহর থানায় মামলা করেন। পাবনার পুলিশ সুপার মোরতোজা আলী খাঁনের নির্দেশে ওসি মনজুরুল আলমে নেতৃত্বে এসআই আওলাদ হোসাইনসহ অন্যরা তদন্ত শুরু করেন। এরই একপর্যায়ে তারা জানতে পারেন শিশুটি হত্যার পেছনের ঘটনা।
আজ রোববার চাটমোহর থানায় সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত জানান ওসি মঞ্জুরুল আলম। চাটমোহর ও বড়াইগ্রাম থানা এবং ডিবি পুলিশের যৌথ অভিযানে তারা গ্রেপ্তার হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে শিশুটিকে হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকারও করেছে। গ্রেপ্তার চার কিশোরের বাড়ি চাটমোহর ও বড়াইগ্রামে। তাদের সবার বয়স ১৩ থেকে ১৬ বছর। অপর আসামি বড়াইগ্রামের তরুণ সোহেল রানা (২৫)।
স্থানীয় এক ব্যক্তি ভুট্টা ক্ষেতে শিশুটির মরদেহ পড়ে থাকতে দেখে চাটমোহর থানায় খবর দেয়। পুলিশ গিয়ে মরদেহ উদ্ধারের পর ময়নাতদন্তের জন্য পাবনা জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। পরের চারদিনে গ্রেপ্তার পাঁচজন পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, সোহেলসহ চারজন পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে দেহ ব্যবসা করা মেয়ে এনে আনন্দ-ফুর্তি করবে বলে পরিকল্পনা করেছিল। নিজেরা চাঁদা তুলে গাঁজা কিনে সেবনও করে।
এরইমধ্যে অপর এক কিশোর শিশুটির বাড়ির পাশে আমগাছের আড়ালে অপেক্ষায় ছিল। মেয়েটি বাগানে আম কুড়াতে ও খেলতে গেলে তার হাত ধরে পাশের একটি কলাবাগানে নিয়ে যায় সে। সেখানে আগে থেকে অবস্থান করা চারজন তাকে একে একে ধর্ষণ করে। এ সময় শিশুটি সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়লে তাকে পাশের ভুট্টা ক্ষেতে নিয়ে যায়। সেখানে আরেক কিশোর ধর্ষণ করে। এরপর তার পরনে থাকা প্যান্ট গলায় বেঁধে এক কিশোর শ্বাসরোধে হত্যা করে। সোহেল তার ঘাড় মটকে দেয়। অপর কিশোর পা ধরে রাখে। এরপর আরেক কিশোর তার মুখে এসিড জাতীয় পদার্থ নিক্ষেপ করে।
পুলিশ জানিয়েছে, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পাঁচজনই হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত বলে স্বীকার করেছে। ডিএনএ সংরক্ষণ ও পরীক্ষাসহ অন্যান্য আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
চাটমোহর থানার ওসি বলেছেন, ঘটনার পর থেকে চাটমোহর ও বড়াইগ্রাম থানার পুলিশ হত্যার কারণ উদঘাটনে কাজ শুরু করে। চার দিনের মধ্যে সবাই গ্রেপ্তার হয়েছে। তাদের রোববার পাবনার আদালতে তোলা হলে তারা ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
মরিচখেতে তাজা গ্রেনেড, নিষ্ক্রিয় করলেন সেনাসদস্যরা
সুনামগঞ্জে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায় এক কৃষকের মরিচখেতে একটি তাজা গ্রেনেড পাওয়া গেছে। খবর পেয়ে সেনাবাহিনীর একটি দল গিয়ে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে গ্রেনেডটি নিষ্ক্রিয় করেছে।
পুলিশ জানিয়েছে, গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলার সলুকাবাদ ইউনিয়নের চালবন গ্রামের কৃষক সাইদুর রহমান তাঁর মরিচখেতে গিয়ে মাটি খোঁড়ার সময় ওই গ্রেনেড পান। বিষয়টি জানাজানি হলে উৎসুক লোকজন সেখানে ভিড় করেন। এরপর বিষয়টি বিশ্বম্ভরপুর থানার পুলিশকে জানানো হয়।
বিশ্বম্ভরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মখলিছুর রহমান বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে গ্রেনেড সাদৃশ্য ওই বস্তু দেখতে পায়। এরপর সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলায় থাকা সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে ঘটনাটি জানানো হয়। আজ দুপুরে সেখান থেকে লেফটেন্যান্ট আল হোসাইনের নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর একটি দল এসে প্রথমে এটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। পরে সেটি নিষ্ক্রিয় করার উদ্যোগ নেন তাঁরা। নিষ্ক্রিয় করার সময় গ্রেনেডটি বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয়। চারপাশের মাটি গর্ত হয়ে যায়।
সেনা কর্মকর্তা আল হোসাইন সাংবাদিকদের বলেন, গ্রেনেডটি বিশ্বযুদ্ধ কিংবা মুক্তিযুদ্ধের সময়ে কোনোভাবে আসতে পারে। এটি মাটির নিচে ১০০ বছরের কমবেশি সময়ে সক্রিয় থাকে। তিনি আরও বলেন, এলাকাবাসীর উচিত ছিল আগেই বিষয়টি সেনাবাহিনীকে জানানো। এটি বিস্ফোরিত হলে জানমালের অনেক ক্ষতি হতে পারত।