চ্যাম্পিয়নস লিগ না জিতে থামব না: বিদায়ের পর ইয়ামাল–লেভা–রাফিনিয়াদের খোলাচিঠি
Published: 7th, May 2025 GMT
স্বপ্নটা ছিল ট্রেবল জয়ের। স্বপ্নটা ছিল ১০ বছর পর চ্যাম্পিয়নস লিগ ট্রফি পুনরুদ্ধারের। কোনোটাই হলো না। গতকাল রাতে চ্যাম্পিয়নস লিগ সেমিফাইনালের দ্বিতীয় লেগ ইন্টার মিলানের কাছে ৪-৩ গোলে (দুই লেগ মিলিয়ে ৭-৬) হেরে স্বপ্ন ভেঙেছে বার্সার। স্বপ্নভঙ্গের যন্ত্রণায় মুষড়ে পড়েছেন দলের তিন তারকা লামিনে ইয়ামাল, রবার্ট লেভানডফস্কি, রাফিনিয়াও।
ব্যালন ডি’অর জয়ের সম্ভাব্য তালিকা থাকায় এই তিন ফুটবলারের জন্য এই হার বড় ধরনের ধাক্কা হয়েছে এসেছে। ম্যাচ শেষ হওয়ার পর মাঠেই ভেঙে পড়তে দেখা গেছে তাঁদের। চ্যাম্পিয়নস লিগে ব্যর্থতা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে খোলাচিঠিও লিখেছেন এই তিনজন।
বলেছেন, ঘুরে দাঁড়িয়ে আবার ফিরে আসবেন তাঁরা, থামবেন না চ্যাম্পিয়নস লিগ না জিতে। পাশাপাশি এখনো যে লা লিগা শিরোপা জয়ের স্বপ্ন বেঁচে আছে, সেটাও জানাতে ভোলেননি।
আরও পড়ুনইয়ামালের একের পর এক শট ঠেকিয়ে মহানাটকের নায়ক সমার৪ ঘণ্টা আগেসামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইনস্টাগ্রামে নিজের মুষড়ে পড়ার ছবি দিয়ে ইয়ামাল লিখেছেন, ‘আমরা নিজেদের সবকিছু দিয়েছি। এই বছর সম্ভব হয়নি। কিন্তু আমরা ফিরে আসব, এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। আমরা এই ক্লাবকে তার যোগ্য জায়গা শীর্ষে পৌঁছে না দিয়ে থামব না। আমি আমার প্রতিজ্ঞা রাখব এবং এটা (চ্যাম্পিয়নস লিগ ট্রফি) বার্সেলোনায় ফিরিয়ে আনব। এটা অর্জনের আগপর্যন্ত থামব না। তবে রোববার আমাদের আরেকটি ফাইনাল (লা লিগায় রিয়াল মাদ্রিদে বিপক্ষে এল ক্লাসিকো) আছে। আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। বার্সা দীর্ঘজীবী হোক।’
ম্যাচের একাধিক মুহূর্তের ছবি দেওয়ার পাশাপাশি দর্শকদের ছবিও পোস্ট করেছেন লেভানডফস্কি। আর ক্যাপশনে লিখেছেন, ‘আমরা নিজেদের সবটা দিয়েছি এবং কাছাকাছি গিয়েছি। এই যাত্রা নিয়ে আমি গর্বিত। সমর্থকদের সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা। আরও অনেক কিছু আসবে। আমরা একসঙ্গে চেষ্টা করে যাব।’
ইয়ামালের মতোই ভেঙে পড়ার ছবির পাশাপাশি কান্নার ছবিও পোস্ট করেছেন রাফিনিয়া। সঙ্গে লিখেছেন, ‘আমরা আরও শক্তিশালী হয়ে ফিরে আসব। ধন্যবাদ বার্সার সব সমর্থককে। আমরা এখনো ঐক্যবদ্ধ আছি। এই মৌসুম এখনো শেষ হয়নি। যতই দিন যাচ্ছে, এই জার্সি নিয়ে আমি আরও বেশি গর্বিত হচ্ছি। এই দল নিয়ে গর্বিত হচ্ছি। বার্সা দীর্ঘজীবী হোক।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: চ য ম প য়নস ল গ থ মব ন
এছাড়াও পড়ুন:
জোরজবরদস্তি করে সরকার এসব চুক্তি করছে
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান কাজ হলো একটু সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক রূপান্তর এগিয়ে নেওয়া। এ জন্য যে ধরনের সংস্কার দরকার, সেই সংস্কার নিশ্চিত করা। আর কয়েক মাস পর নির্বাচন। নির্বাচন ভালোমতো করার জন্য যা যা করা দরকার, সেটি করার জন্য এখন মনোযোগ দেওয়া দরকার। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য দরকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক করা। পাশাপাশি সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে নিরাপত্তাবোধ ফিরিয়ে আনা। অথচ এসব দিকে সরকারের মনোযোগ বা সক্রিয়তা দেখা যাচ্ছে না।
নির্বাচনের এসব বিষয়ে মনোযোগ না দিয়ে যেটিতে তাদের এখতিয়ার নেই, সেই দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতেই সরকারের যত আগ্রহ। রীতিমতো জোরজবরদস্তি করে সরকার এসব চুক্তি করছে। দেশের মানুষ, বিশেষজ্ঞ—কারও কথা না শুনে, জাতীয় স্বার্থ বিবেচনা না করে ভয় দেখিয়ে একের পর এক চুক্তি করছে সরকার।
একটা দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করার কোনো এখতিয়ার এ রকম অস্থায়ী সরকারের থাকে না। এসবের জন্য নির্বাচিত সরকার দরকার হয়। শুধু নির্বাচিত সরকারও এভাবে করতে পারে না। নির্বাচিত সরকার এ ধরনের চুক্তি করলে সেগুলো সংসদে তুলতে হবে, সেখানে তর্ক-বিতর্ক হবে, দেশের মানুষ জানবে। আর কয় মাস পর নির্বাচন। এই সময় সরকারের এই ধরনের চুক্তিতে এত আগ্রহ কেন? বন্দর নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি যদি দেশের উন্নয়নের জন্যই হয়, তাহলে এত গোপনীয়তা, অস্বচ্ছতা ও তাড়াহুড়া কেন?
চুক্তি নিয়ে এই সরকারের অতি আগ্রহ বড় সন্দেহের কারণ। মনে হচ্ছে বিদেশি কোম্পানির কিছু লবিস্ট এই সরকার চালাচ্ছে। তাদের কাজ হলো কোনো না কোনোভাবে বিদেশি কোম্পানির স্বার্থ রক্ষায় গোপনে অস্বচ্ছভাবে চুক্তি করে ফেলা। সেটা দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি, যাতে পরবর্তী কোনো সরকার এসে কিছু করতে না পারে। কিন্তু এই চুক্তির বোঝা বাংলাদেশের মানুষকে ভোগ করতে হবে বহু বছর।
গণ–অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জনগণের যে প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল, স্বচ্ছতা নিয়মনীতি মেনে কাজ হবে, তার প্রতি এটা বিশ্বাসঘাতকতা ছাড়া আর কিছু নয়। একই সঙ্গে যেসব রাজনৈতিক দল সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন সময় আলাপ-আলোচনা করছে, অথচ সরকারের জাতীয় স্বার্থবিরোধী তৎপরতা নিয়ে তারা যে নিশ্চুপ থাকল, সেটার দায়িত্বও তাদের নিতে হবে।
আমরা দেখেছি, এ রকম চুক্তির আগে সব সময় যুক্তি দেওয়া হয়, বিদেশি কোম্পানি বিশ্বের শ্রেষ্ঠ কোম্পানি। আবার মানুষের মধ্যে এই বোধ তৈরি করা হয় যে আমরা পারব না। আমাদের পক্ষে কিছুই সম্ভব নয়। বিদেশিরা এলে কাজ হবে। আবার আমরা থাকলে দুর্নীতি হবে। বিদেশিরা এলে দুর্নীতি হবে না। এই হীনম্মন্যতা তৈরি করে এবং তার ওপর ভর করে বিদেশি কোম্পানিকে সুবিধা দেওয়ার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরা হয়। বিদেশিদের পক্ষে বিজ্ঞাপনী প্রচার চালাতে থাকে তাদের সুবিধাভোগী দেশি লোকজন। কিন্তু বিদেশিরা এলে যে দুর্নীতি হবে না, সেটার নিশ্চয়তা কীভাবে দেওয়া হয়? আন্তর্জাতিকভাবে কি দুর্নীতি হয় না? চুক্তির আগে মাশুল যে বাড়ানো হলো, এটাও তো দুর্নীতির একটা ধরন।
বিদেশি কোম্পানি যে দক্ষ, আন্তর্জাতিক যে স্বীকৃতি, সেই কোম্পানিগুলো কিন্তু এমনিতেই গড়ে ওঠেনি। জাতীয় সক্ষমতার প্রক্রিয়ার মধ্যে গড়ে ওঠেছে এসব কোম্পানি। বাংলাদেশকেও জাতীয় সক্ষমতার ওপর দাঁড়াতে হবে। সে জন্য নিজেদের প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। একটা দেশ শক্তভাবে দাঁড়াতে পারে, যখন নিজের সক্ষমতা তৈরি হয়। এই সরকার দেশকে বিপন্ন করে তার উল্টো দিকে যাত্রা করছে।
লেখক পরিচয়: অর্থনীতিবিদ ও সম্পাদক, সর্বজনকথা