বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার দেশের অভ্যন্তরীণ নৌপথগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর বলে জানিয়েছেন নৌপরিবহন এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ড. এম সাখাওয়াত হোসেন।          

বুধবার (৭ মে) রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন অডিটোরিয়ামে নৌপরিবহন অধিদপ্তর আয়োজিত ‘নৌ নিরাপত্তা সপ্তাহ ২০২৫’ এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা জানান তিনি।

উপদেষ্টা বলেন, নৌ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। ফিটনেসবিহীন নৌযান চলাচল বন্ধে নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে। সব নৌযানের রুট পারমিট ও লাইসেন্স গ্রহণ ও নবায়নের বিষয়ে কঠোরভাবে মনিটরিং করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত যাত্রী বা পণ্য বোঝাই না করতে নৌযান মালিকদের সতর্ক করা হয়েছে। আইন অমান্যকারী অনেককে শাস্তির আওতায় আনা হয়েছে। রাতে বাল্কহেড চলাচল বন্ধ করা হয়েছে। নদীর নাব্য বজায় রাখতে বিআইডব্লিউটিএ নিয়মিত ড্রেজিং কার্যক্রম পরিচালনা করছে। নৌপথের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য অপরাধপ্রবণ অঞ্চলগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিশেষ টহলের ব্যবস্থা করা হয়েছে, নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে। ঘাটগুলোতে চাঁদাবাজি বন্ধে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। 

তিনি বলেন, গত ঈদে নৌ-দুর্ঘটনা রোধে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হয়। এর ফলে সুন্দর ও সুশৃঙ্খলভাবে ঈদযাত্রা সম্পন্ন হয়েছে। আগামী ঈদেও নৌপথের যাত্রীরা নিরাপদে ও নির্বিঘ্নে যাতায়াত করতে পারবেন।

এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, একসময় নৌপথই ছিল যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম। কালক্রমে সেটি সংকুচিত হয়েছে। তারপরও বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম মেরিটাইম কান্ট্রি। আমাদের একটি গভীর সমুদ্রবন্দরসহ চারটি সমুদ্রবন্দর আছে। বর্তমান সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই দেশেই প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত নৌপথ সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিয়েছে। বর্তমানে পণ্য পরিবহনে ৮০ ভাগ নৌপথে হচ্ছে। ইতোমধ্যে সন্দ্বীপ ও মহেশখালীতে সরাসরি ফেরি সার্ভিস চালু করা হয়েছে। আগামীতে আরো জনপদকে সংযুক্ত করা হবে। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, দেশে এমনও প্রত্যন্ত অঞ্চল এখনো রয়েছে, যেখানে গত ৫০ বছরেও নৌযোগাযোগসহ অন্যান্য যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপিত হয়নি। সেসব জায়গায় বিআইডব্লিউটিএর পন্টুন নির্মাণ করা হচ্ছে, যাতে সেখানকার অধিবাসীদের যাতায়াতের কষ্ট লাঘব হয়।

উপদেষ্টা আরো বলেন, নদীকে বাঁচাতে হবে। তা না হলে বাংলাদেশ বাঁচবে না। যেকোনো উপায়ে নদীদূষণ বন্ধ করতে হবে। নদী বাংলাদেশের প্রাণ। এ দেশের হাজারের অধিক নদী ও ১০ হাজার কিলোমিটারের মতো নৌপথ আছে। এক তৃতীয়াংশ মানুষ এখনো নৌপথে যাতায়াত করেন। নদীগুলোকে অবৈধ দখলদারদের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে। নদীর নাব্য বৃদ্ধির পাশাপাশি স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় নদীদূষণ বন্ধ করতে কার্যক্রম চলছে। নদীদূষণ বেশি হয় যেখানে জনগণ ও কারখানার সংখ্যা বেশি থাকে। 

অর্থ ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অভাবে বুড়িগঙ্গা নদী পরিষ্কারের উদ্যোগ বিলম্বিত হচ্ছে বলে জানান নৌপরিবহন উপদেষ্টা। 

বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন সমুদ্রপথে আন্তর্জাতিক নৌবাণিজ্য বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে, উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। এটি লাভজনক প্রতিষ্ঠান। আন্তর্জাতিক নৌবাণিজ্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে চারটি জাহাজ কেনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে আরো বেশি কর্মসংস্থান ও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের পথ সুগম হবে। এলপিজি কনটেইনার জাহাজ কেনার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। নৌ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নৌযান মালিক, শ্রমিক ও যাত্রী সাধারণকে এগিয়ে আসতে হবে। 

নদীমাতৃক বাংলাদেশে নৌপথের নিরাপত্তা এবং সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে নৌপরিবহন অধিদপ্তরের উদ্যোগে ৭ থেকে ১৩ মে পর্যন্ত নৌ নিরাপত্তা সপ্তাহ পালন করা হচ্ছে। এবার নৌ নিরাপত্তা সপ্তাহের প্রতিপাদ্য ‘দূষণমুক্ত নদী ও নিরাপদ নৌযান, সুস্থ থাকবে পরিবেশ, রক্ষা হবে প্রাণ’। 

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নৌপরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কমডোর মোহাম্মদ মাকসুদ আলমের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ ইউসুফ। বিশেষ বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিআইডব্লিউটিসির চেয়ারম্যান মো.

সলিম উল্লাহ (অতিরিক্ত সচিব) এবং বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমডোর আরিফ আহমেদ মোস্তফা। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল সংস্থার সভাপতিসহ অন্যান্য মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকা/এএএম/রফিক

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ন শ চ ত করত ন শ চ ত কর ন পর বহন উপদ ষ ট সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

শতবর্ষী প্যাডেল স্টিমার ‘পিএস মাহসুদ’ চালু

প্রমোদতরী হিসেবে দেশের অভ্যন্তরীণ নৌপথে শনিবার (১৫ নভেম্বর) চালু হয়েছে শতবর্ষী প্যাডেল স্টিমার ‘পিএস মাহসুদ’।

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম. সাখাওয়াত হোসেন প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে রাজধানীর সদরঘাটে শতবর্ষী এ প্যাডেল স্টিমার যাত্রার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।

আরো পড়ুন:

‘নৌপথ ও মৎস্য সম্পদ রক্ষায় যৌথ উদ্যোগে কাজ করবে নৌপরিবহন ও মৎস্য মন্ত্রণালয়’

শ্রম উপদেষ্টার সঙ্গে জার্মান সংসদ সদস্যের সাক্ষাৎ

আগামী প্রজন্মের কাছে বাংলাদেশের নদীমাতৃক ঐতিহ্য তুলে ধরাই এর মূল লক্ষ্য।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত লুতফে সিদ্দিকীসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সাখাওয়াত হোসেন বলেন, “পিএস মাহসুদ বাংলাদেশের ঐতিহ্য ও নৌ-পর্যটনের মধ্যে এক অনন্য সেতুবন্ধন তৈরি করবে।”

তিনি আরো বলেন, “আগামী ২১ নভেম্বর থেকে ঢাকা-বরিশাল রুটে নিয়মিত পর্যটন সেবা শুরু করবে জাহাজটি।”

তিনি বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিআইডব্লিউটিসির শতবর্ষী প্যাডেল স্টিমার ‘পিএস মাহসুদ’কে সংস্কার ও পুনরায় চালু করার সিদ্ধান্তে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন।”
সাখাওয়াত বলেন, “পিএস মাহসুদ শুধু একটি জাহাজ নয়, এটি বাংলাদেশের নদীমাতৃক সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের জীবন্ত প্রতীক। আমরা চাই নতুন প্রজন্ম দেখুক, একসময় নদীই ছিল যোগাযোগ ও সংস্কৃতির প্রাণ।”

তিনি জানান, নদী ঐতিহ্য সংরক্ষণ এবং নৌ-পর্যটনের সম্ভাবনা বাড়াতে পিএস অস্ট্রিচ, পিএস লেপচা ও পিএস টার্নসহ আরও কয়েকটি পুরনো স্টিমার মেরামতের পরিকল্পনা করা হয়েছে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্পোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) কর্মকর্তারা জানান, স্টিমারটির সংস্কার ও আধুনিকীকরণে মূল কাঠামো ও ঐতিহাসিক নকশা অক্ষুণ্ন রাখা হয়েছে। তবে, ইঞ্জিন, নিরাপত্তা ও অগ্নি-নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পূর্ণ আধুনিক করা হয়েছে।

এতে রয়েছে আধুনিক কেবিন, পর্যটকবান্ধব ডেক ও ডিজিটাল নেভিগেশন ব্যবস্থা।

স্টিমারটি প্রতি শুক্রবার ঢাকা থেকে বরিশাল এবং প্রতি শনিবার বরিশাল থেকে ঢাকা যাবে। সকাল ৮টায় রাজধানীর সদরঘাট থেকে ছেড়ে রাতে বরিশালে পৌঁছাবে।

আগে স্টিমারটি শুধু রাতেই চলত। এবার দিনের ভ্রমণ চালু হওয়ায় পর্যটকরা নদী ও নদীর তীরের সৌন্দর্য আরও বেশি উপভোগ করতে পারবেন বলে আশা করছেন বিআইডব্লিউটিসির কর্মকর্তারা। খবর বাসসের।

ঢাকা/এসবি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শতবর্ষী প্যাডেল স্টিমার ‘পিএস মাহসুদ’ চালু
  • বিআইডব্লিউটিএ’র প্রশিক্ষণার্থীদের তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বিষয়ে সচেতন করার উদ্যোগ