ওড়না বা হিজাব পরে খেলার সুযোগই নেই: তাসনুভা তিশা
Published: 9th, May 2025 GMT
‘সেলিব্রেটি ক্রিকেট লিগ’ বেশ আলোচনার রয়েছে। দেশের শোবিজ অঙ্গনের অন্য অভিনেত্রীদের মতো এতে অংশ নিয়েছেন ছোট পর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী তাসনুভা তিশাও। এ টুর্নামেন্টের নানা মুহূর্ত এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল। ক্রিকেট মাঠে অভিনেত্রীদের পোশাক নিয়ে নানা প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন নেটিজেনরা। এ নিয়ে কথা বললেন তাসনুভা তিশা।
তাসনুভা তিশা বলেন, “আমরা যারা মেয়েরা ক্রিকেট খেলছি, আমাদের নিয়ে অনেক সময় খুবই অপমানজনকভাবে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। ইউটিউব বা অন্য মাধ্যমে খেলার পারফরম্যান্সের চেয়ে পোশাক নিয়ে আলোচনা বেশি হয়। কে কী পরল, কতটুকু পরল— এসব নিয়ে মন্তব্য করে আমাদের অসম্মান করা হয়। এসব প্রতিবেদনে এমনভাবে উপস্থাপন করা হয়, যেন আমরা খেলতে আসিনি, এসেছি শুধু পোশাক প্রদর্শনের জন্য।”
শিল্পীদের অজান্তে ভিডিও করে তা সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশের কারণে সামাজিক-পারিবারিক সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়। এ তথ্য জানিয়ে তাসনুভা তিশা বলেন, “আমি নিজেই এই ধরনের পরিস্থিতির শিকার হয়েছি। মানুষ আমাদের ব্যক্তিজীবন নিয়ে আগ্রহী, এটা স্বাভাবিক। কিন্তু আমাদের দেশে বলিউডের মতো পাপারাজ্জি সংস্কৃতি নেই। তার বদলে যা হয়, তা হলো হয়রানি। আমাদের অজান্তেই ভিডিও করে সামাজিক মাধ্যমে ছেড়ে দেওয়া হয়, যা নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করা হয়। আর এই কারণেই আমরা সামাজিকভাবে ভুগি। কারণ আমাদের পরিবার আছে, তারা এসব দেখে, পড়ে। ফলে তারা আমাদের কাছে এসব প্রশ্নের উত্তর চায়।”
আরো পড়ুন:
স্ত্রীর বাড়ি ছাড়ার গুঞ্জনে কী বললেন শামীম?
পূর্ণিমার রায়ে জিততে পারেন ১৫ লাখ টাকা!
ওড়না বা হিজাব পরে খেলার সুযোগ নেই বলে মনে করেন তিশা। তার ভাষায়, “অনেকে আবার বলেন— ‘ঠিকমতো পোশাক পরলেই তো হয়।’ কিন্তু সেটা করলেও কমেন্ট থেমে থাকে না। শাড়ি পরলেও কথা হয়, আবার ওড়না পরলেও ছাড় নেই। আসলে কী পরব বুঝে উঠতে পারি না। খেলা তো খেলা, সেটা ছেলে-মেয়ে নির্বিশেষে সবার জন্যই এক। কিন্তু বাস্তবতা হলো, খেলতে গিয়ে ওড়না বা হিজাব পরে মাঠে নামার কোনো বাস্তব সুযোগই নেই।”
উভয় সংকটের কথা উল্লেখ করে তাসনুভা তিশা বলেন, “আমরা চেষ্টা করি অপ্রয়োজনীয় বিতর্কে না জড়াতে। এসব বিতর্কের শেষ নেই। আবার যে মেয়েটা বোরকা পরে, তাকেও অনেকে কটাক্ষ করে। শালীন পোশাকেও মানুষ বাজে মন্তব্য করতে ছাড়ে না। ফলে বোঝা কঠিন— কোনটা দৃষ্টিকটু আর কোনটা নয়।”
পোশাক নিয়ে ব্যক্তিগত পছন্দের কথা জানিয়ে তাসনুভা তিশা বলেন, “আমার ঢোলা টি-শার্ট ভালো লাগে, টাইট ফিটিং পছন্দ নয়। এটা আমার ব্যক্তিগত পছন্দ— এটা আমার চরিত্র, শিক্ষা বা জ্ঞানের মানদণ্ড নয়।”
ঢাকা/শান্ত
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ট ভ ন টক আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
জোরজবরদস্তি করে সরকার এসব চুক্তি করছে
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান কাজ হলো একটু সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক রূপান্তর এগিয়ে নেওয়া। এ জন্য যে ধরনের সংস্কার দরকার, সেই সংস্কার নিশ্চিত করা। আর কয়েক মাস পর নির্বাচন। নির্বাচন ভালোমতো করার জন্য যা যা করা দরকার, সেটি করার জন্য এখন মনোযোগ দেওয়া দরকার। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য দরকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক করা। পাশাপাশি সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে নিরাপত্তাবোধ ফিরিয়ে আনা। অথচ এসব দিকে সরকারের মনোযোগ বা সক্রিয়তা দেখা যাচ্ছে না।
নির্বাচনের এসব বিষয়ে মনোযোগ না দিয়ে যেটিতে তাদের এখতিয়ার নেই, সেই দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতেই সরকারের যত আগ্রহ। রীতিমতো জোরজবরদস্তি করে সরকার এসব চুক্তি করছে। দেশের মানুষ, বিশেষজ্ঞ—কারও কথা না শুনে, জাতীয় স্বার্থ বিবেচনা না করে ভয় দেখিয়ে একের পর এক চুক্তি করছে সরকার।
একটা দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করার কোনো এখতিয়ার এ রকম অস্থায়ী সরকারের থাকে না। এসবের জন্য নির্বাচিত সরকার দরকার হয়। শুধু নির্বাচিত সরকারও এভাবে করতে পারে না। নির্বাচিত সরকার এ ধরনের চুক্তি করলে সেগুলো সংসদে তুলতে হবে, সেখানে তর্ক-বিতর্ক হবে, দেশের মানুষ জানবে। আর কয় মাস পর নির্বাচন। এই সময় সরকারের এই ধরনের চুক্তিতে এত আগ্রহ কেন? বন্দর নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি যদি দেশের উন্নয়নের জন্যই হয়, তাহলে এত গোপনীয়তা, অস্বচ্ছতা ও তাড়াহুড়া কেন?
চুক্তি নিয়ে এই সরকারের অতি আগ্রহ বড় সন্দেহের কারণ। মনে হচ্ছে বিদেশি কোম্পানির কিছু লবিস্ট এই সরকার চালাচ্ছে। তাদের কাজ হলো কোনো না কোনোভাবে বিদেশি কোম্পানির স্বার্থ রক্ষায় গোপনে অস্বচ্ছভাবে চুক্তি করে ফেলা। সেটা দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি, যাতে পরবর্তী কোনো সরকার এসে কিছু করতে না পারে। কিন্তু এই চুক্তির বোঝা বাংলাদেশের মানুষকে ভোগ করতে হবে বহু বছর।
গণ–অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জনগণের যে প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল, স্বচ্ছতা নিয়মনীতি মেনে কাজ হবে, তার প্রতি এটা বিশ্বাসঘাতকতা ছাড়া আর কিছু নয়। একই সঙ্গে যেসব রাজনৈতিক দল সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন সময় আলাপ-আলোচনা করছে, অথচ সরকারের জাতীয় স্বার্থবিরোধী তৎপরতা নিয়ে তারা যে নিশ্চুপ থাকল, সেটার দায়িত্বও তাদের নিতে হবে।
আমরা দেখেছি, এ রকম চুক্তির আগে সব সময় যুক্তি দেওয়া হয়, বিদেশি কোম্পানি বিশ্বের শ্রেষ্ঠ কোম্পানি। আবার মানুষের মধ্যে এই বোধ তৈরি করা হয় যে আমরা পারব না। আমাদের পক্ষে কিছুই সম্ভব নয়। বিদেশিরা এলে কাজ হবে। আবার আমরা থাকলে দুর্নীতি হবে। বিদেশিরা এলে দুর্নীতি হবে না। এই হীনম্মন্যতা তৈরি করে এবং তার ওপর ভর করে বিদেশি কোম্পানিকে সুবিধা দেওয়ার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরা হয়। বিদেশিদের পক্ষে বিজ্ঞাপনী প্রচার চালাতে থাকে তাদের সুবিধাভোগী দেশি লোকজন। কিন্তু বিদেশিরা এলে যে দুর্নীতি হবে না, সেটার নিশ্চয়তা কীভাবে দেওয়া হয়? আন্তর্জাতিকভাবে কি দুর্নীতি হয় না? চুক্তির আগে মাশুল যে বাড়ানো হলো, এটাও তো দুর্নীতির একটা ধরন।
বিদেশি কোম্পানি যে দক্ষ, আন্তর্জাতিক যে স্বীকৃতি, সেই কোম্পানিগুলো কিন্তু এমনিতেই গড়ে ওঠেনি। জাতীয় সক্ষমতার প্রক্রিয়ার মধ্যে গড়ে ওঠেছে এসব কোম্পানি। বাংলাদেশকেও জাতীয় সক্ষমতার ওপর দাঁড়াতে হবে। সে জন্য নিজেদের প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। একটা দেশ শক্তভাবে দাঁড়াতে পারে, যখন নিজের সক্ষমতা তৈরি হয়। এই সরকার দেশকে বিপন্ন করে তার উল্টো দিকে যাত্রা করছে।
লেখক পরিচয়: অর্থনীতিবিদ ও সম্পাদক, সর্বজনকথা